এপ্রিল-মে ১৯৫২-ভাষা আন্দোলনের চিত্রকর্ম by মুর্তজা বশীর
লিনোকাটে উৎকীর্ণ এই চিত্রটির আমি দুটি ভার্সন করেছিলাম। বায়ান্ন সালের একুশে ফেব্রুয়ারির দুই-তিন মাসের মধ্যে প্রথমটি রচনা করি, যা এখন বহুল প্রচারিত। বাংলায় নাম দিই ‘রক্তাক্ত একুশে’ এবং ইংরেজিতে ‘Bloody 21st’ ছবিটি প্রথম প্রদর্শিত হয় ১৯৫৪ সালের পূর্ব-পাকিস্তান সাহিত্য সম্মেলন উপলক্ষে বর্ধমান হাউসে অনুষ্ঠিত ২৩ থেকে ২৬ এপ্রিল
চিত্র ও আলোকচিত্র প্রদর্শনীতে। এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে, একুশে ফেব্রুয়ারি স্মরণে এই চিত্রটি ছাড়া আর কারোর কোনো শিল্পকর্ম এই প্রদর্শনীতে ছিল না।
এই লিনোকাটের কম্পোজিশনে সেনাবাহিনী ও ছাত্র-জনতার মুখোমুখি অবস্থানকে তুলে ধরা ছিল মূল লক্ষ্য। সরাসরি সেনা না দেখিয়ে প্রতীকরূপে বেয়নেট লাগানো রাইফেল ও ব্রেনগানের নল এবং ছাত্র-জনতাকে বোঝানোর জন্য ভূলুণ্ঠিত খোলা বই-খাতা ও একজোড়া নগ্ন পায়ের পাতা চিত্রিত হয়েছে। এই মুখোমুখি ঘটনা যে ভাষা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে, তা বোঝানোর জন্য হাতে ধরা প্ল্যাকার্ডে অসম্পূর্ণভাবে আঁকা অক্ষরগুলো থেকে বুঝতে অসুবিধা হয় না আমাদের দাবি, ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’। দ্বিতীয় ভার্সনটি এঁকেছিলাম বায়ান্ন সালের মাঝামাঝি। হাসান হাফিজুর রহমান সম্পাদিত ও পুঁথিপত্র প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত একুশে ফেব্রুয়ারি গ্রন্থে ছাপা হয়। এই দুটির মধ্যে পাথক্য নিম্নরূপ:
প্রথম চিত্রটিতে গুলিবিদ্ধ ছাত্রকে যে ছাত্রটি ধরেছে তার হাতে প্ল্যাকার্ড ও তার বুকপকেটে কলম রাখা নেই। কিন্তু দ্বিতীয় ভার্সনে প্ল্যাকার্ডটি পেছনের অন্য কারোর হাতে। প্রথম রচনাটির ডান দিকের নিচে আমার নামের ইংরেজি আদ্যক্ষর ‘এস’ ও ‘বি’ একসঙ্গে খোদিত হয়েছে, যা দ্বিতীয় ভার্সনে ছিল না। তবে প্রথম চিত্রটি খোদাই করার সময় যেভাবে লিনোকাটে আঁচড় ও অক্ষরের বিন্যাস করা হয়েছে, দ্বিতীয়টিতে তা সম্পূর্ণভাবে অনুকরণ করা হয়নি।
হাসান হাফিজুর রহমান সম্পাদিত একুশে ফেব্রুয়ারি সংকলনের জন্য আমি পাঁচটি স্কেচ করেছিলাম। যদিও শিল্পগুণে সেগুলোর কোনো শৈল্পিক মান না থাকলেও প্রত্যক্ষভাবে দেখা ঘটনাগুলোর ঐতিহাসিক দলিল হিসেবে অমূল্য হবে বলে আমার ধারণা। তবে গুলিতে উড়ে যাওয়া রফিকের মাথার খুলি ও ঘাসমাখা মগজ সযত্নে ক্যানভাসের স্ট্রেচারে একপাশে রাখা বা অন্য একজনের গুলিতে ফাটা বাঁশের মতো হাঁ করা পায়ের গোড়ালি, যা ছিল হূদয়বিদারক ও বিভীষিকাময়, তা আঁকিনি।
একুশে ফেব্রুয়ারি স্মরণে আমি পরবর্তী সময়ে বেশ কয়েকটি ড্রয়িং করেছিলাম, যা সে সময় বেশ কয়েকটি পত্রিকায় ছাপা হয়েছিল। এর মধ্যে ১৯৭১ সালের ফেব্রুয়ারিতে আঁকা দুটি উল্লেখযোগ্য। জহির রায়হান সম্পাদিত ইংরেজি সাপ্তাহিক দ্য এক্সপ্রেস পত্রিকায় ছাপা হয়েছিল—বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ, তাই কিষান-কিষানিকে আমি বাংলার গণমানুষের প্রতিনিধিরূপে চিত্রায়িত করেছিলাম। চেক লুঙ্গি পরিহিত কিষানের ডান হাতে উঁচিয়ে ধরা বল্লম, বাঁ হাতে দানবসুলভ এক জন্তুকে প্রতিরোধ করে রয়েছে। কিষানির ডান হাতে কাস্তে এবং বাঁ হাতে উঁচু করে ধরা বাংলা বর্ণমালার প্ল্যাকার্ড। অন্য ড্রয়িংটি ছাপা হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃতি সংসদের সোনার হরিণ চাই চটি পুস্তিকায়। এখানে দেখানো হয়েছিল সেই বীভৎস জন্তু শহীদ মিনারের পাদদেশে ভূলুণ্ঠিত। জন্তু হিসেবে আমি ডাইনোসরকে প্রতীকরূপে বেছে নিয়েছিলাম। ডাইনোসর যদিও তৃণভোজী, কিন্তু তার বিশালাকার ভয়ংকর রূপকে পাকিস্তানি আগ্রাসনের রূপক হিসেবে চিত্রিত করেছিলাম।
এই লিনোকাটের কম্পোজিশনে সেনাবাহিনী ও ছাত্র-জনতার মুখোমুখি অবস্থানকে তুলে ধরা ছিল মূল লক্ষ্য। সরাসরি সেনা না দেখিয়ে প্রতীকরূপে বেয়নেট লাগানো রাইফেল ও ব্রেনগানের নল এবং ছাত্র-জনতাকে বোঝানোর জন্য ভূলুণ্ঠিত খোলা বই-খাতা ও একজোড়া নগ্ন পায়ের পাতা চিত্রিত হয়েছে। এই মুখোমুখি ঘটনা যে ভাষা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে, তা বোঝানোর জন্য হাতে ধরা প্ল্যাকার্ডে অসম্পূর্ণভাবে আঁকা অক্ষরগুলো থেকে বুঝতে অসুবিধা হয় না আমাদের দাবি, ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’। দ্বিতীয় ভার্সনটি এঁকেছিলাম বায়ান্ন সালের মাঝামাঝি। হাসান হাফিজুর রহমান সম্পাদিত ও পুঁথিপত্র প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত একুশে ফেব্রুয়ারি গ্রন্থে ছাপা হয়। এই দুটির মধ্যে পাথক্য নিম্নরূপ:
প্রথম চিত্রটিতে গুলিবিদ্ধ ছাত্রকে যে ছাত্রটি ধরেছে তার হাতে প্ল্যাকার্ড ও তার বুকপকেটে কলম রাখা নেই। কিন্তু দ্বিতীয় ভার্সনে প্ল্যাকার্ডটি পেছনের অন্য কারোর হাতে। প্রথম রচনাটির ডান দিকের নিচে আমার নামের ইংরেজি আদ্যক্ষর ‘এস’ ও ‘বি’ একসঙ্গে খোদিত হয়েছে, যা দ্বিতীয় ভার্সনে ছিল না। তবে প্রথম চিত্রটি খোদাই করার সময় যেভাবে লিনোকাটে আঁচড় ও অক্ষরের বিন্যাস করা হয়েছে, দ্বিতীয়টিতে তা সম্পূর্ণভাবে অনুকরণ করা হয়নি।
হাসান হাফিজুর রহমান সম্পাদিত একুশে ফেব্রুয়ারি সংকলনের জন্য আমি পাঁচটি স্কেচ করেছিলাম। যদিও শিল্পগুণে সেগুলোর কোনো শৈল্পিক মান না থাকলেও প্রত্যক্ষভাবে দেখা ঘটনাগুলোর ঐতিহাসিক দলিল হিসেবে অমূল্য হবে বলে আমার ধারণা। তবে গুলিতে উড়ে যাওয়া রফিকের মাথার খুলি ও ঘাসমাখা মগজ সযত্নে ক্যানভাসের স্ট্রেচারে একপাশে রাখা বা অন্য একজনের গুলিতে ফাটা বাঁশের মতো হাঁ করা পায়ের গোড়ালি, যা ছিল হূদয়বিদারক ও বিভীষিকাময়, তা আঁকিনি।
একুশে ফেব্রুয়ারি স্মরণে আমি পরবর্তী সময়ে বেশ কয়েকটি ড্রয়িং করেছিলাম, যা সে সময় বেশ কয়েকটি পত্রিকায় ছাপা হয়েছিল। এর মধ্যে ১৯৭১ সালের ফেব্রুয়ারিতে আঁকা দুটি উল্লেখযোগ্য। জহির রায়হান সম্পাদিত ইংরেজি সাপ্তাহিক দ্য এক্সপ্রেস পত্রিকায় ছাপা হয়েছিল—বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ, তাই কিষান-কিষানিকে আমি বাংলার গণমানুষের প্রতিনিধিরূপে চিত্রায়িত করেছিলাম। চেক লুঙ্গি পরিহিত কিষানের ডান হাতে উঁচিয়ে ধরা বল্লম, বাঁ হাতে দানবসুলভ এক জন্তুকে প্রতিরোধ করে রয়েছে। কিষানির ডান হাতে কাস্তে এবং বাঁ হাতে উঁচু করে ধরা বাংলা বর্ণমালার প্ল্যাকার্ড। অন্য ড্রয়িংটি ছাপা হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃতি সংসদের সোনার হরিণ চাই চটি পুস্তিকায়। এখানে দেখানো হয়েছিল সেই বীভৎস জন্তু শহীদ মিনারের পাদদেশে ভূলুণ্ঠিত। জন্তু হিসেবে আমি ডাইনোসরকে প্রতীকরূপে বেছে নিয়েছিলাম। ডাইনোসর যদিও তৃণভোজী, কিন্তু তার বিশালাকার ভয়ংকর রূপকে পাকিস্তানি আগ্রাসনের রূপক হিসেবে চিত্রিত করেছিলাম।
No comments