২১ ফেব্রুয়ারি ১৯৫২-আমতলা by গাজীউল হক
২০ তারিখ তিনটার দিকে মধুর রেস্তোরাঁয় বসে আমরা যখন স্বেচ্ছাসেবকের তালিকা তৈরি করছিলাম, তখন মাইকযোগে পূর্ববঙ্গ সরকারের তরফ থেকে ১৪৪ ধারা জারির ঘোষণা করা হয়। ১৪৪ ধারা জারি করার সঙ্গে সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা খুব উত্তেজিত হয়ে ওঠে।
সন্ধ্যায় সলিমুল্লাহ মুসলিম হলে ফকির সাহাবুদ্দিন আহমদের সভাপতিত্বে একটি সভা হয়। সভায় স্থির হয় যে, ১৪৪ ধারা মেনে নেওয়া হবে না। ১৪৪ ধারা অমান্য করতে হবে এবং এ সিদ্ধান্ত সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা কর্মপরিষদের সভায় জানিয়ে দিতে হবে। অনুরূপভাবে ফজলুল হক মুসলিম হলেও আবদুল মোমিনের (পরবর্তীকালে আওয়ামী লীগ সরকারের খাদ্যমন্ত্রী) সভাপতিত্বে একটি সভা হয়। ওই সভাতেও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, ১৪৪ ধারা মেনে নেওয়া চলবে না। ফজলুল হক মুসলিম হলে তখন সহসভাপতি ছিলেন শামসুল আলম এবং সাধারণ সম্পাদক ছিলেন আনোয়ারুল হক খান (পরবর্তীকালে তথ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব)। আনোয়ারুল হক খান এবং শাসসুল আলম দুজনই ফজলুল হক হলের পক্ষ থেকে সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের সদস্য ছিলেন। ফজলুল হক হলের ছাত্রসভায় সাহাবুদ্দীন আহমদ (সাবেক প্রধান বিচারপতি ও রাষ্ট্রপতি) প্রস্তাব আনেন যে, সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদকে আবদুল মোমেন এবং শামসুল আলম ফজলুল হক হলের ছাত্রদের এ সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেবেন।
২০ তারিখে সন্ধ্যার পর নবাবপুর আওয়ামী মুসলিম লীগ অফিসে আবুল হাশিমের সভাপতিত্বে সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা কর্মপরিষদের সভা আরম্ভ হয়। অলি আহাদ, মেডিকেল কলেজের সহসভাপতি গোলাম মওলা, আবদুল মতিন—এঁরা সবাই ১৪৪ ধারা ভাঙার পক্ষে জোর বক্তব্য দেন এবং এঁদের সমর্থন করেন ফজলুল হক মুসলিম হল ইউনিয়নের সহসভাপতি শামসুল আলম। মোহাম্মদ তোয়াহা যদিও ১৪৪ ধারা ভাঙার পক্ষে তাঁর বক্তব্য পেশ করেছিলেন কিন্তু যেহেতু কমিউনিস্ট পার্টির সিদ্ধান্ত ভিন্ন রকম ছিল, সেহেতু তিনি ভোটাভুটির সময় ভোটদানে বিরত থাকেন। পরে ১১-৪ ভোটে সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা কর্মপরিষদ সিদ্ধান্ত নেয় যে, ‘১৪৪ ধারা ভাঙা হবে না।’ ভোটাভুটির পরও অলি আহাদ দৃঢ়কণ্ঠে বললেন, ‘এ সিদ্ধান্ত আমরা মানি না এবং আগামীকাল বিশ্ববিদ্যালয়ে যে ছাত্রসভা হবে, সে ছাত্রসভায় ১৪৪ ধারা ভাঙার পক্ষে যদি রায় হয়, তবে আমরা ভাঙার পক্ষে।’ অলি আহাদের বক্তব্য শুনে আবুল হাশিম রাগত স্বরে বললেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে যে ছাত্রসভা হবে, সে ছাত্রসভায় সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা কর্মপরিষদের পক্ষ থেকে শামসুল হক রাষ্ট্রভাষা কর্মপরিষদের সিদ্ধান্ত ছাত্রদের জানিয়ে দেবেন এবং তিনি সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা কর্মপরিষদের তরফ থেকে বক্তব্য পেশ করবেন। তবু যদি ছাত্ররা ১৪৪ ধারা ভাঙে, তবে স্বাভাবিকভাবে সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা কর্মপরিষদের বিলুপ্তি ঘটবে। আবুল হাশেমের এই বক্তব্যও প্রস্তাব আকারে গৃহীত হয়।
সেদিন ১৪৪ ধারা না ভাঙার পক্ষে যাঁরা মত দিয়েছিলেন, তাঁদের বক্তব্য ছিল, রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ একটি নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন গড়ে তুলবে এবং অনিয়মতান্ত্রিক বা বেআইনি কোনো কাজে তাঁরা যাবেন না। তাঁরা ১৪৪ ধারা ভাঙবেন না। কেননা ১৪৪ ধারা যদি ভাঙা হয়, তবে সরকার নিপীড়নমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ পাবে। ফলে নির্বাচন পিছিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা আছে। সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা কর্মপরিষদে যেসব রাজনৈতিক নেতা ছিলেন, তাঁদের কাছে রাষ্ট্রভাষার জন্য সংগ্রামের চেয়ে পরিষদের নির্বাচন অনেক বেশি আকর্ষণীয় ছিল। আবার বলা যেতে পারে, তাঁরা ১৪৪ ধারা না ভাঙার সিদ্ধান্ত নিয়ে সরকারের নিপীড়নমূলক ব্যবস্থাকে এড়িয়ে যেতে চাইছিলেন। কমিউনিস্ট পার্টিও তখন ১৪৪ ধারা ভাঙার পক্ষে ছিল না।
আটটার কিছু পর থেকেই বিভিন্ন হল থেকে, বিভিন্ন স্কুল-কলেজ থেকে দুজন-দুজন করে ছাত্রবন্ধু বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় জমায়েত হতে শুরু করেন। সাড়ে নয়টার মধ্যে কিছুসংখ্যক ছাত্র হাজির হলেন। এ সময় শামসুল হকও এসে উপস্থিত হন। শামসুল হকের গায়ে ছিল একটি কালো শেরওয়ানি এবং মাথায় জিন্নাহ ক্যাপ। তিনি এসে মধুর রেস্তোরাঁয় বসলেন যে, ‘১৪৪ ধারা ভাঙা ঠিক হবে না’, ‘সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা কর্মপরিষদ যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা মেনে চলা উচিত। নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনই আমাদের করা উচিত।’ কিন্তু তাঁর এ বক্তব্য শোনার মতো মানসিক অবস্থা তখন ছাত্রদের ছিল না। ছাত্ররা উত্তেজিত হয়ে শামসুল হককে চারদিক থেকে নানা প্রশ্ন করছিল। তিনি যথাসাধ্য ছাত্রদের বোঝানোর চেষ্টা করছিলেন। এমনি সময়ে একটি ছোট ঘটনা ঘটল। হাসান হাফিজুর রহমান সাহেব এ সময় এতই উত্তেজিত হয়ে পড়েন যে, তিনি ক্রুদ্ধস্বরে শামসুল হককে লক্ষ্য করে ট্রেইটর বলে চিৎকার করে উঠলেন। কথাটি বলার সঙ্গে সঙ্গে তিনি শামসুল হক সাহেবের মাথা থেকে জিন্নাহ ক্যাপটি ছিনিয়ে নিয়ে দূরে ছুড়ে ফেলে দিলেন এবং চিৎকার করে পুনরায় বলতে থাকেন, ‘ইউ হ্যাভ নো রাইট টু স্পিক, গেট আউট।’
এ সময়ের আরও একটি মুখ মনে পড়ে। আমানুল্লাহ খান নামে একজন, দীর্ঘদেহী উন্নত নাসা, তিনি বেঞ্চের ওপর দাঁড়িয়ে ১৪৪ ধারা ভাঙার পক্ষে বক্তব্য শুরু করে দেন। পুরো পরিবেশ ছিল উত্তেজিত এবং বিশৃঙ্খলাপূর্ণ। এরই মধ্যে অলি আহাদ এলেন এবং আমাকে একান্তে ডেকে বললেন, তিনি যেহেতু সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা কর্মপরিষদের সদস্য এবং যেহেতু বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নন, সেহেতু তিনি কোনো বক্তব্য দেবেন না, তবে ১৪৪ ধারা ভাঙার সিদ্ধান্ত নিতেই হবে।
এরপর একটি ছোট্ট চেয়ার নিয়ে আমতলায় রাখা হলো। ৪ ফেব্রুয়ারি বেলতলায় দাঁড়িয়ে একুশে ফেব্রুয়ারিতে যে ধর্মঘট এবং মিছিলের আহ্বান জানানো হয়েছিল, একুশে ফেব্রুয়ারিতে বেলা ১১টা-সাড়ে ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের আমতলায় সে বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে সভা আরম্ভ হলো। সভাপতি হিসেবে আমার নাম প্রস্তাব করলেন এম আর আখতার মুকুল, সমর্থন করলেন কমরুদ্দিন শহুদ। সভাপতি হিসেবে আমি প্রথমে সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা কর্মপরিষদের পক্ষ থেকে শামসুল হককে তাঁর বক্তব্য দেওয়ার আহ্বান জানাই। কিছু ছাত্র এতে বাধা দিলেও শেষ পর্যন্ত তিনি তাঁর বক্তব্য দেন। জনাব হক বাগ্মী ছিলেন। চমৎকার বলতে পারতেন। ১৪৪ ধারা না ভাঙার পক্ষে তিনি যুক্তি উপস্থাপন করে ছাত্রদের বোঝানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু জনাব হকের কোনো যুক্তিই আমতলায় সমবেত ছাত্ররা মানতে রাজি ছিল না। দু-একজন অবশ্য তাঁর বক্তব্যকে সমর্থন করতে যাচ্ছিলেন কিন্তু সম্মিলিত ছাত্রদের উত্তপ্ত বিক্ষোভের জন্য তা সম্ভব হয়নি। এরপর আবদুল মতিনকে বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম কমিটির পক্ষ থেকে বক্তব্য দেওয়ার জন্য আহ্বান জানানো হয়। আবদুল মতিন শান্তভাবে যুক্তি দিয়ে ১৪৪ ধারা ভাঙার পক্ষে বক্তব্য দিলেন। সবশেষে সভাপতি হিসেবে আমি আমার বক্তব্য দিই। আমার মনে পড়ে, আমি বেশ উত্তেজিত হয়ে পড়েছিলাম। আমার সে দিনের বক্তব্যের সব কথা মনে পড়ে না। যুক্তির চেয়ে আবেগই ছিল বেশি। তবে মোটামুটিভাবে শেষাংশ বোধ হয় এ রকম ছিল, ‘নুরুল আমিন সরকার বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে পুলিশ মোতায়েন করেছে। ১৪৪ ধারা ভাঙা হলে নাকি গুলি করা হবে—ছাত্রদের গুলি করে হত্যা করা হবে। আমরা নুরুল আমিন সরকারের চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করছি। ১৪৪ ধারা আমরা ভাঙব। আমরা দেখতে চাই, নুরুল আমিন সরকারের বারুদাগারে কত বুলেট জমা আছে।’ আমরা বক্তব্য শেষ করার সঙ্গে সঙ্গে চারদিক থেকে ধ্বনিত হলো ‘১৪৪ ধারা মানি না, মানি না।’ ঠিক এমন সময় আবদুস সামাদ চিৎকার করে বললেন, ‘আমরা সত্যাগ্রহ করব এবং কীভাবে করব—কয়জন করে?’ তিনি একটি প্রস্তাবও আনলেন, ১০ জন ১০ জন করে সত্যাগ্রহ করা হবে, ১৪৪ ধারা ভাঙা হবে। প্রস্তাবটি গৃহীত হলো। সত্যাগ্রহীরা শান্তিপূর্ণভাবে ভাষার দাবিতে স্লোগান দিয়ে পরিষদ ভবনের দিকে যাবেন।
মোহাম্মদ সুলতানকে ডেকে বলা হলো, যেসব সত্যাগ্রহীর দল বাইরে যাবে, তাদের প্রত্যেকের নাম-ঠিকানা লিখে রাখার জন্য, যাতে পরে কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে সহজেই নাম-ঠিকানা পাওয়া যায়। মোহাম্মদ সুলতান বিশ্ববিদ্যালয় গেটে চলে গেলেন। বিশ্ববিদ্যালয় গেট তখন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সত্যাগ্রহীরা একেকটি দলে বের হচ্ছে আর সুলতান নাম লিখে চলেছেন, তাঁকে সাহায্য করছেন আজহার (পরবর্তীকালে শিক্ষাসচিব)। হাসান হাফিজুর রহমানও গেটে দাঁড়িয়ে সত্যাগ্রহীদের নামগুলো ঠিক করে দিচ্ছিলেন। প্রথম দলের নেতৃত্ব পূর্বসিদ্ধান্ত মোতাবেক হাবিবুর রহমান শেলী গ্রহণ করেন। হাবিবুর রহমান শেলীর নেতৃত্বেই প্রথম সত্যাগ্রহীর দলটি বেরিয়ে পড়ে। সঙ্গে সঙ্গে দ্বিতীয় দলের নেতৃত্ব দিয়ে ইব্রাহীম তাহা ও আবদুস সামাদ বাইরে বেরোলেন। তৃতীয় দল নিয়ে বেরোলেন আনোয়ারুল হক খান এবং আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ। তিনটি সত্যাগ্রহী দলকেই পুলিশ গ্রেপ্তার করে এবং ট্রাকে তুলে নেয়। এ সময় পুলিশের তরফ থেকে গেটে একটি হামলা ও লাঠিচার্জ হয়।
লাঠিচার্জের পরিপ্রেক্ষিতে আরেকটি সিদ্ধান্ত আমরা নিলাম, চতুর্থ যে দলটি যাবে, তা যাবে সাফিয়ার নেতৃত্বে। এই দলে বেশ কয়েকজন ছাত্রী ছিলেন। এদের সবার নাম মনে পড়ছে না। ডা. সাফিয়া, সুফিয়া ইব্রাহিম, রওশন আরা বাচ্চু, শামসুন নাহারসহ আরও কয়েকজন ছিলেন। পুলিশ এ সময় লাঠিচার্জ করে এবং কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে। রওশন আরা বাচ্চু, ডা. সাফিয়া প্রমুখ বেরিয়ে যাচ্ছিলেন। তখন পুলিশ তাঁদের ওপর লাঠিচার্জ করে। আমি যত দূর জানি, রওশন আরা বাচ্চু ও সুফিয়া ইব্রাহিম পুলিশি হামলায় সামান্য আহত হন।
মেয়েদের সত্যাগ্রহীর দলটি বেরিয়ে যাওয়ার পরপরই এস এ বারী এ টি, শামসুল হক, আনোয়ারুল আজিম (পরবর্তীকালে ছাত্র ইউনিয়ন সম্পাদক), সাইয়িদ আতীকুল্লাহ, সৈয়দ ফজলে আলীর নেতৃত্বে আরও দুটি সত্যাগ্রহী দল বের হয়ে যায় এবং এর পরই দলে দলে ছাত্ররা পুলিশি হামলা এবং বাধা উপেক্ষা করে বেরিয়ে আসতে থাকে। আমার যত দূর মনে পড়ে, মোহাম্মদ সুলতান একসময় বললেন, সত্যাগ্রহীদের নাম লেখার সময় পাওয়া যাচ্ছে না। এ সময় কাঁদানে গ্যাসে বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণ অন্ধকার হয়ে পড়ে। কাঁদানে গ্যাসের একটি শেল এসে সরাসরি আমার বুকে লাগে এবং আমি অজ্ঞান হয়ে পড়ি। পরে জেনেছি, জুলমত আলী খান এবং এম আর আখতার মুকুলসহ কয়েকজন বন্ধু আমাকে ধরাধরি করে বিশ্ববিদ্যালয়ের দোতলায় নিয়ে যায়। আমি অজ্ঞান হওয়ার আগে দেখেছি, বিশৃঙ্খলাজনিত অবস্থা। পুলিশের লাঠিচার্জের ফলে ছাত্ররা উত্তেজিত হয়ে পুলিশের ওপর ইটপাটকেল ছুড়ছে। ছাত্ররা মেইন গেট দিয়ে বেরোতে না পেরে বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্ব দিকে মধুর রেস্তোরাঁর সঙ্গে পূর্ব-পশ্চিমে লম্বা যে ছোট প্রাচীরটি ছিল, তা টপকিয়ে মেডিকেল কলেজে যেতে থাকে এবং মেডিকেল কলেজ থেকে বেরিয়ে পরিষদের দিকে মিছিল নিয়ে এগোনোর চেষ্টা করে। পুলিশের ওপর ছাত্রদের ইটপাটকেল ছোড়া নিয়ে যে কী রকম উত্তেজনাকর পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছিল, সে দিনের একটি ছোট ঘটনার কথা উল্লেখেই তা বোঝা যাবে। হাসান হাফিজুর রহমান ও আজহারকে পাঠানো হয়েছিল, যাতে ইটপাটকেল ছোড়া বন্ধ হয় তার জন্য চেষ্টা করতে। হাসান হাফিজুর রহমান ও আজহার গেলেন। কিন্তু পরিস্থিতি এমন ছিল যে, ইট ছুড়তে বারণ না করে তাঁরা নিজেরাই ইটের বড় বড় টুকরো নিয়ে পুলিশের প্রতি ছুড়তে থাকেন।
একটি কথা এখানে বলা প্রয়োজন। এ কথা সত্য, শামসুল হক সভায় ১৪৪ ধারা না ভাঙার পক্ষে বক্তব্য রেখেছিলেন, কিন্তু যখনই ১৪৪ ধারা ভাঙার সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো, তখনই শামসুল হক আমাকে বললেন, এ সিদ্ধান্ত আমি মেনে নিলাম এবং আমি এ সংগ্রামের সঙ্গে আছি। সুতরাং সেদিন যেকোনো কারণেই হোক ১৪৪ ধারা ভাঙার বিরুদ্ধে যাঁরা ছিলেন, আমাদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর তাঁরা প্রায় সবাই আমাদের সিদ্ধান্তকেই মেনে নেন এবং আন্দোলনে অংশ নেন। এঁদের অনেকেই ওই দিন গ্রেপ্তার হন। শামসুল হকও পরবর্তীকালে গ্রেপ্তার হয়ে দীর্ঘদিন জেলে ছিলেন। ইতিমধ্যে ১৯৫৬ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারি বাংলা ভাষা দেশের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতি পেয়ে গেছে।
২০ তারিখে সন্ধ্যার পর নবাবপুর আওয়ামী মুসলিম লীগ অফিসে আবুল হাশিমের সভাপতিত্বে সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা কর্মপরিষদের সভা আরম্ভ হয়। অলি আহাদ, মেডিকেল কলেজের সহসভাপতি গোলাম মওলা, আবদুল মতিন—এঁরা সবাই ১৪৪ ধারা ভাঙার পক্ষে জোর বক্তব্য দেন এবং এঁদের সমর্থন করেন ফজলুল হক মুসলিম হল ইউনিয়নের সহসভাপতি শামসুল আলম। মোহাম্মদ তোয়াহা যদিও ১৪৪ ধারা ভাঙার পক্ষে তাঁর বক্তব্য পেশ করেছিলেন কিন্তু যেহেতু কমিউনিস্ট পার্টির সিদ্ধান্ত ভিন্ন রকম ছিল, সেহেতু তিনি ভোটাভুটির সময় ভোটদানে বিরত থাকেন। পরে ১১-৪ ভোটে সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা কর্মপরিষদ সিদ্ধান্ত নেয় যে, ‘১৪৪ ধারা ভাঙা হবে না।’ ভোটাভুটির পরও অলি আহাদ দৃঢ়কণ্ঠে বললেন, ‘এ সিদ্ধান্ত আমরা মানি না এবং আগামীকাল বিশ্ববিদ্যালয়ে যে ছাত্রসভা হবে, সে ছাত্রসভায় ১৪৪ ধারা ভাঙার পক্ষে যদি রায় হয়, তবে আমরা ভাঙার পক্ষে।’ অলি আহাদের বক্তব্য শুনে আবুল হাশিম রাগত স্বরে বললেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে যে ছাত্রসভা হবে, সে ছাত্রসভায় সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা কর্মপরিষদের পক্ষ থেকে শামসুল হক রাষ্ট্রভাষা কর্মপরিষদের সিদ্ধান্ত ছাত্রদের জানিয়ে দেবেন এবং তিনি সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা কর্মপরিষদের তরফ থেকে বক্তব্য পেশ করবেন। তবু যদি ছাত্ররা ১৪৪ ধারা ভাঙে, তবে স্বাভাবিকভাবে সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা কর্মপরিষদের বিলুপ্তি ঘটবে। আবুল হাশেমের এই বক্তব্যও প্রস্তাব আকারে গৃহীত হয়।
সেদিন ১৪৪ ধারা না ভাঙার পক্ষে যাঁরা মত দিয়েছিলেন, তাঁদের বক্তব্য ছিল, রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ একটি নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন গড়ে তুলবে এবং অনিয়মতান্ত্রিক বা বেআইনি কোনো কাজে তাঁরা যাবেন না। তাঁরা ১৪৪ ধারা ভাঙবেন না। কেননা ১৪৪ ধারা যদি ভাঙা হয়, তবে সরকার নিপীড়নমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ পাবে। ফলে নির্বাচন পিছিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা আছে। সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা কর্মপরিষদে যেসব রাজনৈতিক নেতা ছিলেন, তাঁদের কাছে রাষ্ট্রভাষার জন্য সংগ্রামের চেয়ে পরিষদের নির্বাচন অনেক বেশি আকর্ষণীয় ছিল। আবার বলা যেতে পারে, তাঁরা ১৪৪ ধারা না ভাঙার সিদ্ধান্ত নিয়ে সরকারের নিপীড়নমূলক ব্যবস্থাকে এড়িয়ে যেতে চাইছিলেন। কমিউনিস্ট পার্টিও তখন ১৪৪ ধারা ভাঙার পক্ষে ছিল না।
আটটার কিছু পর থেকেই বিভিন্ন হল থেকে, বিভিন্ন স্কুল-কলেজ থেকে দুজন-দুজন করে ছাত্রবন্ধু বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় জমায়েত হতে শুরু করেন। সাড়ে নয়টার মধ্যে কিছুসংখ্যক ছাত্র হাজির হলেন। এ সময় শামসুল হকও এসে উপস্থিত হন। শামসুল হকের গায়ে ছিল একটি কালো শেরওয়ানি এবং মাথায় জিন্নাহ ক্যাপ। তিনি এসে মধুর রেস্তোরাঁয় বসলেন যে, ‘১৪৪ ধারা ভাঙা ঠিক হবে না’, ‘সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা কর্মপরিষদ যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা মেনে চলা উচিত। নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনই আমাদের করা উচিত।’ কিন্তু তাঁর এ বক্তব্য শোনার মতো মানসিক অবস্থা তখন ছাত্রদের ছিল না। ছাত্ররা উত্তেজিত হয়ে শামসুল হককে চারদিক থেকে নানা প্রশ্ন করছিল। তিনি যথাসাধ্য ছাত্রদের বোঝানোর চেষ্টা করছিলেন। এমনি সময়ে একটি ছোট ঘটনা ঘটল। হাসান হাফিজুর রহমান সাহেব এ সময় এতই উত্তেজিত হয়ে পড়েন যে, তিনি ক্রুদ্ধস্বরে শামসুল হককে লক্ষ্য করে ট্রেইটর বলে চিৎকার করে উঠলেন। কথাটি বলার সঙ্গে সঙ্গে তিনি শামসুল হক সাহেবের মাথা থেকে জিন্নাহ ক্যাপটি ছিনিয়ে নিয়ে দূরে ছুড়ে ফেলে দিলেন এবং চিৎকার করে পুনরায় বলতে থাকেন, ‘ইউ হ্যাভ নো রাইট টু স্পিক, গেট আউট।’
এ সময়ের আরও একটি মুখ মনে পড়ে। আমানুল্লাহ খান নামে একজন, দীর্ঘদেহী উন্নত নাসা, তিনি বেঞ্চের ওপর দাঁড়িয়ে ১৪৪ ধারা ভাঙার পক্ষে বক্তব্য শুরু করে দেন। পুরো পরিবেশ ছিল উত্তেজিত এবং বিশৃঙ্খলাপূর্ণ। এরই মধ্যে অলি আহাদ এলেন এবং আমাকে একান্তে ডেকে বললেন, তিনি যেহেতু সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা কর্মপরিষদের সদস্য এবং যেহেতু বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নন, সেহেতু তিনি কোনো বক্তব্য দেবেন না, তবে ১৪৪ ধারা ভাঙার সিদ্ধান্ত নিতেই হবে।
এরপর একটি ছোট্ট চেয়ার নিয়ে আমতলায় রাখা হলো। ৪ ফেব্রুয়ারি বেলতলায় দাঁড়িয়ে একুশে ফেব্রুয়ারিতে যে ধর্মঘট এবং মিছিলের আহ্বান জানানো হয়েছিল, একুশে ফেব্রুয়ারিতে বেলা ১১টা-সাড়ে ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের আমতলায় সে বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে সভা আরম্ভ হলো। সভাপতি হিসেবে আমার নাম প্রস্তাব করলেন এম আর আখতার মুকুল, সমর্থন করলেন কমরুদ্দিন শহুদ। সভাপতি হিসেবে আমি প্রথমে সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা কর্মপরিষদের পক্ষ থেকে শামসুল হককে তাঁর বক্তব্য দেওয়ার আহ্বান জানাই। কিছু ছাত্র এতে বাধা দিলেও শেষ পর্যন্ত তিনি তাঁর বক্তব্য দেন। জনাব হক বাগ্মী ছিলেন। চমৎকার বলতে পারতেন। ১৪৪ ধারা না ভাঙার পক্ষে তিনি যুক্তি উপস্থাপন করে ছাত্রদের বোঝানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু জনাব হকের কোনো যুক্তিই আমতলায় সমবেত ছাত্ররা মানতে রাজি ছিল না। দু-একজন অবশ্য তাঁর বক্তব্যকে সমর্থন করতে যাচ্ছিলেন কিন্তু সম্মিলিত ছাত্রদের উত্তপ্ত বিক্ষোভের জন্য তা সম্ভব হয়নি। এরপর আবদুল মতিনকে বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম কমিটির পক্ষ থেকে বক্তব্য দেওয়ার জন্য আহ্বান জানানো হয়। আবদুল মতিন শান্তভাবে যুক্তি দিয়ে ১৪৪ ধারা ভাঙার পক্ষে বক্তব্য দিলেন। সবশেষে সভাপতি হিসেবে আমি আমার বক্তব্য দিই। আমার মনে পড়ে, আমি বেশ উত্তেজিত হয়ে পড়েছিলাম। আমার সে দিনের বক্তব্যের সব কথা মনে পড়ে না। যুক্তির চেয়ে আবেগই ছিল বেশি। তবে মোটামুটিভাবে শেষাংশ বোধ হয় এ রকম ছিল, ‘নুরুল আমিন সরকার বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে পুলিশ মোতায়েন করেছে। ১৪৪ ধারা ভাঙা হলে নাকি গুলি করা হবে—ছাত্রদের গুলি করে হত্যা করা হবে। আমরা নুরুল আমিন সরকারের চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করছি। ১৪৪ ধারা আমরা ভাঙব। আমরা দেখতে চাই, নুরুল আমিন সরকারের বারুদাগারে কত বুলেট জমা আছে।’ আমরা বক্তব্য শেষ করার সঙ্গে সঙ্গে চারদিক থেকে ধ্বনিত হলো ‘১৪৪ ধারা মানি না, মানি না।’ ঠিক এমন সময় আবদুস সামাদ চিৎকার করে বললেন, ‘আমরা সত্যাগ্রহ করব এবং কীভাবে করব—কয়জন করে?’ তিনি একটি প্রস্তাবও আনলেন, ১০ জন ১০ জন করে সত্যাগ্রহ করা হবে, ১৪৪ ধারা ভাঙা হবে। প্রস্তাবটি গৃহীত হলো। সত্যাগ্রহীরা শান্তিপূর্ণভাবে ভাষার দাবিতে স্লোগান দিয়ে পরিষদ ভবনের দিকে যাবেন।
মোহাম্মদ সুলতানকে ডেকে বলা হলো, যেসব সত্যাগ্রহীর দল বাইরে যাবে, তাদের প্রত্যেকের নাম-ঠিকানা লিখে রাখার জন্য, যাতে পরে কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে সহজেই নাম-ঠিকানা পাওয়া যায়। মোহাম্মদ সুলতান বিশ্ববিদ্যালয় গেটে চলে গেলেন। বিশ্ববিদ্যালয় গেট তখন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সত্যাগ্রহীরা একেকটি দলে বের হচ্ছে আর সুলতান নাম লিখে চলেছেন, তাঁকে সাহায্য করছেন আজহার (পরবর্তীকালে শিক্ষাসচিব)। হাসান হাফিজুর রহমানও গেটে দাঁড়িয়ে সত্যাগ্রহীদের নামগুলো ঠিক করে দিচ্ছিলেন। প্রথম দলের নেতৃত্ব পূর্বসিদ্ধান্ত মোতাবেক হাবিবুর রহমান শেলী গ্রহণ করেন। হাবিবুর রহমান শেলীর নেতৃত্বেই প্রথম সত্যাগ্রহীর দলটি বেরিয়ে পড়ে। সঙ্গে সঙ্গে দ্বিতীয় দলের নেতৃত্ব দিয়ে ইব্রাহীম তাহা ও আবদুস সামাদ বাইরে বেরোলেন। তৃতীয় দল নিয়ে বেরোলেন আনোয়ারুল হক খান এবং আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ। তিনটি সত্যাগ্রহী দলকেই পুলিশ গ্রেপ্তার করে এবং ট্রাকে তুলে নেয়। এ সময় পুলিশের তরফ থেকে গেটে একটি হামলা ও লাঠিচার্জ হয়।
লাঠিচার্জের পরিপ্রেক্ষিতে আরেকটি সিদ্ধান্ত আমরা নিলাম, চতুর্থ যে দলটি যাবে, তা যাবে সাফিয়ার নেতৃত্বে। এই দলে বেশ কয়েকজন ছাত্রী ছিলেন। এদের সবার নাম মনে পড়ছে না। ডা. সাফিয়া, সুফিয়া ইব্রাহিম, রওশন আরা বাচ্চু, শামসুন নাহারসহ আরও কয়েকজন ছিলেন। পুলিশ এ সময় লাঠিচার্জ করে এবং কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে। রওশন আরা বাচ্চু, ডা. সাফিয়া প্রমুখ বেরিয়ে যাচ্ছিলেন। তখন পুলিশ তাঁদের ওপর লাঠিচার্জ করে। আমি যত দূর জানি, রওশন আরা বাচ্চু ও সুফিয়া ইব্রাহিম পুলিশি হামলায় সামান্য আহত হন।
মেয়েদের সত্যাগ্রহীর দলটি বেরিয়ে যাওয়ার পরপরই এস এ বারী এ টি, শামসুল হক, আনোয়ারুল আজিম (পরবর্তীকালে ছাত্র ইউনিয়ন সম্পাদক), সাইয়িদ আতীকুল্লাহ, সৈয়দ ফজলে আলীর নেতৃত্বে আরও দুটি সত্যাগ্রহী দল বের হয়ে যায় এবং এর পরই দলে দলে ছাত্ররা পুলিশি হামলা এবং বাধা উপেক্ষা করে বেরিয়ে আসতে থাকে। আমার যত দূর মনে পড়ে, মোহাম্মদ সুলতান একসময় বললেন, সত্যাগ্রহীদের নাম লেখার সময় পাওয়া যাচ্ছে না। এ সময় কাঁদানে গ্যাসে বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণ অন্ধকার হয়ে পড়ে। কাঁদানে গ্যাসের একটি শেল এসে সরাসরি আমার বুকে লাগে এবং আমি অজ্ঞান হয়ে পড়ি। পরে জেনেছি, জুলমত আলী খান এবং এম আর আখতার মুকুলসহ কয়েকজন বন্ধু আমাকে ধরাধরি করে বিশ্ববিদ্যালয়ের দোতলায় নিয়ে যায়। আমি অজ্ঞান হওয়ার আগে দেখেছি, বিশৃঙ্খলাজনিত অবস্থা। পুলিশের লাঠিচার্জের ফলে ছাত্ররা উত্তেজিত হয়ে পুলিশের ওপর ইটপাটকেল ছুড়ছে। ছাত্ররা মেইন গেট দিয়ে বেরোতে না পেরে বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্ব দিকে মধুর রেস্তোরাঁর সঙ্গে পূর্ব-পশ্চিমে লম্বা যে ছোট প্রাচীরটি ছিল, তা টপকিয়ে মেডিকেল কলেজে যেতে থাকে এবং মেডিকেল কলেজ থেকে বেরিয়ে পরিষদের দিকে মিছিল নিয়ে এগোনোর চেষ্টা করে। পুলিশের ওপর ছাত্রদের ইটপাটকেল ছোড়া নিয়ে যে কী রকম উত্তেজনাকর পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছিল, সে দিনের একটি ছোট ঘটনার কথা উল্লেখেই তা বোঝা যাবে। হাসান হাফিজুর রহমান ও আজহারকে পাঠানো হয়েছিল, যাতে ইটপাটকেল ছোড়া বন্ধ হয় তার জন্য চেষ্টা করতে। হাসান হাফিজুর রহমান ও আজহার গেলেন। কিন্তু পরিস্থিতি এমন ছিল যে, ইট ছুড়তে বারণ না করে তাঁরা নিজেরাই ইটের বড় বড় টুকরো নিয়ে পুলিশের প্রতি ছুড়তে থাকেন।
একটি কথা এখানে বলা প্রয়োজন। এ কথা সত্য, শামসুল হক সভায় ১৪৪ ধারা না ভাঙার পক্ষে বক্তব্য রেখেছিলেন, কিন্তু যখনই ১৪৪ ধারা ভাঙার সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো, তখনই শামসুল হক আমাকে বললেন, এ সিদ্ধান্ত আমি মেনে নিলাম এবং আমি এ সংগ্রামের সঙ্গে আছি। সুতরাং সেদিন যেকোনো কারণেই হোক ১৪৪ ধারা ভাঙার বিরুদ্ধে যাঁরা ছিলেন, আমাদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর তাঁরা প্রায় সবাই আমাদের সিদ্ধান্তকেই মেনে নেন এবং আন্দোলনে অংশ নেন। এঁদের অনেকেই ওই দিন গ্রেপ্তার হন। শামসুল হকও পরবর্তীকালে গ্রেপ্তার হয়ে দীর্ঘদিন জেলে ছিলেন। ইতিমধ্যে ১৯৫৬ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারি বাংলা ভাষা দেশের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতি পেয়ে গেছে।
No comments