মাতৃভাষার সঠিক মূল্যায়ন প্রয়োজন by হাফেজা নুসরাত জাহান
বর্তমান যুগে ভালো একটা চাকরি পেতে হলে ইংরেজিতে দক্ষ হতে হয়। যে যত বেশি ইংরেজিতে দক্ষ, সে তত ভালো চাকরি পাবে_এটা যেন এখন নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। চাকরির ক্ষেত্রে বাংলা ভাষা এখন সম্পূর্ণ অবহেলিত, উপেক্ষিত। তা ছাড়া বিভিন্ন আইনের গ্রন্থগুলো এখনো ইংরেজিতে ব্যবহৃত হয়, যা বাংলায় ভাষান্তরিত করা খুবই জরুরি।
পৃথিবীতে আমরাই প্রথম জাতি, যারা ভাষার জন্য প্রাণ দিয়েছি; কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, আমরা আমাদের সেই ভাষাকে আজ সঠিকভাবে মূল্যায়ন করছি না। এখনকার অভিভাবকরা তাঁদের সন্তানকে ইংরেজিমাধ্যম স্কুলে ভর্তি করেন তাঁদের সন্তানরা যাতে অনর্গল ইংরেজিতে কথা বলতে পারে। কিন্তু তাদের অনেকেই বাংলা ভাষা সম্পর্কে ভালোভাবে জানে না, বাংলা ভাষা শুদ্ধরূপে উচ্চারণ করতে পারে না। অভিভাবকরাও তাঁদের সন্তানদের বাংলা ভাষা শেখানোর প্রতি কোনো আগ্রহ দেখান না। তাঁরা বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ইংরেজি শেখান। এটা ঠিক, বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হলে ইংরেজি শিখতে হবে। কিন্তু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সেই কথাটি ভুলে গেলে চলবে না, তা হলো 'আগে চাই বাংলা ভাষার গাঁথুনি, তারপর ইংরেজি শিক্ষার পত্তন'
অনেকে অভিযোগ করেছেন, সরকার ও গণমাধ্যম এ ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখছে না কেন? তাঁদের প্রশ্নের উত্তরে বলা যায়, শুধু সরকার ও গণমাধ্যমের ভূমিকাই যথেষ্ট নয়। এ জন্য প্রয়োজন আপামর জনগণের অংশগ্রহণ। আমরা প্রায় ১৫ কোটি জনগণ যদি আমাদের ভাষার সঠিক ব্যবহার না করি, তাহলে সরকার ও গণমাধ্যমের ভূমিকা কাজে আসবে না। তা সত্ত্বেও সরকার ও গণমাধ্যম ভাষার সঠিক ব্যবহারের জন্য কাজ করছে, যার পরিধি আরো বৃদ্ধি প্রয়োজন।
বাংলাদেশে রয়েছে ৫৭টি নৃতাত্তি্বকগোষ্ঠীর মানুষ। এসব জনগোষ্ঠীর অনেকেরই নিজস্ব ভাষা নেই, নেই স্বতন্ত্র লিপিও। রয়েছে তাদের নিজস্ব কিছু শব্দ। এসব শব্দের পেছনে রয়েছে কিছু ইতিহাস, কিছু ঐতিহ্য, রয়েছে বৈশিষ্ট্যপূর্ণ আচার-অনুষ্ঠানের কিছু কাহিনী। তাতে রয়েছে তাদের গর্ববোধের কিছু উপাদান, বিশ্বায়নের প্লাবনে ভেসে যাওয়ার আগেই এসব সংরক্ষণ অত্যন্ত জরুরি। তাদের কথাগুলো যেন হারিয়ে না যায়। এ ক্ষেত্রে বাংলা একাডেমী ও এশিয়াটিক সোসাইটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে, যাদের নিজস্ব লিপি নেই, তাদের শব্দগুলো বাংলায় ধারণ করার ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নয়নে আজ বিশ্ব একধাপ এগিয়ে গেছে। বিশ্বব্যাপী আজ উন্নয়নের জোয়ার। এই উন্নয়নে গা ভাসিয়ে দিচ্ছে আমাদের আজকের প্রজন্ম। তারা আজ আকাশ-সংস্কৃতির বল্গাহীন প্ররোচনায় আকৃষ্ট হয়ে পড়ছে। যুবসমাজ আজ পশ্চিমা ভাষা, সংস্কৃতি ও রীতিনীতিকে পছন্দ করে। এর ফলে তৈরি হয়েছে এক উদ্ভট ভাষা, যার নাম বাংরেজি, অর্থাৎ বাংলা ও ইংরেজি মিশ্রিত হয়ে তৈরি হচ্ছে এই ভাষা। এই প্রজন্ম আজ এই ভাষা ব্যবহারে আগ্রহী। ইদানীং আধুনিক গানগুলো তৈরি হচ্ছে এই বাংরেজি ভাষায়। এ ছাড়া শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে সব বয়সের মানুষ ভারতের হিন্দি সিরিয়াল দেখে দেখে তাদের মতো করে কথা বলার চেষ্টা করে। এমনকি পোশাক কেনার সময়ও হিন্দি সিরিয়ালের চরিত্রগুলোর মতো পোশাক কিনতে পছন্দ করে_যা মোটেও কাম্য নয়।
তা ছাড়া বিদেশি অনেক শব্দ বাংলার মধ্যে ঢুকে পড়ছে, যা আমরা অহরহ ব্যবহার করছি। আমাদের এ থেকে বেরিয়ে আসার জন্য এগিয়ে আসতে হবে।
বাংলা ভাষার প্রতি আমাদের ভালোবাসা ও স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর ইউনেস্কো বাংলাকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা হিসেবে গ্রহণ করে। বিশ্বের বুকে আমরা পরিচিতি পাই একটি আলাদা জাতি হিসেবে। এ বিশেষ দিবসটিকে ২০০০ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি বিশ্বের ১৮৮টি দেশ 'আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস' হিসেবে
পালন করে।
বাংলা ভাষা ও বাংলা ভাষার সৃষ্টি সম্ভারকে ইন্টারনেটে বিশ্বের সব মানুষের কাছে পাঠযোগ্য করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ উদ্যোগ সফল হলে ইন্টারনেটের মাধ্যমে সারা বিশ্বের মানুষ তাদের নিজ ভাষায় বাংলা ভাষার সৃষ্টি সম্ভার যেমন পাঠ করতে পারবে, তেমনি অন্যান্য ভাষার সৃষ্টি সম্ভারও বাংলা ভাষায়ই পাঠ করা সম্ভব হবে। বাংলাকে 'ইউনিভার্সেল নেটওয়ার্কিং ল্যাঙ্গুয়েজে' (ইউএনএল) পরিণত করার কাজ শুরু করেছে এশিয়াটিক সোসাইটি অব বাংলাদেশ। এ উদ্যোগ সফল হলে বাংলা ভাষা বিশ্বের বুকে আন্তর্জাতিক ভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাবে।
অনেকে অভিযোগ করেছেন, সরকার ও গণমাধ্যম এ ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখছে না কেন? তাঁদের প্রশ্নের উত্তরে বলা যায়, শুধু সরকার ও গণমাধ্যমের ভূমিকাই যথেষ্ট নয়। এ জন্য প্রয়োজন আপামর জনগণের অংশগ্রহণ। আমরা প্রায় ১৫ কোটি জনগণ যদি আমাদের ভাষার সঠিক ব্যবহার না করি, তাহলে সরকার ও গণমাধ্যমের ভূমিকা কাজে আসবে না। তা সত্ত্বেও সরকার ও গণমাধ্যম ভাষার সঠিক ব্যবহারের জন্য কাজ করছে, যার পরিধি আরো বৃদ্ধি প্রয়োজন।
বাংলাদেশে রয়েছে ৫৭টি নৃতাত্তি্বকগোষ্ঠীর মানুষ। এসব জনগোষ্ঠীর অনেকেরই নিজস্ব ভাষা নেই, নেই স্বতন্ত্র লিপিও। রয়েছে তাদের নিজস্ব কিছু শব্দ। এসব শব্দের পেছনে রয়েছে কিছু ইতিহাস, কিছু ঐতিহ্য, রয়েছে বৈশিষ্ট্যপূর্ণ আচার-অনুষ্ঠানের কিছু কাহিনী। তাতে রয়েছে তাদের গর্ববোধের কিছু উপাদান, বিশ্বায়নের প্লাবনে ভেসে যাওয়ার আগেই এসব সংরক্ষণ অত্যন্ত জরুরি। তাদের কথাগুলো যেন হারিয়ে না যায়। এ ক্ষেত্রে বাংলা একাডেমী ও এশিয়াটিক সোসাইটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে, যাদের নিজস্ব লিপি নেই, তাদের শব্দগুলো বাংলায় ধারণ করার ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নয়নে আজ বিশ্ব একধাপ এগিয়ে গেছে। বিশ্বব্যাপী আজ উন্নয়নের জোয়ার। এই উন্নয়নে গা ভাসিয়ে দিচ্ছে আমাদের আজকের প্রজন্ম। তারা আজ আকাশ-সংস্কৃতির বল্গাহীন প্ররোচনায় আকৃষ্ট হয়ে পড়ছে। যুবসমাজ আজ পশ্চিমা ভাষা, সংস্কৃতি ও রীতিনীতিকে পছন্দ করে। এর ফলে তৈরি হয়েছে এক উদ্ভট ভাষা, যার নাম বাংরেজি, অর্থাৎ বাংলা ও ইংরেজি মিশ্রিত হয়ে তৈরি হচ্ছে এই ভাষা। এই প্রজন্ম আজ এই ভাষা ব্যবহারে আগ্রহী। ইদানীং আধুনিক গানগুলো তৈরি হচ্ছে এই বাংরেজি ভাষায়। এ ছাড়া শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে সব বয়সের মানুষ ভারতের হিন্দি সিরিয়াল দেখে দেখে তাদের মতো করে কথা বলার চেষ্টা করে। এমনকি পোশাক কেনার সময়ও হিন্দি সিরিয়ালের চরিত্রগুলোর মতো পোশাক কিনতে পছন্দ করে_যা মোটেও কাম্য নয়।
তা ছাড়া বিদেশি অনেক শব্দ বাংলার মধ্যে ঢুকে পড়ছে, যা আমরা অহরহ ব্যবহার করছি। আমাদের এ থেকে বেরিয়ে আসার জন্য এগিয়ে আসতে হবে।
বাংলা ভাষার প্রতি আমাদের ভালোবাসা ও স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর ইউনেস্কো বাংলাকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা হিসেবে গ্রহণ করে। বিশ্বের বুকে আমরা পরিচিতি পাই একটি আলাদা জাতি হিসেবে। এ বিশেষ দিবসটিকে ২০০০ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি বিশ্বের ১৮৮টি দেশ 'আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস' হিসেবে
পালন করে।
বাংলা ভাষা ও বাংলা ভাষার সৃষ্টি সম্ভারকে ইন্টারনেটে বিশ্বের সব মানুষের কাছে পাঠযোগ্য করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ উদ্যোগ সফল হলে ইন্টারনেটের মাধ্যমে সারা বিশ্বের মানুষ তাদের নিজ ভাষায় বাংলা ভাষার সৃষ্টি সম্ভার যেমন পাঠ করতে পারবে, তেমনি অন্যান্য ভাষার সৃষ্টি সম্ভারও বাংলা ভাষায়ই পাঠ করা সম্ভব হবে। বাংলাকে 'ইউনিভার্সেল নেটওয়ার্কিং ল্যাঙ্গুয়েজে' (ইউএনএল) পরিণত করার কাজ শুরু করেছে এশিয়াটিক সোসাইটি অব বাংলাদেশ। এ উদ্যোগ সফল হলে বাংলা ভাষা বিশ্বের বুকে আন্তর্জাতিক ভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাবে।
No comments