আমরা ৮ই ফাল্গুন হারিয়ে ফেলেছি by আবু কালাম আজাদ

মাতৃভাষার জন্য একটি দেশের মানুষ জীবন দিয়েছে। কতটা ভালোবাসা সেই ভাষার প্রতি, আর কেমনই বা সে দেশের মানুষের জীবনযাত্রা-সংস্কৃতি? বিশ্ববাসীর মধ্যে আগ্রহ সৃষ্টির পরিপ্রেক্ষিতেই মস্কো, বোস্টন, হাইডেলবার্গসহ চীন-জাপানের বিভিন্ন নামিদামি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতিকে জানার জন্য বাংলা স্টাডিজ, বাংলা ইনস্টিটিউট ইত্যাদি চালু করেছে। সিয়েরা লিওন বাংলাকে দ্বিতীয় রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দিয়েছে। অথচ আমাদের অবস্থান সম্পূর্ণ উল্টো।


আমার দেশের মানুষ বাংলা ভাষাকে বাদ দিয়ে ভিন্ন ভাষায় কথা বলাকে ফ্যাশন হিসেবে দেখছে। বর্তমানের ডিজুস কালচার, এফএম রেডিওর ভাষা তো আরো জঘন্য। কয়েকটি ভাষার নির্লজ্জ মিশ্রণ, বাংলাকে ফ্যাশনের সফট ইংরেজি অথবা হিন্দি ঢঙে উচ্চারণ রীতিমতো অমার্জনীয়। লজ্জা জাতির জন্য যে জাতীয়ভাবে এখনো ভাষার এরূপ অপব্যবহার প্রত্যাখ্যান করা হয়নি।
তবে যেসব বিদেশি শব্দ ভাষায় নিত্য ব্যবহারের ফলে দৈনন্দিন বাংলা হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে, সেসব শব্দ বাংলা হিসেবে বাংলা ভাষা অভিধানে সংযুক্ত করা যেতে পারে। এতে বাংলা আরো সমৃদ্ধ হবে। যেমনটি হচ্ছে ইংরেজি ভাষার ক্ষেত্রে। ভাষার অপব্যবহার বিকৃতীকরণ চলবে না, বিশ্বায়নের যুগে ইংলিশ ব্যতীত কোনোভাবে উন্নয়ন সম্ভব নয়, এমন কথা বলে অনেকেই ইংরেজির পক্ষে দালালি করে থাকেন, যেন তাঁরা বহুজাতিক কম্পানি, ঔপনিবেশিক শক্তির বাংলাদেশ প্রতিনিধি। ইংরেজির প্রতি শ্রদ্ধাবোধ রেখেই বলছি, তাহলে রাশিয়া, কোরিয়া, চীন, জাপান ইংরেজি ছাড়া কি উন্নত করেনি?
অথচ আজ আমরা নিজের সম্মান নিজেরাই ভূলুণ্ঠিত করছি। বাংলাদেশ শুধু বাংলাই নয়, আরো কয়েকটি বিলুপ্তপ্রায় আঞ্চলিক ভাষায় সমৃদ্ধ, যা জাতির জন্য খুবই গর্বের, আত্মতৃপ্তির ও অহংকারের। আমাদের দেশের শাসকগোষ্ঠীর আরো একটি মনোভাব লক্ষ করা যায়। তারা নিজের মাতৃভাষাকে তো ধ্বংসের পথে নিয়ে যাচ্ছেই, উল্টো দেশের আরো যেসব ক্ষুদ্র জাতিসত্তা রয়েছে তাদের ভাষা ও সংস্কৃতি ধ্বংস করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। আমাদের উচিত, বাঙালি বাদে বাংলাদেশে অন্য যেসব ভাষা ও সংস্কৃতি রয়েছে তা সংরক্ষণ ও জাতীয়ভাবে পদক্ষেপ গ্রহণ করা। আমরা আটই ফাল্গুন হারিয়ে ফেলেছি। জাতীয়ভাবে পালন করা হয় একুশে ফেব্রুয়ারি। আমরা যে ভাষার জন্য জীবন দিলাম, সেই ভাষার দিনটি পালন করছি আরেকটি বিদেশি ভাষায়। এ ক্ষেত্রে সরকারের উচিত জাতীয়ভাবে আট ফাল্গুন পালন করা। আন্তর্জাতিকভাবে একুশে ফেব্রুয়ারি পালিত হলেও বহির্বিশ্বে বাংলা তারিখ গণনা হয় না। এ ব্যাপারে সরকারের উদ্যোগী হওয়া উচিত। যেসব দেশ বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি নিয়ে কাজ করছে তাদের বাংলা তারিখ গণনায় উদ্বুদ্ধ করা যেতে পারে।

No comments

Powered by Blogger.