হজ হোক আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য by মুফতি এনায়েতুল্লাহ

ইসলামের মূল পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে হজ হচ্ছে অন্যতম ফরজ। আল্লাহতায়ালা আর্থিকভাবে সামর্থ্যবান ব্যক্তিদের ওপর হজ ফরজ করেছেন। হজের প্রচলন শুরু হয় হজরত ইবরাহিম (আ.)-এর সময়কাল থেকে। হজ অন্যান্য ফরজ ইবাদতের মতোই গুরুত্বপূর্ণ।


এই ফরজকে অবজ্ঞা করলে বা সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও যারা পালন করবেন না, পরকালে তাদের জন্য আল্লাহর কঠিন শাস্তি নির্ধারিত রয়েছে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহতায়ালা কোরআনুল কারিমে ইরশাদ করেন, 'মানুষের মধ্যে যার বায়তুল্লাহ শরিফে যাওয়ার সামর্থ্য আছে, আল্লাহর উদ্দেশে তার জন্য ওই বায়তুল্লাহ শরিফে হজ করা অবশ্য কর্তব্য।'_সূরা আল ইমরান :৯৭
উম্মতে মুহাম্মদীর ওপর ৬৩১ খ্রিস্টাব্দের নবম হিজরিতে হজের বিধান ফরজ হয়। পরের বছর ৬৩২ খ্রিস্টাব্দে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) হজ আদায় করেন। এরপর থেকে কাবাগৃহের চারপাশে হাজী সাহেবদের সুমধুর দরাজ কণ্ঠে 'লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক' তালবিয়া উচ্চারিত হয়ে আসছে, যা হজরত ইবরাহিম (আ.) ও হজরত ইসমাঈল (আ.)-এর ঐতিহাসিক সুমহান ত্যাগের স্মৃতি বহন করে।
ইমানি শক্তিতে বলীয়ান হয়ে এই স্মৃতিকে জাগরূক করতেই বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশ থেকেও ধর্মপ্রাণ লোকজন হজব্রত পালনের নিমিত্তে সৌদি আরব গমন করে থাকেন। চলতি বছর বাংলাদেশ থেকে ১ লাখ ৭ হাজার ৩৪০ জন হজে যাওয়ার জন্য আবেদন করেছেন। এর মধ্যে ৩ হাজার ৭৭০ জন সরকারি ব্যবস্থাপনায় এবং ১ লাখ ৩ হাজার ৫৭০ জন বিভিন্ন এজেন্সির মাধ্যমে। এ বছর যারা বাংলাদেশ থেকে হজ পালনে যাচ্ছেন তাদের প্রতি রইল আন্তরিক মোবারকবাদ ও অভিনন্দন। হজযাত্রীদের সম্পর্কে হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন : হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, 'যে ব্যক্তি হজ-ওমরা অথবা আল্লাহর রাস্তায় জিহাদের জন্য বের হয়েছে অতঃপর পথিমধ্যে মারা গেছে তাহলে তার জন্য গাজী, হাজী এবং ওমরাকারীর সওয়াব লেখা হবে।'-মিশকাত
প্রতিটি ইবাদতেরই নির্দিষ্ট কিছু লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য রয়েছে। যেমন নামাজ অন্যায়, অশ্লীল ও বেহায়াপনা থেকে বিরত থাকার লক্ষ্যে, রোজা আল্লাহভীতি অর্জন করার জন্য, জাকাত ধন-সম্পদ ও আত্মার পবিত্রতা সাধনের লক্ষ্যে। অনুরূপভাবে হজ হলো দুনিয়ার শ্রেষ্ঠতম পবিত্র স্থান কাবায় উপস্থিত হয়ে আল্লাহর নিদর্শন দর্শনের মাধ্যমে ইমানের নবায়ন করা এবং সপ্তাহকালব্যাপী নির্দিষ্ট ছকের কিছু ইবাদত পালনের মধ্য দিয়ে সব পাপ-পঙ্কিলতা থেকে বিরত থাকার অনুশীলনের মধ্য দিয়ে পাপমুক্ত হওয়া।
এই পাপমুক্ত হওয়া সম্পর্কে বলা হয়েছে, একজন পাপী বান্দা যখন আল্লাহর ঘরে হাজিরা দিলেন আর এর বিনিময়ে পাপমুক্ত হয়ে গেলেন, এমন পাপমুক্ত যেমনটি এই মাত্র ভূমিষ্ঠ হওয়া একটি নবজাতকের মতো, যার কোনো গুনাহ্ই নেই।
ইবাদত হয় শরীর বা অর্থ দ্বারা। যেমন নামাজ। এখানে শুধু শরীর ব্যবহৃত হচ্ছে আর জাকাত, এখানে ব্যয়িত হচ্ছে শুধু সম্পদ। কিন্তু হজের ক্ষেত্রে শরীর ও অর্থ দুটিই কার্যকর। হজ সম্পর্কে আল্লাহতায়ালা বলেন, 'মানুষের জন্য সর্বপ্রথম যে ঘর নির্দিষ্ট করা হয়েছিল তা মক্কার ঘর_ তাতে সন্দেহ নেই। এটি অত্যন্ত পবিত্র, বরকতময় এবং সারা দুনিয়ার জন্য হেদায়েতের কেন্দ্রস্থল। এতে আল্লাহর প্রকাশ্য নিদর্শনগুলো বর্তমান রয়েছে: রয়েছে মাকামে ইবরাহিম এবং যে এখানে প্রবেশ করবে সে-ই নিরাপদে থাকবে।' -সূরা :আল ইমরান :৯৬-৯৭
হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) হজের গুরুত্ব ও সুদূরপ্রসারী ফলের বিষয়ে ইরশাদ করেন, 'যে ব্যক্তি নিছক আল্লাহর উদ্দেশে হজ পালন করল এবং এ ব্যাপারে সব ধরনের লালসা ও ফাসেকি থেকে দূরে থাকল সে সদ্যোজাত শিশুর মতোই ফিরে এলো।' উপরোক্ত বিধানের মূলকথা হলো, হজের আইনগত ভিত্তি এবং এর উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য। এর অর্থ হলো, আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে হজ পালন করা; এর বিনিময়ে পাপমুক্ত হয়ে সুস্থ জীবনযাপন করা।
কাঙ্ক্ষিত এ দুটি উদ্দেশ্য অর্জিত না হলে হজের যাবতীয় কার্যক্রমই ব্যর্থ হয়ে যাবে। তবে এ ক্ষেত্রে সর্বাগ্রে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য প্রয়োজন নিয়তের পরিশুদ্ধতা, যার অর্থ হলো জান্নাতপ্রাপ্তি। আর মানুষকে দেখানোর জন্য হলে তা হবে নির্ঘাৎ জাহান্নাম। এ ছাড়া হজ কবুলের জন্য আর যা যা প্রয়োজন তা হলো_ শরীর, খাদ্য, পোশাক, অন্তরাত্মা পাক ও হালাল উপার্জন। হজযাত্রার ক্ষেত্রে যেন এ বিষয়টি হাজি সাহেবদের মনে থাকে, সেদিকে খেয়াল রাখা একান্ত দরকার। আল্লাহতায়ালা প্রত্যেক হজযাত্রীকে কবুল হজ আদায় করার তওফিক দান করুন। আমীন।
muftianaet@gmail.com
 

No comments

Powered by Blogger.