সংস্কৃতি ও রাজনীতির যুগলবন্দি by মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম
ফ য়েজ আহ্মদের সঙ্গে আমার পরিচয় ষাটের দশকে ছাত্রজীবনে। তখন আমি সবেমাত্র প্রগতিশীল চিন্তাধারার রাজনীতির সঙ্গে পরিচিত হতে শুরু করেছি। তৎকালে বামপন্থি রাজনীতিক হিসেবে যেসব তরুণের নাম শোনা যেত, তার মধ্যে ফয়েজ আহ্মদ ছিলেন অন্যতম। আমি অনেকের কাছেই তার নাম শুনতাম। নিজের আগ্রহ থেকেই তার সঙ্গে পরিচয়।
পরিচয়ের পরে জেনেছিলাম, রাজনীতিক হিসেবে তার পরিচিতি থাকলেও তিনি আগে থেকেই পত্রপত্রিকায় লেখালেখি করতেন। তার সঙ্গে ধীরে ধীরে আমার পরিচয়ের গভীরতা আরও বাড়তে থাকে রাজনৈতিক যোগাযোগের কারণেই। ফয়েজ ভাইয়ের সঙ্গে আমার বয়সের ব্যবধান কুড়ি বছরের মতো। এ কারণে তার সঙ্গে আড্ডাটা একেবারে বন্ধুর মতো যে হতো, সেটা বলা ঠিক হবে না। বরং বলা যায়, ফয়েজ ভাইয়ের সঙ্গে আমার সম্পর্কের গভীরতা ছিল অনেকটা ছোট ভাই-বড় ভাইয়ের মতো। তার সঙ্গে অনেক গভীর বিষয় নিয়ে যেমন আলোচনা হতো, তেমনি হালকা বিষয়েও আলোচনা হতো। তিনি যে কখনও আমাদের সঙ্গে কৌতুক করতেন না, তা নয়। কিন্তু তার মধ্যেও একটা পরিমিত ভাব ছিল। নিজের মতামত উপস্থাপনের ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন সম্পূর্ণ স্পষ্টবাদী, অসম্ভব সাহসী। যা বলতে অন্য কেউ ভয় পেতেন বা এড়িয়ে যেতে চাইতেন, তিনি তা অকপটে বলতেন। কারও কোনো কিছু খারাপ লাগলে সে যে বয়সেরই হোক না কেন, তিনি তা বলতে দ্বিধাবোধ করতেন না। ফয়েজ ভাইয়ের প্রাত্যহিক জীবনযাপনে এই 'সাহস' যেমন স্পষ্ট ছিল, তেমনি তার লেখনীতেও সাহসের স্পষ্ট ছোঁয়া আমরা দেখতে পাই।
এমনিতে সংস্কৃতি এবং রাজনীতি আলাদা দুই জগৎ। যারা সাংস্কৃতিক কাজ করেন, তারা রাজনীতিতে সম্পৃক্ত থাকেন না। তেমনিভাবে যারা রাজনীতি করেন, তারা সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড থেকে দূরে থাকেন। কিন্তু ফয়েজ ভাই এ দুইয়ের সংমিশ্রণ ঘটিয়েছেন সারাজীবন। তিনি সংস্কৃতির মধ্যে রাজনীতি নিয়ে আসতেন। আবার রাজনীতির মধ্যে সংস্কৃতি নিয়ে আসার মতো দক্ষতাও তার মধ্যে ছিল। এ কথা নিঃসন্দেহে বলা যায়, তিনি এই দুই মাধ্যমের মধ্যে সেতুবন্ধ তৈরি করতে পেরেছেন, বর্তমান সময়ের জন্য যা খুবই প্রাসঙ্গিক বিষয়। আমাদের সংস্কৃতি এখন রাজনীতিশূন্য হতে চলেছে। একই অবস্থা রাজনীতির ক্ষেত্রেও। রাজনীতিকদের মধ্যে এখন আর সাংস্কৃতিক বোধ নেই। আমি মনে করি, কেউ যদি তার জীবনে সাংস্কৃতিক ও রাজনীতিক জীবনের সুদক্ষ সমন্বয় ঘটাতে চান, তার জন্য ফয়েজ আহ্মদের জীবন অনুকরণীয় হতে পারে।
ফয়েজ আহ্মদ কলাম লেখক হিসেবে সুপরিচিত ছিলেন। বামপন্থি কর্মী হিসেবেও তিনি এগিয়ে গিয়েছেন। তিনি ছদ্মনামে বিনা পাসপোর্টে ১৯৫৪ সালে ভিয়েনায় আন্তর্জাতিক যুব সম্মেলনে যোগদান করেছিলেন। এ জন্য তাকে জেলেও যেতে হয়েছে। এরশাদবিরোধী আন্দোলনে শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়ার মধ্যে ঐক্য তৈরিতে তার শক্তিশালী ভূমিকা ছিল। স্বাধিকার আন্দোলন ও ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে তিনি সরাসরি অংশগ্রহণ করেন।
ফয়েজ আহ্মদ একাধারে সাহিত্যিক, সাংবাদিক, রাজনীতিবিদ ও সংগঠক ছিলেন। অসংখ্য গুণে গুণান্বিত এ প্রতিভাবান মানুষটিকে একদিক দিয়ে দেখতে গেলে চেনা যাবে না। তিনি সব ক'টি ক্ষেত্রেই সফল ছিলেন নিজের জীবনদর্শনের কারণে। তিনি ছিলেন শ্রমিক শ্রেণীর মুক্তির বাহক। মার্কসবাদে তিনি বিশ্বাসী ছিলেন। নিজের জীবনকে সেইভাবে তিনি পরিচালিত করেছেন। তিনি একটা নির্দিষ্ট দলের হয়েও কারও দলের ছিলেন না। সবার কথাই তিনি ভাবতেন। ব্যক্তিগত জীবনে তার মধ্যে কোনো উন্নাসিকতা ছিল না। যত বড় দুর্যোগই আসুক না কেন, তিনি মুষড়ে পড়তেন না। তরুণ প্রজন্মকে সব সময় উৎসাহিত করেছেন আশাবাদী হওয়ার পরামর্শ দিয়ে। সবমিলিয়ে তিনি ছিলেন সামাজিকভাবে দায়বদ্ধ একজন সৎ মানুষ। তার মতো ব্যক্তিত্ব আমাদের জীবনে বড় বেশি প্রয়োজন।
মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম
সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি
এমনিতে সংস্কৃতি এবং রাজনীতি আলাদা দুই জগৎ। যারা সাংস্কৃতিক কাজ করেন, তারা রাজনীতিতে সম্পৃক্ত থাকেন না। তেমনিভাবে যারা রাজনীতি করেন, তারা সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড থেকে দূরে থাকেন। কিন্তু ফয়েজ ভাই এ দুইয়ের সংমিশ্রণ ঘটিয়েছেন সারাজীবন। তিনি সংস্কৃতির মধ্যে রাজনীতি নিয়ে আসতেন। আবার রাজনীতির মধ্যে সংস্কৃতি নিয়ে আসার মতো দক্ষতাও তার মধ্যে ছিল। এ কথা নিঃসন্দেহে বলা যায়, তিনি এই দুই মাধ্যমের মধ্যে সেতুবন্ধ তৈরি করতে পেরেছেন, বর্তমান সময়ের জন্য যা খুবই প্রাসঙ্গিক বিষয়। আমাদের সংস্কৃতি এখন রাজনীতিশূন্য হতে চলেছে। একই অবস্থা রাজনীতির ক্ষেত্রেও। রাজনীতিকদের মধ্যে এখন আর সাংস্কৃতিক বোধ নেই। আমি মনে করি, কেউ যদি তার জীবনে সাংস্কৃতিক ও রাজনীতিক জীবনের সুদক্ষ সমন্বয় ঘটাতে চান, তার জন্য ফয়েজ আহ্মদের জীবন অনুকরণীয় হতে পারে।
ফয়েজ আহ্মদ কলাম লেখক হিসেবে সুপরিচিত ছিলেন। বামপন্থি কর্মী হিসেবেও তিনি এগিয়ে গিয়েছেন। তিনি ছদ্মনামে বিনা পাসপোর্টে ১৯৫৪ সালে ভিয়েনায় আন্তর্জাতিক যুব সম্মেলনে যোগদান করেছিলেন। এ জন্য তাকে জেলেও যেতে হয়েছে। এরশাদবিরোধী আন্দোলনে শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়ার মধ্যে ঐক্য তৈরিতে তার শক্তিশালী ভূমিকা ছিল। স্বাধিকার আন্দোলন ও ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে তিনি সরাসরি অংশগ্রহণ করেন।
ফয়েজ আহ্মদ একাধারে সাহিত্যিক, সাংবাদিক, রাজনীতিবিদ ও সংগঠক ছিলেন। অসংখ্য গুণে গুণান্বিত এ প্রতিভাবান মানুষটিকে একদিক দিয়ে দেখতে গেলে চেনা যাবে না। তিনি সব ক'টি ক্ষেত্রেই সফল ছিলেন নিজের জীবনদর্শনের কারণে। তিনি ছিলেন শ্রমিক শ্রেণীর মুক্তির বাহক। মার্কসবাদে তিনি বিশ্বাসী ছিলেন। নিজের জীবনকে সেইভাবে তিনি পরিচালিত করেছেন। তিনি একটা নির্দিষ্ট দলের হয়েও কারও দলের ছিলেন না। সবার কথাই তিনি ভাবতেন। ব্যক্তিগত জীবনে তার মধ্যে কোনো উন্নাসিকতা ছিল না। যত বড় দুর্যোগই আসুক না কেন, তিনি মুষড়ে পড়তেন না। তরুণ প্রজন্মকে সব সময় উৎসাহিত করেছেন আশাবাদী হওয়ার পরামর্শ দিয়ে। সবমিলিয়ে তিনি ছিলেন সামাজিকভাবে দায়বদ্ধ একজন সৎ মানুষ। তার মতো ব্যক্তিত্ব আমাদের জীবনে বড় বেশি প্রয়োজন।
মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম
সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি
No comments