প্রেমের গল্প- সাবান by ফারজানা সুরভি
: আমাকে যদি কখনো জেলখানায় পাঠানো হয় সঙ্গে একটা সাবান নেব।
: সাবান?
: হ্যাঁ! আমাকে একবেলা খাবার দিক, কিচ্ছু বলব না। রোজ রাতে এসে পেটাক, কিচ্ছু বলব না। নাক-মুখ দিয়ে রক্ত বের করবে, করুক! কিন্তু যদি এক টুকরা সাবান ওরা আমাকে না দেয়, লুকিয়ে রাখব ধারাল ব্লেড! প্রথম সুযোগে ধমনি কাটব। অথবা বন্দীদের সঙ্গে ষড়যন্ত্র করে হাঙ্গামা বাঁধিয়ে দেব। ভীষণ হাঙ্গামা! পুলিশ ব্যস্ত লাঠিচার্জে, সেই ফাঁকে দেয়াল টপকে দোকানে যাব। একটা সাবান ভিক্ষা চাইব!
: অদ্ভুত মানুষ আপনি। করবেন কী সাবান দিয়ে? আর জেলেই বা যাবেন কেন!
: হাত ধোব। ঘণ্টায় পাঁচবার হাত ধুই আমি। দেখেন না কেমন কুঁচকানো হাত আমার। বুেড়াদের হাতের মতো!
: কেন এত ঘন ঘন হাত ধোন? জীবাণু ধ্বংস?
: না, পাপ ধুই। হাত দুইটা অনেক পাপী। অ-নে-ক!
: কিসের পাপ?
: তাকে একটা চড় মেরেছিলাম!
: কাকে?
: যাকে খুব ভালোবাসতাম, তাকে। ওর ওপর অনেক রাগ ছিল আমার। অনেক রাগ! অন্য কোনো ছেলের সঙ্গে কথা বলতে দেখলেও মাথায় রক্ত উঠে যেত। দুই বছরের প্রেমের সময় এক ফোঁটা শান্তি দিইনি মেয়েটাকে। একদিন তো চড় মেরে বসলাম। মাথার ঠিক ছিল না। অনেক জোরে চড় মেরেছিলাম। ফরসা গালে পাঁচ আঙুলের ছাপ পড়ে গেছিল। কেমন একটা নেশা ধরানো লাল ছাপ! দেখলে মনে হতো আরও মারি...আরও মারি...!
: তারপর?
: অনেক মানুষ ছিল সেখানে। সবাই হাঁ করে দেখছিল। বুঝলেন, চড়টা মারার পরে ও না আমাকে কিচ্ছু বলেনি। একটা শব্দও না। মনে হয় এত অবাক হয়েছিল, কথা বলতেও ভুলে গেছিল। এরপর অবশ্য আর কোনো দিন আমার সঙ্গে দেখা হয়নি তার। কথাও হয়নি। সেই শেষ দেখা। অপমানে চলে গেল মেয়েটা। আর ফিরেও তাকায়নি। কখনো না!
: আর কোনো খবর পাননি তার?
: অনেক ধুমধাম করে ওর বিয়ে হয়েছিল। শুনেছি, আমেরিকায় থাকে। অনেক সুখে আছে। ফুটফুটে একটা মেয়েও হয়েছে। অথচ ওই থাপ্পড়টা সেদিন না মারলে ও কখনো চলে যেত না। অনেক ভালো মেয়ে ও! কখনো আমাকে ফেলে চলে যেত না। আমার সঙ্গে ওর বিয়ে হতো! কত সুখে থাকতাম! পিরর মতো একটা ছোট্ট মেয়ে থাকত আমাদের! হলুদ ফ্রক পরে ‘বাবা! বাবা!’ বলে পুরো ঘরে টলমল করে হাঁটত। আর পড়ে যেত... আবার হাঁটত...আবার পড়ে যেত...! আমি তখন ওর আঙুল ধরে ঠিক ঠিক হাঁটতে শেখাতাম। কিন্তু কিচ্ছু হলো না। আমি এখন একলা একলা ঘুরি রাস্তায় রাস্তায়। আর আমার এই হাত দুইটা নেড়ি কুত্তার ঘিনঘিনে লেজের চেয়েও নোংরা!
আমার সহযাত্রী একটু থেমে শ্বাস নিলেন। পকেট থেকে বের করলেন সুগন্ধি সাবানের গোলাপি প্যাকেট। আর ব্যাগ থেকে মিনারেল ওয়াটারের বোতল। বাসের জানালা দিয়ে মাথা বের করে হাত ভিজিয়ে নিলেন। প্যাকেটের সাবান বের করে ঘষতে থাকলেন ডলে ডলে। সাদা ফেনার ওপর ঢালতে লাগলেন রংহীন পানি। কয়েকটা বুদ্বুদ উড়ে গেল বাতাসে।
: সাবান?
: হ্যাঁ! আমাকে একবেলা খাবার দিক, কিচ্ছু বলব না। রোজ রাতে এসে পেটাক, কিচ্ছু বলব না। নাক-মুখ দিয়ে রক্ত বের করবে, করুক! কিন্তু যদি এক টুকরা সাবান ওরা আমাকে না দেয়, লুকিয়ে রাখব ধারাল ব্লেড! প্রথম সুযোগে ধমনি কাটব। অথবা বন্দীদের সঙ্গে ষড়যন্ত্র করে হাঙ্গামা বাঁধিয়ে দেব। ভীষণ হাঙ্গামা! পুলিশ ব্যস্ত লাঠিচার্জে, সেই ফাঁকে দেয়াল টপকে দোকানে যাব। একটা সাবান ভিক্ষা চাইব!
: অদ্ভুত মানুষ আপনি। করবেন কী সাবান দিয়ে? আর জেলেই বা যাবেন কেন!
: হাত ধোব। ঘণ্টায় পাঁচবার হাত ধুই আমি। দেখেন না কেমন কুঁচকানো হাত আমার। বুেড়াদের হাতের মতো!
: কেন এত ঘন ঘন হাত ধোন? জীবাণু ধ্বংস?
: না, পাপ ধুই। হাত দুইটা অনেক পাপী। অ-নে-ক!
: কিসের পাপ?
: তাকে একটা চড় মেরেছিলাম!
: কাকে?
: যাকে খুব ভালোবাসতাম, তাকে। ওর ওপর অনেক রাগ ছিল আমার। অনেক রাগ! অন্য কোনো ছেলের সঙ্গে কথা বলতে দেখলেও মাথায় রক্ত উঠে যেত। দুই বছরের প্রেমের সময় এক ফোঁটা শান্তি দিইনি মেয়েটাকে। একদিন তো চড় মেরে বসলাম। মাথার ঠিক ছিল না। অনেক জোরে চড় মেরেছিলাম। ফরসা গালে পাঁচ আঙুলের ছাপ পড়ে গেছিল। কেমন একটা নেশা ধরানো লাল ছাপ! দেখলে মনে হতো আরও মারি...আরও মারি...!
: তারপর?
: অনেক মানুষ ছিল সেখানে। সবাই হাঁ করে দেখছিল। বুঝলেন, চড়টা মারার পরে ও না আমাকে কিচ্ছু বলেনি। একটা শব্দও না। মনে হয় এত অবাক হয়েছিল, কথা বলতেও ভুলে গেছিল। এরপর অবশ্য আর কোনো দিন আমার সঙ্গে দেখা হয়নি তার। কথাও হয়নি। সেই শেষ দেখা। অপমানে চলে গেল মেয়েটা। আর ফিরেও তাকায়নি। কখনো না!
: আর কোনো খবর পাননি তার?
: অনেক ধুমধাম করে ওর বিয়ে হয়েছিল। শুনেছি, আমেরিকায় থাকে। অনেক সুখে আছে। ফুটফুটে একটা মেয়েও হয়েছে। অথচ ওই থাপ্পড়টা সেদিন না মারলে ও কখনো চলে যেত না। অনেক ভালো মেয়ে ও! কখনো আমাকে ফেলে চলে যেত না। আমার সঙ্গে ওর বিয়ে হতো! কত সুখে থাকতাম! পিরর মতো একটা ছোট্ট মেয়ে থাকত আমাদের! হলুদ ফ্রক পরে ‘বাবা! বাবা!’ বলে পুরো ঘরে টলমল করে হাঁটত। আর পড়ে যেত... আবার হাঁটত...আবার পড়ে যেত...! আমি তখন ওর আঙুল ধরে ঠিক ঠিক হাঁটতে শেখাতাম। কিন্তু কিচ্ছু হলো না। আমি এখন একলা একলা ঘুরি রাস্তায় রাস্তায়। আর আমার এই হাত দুইটা নেড়ি কুত্তার ঘিনঘিনে লেজের চেয়েও নোংরা!
আমার সহযাত্রী একটু থেমে শ্বাস নিলেন। পকেট থেকে বের করলেন সুগন্ধি সাবানের গোলাপি প্যাকেট। আর ব্যাগ থেকে মিনারেল ওয়াটারের বোতল। বাসের জানালা দিয়ে মাথা বের করে হাত ভিজিয়ে নিলেন। প্যাকেটের সাবান বের করে ঘষতে থাকলেন ডলে ডলে। সাদা ফেনার ওপর ঢালতে লাগলেন রংহীন পানি। কয়েকটা বুদ্বুদ উড়ে গেল বাতাসে।
No comments