আজ হাটমুখী হবেন ক্রেতারা
মেয়র মোহাম্মদ হানিফ
(গুলিস্তান-যাত্রাবাড়ী) ফ্লাইওভারের কুতুবখালী প্রান্তে নেমে কিছু দূর
এগোলেই শনির আখড়া। কাজলা পেট্রলপাম্পের পর থেকে শনির আখড়া পর্যন্ত সড়কের
পাশে বসেছে কোরবানির পশুর অস্থায়ী হাট। হাটে প্রচুর গরু। ফলে নতুন আসা
গরুবাহী ট্রাকগুলো সড়কের এক পাশে রাখায় ব্যস্ত মহাসড়কে যানবাহনগুলোর গতি
কিছুটা ধীর। কেবল এই হাট নয়, রাজধানীর বাড্ডার আফতাবনগর, গাবতলী,
রহমতগঞ্জ, কমলাপুর হাটও গরু, ছাগল, মহিষে পরিপূর্ণ। গাবতলীর স্থায়ী হাটে
দেখা গেল ভারতের রাজস্থান থেকে আনা উটও। গতকাল বৃহস্পতিবার হাটগুলোতে
প্রচুর পশু দেখা গেলেও ক্রেতার তেমন দেখা মেলেনি। বিক্রেতাদের কেউ পশুর
যত্ন করে আবার কেউ ক্রেতার অপেক্ষায় সময় কাটাচ্ছেন। আজ শুক্রবার থেকে
ছুটি শুরু হচ্ছে। তাই বিক্রেতাদের আশা, আজ থেকে হাটে আসবে ক্রেতা। শেষ হবে
অপেক্ষার পালা।
হাটগুলোর ইজারাদারেরা ও দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পশু নিয়ে হাটে আসা ব্যাপারী ও বিক্রেতারা বললেন, কয়েক দিন ধরেই রাজধানীতে কোরবানির পশু আসা শুরু হয়েছে। তবে গত দুই দিনে পশু আসার সংখ্যা অনেক বেড়েছে। প্রচুর পশু এলেও বিক্রি শুরু হয়নি বললেই চলে। তাঁদের মতে, এখন ক্রেতার চেয়ে দর্শনার্থীর সংখ্যাই বেশি।
গতকাল সরেজমিনে চারটি হাট ঘুরে এসব কথার সত্যতাও পাওয়া গেল। সকাল থেকে বেলা তিনটা পর্যন্ত শনির আখড়া, কমলাপুর, আফতাবনগর ও গাবতলী হাটে পশু বিক্রি হতে দেখা গেছে খুবই কম। হাটে যে কজন আসছেন, তাঁদের অধিকাংশই দাম জিজ্ঞেস করছেন। আবার হাটের আশপাশের এলাকার উৎসুক মানুষ বাজার যাচাই করতে আসছেন। আফতাবনগর হাটে মোসলেমউদ্দিন আহমেদ নামের এক ব্যক্তি বেলা দেড়টার দিকে একটি মাঝারি আকারের গরু কিনলেন। দাম পড়েছে ৬৫ হাজার টাকা। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, গত দুই দিনে তিনি চারটি হাটে গেছেন। তিনি ওই দামে গরু কিনে জিতেছেন।
হাটগুলোতে দেখা গেল, দেশি ছোট আকারের গরুর দাম হাঁকা হচ্ছে ৩৫ হাজার টাকা পর্যন্ত। শনির আখড়ায় ছোট আকারের একটি গরু ২৬ হাজার টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেল। গাবতলী স্থায়ী পশুর হাটের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তি রইসুল ইসলাম বললেন, তিনি এক বিক্রেতাকে একটি গরুর দাম সাত লাখ টাকা চাইতে দেখেছেন। এখন পর্যন্ত এক ব্যক্তি ওই গরুটির দাম তিন লাখ ২৫ হাজার টাকা বলেছেন। তিনি বলেন, ‘তিন থেকে পাঁচ লাখ টাকায় বিক্রি হওয়া গরুর দাম হয় মূলত একশ্রেণির ধনী ব্যক্তির প্রতিযোগিতার কারণে। এমনিতে কোনো গরুর দাম এত হওয়ার কারণ নেই।’
বেলা দুইটা পর্যন্ত আফতাবনগর হাটে ২৬টি ট্রাক, কমলাপুরে ১৭টি, শনির আখড়ায় ২৮টি এবং গাবতলীতে বিকেল পর্যন্ত ৩৯টি ট্রাকভর্তি পশু এসেছে বলে হাটগুলোর কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে জানা গেছে। তাঁরা জানান, প্রতিটি ট্রাকে গড়ে ২৫টির মতো গরু থাকে। আগামী তিন দিন প্রচুর গরু আসবে। সেই সঙ্গে বিক্রিও বেড়ে যাবে কয়েক গুণ। এখনো তেমন বিক্রি না হওয়ার কারণ সম্পর্কে তাঁরা বলেন, ঢাকায় আগে কিনে গরু রাখা কঠিন। এ জন্য ক্রেতারা শেষ মুহূর্তে পশু কিনতে আসেন।
পশুর হাটগুলোতে ছাগলও এসেছে অনেক। ক্রেতারা বলছেন, ছাগলের দাম বেশি চাওয়া হচ্ছে। গাবতলীর হাটে আকারভেদে ১০ হাজার থেকে ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত ছাগলের দাম চাওয়া হয়। তবে হাটগুলোতে ভারতের গরু গতকালও তেমন দেখা যায়নি।
ঝিনাইদহ থেকে ১৮টি গরু নিয়ে গত সোমবার বিকেলে কমলাপুরের হাটে এসেছেন হামদু মিয়া ও আরও দুজন। হামদু মিয়া বললেন, গতকাল বেলা দেড়টা পর্যন্ত তিনি মাঝারি আকারের একটি গরু ৫৩ হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন। তাঁর গরুগুলোর মধ্যে এটি ছিল ছোট। বিক্রি করে তাঁর মোটামুটি লাভ হয়েছে। আশা করছেন, বাকিগুলো বিক্রি করে ভালোই লাভ পাবেন। হাটে ভারতের গরু তেমন না থাকায় তিনি আশান্বিত। তবে ক্রেতাদের আনাগোনা কম থাকায় তাঁর মনে কিছুটা আশঙ্কাও কাজ করছে।
শনির আখড়া হাটেও ক্রেতার তেমন দেখা মিলল না। কয়েকজন ঘুরে ঘুরে গরু দেখছেন। বেশ কিছুক্ষণ অবস্থানকালে একটি ছোট গরু বিক্রি হতে দেখা গেল। সড়কের একাংশে গরুবাহী ট্রাক থাকা নিয়ে জানতে চাইলে ওই হাটের প্রধান ইজারাদার ওসমান গনি বললেন, প্রচুর গরু আসছে। হাটে ঢোকানোর জন্য গরুর ট্রাকগুলোকে সড়কের একাংশে দাঁড়াতে হচ্ছে। তাঁরা চেষ্টা করছেন যত দ্রুত সম্ভব ট্রাকগুলো সরিয়ে দিতে।
No comments