রানা প্লাজা ধসে ক্ষতিপূরণের প্রথম কিস্তি প্রদান by শুভংকর কর্মকার
রানা প্লাজা ধসে নিহত শ্রমিক পরিবার ও আহত
শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণের প্রথম কিস্তি দিয়েছে রানা প্লাজা সমন্বয় কমিটি।
ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন নিহত শ্রমিকদের পরিবারের এক হাজার ৫৫২ সদস্য ও আহত ৩৫
শ্রমিক। গত বুধবার ক্ষতিপূরণের জন্য গঠিত আন্তর্জাতিক তহবিল রানা প্লাজা
ডোনারস ট্রাস্ট ফান্ড থেকে আহত শ্রমিক ও নিহত শ্রমিকদের পরিবারের সদস্যদের
নিজস্ব ব্যাংক হিসাবে ক্ষতিপূরণ বাবদ ১২ কোটি ৭০ লাখ টাকা জমা হয়েছে। এর
মধ্যে নিহত পরিবারের এক হাজার ৫৫২ সদস্যদের ব্যাংক হিসাবে ১২ কোটি ৫৭ লাখ
৮৩ হাজার ৪১৮ টাকা এবং ৩৫ জন আহত শ্রমিকের ব্যাংক হিসাবে ১৩ লাখ ৬ হাজার
৮৩২ টাকা জমা হয়েছে।
মাথাপিছু একজন নিহত শ্রমিক কত অর্থ পেলেন, তা জানা যায়নি। আবার নিহত শ্রমিক পরিবারের সদস্যসংখ্যায় পার্থক্য রয়েছে। তাঁরা সমানভাবে অর্থ পাননি। নিহত শ্রমিকের ওপর নির্ভরশীলতা অনুযায়ী তাঁর সন্তান, স্ত্রী, ভাইবোন, মা-বাবার দাবিকৃত অর্থের পরিমাণ কমবেশি হয়েছে।
এটি ক্ষতিপূরণের একটি অংশ। তহবিলে পর্যাপ্ত অর্থ জমা না পড়ায় পুরো অর্থ দেওয়া নিয়ে এখনো সংশয় রয়েছে। কারণ, প্রয়োজনীয় অর্থের মাত্র ৫০ শতাংশ এখন পর্যন্ত জমা পড়েছে। তহবিলে জমা হয়েছে এক কোটি ৯৪ লাখ ডলার। দেশীয় মুদ্রায় যা প্রায় ১৫৫ কোটি টাকা। পুরো ক্ষতিপূরণের জন্য প্রয়োজন ৩২০ কোটি টাকা।
রানা প্লাজা সমন্বয় কমিটির সদস্য ও ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজের (বিলজ) সহকারী নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহম্মেদ গতকাল বৃহস্পতিবার বলেন, এক হাজার ৫৮৭ জনের ব্যাংক হিসাবে ক্ষতিপূরণের টাকা চলে গেছে। এখন তাঁরা এ অর্থ প্রয়োজন অনুযায়ী উত্তোলন করতে পারবেন।
সমন্বয় কমিটির একাধিক সদস্য জানান, ক্ষতিপূরণের এ অর্থ ব্যাংকে জমা করার আগে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে দেওয়া অর্থ কর্তন করে রাখা হয়েছে। তা ছাড়া এখন যেসব আহত শ্রমিক ক্ষতিপূরণের অর্থ পেলেন, তাঁদের অধিকাংশ অধিক ক্ষতিগ্রস্ত (মেজর ইনজুরড)। তাঁদের সবাই প্রধানমন্ত্রীর তহবিল থেকে অর্থসহায়তা পেয়েছেন। ফলে তাঁরা এখন অর্থ কম পেয়েছেন। অন্যদিকে পরে যেসব আহত শ্রমিক ক্ষতিপূরণ পাবেন, তাঁদের আহতের পরিমাণ তুলনামূলক কম। তাঁরা প্রধানমন্ত্রীর তহবিল থেকেও অর্থ পাননি। ফলে তাঁরা ক্ষতিপূরণের বেশি অর্থ পাবেন।
এর আগে ক্ষতিগ্রস্ত দুই হাজার ৯৯৫ জনের প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা করে ক্ষতিপূরণের অগ্রিম দেওয়া হয়। এখনো ১১৭ জন এ অর্থ পাওয়ার প্রক্রিয়ার মধ্যে আছেন। গতকাল যেসব নিহত শ্রমিক পরিবারের সদস্য ও আহত শ্রমিক ক্ষতিপূরণের প্রথম কিস্তি পেয়েছেন, তাঁদের ক্ষেত্রে অগ্রিম সমন্বয় করে অর্থ দেওয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত বছর ২৪ এপ্রিল সাভারের রানা প্লাজা ধসে এক হাজার ১৩৬ জন শ্রমিক নিহত হন। আহত হন আরও অনেকে। এ ঘটনার পর দেশে-বিদেশে সমালোচনার ঝড় উঠলে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) নেতৃত্বে ক্ষতিপূরণের জন্য সমন্বয় কমিটি গঠিত হয়। এতে বিদেশি ক্রেতা প্রতিষ্ঠান, দেশি-বিদেশি শ্রম সংগঠন ও সরকারের প্রতিনিধিরা আছেন।
জানা যায়, কো-অর্ডিনেশন কমিটির সর্বশেষ ১৩ তম (১৪ আগস্ট) বৈঠকে ৪০ শতাংশ ক্ষতিপূরণ দেওয়ার একটি ‘সময়সীমা’ চূড়ান্ত করা হয়। মোট পাঁচটি ধাপে ২৯ বা ৩০ অক্টোবরের মধ্যে প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করার কথা ছিল। কারণ, এখন পর্যন্ত তহবিলে যে অর্থ আছে তা দিয়ে এর বেশি দেওয়া যাবে না।
ক্ষতিপূরণ পেতে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দুই হাজার ৮৩২ জন আহত, নিহত ও নিখোঁজ শ্রমিক পরিবারের পাঁচ হাজার ২২ জন সদস্য দাবিনামা পূরণ করেছেন। এঁদের মধ্যে নিখোঁজ শ্রমিক আছেন ১৪১। তাঁদের সবার জন্য আলাদা ব্যাংক হিসাব খোলা হয়েছে।
তহবিলে নতুন অর্থ: গত সাড়ে তিন মাসের ব্যবধানে ‘রানা প্লাজা ডোনারস ট্রাস্ট ফান্ডে ১৫ লাখ ডলার জমা পড়েছে। তহবিলে মোট অর্থের পরিমাণ এখন এক কোটি ৯৪ লাখ ডলার। তবে সব মিলিয়ে চার কোটি ডলার দরকার।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ সেন্টার ফর ওয়ার্কার্স সলিডারিটির নির্বাহী পরিচালক কল্পনা আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, বিদেশি ক্রেতাদের জন্য চার কোটি ডলার খুব বড় অঙ্কের অর্থ নয়। আর এতগুলো শ্রমিকের মৃত্যুর দায়ভার তারা কোনোভাবেই এড়াতে পারে না। এর পরও তাদের এ তহবিলে টাকা না দেওয়াটা খুব দুঃখজনক।
No comments