দুর্বৃত্তায়ন- নির্বাচন আসছে, পুঁজির পাচারও বাড়ছে by ড. মইনুল ইসলাম
সাম্প্রতিক কালে নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে
সরকার ও বিরোধী দলের বিতণ্ডা দেশের জনগণের মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে
রয়েছে। তাই তিন মাস ধরে বৈধ পথে দেশে আসা রেমিট্যান্স-প্রবাহে যে ঋণাত্মক
প্রবণতা সৃষ্টি হয়েছে, তার কারণ অনুসন্ধান তেমন গুরুত্ব পায়নি।
বাংলাদেশ থেকে হুন্ডি-প্রক্রিয়ায় বিদেশে পুঁজি পাচার সম্প্রতি মারাত্মকভাবে বেড়ে যাওয়ার কারণেই বৈধ পথে রেমিট্যান্স-প্রবাহ কমে গেছে।
বছর খানেক ধরে বাংলাদেশের টাকার বৈদেশিক বিনিময় হার মার্কিন ডলারের তুলনায় ক্রমাগতভাবে বেড়ে চলেছে। এক ডলারের বিনিময়ে বছর দুয়েক আগে বৈধ বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে ৮৫ টাকা পাওয়া যেত, এখন পাওয়া যাচ্ছে ৭৮ টাকা। দেশের ব্যালেন্স অব পেমেন্টসের চলতি হিসাবে বেশ কয়েক বছর ধরে উদ্বৃত্ত সৃষ্টি হওয়াতেই টাকার এই বিনিময় হারের উন্নতি হয়েছে। (ভারতের লেনদেন ভারসাম্যের ঘাটতি ভারতীয় রুপির বৈদেশিক মূল্যমানে বড়সড় ধস নামিয়েছিল, যা থেকে এখনো পুরোপুরি মুক্তি মেলেনি তাদের।) ক্রমেই শক্তিশালী হতে থাকা টাকা এ দেশের মুদ্রাস্ফীতির হারকেও খানিকটা কমিয়ে দিয়েছে, ১০ থেকে ১২ শতাংশ মুদ্রাস্ফীতির হার কমে ৭ থেকে ৮ শতাংশে নেমে এসেছে গত এক বছরে।
বাংলাদেশ বিশ্বের ৪৯টি স্বল্পোন্নত দেশের মধ্যে সবচেয়ে জনবহুল। অতএব, লেনদেন ভারসাম্যের এই স্বস্তিকর অবস্থা বিশ্বকে
জানান দিয়ে চলেছে যে বাংলাদেশের অর্থনীতি উন্নত পুঁজিবাদী দেশগুলোর কিংবা তাদের তল্পিবাহী আইএমএফ-বিশ্বব্যাংক-এডিবির করুণানির্ভর এলডিসির তালিকা থেকে বেরিয়ে আসতে সক্ষম।
কিন্তু অর্থনীতির এই স্বস্তিকর অবস্থাকে পেছনে ঠেলে দিচ্ছে বাংলাদেশ থেকে ক্রমবর্ধমান হারে বিদেশের নানা দেশে পুঁজি পাচারের বিপজ্জনক প্রবণতা। এই পুঁজি পাচারকে সহজ করে দিচ্ছে প্রায় ৮০ লাখ প্রবাসী বাংলাদেশির রেমিট্যান্স-পদ্ধতিতে গেড়ে বসে থাকা ‘হুন্ডি-ব্যবস্থা’। কয়েক মাস ধরে প্রাতিষ্ঠানিক মুদ্রাবাজারের ডলারের দামের চেয়ে কার্ব মার্কেটের ডলারের দাম চার-পাঁচ টাকা বেশি পড়ছিল। প্রতিবছর হজ মৌসুমে কার্ব মার্কেটে ডলারের চাহিদার স্ফীতি দেখা দেয়। এ বছর ওই বাড়তি চাহিদার সঙ্গে যোগ হয়েছিল দেশের ধনাঢ্য ব্যক্তিদের ছেলেমেয়েদের বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজগুলোয় শুরু হওয়া ‘ফল-সেমিস্টারের’ পড়াশোনার খরচ জোগান দেওয়ার জন্য বাড়তি ডলারের চাহিদা। কোরবানির ঈদের গরু চোরাচালানের মৌসুমটাও একই সময়ে ‘হুন্ডি ডলারের’ চাহিদার অস্বাভাবিক স্ফীতির জন্য খানিকটা দায়ী ছিল।
কিন্তু ‘হুন্ডি ডলার’-এর উল্লিখিত খদ্দেরদের সঙ্গে এবার যুক্ত হয়েছে দুর্নীতিজাত কালোটাকা বিদেশে পাচারকারী রাজনৈতিক নেতা-কর্মী, দুর্নীতিবাজ ও দলবাজ আমলা এবং ব্যবসায়ী-ঠিকাদারদের বিশালসংখ্যক দেশ থেকে পলায়ন-ইচ্ছুক ব্যক্তি। এঁদের উৎসাহী করার জন্য উন্নত বিশ্বের মন্দাকবলিত কয়েকটি দেশ নতুন নতুন সুযোগ-সুবিধা চালু করেছে। ভারত, মালয়েশিয়া, কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া—এসব দেশ বাংলাদেশ থেকে পলাতক পুঁজির প্রধান গন্তব্যের ভূমিকা পালন করে আসছে বহুকাল ধরে।
বলা বাহুল্য, যুক্তরাষ্ট্রই এ ধরনের ধনাঢ্য-পলায়নেচ্ছু পুঁজিপতিদের সবচেয়ে আকর্ষণীয় ভূস্বর্গ। কানাডা ও অস্ট্রেলিয়াও ক্রমেই বহুল-কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে পরিণত হয়েছে গত তিন দশকে। ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াতের নির্বাচনী বিজয়ের পর অবর্ণনীয় অত্যাচার-নির্যাতনের শিকার হওয়ার পর ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ‘নীরব দেশত্যাগের’ বিষয়টিও গোপন নয়। কানাডার টরন্টো নগরের একটি এলাকায় কয়েক বছর ধরে এত বেশি বাংলাদেশি অভিবাসী পরিবার ঘরবাড়ি কিনে বসতি স্থাপন করেছে যে ওই এলাকাটিতে ঠাট্টাস্থলে অন্য বাংলাদেশি অভিবাসীরা ‘বেগমপাড়া’ উপাধি দিয়েছেন। ওই পরিবারগুলোর ‘সাহেবেরা’ দেশে দুর্নীতির মাধ্যমে আয়-রোজগার করে তার বড়সড় অংশটা হুন্ডি-পদ্ধতিতে কানাডায় নিয়মিতভাবে পাচার করা সম্পত্তির মালিক হয়ে পরিবারকে সেখানে বসবাস করার ব্যবস্থা করেছেন। যথাসময়ে তাঁরাও কানাডায় হিজরত করবেন।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় প্রতিটি বড় বড় নগরে বাংলাদেশের ব্যবসায়ী-শিল্পপতি, দুর্নীতিবাজ আমলা-প্রকৌশলী-পেশাজীবীরা দেশ থেকে কোটি কোটি টাকা পাচার করে এভাবে তাঁদের নতুন ঠিকানা গড়ে তুলছেন—এ খবরটা অভিবাসন সম্পর্কে আমরা যারা গবেষণা করছি, তাদের কাছে পুরোনো খবর। এমনকি সত্তরের দশকের শেষ দিকে যুক্তরাষ্ট্রে যখন পিএইচডি করছিলাম, তখন থেকেই ‘পুঁজি নিয়ে পলাতক’ অভিবাসীদের মার্কিন মুলুকে অভিগমনের প্রবাহটা জোরদার হতে দেখি। তখন ন্যূনপক্ষে ৪০ হাজার ডলার যুক্তরাষ্ট্রে বিনিয়োগ করলে মার্কিন ভিসা পাওয়া যেত। কানাডায়ও একই ধরনের নিয়ম রয়েছে। মালয়েশিয়ার ‘সেকেন্ড হোম’ কর্মসূচিতেও নির্ধারিত পরিমাণ পুঁজি নিয়ে যেতে পারলে রেসিডেন্টশিপ পাওয়া যাচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে স্পেন, ইতালি ও গ্রিস একই ধরনের নিয়ম চালু করেছে। আর বৈদেশিক প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য মরিয়া প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে প্রতিটি উন্নয়নশীল ও স্বল্পোন্নত দেশ।
পাঠকদের জ্ঞাতার্থে জানাচ্ছি, আমার গবেষণায় প্রত্যক্ষ প্রমাণ মিলেছে যে বাংলাদেশের কয়েক শ ব্যবসায়ী-শিল্পপতি দেশের ব্যাংক-ঋণ হুন্ডি-প্রক্রিয়ায় পাচার করে এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার বেশ কয়েকটি দেশে শিল্প-কারখানা, নির্মাণপ্রতিষ্ঠান ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। শ্রীলঙ্কা, নেপাল, সংযুক্ত আরব আমিরাত, উগান্ডা, কেনিয়া, তানজানিয়া, মরিশাস, ভারত, মালয়েশিয়া, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড প্রভৃতি দেশে পাচার করা বাংলাদেশি পুঁজি বিনিয়োগ করার প্রমাণও রয়েছে সেই গবেষণায়। এ ধরনের পুঁজি পাচারকারী বৈদেশিক বিনিয়োগকারীর তালিকায় এফবিসিসিআইয়ের একাধিক সাবেক সভাপতিও রয়েছেন। এ পর্যায়ে সরকারের কর্তাব্যক্তিদের জিজ্ঞাসা করছি: ওপরের খবরটা কি আপনাদের জানা নেই? যদি জানা থাকে, তাহলে ওই রাঘববোয়ালদের আইনের আওতায় আনা হচ্ছে না কেন? বৈধ পদ্ধতিতে তো বাংলাদেশ থেকে বিদেশে বিনিয়োগের জন্য পুঁজি স্থানান্তরের ব্যবস্থা নেই। তাহলে এসব বিনিয়োগকারী কীভাবে দেশ থেকে বিদেশে পুঁজি নিয়ে গেলেন?
২৬ বছর আগে প্রকাশিত উইলিয়ামসনের ক্যাপিটাল ফ্লাইট-এ দেশে পুঁজি পাচারের ব্যাখ্যা থাকলেও, বাংলাদেশের পুঁজি পাচার গুরুত্ব পায়নি। কারণ, আশির দশকের মাঝামাঝি পর্যন্ত বাংলাদেশ পরিচিত ছিল দান-খয়রাতনির্ভর তলাবিহীন ঝুড়ি হিসেবে। স্বৈরাচারী এরশাদের দুর্নীতির খবর জানাজানি হওয়ার পরই বহির্বিশ্ব বাংলাদেশের শাসক মহল, আমলা, ব্যবসায়ী, ঠিকাদারেরা বৈদেশিক সাহায্য লুটপাটের প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থার কথা জানতে পারলেন। এ ছাড়া দারিদ্র্য নিরসনের নামে বাংলাদেশে নিয়ে আসা কোটি কোটি টাকা ঋণ/অনুদানের সিংহভাগ দুর্নীতির খোরাকে পরিণত হচ্ছে।
১৯৯০-৯১ সালে বিআইডিএস থেকে বাংলাদেশের চোরাচালানের ওপর গফুর-ইসলাম-ফয়েজের গবেষণা প্রকল্পের দুই খণ্ডের প্রতিবেদনে আমরা প্রথম জানিয়েছিলাম, কীভাবে চোরাচালান ও হুন্ডি-পদ্ধতি ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে রয়েছে। সর্বশেষ ২০১০ সালে প্রকাশিত খেলাপি ব্যাংকঋণ-সম্পর্কিত আমার গবেষণাগ্রন্থ আ প্রোফাইল অব ব্যাংক লোন ডিফল্ট ইন দ্য প্রাইভেট সেক্টর ইন বাংলাদেশ-এ আমি প্রমাণ করেছি, ব্যাংকঋণ খেলাপ হওয়ার সমস্যার সঙ্গে পুঁজি পাচার সমস্যাটা ওতপ্রোতভাবে জড়িত, এবং ‘হুন্ডি-পদ্ধতি’ এ দেশ থেকে বিদেশে পুঁজি পাচারকে সহজ করে তুলেছে।
দুঃখজনক হচ্ছে, ১৯৯১-১৩ পর্বে গণতন্ত্রের আলখাল্লাধারী রাজনৈতিক নেতা-পাতিনেতা-কর্মী-মাস্তানদের একটা বড় অংশ গত ২২ বছরে পুঁজি লুণ্ঠনের ফায়দাভোগীদের কাতারে শামিল হয়ে দেদার পুঁজি পাচার করছে। যে দল বা জোট যখন ক্ষমতায় থাকে, তাদের আশীর্বাদপুষ্ট নেতা-কর্মী-মাস্তানেরা অর্থ ও সম্পদ লুণ্ঠনের খেলায় মাতেন এবং পরবর্তী নির্বাচনে জনগণ কর্তৃক প্রত্যাখ্যাত হওয়ার ভয়ে তাঁরা বিদেশে পাড়ি জমাতে থাকেন।
বিএনপি, আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির শীর্ষ নেতাদের পরিবার ও কুটুম্বরা বাংলাদেশের এই পলাতক পুঁজির ফায়দাভোগী হয়ে বিশ্বের নানা দেশে আরাম-আয়েশে দিন গুজরান করছেন। রাজনীতিকদের পাশাপাশি সামরিক বাহিনীর ডাকসাইটে সাবেক কর্মকর্তা, বেসামরিক আমলা, প্রকৌশলী, বিভিন্ন আমলের মন্ত্রী, সংসদ সদস্য ও রাজনৈতিক দলীয় নেতাদের পরিবার কে কোথায় বসতি গেড়েছে, আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির যুগে তা জানা অসম্ভব নয়। গত ২২ বছরে অনুষ্ঠিত প্রতিটি নির্বাচনেই যেহেতু ক্ষমতাসীন দল/জোটের বিপর্যয় ঘটে চলেছে, তাই নির্বাচন ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে দেশ থেকে বিদেশে ‘পুঁজির পলায়ন’ও অস্বাভাবিক হারে বেড়ে চলেছে। এবারে ‘হুন্ডি ডলারের’ প্রবল চাহিদার আসল মরতবা এখানেই। বৈধ পথে রেমিট্যান্স-প্রবাহ স্তিমিত হওয়ার প্রধান কারণও এটি।
পাঠকদের মনে করিয়ে দিতে চাই, ‘অনুন্নয়নের রাজনৈতিক অর্থনীতির’ তত্ত্বগুলোয় ব্যাখ্যা করা হয় যে, ‘পুঁজির পলায়ন’ প্রকৃতপক্ষে তৃতীয় বিশ্ব থেকে উন্নত পুঁজিবাদী দেশগুলোকে পুঁজি পাচার বা পুঁজি স্থানান্তরের একটি অংশ মাত্র। পুঁজি স্থানান্তরের প্রধান প্রক্রিয়া চালু আছে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের মাধ্যমে। অর্থনীতিবিদ ইমানুয়েলের ‘অসম বিনিময় তত্ত্বে’ বিষয়টি ব্যাখ্যা করা হয়েছে, যার মোদ্দা কথা হলো, তৃতীয় বিশ্ব থেকে উন্নত বিশ্বে শ্রমিক চলাচল কঠোরভাবে বাধাগ্রস্ত করার মাধ্যমে শ্রমিকের মজুরির হারের বিপুল পার্থক্য সৃষ্টি করে সস্তা শ্রমের উৎপাদিত সস্তা পণ্য বাণিজ্যের মাধ্যমে উন্নত দেশগুলোয় নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা গড়ে তুলে পুঁজি পাচারের সাম্রাজ্যবাদী ব্যবস্থা গড়ে তুলেছে পুঁজিবাদী দেশগুলো। পুঁজিবাদের প্রাণভোমরা ধারণ করে রয়েছে এই অসম বিনিময়ব্যবস্থা।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বহুজাতিক করপোরেশনগুলোর বিশ্বব্যাপী বিনিয়োগ কার্যক্রম বিস্তারের মাধ্যমে পুঁজি স্থানান্তরকে অনেক বেশি শক্তিশালী করে চলেছে বিশ্ব পুঁজিবাদীব্যবস্থা। বর্তমান ব্যবস্থায় দক্ষ ও প্রশিক্ষিত শ্রমিক ও পেশাজীবী গোষ্ঠীগুলোকে নিজেদের দেশে নিয়ে যেতে আগ্রহী উন্নত পুঁজিবাদী দেশগুলো। অতএব, বর্তমান বিশ্বে ‘মেধা পাচার’ হয়ে দাঁড়িয়েছে ‘মানবপুঁজি’ পাচারের সবচেয়ে কার্যকর হাতিয়ার।
বাংলাদেশ ‘মানবপুঁজি’ জোগানের দিক থেকে তেমন সফল না হলেও ৮০ লাখ প্রবাসী বাংলাদেশি অভিবাসীর অন্তত লাখ পাঁচেক দক্ষ ও উচ্চশিক্ষিত পেশাজীবী রয়েছেন। বাকি ৯০ শতাংশ অভিবাসীই কম দক্ষ ও কম শিক্ষিত ক্যাটাগরির শ্রমিক, যাঁরা বিভিন্ন দেশে নিম্ন মজুরির হাড়ভাঙা খাটুনির কাজে ব্যাপৃত রয়েছেন। এসব কাজকে বলা হয় থ্রিডি জব (ডার্টি, ডেঞ্জারাস অ্যান্ড ডিমান্ডিং)। বাংলাদেশে নিয়মিতভাবে রেমিট্যান্স পাঠান এই শ্রেণীর অভিবাসীরাই। গত অর্থবছরে বৈধ পথে বাংলাদেশে আসা রেমিট্যান্সের পরিমাণ ১৪ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে।
ধারণা করা হয়, আরও ৮ থেকে ১০ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স ‘হুন্ডি চক্রে’ প্রবেশ করছে। চোরাচালানি পুঁজি পাচারকারী, বিদেশে ছেলেমেয়েদের শিক্ষা প্রদানকারী ধনাঢ্য মা-বাবারা, বিদেশে চিকিৎসাসেবা গ্রহণকারীরা এবং বিদেশে ভ্রমণকারীরাই এই বিপুল পরিমাণ ‘হুন্ডি ডলারের’ মূল ক্রেতা। বাংলাদেশি অভিবাসীরা ডলারের চার-পাঁচ টাকা বেশি দাম পেলে হুন্ডি-পদ্ধতি পছন্দ করবেন, সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এই বর্ধিত দামটা পাওয়া যাচ্ছে হুন্ডি ডলারের বিপুল চাহিদা সৃষ্টিকারী ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ, সামরিক ও বেসামরিক আমলা এবং চোরাকারবারিদের দেশদ্রোহমূলক কর্মকাণ্ডের কারণেই। আমাদের রাষ্ট্রক্ষমতা তো এদের দখলেই রয়ে গেছে।
ড. মইনুল ইসলাম: প্রফেসর, অর্থনীতি বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও সাবেক সভাপতি, বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি।
No comments