না জয়যুক্ত হয়েছে by শামীমুল হক
সংসদে পাত্তাই পেলেন না বিএনপির সংসদ
সদস্যরা। অনেক আশা নিয়ে দেশবাসী বসেছিল টিভির সামনে। বিএনপির এমপিরা সংসদে
যাবেন। তাদের প্রস্তাব তুলে ধরবেন। বুধবার মাগরিবের বিরতির পর সংসদ সদস্যরা
একসঙ্গে সংসদ লবিতে প্রবেশ করেন।
তখন চলছিল প্রশ্নোত্তর
পর্ব। যোগাযোগ মন্ত্রী সংসদ সদস্যদের প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছিলেন। দীর্ঘক্ষণ
এভাবে চলার পর পয়েন্ট অব অর্ডারে স্পিকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন সাবেক
স্পিকার ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার এমপি। তিনি ফ্লোর পেয়ে বিরোধী
নেত্রীর প্রস্তাব তুলে ধরেন। পাশাপাশি জোর অনুরোধ জানান সংসদ নেত্রীকে
তাদের এ প্রস্তাব মেনে নেয়ার। তিনি আলোচনা করারও আহ্বান জানান। এরপর ফ্লোর
পান প্রবীণ পার্লামেন্টারিয়ান তোফায়েল আহমেদ। তিনি প্রথমেই পয়েন্ট অব
অর্ডারে এ প্রস্তাব গ্রহণযোগ্য নয় বলে মতামত দেন। পাশাপাশি তিনি ১৯৯৬ সালের
নির্বাচনের পর বেগম খালেদা জিয়া ও বিএনপি নেতারা তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে
যেসব মন্তব্য করেছিলেন তা তুলে ধরেন। পত্রিকার কাটিং তিনি সংসদে নিয়ে আসেন।
দিন-তারিখ উল্লেখ করে তিনি কোট আনকোট পড়ে শোনান। পাশাপাশি ২০০১ সালের
তত্ত্বাবধায়ক সরকার আওয়ামী লীগের সঙ্গে যে বৈরী আচরণ করে তা-ও সবিস্তারে
ব্যাখ্যা করেন। বলেন, এ অবস্থায় বিরোধী দল নেত্রীর প্রস্তাব গ্রহণযোগ্য নয়।
এ প্রস্তাবকে তিনি অবাস্তব হিসাবে আখ্যায়িত করেন। তারপরও তোফায়েল আহমেদ
বলেন, পয়েন্ট অব অর্ডারে নয়, বিধি অনুযায়ী প্রস্তাব উত্থাপন হলে আলোচনা হতে
পারে। ওদিকে বিএনপির এম কে আনোয়ার ফ্লোর নিয়ে আরও এক ধাপ এগিয়ে বলেন,
সরকার প্রধান কে হবেন ঠিক হলে অন্যগুলো কোন বিষয়ই নয়। এরপর ফ্লোর নিয়ে
সুরঞ্জিৎ সেনগুপ্ত বলেন, সর্বদলীয় সরকারের প্রস্তাবই একমাত্র সমাধানের পথ।
তিনি বলেন, বিএনপি সাংবিধানিক সঙ্কট সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে। এ ছাড়া
গণতন্ত্রে বিশ্বাস করলে, সাংবিধানিক প্রক্রিয়ার প্রতি দায়িত্বশীল থাকলে
বিএনপির উচিত প্রধানমন্ত্রী প্রস্তাবিত সর্বদলীয় মন্ত্রিসভা কেমন হবে, কতজন
সদস্য থাকবেন, কোন দল কোন মন্ত্রণালয় পাবে তা নিয়ে আলোচনা করা। আর শেখ
ফজলুল করিম সেলিম আরও একধাপ এগিয়ে গিয়ে ব্যাখ্যা দিলেন কিভাবে, কোন পর্যায়ে
সংবিধান সংশোধন করা হয়েছে। এতদিন সরকারি দলের নেতারা বলে আসছিলেন, বিএনপি
কেন সংসদে গিয়ে প্রস্তাব দিচ্ছে না, কেন বিল আনছে না। বিএনপি বিল আনলে আমরা
তা নিয়ে আলোচনা করবো। এ সঙ্কটের জন্য বিএনপি দায়ী। আর বিএনপি বলে আসছিল,
বিল যদি আনতে হয় তা সরকারি দল আনবে। আমরা বিল আনলে সংসদে মেজরিটির জোরে তা
বাতিল হয়ে যাবে। গতকাল বিএনপির এ কথার প্রমাণ পাওয়া গেল। বিএনপি বিরোধী দল
নেতার প্রস্তাব পড়ে শোনানোর পর সরকারি দলের এমপিদের শরীরে যে যন্ত্রণা
দেখেছে দেশবাসী তাতে কারও বুঝতে বাকি নেই যে, বিএনপি বিল আনলে তা কণ্ঠ ভোটে
নাকচ হয়ে যাবে। হ্যাঁ, সরকারি দলের এমপিদের কথাও সত্যি। বিএনপি মুলতবি
প্রস্তাব আনলে দিন তারিখ ধার্য করে এ নিয়ে সংসদে ব্যাপক আলোচনা হবে। ৩৪৫ জন
এমপিই তাদের বক্তব্য তুলে ধরবেন। এর মধ্যে সংরক্ষিত আসনসহ বিএনপির ৩৭ এমপি
মুলতবি প্রস্তাবের পক্ষে তাদের বক্তব্য তুলে ধরবেন। গলা ফাটাবেন। বিএনপির
সঙ্গে যদি জাতীয় পার্টির ২৮ এমপি যোগ দেন তাহলে প্রস্তাবের পক্ষে দাঁড়াবে
৬৫ জন সদস্য। জামায়াতের ২ জন তো পলাতক। বাকি আর ২৭৮ জন। তারা এক সুরে
গাইবেন সাম্যের গান। সর্বদলীয় সরকারই উত্তম প্রস্তাব। কেউ কেউ
প্রধানমন্ত্রীর সুরের সঙ্গে সুর মিলিয়ে বলবেন, আমরা দেশকে এগিয়ে নিতে চাই।
আর বিএনপি দেশকে পেছনে টানছে। এ থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। এ নিয়ে ক’জন মহিলা
এমপি আবার চুলোচুলিতেও জড়াতে পারেন। মিডিয়ার কল্যাণে এসব আবার দেশের গণ্ডি
ছাড়িয়ে বিদেশেও প্রচার হবে। দুই, তিন কিংবা চার দিন পর এর সুরাহা টানবেন
স্পিকার। বলবেন, প্রস্তাবের পক্ষে যারা আছেন, তারা বলেন হ্যাঁ। ওই ৩৭ কিংবা
৬৫ জন হ্যাঁ বলবেন। স্পিকার যখন বলবেন, প্রস্তাবের বিপক্ষে যারা তারা না
বলুন। তখন একসঙ্গে ২৭৮ জন বলবেন না। স্পিকার তখন বলবেন, না জয়যুক্ত হয়েছে,
না জয়যুক্ত হয়েছে, না জয়যুক্ত হয়েছে। অতএব প্রস্তাব গৃহীত হলো না। বিএনপি
হেরে গেল। এ কারণেই আগে থেকেই দুই বৃহৎ দল সংলাপ করে ঐকমত্যে পৌঁছে সে
অনুযায়ী সংসদে প্রস্তাব আনলে একসঙ্গে ৩৪৫ এমপিই বলবেন প্রস্তাবের পক্ষে।
তখন সর্বসম্মতিক্রমে প্রস্তাব পাস হবে। স্পিকার তখন বলবেন, হ্যাঁ জয়যুক্ত
হয়েছে। হ্যাঁ জয়যুক্ত হয়েছে। হ্যাঁ জয়যুক্ত হয়েছে। সবাই হাসি মুখে সংসদ
থেকে বেরোবেন। এরপর নির্বাচনী মাঠে নেমে পড়বেন জয়ের লড়াইয়ে। এটা না হওয়া
পর্যন্ত দেশজুড়ে থাকবে উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠা। যেমনটি এখন চলছে। আজ ২৫শে
অক্টোবর নিয়ে সর্বত্র টান টান উত্তেজনা। কোথাও কোথাও নামানো হয়েছে বিজিবি।
কি হবে দেশে? অজানা এ উত্তর খুঁজছে দেশবাসী।
samim.mzamin@gmail.com
No comments