যুদ্ধাপরাধীর পরিণতি by সরাফ আহমেদ
অপরাধটি অনেক পুরোনো, সেই দ্বিতীয়
বিশ্বযুদ্ধের সময়ের। প্রায় ৬৮ বছর আগের ঘটনা। তবু জনতার ক্রোধের মুখে
যুদ্ধাপরাধী এরিখ প্রিয়েবকের লাশটি পর্যন্ত প্রকাশ্যে সমাহিত পারেনি।
কারণ,
কেউ তার নিজের মাটিতে নাৎসি বাহিনীর এ নিন্দিত সহযোগীকে শেষ শয্যার স্থান
দিতে রাজি নয়। শেষ পর্যন্ত গোপনে অজ্ঞাত কোনো স্থানে আনুষ্ঠানিকতা ছাড়াই
তাকে সমাহিত করেছে ইতালির সরকার। ১১ অক্টোবর এই জার্মান যুদ্ধাপরাধী এক শ
বছর বয়সে মারা যাওয়ার পর আট দিন ধরে তাঁকে সমাহিত করা নিয়ে টানাহেঁচড়া চলে।
শেষ পর্যন্ত গোপন সমাধি নিয়ে সমঝোতা হয় ইতালীয় সরকার আর এরিখ প্রিয়েবকের
আইনজীবীর।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে ১৯৪৪ সালের ২৪ মার্চ রোমের একটি গুহায় ৩৩৫ জন ইতালীয়কে হত্যা করা হয়। এদের মধ্যে ছিল অনেক বালকও। ফ্যাসিস্ট জার্মানির এসএস কমান্ডার প্রিয়েবকে এ হত্যাযজ্ঞে জড়িত ছিলেন। প্রতিরোধ সংগ্রামে যুক্ত থাকার অভিযোগে ওই ইতালীয়দের হত্যা করা হয়। প্রিয়েবকে এতে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেননি। তবে তাঁর দাবি, তিনি হুকুম তামিল করেছেন মাত্র। আর হুকুমটা সরাসরি এসেছিল অ্যাডলফ হিটলারের কাছ থেকে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে ১৯৪৪ সালের ২৪ মার্চ রোমের একটি গুহায় ৩৩৫ জন ইতালীয়কে হত্যা করা হয়। এদের মধ্যে ছিল অনেক বালকও। ফ্যাসিস্ট জার্মানির এসএস কমান্ডার প্রিয়েবকে এ হত্যাযজ্ঞে জড়িত ছিলেন। প্রতিরোধ সংগ্রামে যুক্ত থাকার অভিযোগে ওই ইতালীয়দের হত্যা করা হয়। প্রিয়েবকে এতে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেননি। তবে তাঁর দাবি, তিনি হুকুম তামিল করেছেন মাত্র। আর হুকুমটা সরাসরি এসেছিল অ্যাডলফ হিটলারের কাছ থেকে।
প্রথম জীবনে একজন হোটেল কর্মকর্তা হিসেবে ইউরোপের নানা নামী হোটেলে চাকরি করেন প্রিয়েবকে। ইতালীয় ভাষায় পারদর্শী ছিলেন তিনি। ১৯৩৬ সালে হিটলারের ঘৃণিত গোয়েন্দা বাহিনী গেস্টাপোর হয়ে কাজ করতে ইতালিতে যান। একপর্যায়ে ফ্যাসিস্ট ইতালির পুলিশের কমান্ডার হিসেবে কাজ শুরু করেন।
এরিখ প্রিয়েবকে
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষে বিজয়ী মিত্রবাহিনীর সহযোগী ব্রিটিশ বাহিনীর হাতে প্রায় তিন বছর ইতালির রিমিনিতে বন্দী থাকেন প্রিয়েবকে। ১৯৪৮ সালে অটো পাপে নামের অন্য দেশের নাগরিক পরিচয়ে মিথ্যা ভ্রমণ দলিল নিয়ে আর্জেন্টিনায় পালিয়ে যান। আর্জেন্টিনাতে ১৯৯৩ সালে আসল পরিচয় প্রকাশিত হয়ে পড়লে সে দেশের সরকার তাঁকে গৃহবন্দী করেন। ১৯৯৫ সালে ইতালির অনুরোধে প্রিয়েবকেকে সে দেশে পাঠানো হয়। রোমের একটি সামরিক আদালত ১৯৯৬ সালে ৮৩ বছরের এই যুদ্ধাপরাধীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত করেন।
প্রিয়েবকের অন্তিম ইচ্ছা ছিল আর্জেন্টিনাতে তাঁর স্ত্রীর কবরের পাশে বা তাঁর জন্মস্থান বার্লিনের কাছের হেনিংসডর্ফে সমাহিত হওয়া। কিন্তু আর্জেন্টিনা বা হেনিংসডর্ফ শহর কর্তৃপক্ষ কেউই তাঁকে গ্রহণ করতে রাজি হয়নি। ১৫ অক্টোবর রোমের কাছের শহর আলবানো লাজিলাতে একটি কবরস্থানে তাঁকে সমাহিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। কিন্তু কবরস্থানের প্রধান ফটকে অবস্থান নিয়ে প্রায় পাঁচ শ বিক্ষোভকারী ‘হত্যাকারী’, ‘কসাই’ ইত্যাদি স্লোগান দিয়ে প্রিয়েবকের লাশবাহী গাড়িটিতে লাথি মারতে থাকে। গাড়িটিতে ঝুলিয়ে দেওয়া হয় ‘যুদ্ধাপরাধীর ঠাঁই নেই’ সংবলিত ব্যানার। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ প্রিয়েবকের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া এবং সমাহিত করার কাজ বাদ দিয়ে লাশটি রোমের এক সামরিক বিমানবন্দরের হিমঘরে নিয়ে রেখে দেয়।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বিচারের কাঠগড়া এড়াতে এরিখ প্রিয়েবকের মতো নৃশংস হিটলারের অনেক সহযোগীই জার্মানি ও জার্মানির দখল করা এলাকা ছেড়ে নাম, বয়স, জাতীয়তা—সব পরিবর্তন করে রেডক্রস বা কোনো গির্জার সহযোগিতায় ইতালির জেনোয়া বা পর্তুগালের লিসবন বন্দর দিয়ে লাতিন আমেরিকার ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, চিলি এবং উত্তর আমেরিকা বা সুদূর অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডে পালিয়ে যান। তাঁদের মধ্যে অটো অ্যাডলফ আইখম্যানকে ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ আর্জেন্টিনা থেকে অপহরণ করে এনে বিচার করে ১৯৬২ সালে ফাঁসিকাষ্ঠে ঝোলায়। চিকিৎসাবিজ্ঞানের গবেষণার নামে যুদ্ধবন্দীদের ধরে এনে চেতনানাশক ওষুধ ছাড়াই অঙ্গপ্রত্যঙ্গ কেটে বা শরীরে নানা জীবাণু প্রবেশ করাতেন দুই কুখ্যাত নাৎসি চিকিৎসক অ্যারিবার্ট হাইম ও যোসেফ মেঙ্গেল। এঁদের প্রথম জন মিসরের কায়রোয় ১৯৯২ সালে মারা যান। দুজনের মৃত্যুসংবাদই জার্মান সরকার প্রচার করে ১৯৯২ সালের মে মাসে। তখন বলা হয়, অ্যারিবার্ট হাইম কায়রোয় ফরিদ হুসেন নাম নিয়ে আত্মগোপনরত অবস্থায় ক্যানসারে আক্রান্ত হয়েছিলেন। ওই রোগেই তিনি মারা যান। আর ওই বছরই ব্রাজিলের এক ছোট শহরের সমুদ্রসৈকতে ডুবে মারা যান যোসেফ মেঙ্গেল। সন্দেহ থাকায় মাথার খুলি লন্ডনে এনে বিশেষ পরীক্ষা করা হয়। প্রমাণিত হয়, লাশটি সত্যিই মেঙ্গেলের।
১৯৯০ সালে যুদ্ধাপরাধী যোসেফ সয়ামবার্গ এবং ২০১১ সালে যুদ্ধাপরাধী ইভান ডেমিয়ানইউকে বিদেশ থেকে জার্মানিতে ধরে এনে বিচার করা হয়।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির নাৎসি বাহিনীর নির্মমতা ছিল ভয়াবহ মাত্রার। তাই বিশ্বযুদ্ধ শেষের ৬৫ বছর পরও তাদের বিরুদ্ধে ঘৃণা ও ক্ষোভ বিন্দুমাত্র কমেনি। এটাই আরেকবার প্রমাণিত হলো এরিখ প্রিয়েবকের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষে বিজয়ী মিত্রবাহিনীর সহযোগী ব্রিটিশ বাহিনীর হাতে প্রায় তিন বছর ইতালির রিমিনিতে বন্দী থাকেন প্রিয়েবকে। ১৯৪৮ সালে অটো পাপে নামের অন্য দেশের নাগরিক পরিচয়ে মিথ্যা ভ্রমণ দলিল নিয়ে আর্জেন্টিনায় পালিয়ে যান। আর্জেন্টিনাতে ১৯৯৩ সালে আসল পরিচয় প্রকাশিত হয়ে পড়লে সে দেশের সরকার তাঁকে গৃহবন্দী করেন। ১৯৯৫ সালে ইতালির অনুরোধে প্রিয়েবকেকে সে দেশে পাঠানো হয়। রোমের একটি সামরিক আদালত ১৯৯৬ সালে ৮৩ বছরের এই যুদ্ধাপরাধীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত করেন।
প্রিয়েবকের অন্তিম ইচ্ছা ছিল আর্জেন্টিনাতে তাঁর স্ত্রীর কবরের পাশে বা তাঁর জন্মস্থান বার্লিনের কাছের হেনিংসডর্ফে সমাহিত হওয়া। কিন্তু আর্জেন্টিনা বা হেনিংসডর্ফ শহর কর্তৃপক্ষ কেউই তাঁকে গ্রহণ করতে রাজি হয়নি। ১৫ অক্টোবর রোমের কাছের শহর আলবানো লাজিলাতে একটি কবরস্থানে তাঁকে সমাহিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। কিন্তু কবরস্থানের প্রধান ফটকে অবস্থান নিয়ে প্রায় পাঁচ শ বিক্ষোভকারী ‘হত্যাকারী’, ‘কসাই’ ইত্যাদি স্লোগান দিয়ে প্রিয়েবকের লাশবাহী গাড়িটিতে লাথি মারতে থাকে। গাড়িটিতে ঝুলিয়ে দেওয়া হয় ‘যুদ্ধাপরাধীর ঠাঁই নেই’ সংবলিত ব্যানার। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ প্রিয়েবকের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া এবং সমাহিত করার কাজ বাদ দিয়ে লাশটি রোমের এক সামরিক বিমানবন্দরের হিমঘরে নিয়ে রেখে দেয়।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বিচারের কাঠগড়া এড়াতে এরিখ প্রিয়েবকের মতো নৃশংস হিটলারের অনেক সহযোগীই জার্মানি ও জার্মানির দখল করা এলাকা ছেড়ে নাম, বয়স, জাতীয়তা—সব পরিবর্তন করে রেডক্রস বা কোনো গির্জার সহযোগিতায় ইতালির জেনোয়া বা পর্তুগালের লিসবন বন্দর দিয়ে লাতিন আমেরিকার ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, চিলি এবং উত্তর আমেরিকা বা সুদূর অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডে পালিয়ে যান। তাঁদের মধ্যে অটো অ্যাডলফ আইখম্যানকে ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ আর্জেন্টিনা থেকে অপহরণ করে এনে বিচার করে ১৯৬২ সালে ফাঁসিকাষ্ঠে ঝোলায়। চিকিৎসাবিজ্ঞানের গবেষণার নামে যুদ্ধবন্দীদের ধরে এনে চেতনানাশক ওষুধ ছাড়াই অঙ্গপ্রত্যঙ্গ কেটে বা শরীরে নানা জীবাণু প্রবেশ করাতেন দুই কুখ্যাত নাৎসি চিকিৎসক অ্যারিবার্ট হাইম ও যোসেফ মেঙ্গেল। এঁদের প্রথম জন মিসরের কায়রোয় ১৯৯২ সালে মারা যান। দুজনের মৃত্যুসংবাদই জার্মান সরকার প্রচার করে ১৯৯২ সালের মে মাসে। তখন বলা হয়, অ্যারিবার্ট হাইম কায়রোয় ফরিদ হুসেন নাম নিয়ে আত্মগোপনরত অবস্থায় ক্যানসারে আক্রান্ত হয়েছিলেন। ওই রোগেই তিনি মারা যান। আর ওই বছরই ব্রাজিলের এক ছোট শহরের সমুদ্রসৈকতে ডুবে মারা যান যোসেফ মেঙ্গেল। সন্দেহ থাকায় মাথার খুলি লন্ডনে এনে বিশেষ পরীক্ষা করা হয়। প্রমাণিত হয়, লাশটি সত্যিই মেঙ্গেলের।
১৯৯০ সালে যুদ্ধাপরাধী যোসেফ সয়ামবার্গ এবং ২০১১ সালে যুদ্ধাপরাধী ইভান ডেমিয়ানইউকে বিদেশ থেকে জার্মানিতে ধরে এনে বিচার করা হয়।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির নাৎসি বাহিনীর নির্মমতা ছিল ভয়াবহ মাত্রার। তাই বিশ্বযুদ্ধ শেষের ৬৫ বছর পরও তাদের বিরুদ্ধে ঘৃণা ও ক্ষোভ বিন্দুমাত্র কমেনি। এটাই আরেকবার প্রমাণিত হলো এরিখ প্রিয়েবকের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে।
No comments