দেশজুড়ে আতঙ্ক, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা
দেশজুড়ে আতঙ্ক, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। দুই জোটের
পাল্টাপাল্টি সভা-সমাবেশকে কেন্দ্র করে টান টান উত্তেজনা। পরিস্থিতি
নিয়ন্ত্রণে রাখতে জেলায় জেলায় সভা-সমাবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে।
নামানো হয়েছে বিজিবি।
বাধা উপেক্ষা করেই বিভিন্ন স্থানে
মিছিল সমাবেশ করেছে ১৮ দল। নিষেধাজ্ঞার মধ্যেই আজ মিছিল ও সমাবেশ করার
ঘোষণা দেয়া হয়েছে। এদিকে রাজপথে থাকার ঘোষণা দিয়েছে আওয়ামী লীগ। আইন
প্রয়োগকারী সংস্থার সঙ্গে দলটির নেতাকর্মীদের রাজপথে থাকার নির্দেশনা দেয়া
হয়েছে মাঠ পর্যায়ে। সব বাধা উপেক্ষা করে পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচি পালনে ১৮
দল দৃঢ় অবস্থানের কথা জানিয়েছে। সর্বশেষ গতকাল খুলনা মহানগরীতে
সভা-সমাবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে মেট্রোপলিটন পুলিশ। এর আগে ঢাকা,
চট্টগ্রাম, বরিশালে সভা-সমাবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় পুলিশ। এছাড়া বগুড়া,
কুমিল্লা, জয়পুরহাট, নাটোর ও পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলায় ১৪৪ ধারা জারি করেছে
স্থানীয় প্রশাসন। বিভিন্ন জেলায় ১৮ দলের দুই শতাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার
করা হয়েছে। রাজনৈতিক কর্মসূচিকে ঘিরে গতকাল রাজধানী জুড়ে ছিল জনআতঙ্ক।
বিকাল থেকে উদ্বেগ-আতঙ্কে রাস্তাঘাট অনেকটা ফাঁকা হয়ে যায়। কোথাও কোথাও
যানবাহন সঙ্কটও দেখা দেয়। আতঙ্কগ্রস্ত মানুষের মধ্যে ছিল নিরাপদে ঘরে ফেরার
তাড়া।
এদিকে দুই জোটের পাল্টা কর্মসূচিকে ঘিরে সারা দেশে বাড়তি নিরাপত্তা জোরদার করেছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা। থানা ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। সন্ধ্যার পরপরই রাজধানীজুড়ে ২০ প্লাটুন বিজিবি সদস্যদের নামানো হয়েছে। সমাবেশকে কেন্দ্র করে উত্তেজনাকর রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বিজিবি সদস্য নামানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। গতকাল সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের এ কথা জানান স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এডভোকট শামসুল হক টুকু। তিনি বলেন, শুক্রবার যদি বিরোধী দল আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাতে চায় এবং নাশকতার চেষ্টা করে তবে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে তা প্রতিহত করবে। নাশকতা ঠেকাতে গতকাল বিকাল থেকেই রাজধানীতে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। রাজধানীর প্রবেশ মুখগুলোতে বসানো হয় নিরাপত্তা চৌকি। যানবাহনে চালানো হয় ব্যাপক তল্লাশি। ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ আজ সমাবেশের জন্য অনুমতি চেয়েছিল। অনুমতি না পাওয়ায় তারা সমাবেশ করবে না বলে জানিয়েছেন নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া। তবে নেতাকর্মীদের মাঠে থাকার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
রাজধানীতে ১৮ দলের সমাবেশের অনুমতি নিয়ে দিনভর ছিল নানা নাটকীয়তা। বিকালে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নগর পুলিশ ১৩টি শর্ত দিয়ে সমাবেশের অনুমতি দিলেও তা প্রত্যাখ্যান করে বিএনপি নয়া পল্টনে সমাবেশ করার অনুমতি চেয়ে আবার আবেদন করে। তবে রাত সোয়া ১০টায় সংবাদ সম্মেলন করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, নিরাপত্তার কারণে আমরা নয়া পল্টনে সমাবেশের অনুমতি চেয়েছিলাম। কিন্তু পুলিশ অনুমতি দেয়নি। আমরা শান্তি ও সমঝোতার স্বার্থে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেই সমাবেশ করবো।
১৮ দলের সমাবেশ সফল করতে বিএনপি ও জোটের শরিক দলগুলো ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে। প্রতিটি ওয়ার্ড ও থানা থেকে বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী উপস্থিতি নিশ্চিত করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে সারা দেশে ব্যাপকভাবে শোডাউনেরও নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বিএনপি ও ১৮ দলের পক্ষ থেকে। শোডাউনের অংশ হিসেবে গতকাল চট্টগ্রাম ও জয়পুরহাটে নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে মিছিল সমাবেশ করে বিরোধী দল। আগের দিন সভা-সমাবেশে নিষেধাজ্ঞা দিলেও গতকাল রাত সাড়ে নয়টায় বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ ১৮ দলকে শুধু সমাবেশ করার অনুমতি দেয়। চট্টগ্রামে কাজীর দেউড়িতে বিএনপি ও শহীদ মিনারে আওয়ামী লীগকে সমাবেশ করার অনুমতি দেয় পুলিশ।
রাজধানীসহ সারাদেশে আজকের মিছিল সমাবেশ সফল করার জন্য সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিয়েছে জামায়াতে ইসলামী। এজন্য দলের ছাত্র সংগঠন শিবিরকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, যে কোন মূল্যে এই দিন নেতাকর্মীদের রাজপথে থাকতে হবে। দেখাতে হবে দলের রাজনৈতিক শক্তি সামর্থ্য। এজন্য জামায়াতের অপেক্ষাকৃত তরুণ এবং শিবিরের সিনিয়র নেতাদের দায়িত্ব বণ্টন করে দেয়া হয়েছে। রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, সায়েদাবাদ, পোস্তগোলা, গাবতলী, আবদুল্লাহপুর, সদরঘাট, কমলাপুর, মহাখালী, মিরপুরসহ গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে নেতাকর্মীদের সতর্ক অবস্থানের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। সূত্র জানায়, রাজধানীসহ প্রায় সারাদেশে সভা-সমাবেশের ওপর সরকারি নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে কর্মসূচি পালনে সংকল্পবদ্ধ জামায়াত। দলটির ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারের মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান গতকাল এক বিবৃতিতে যে কোন মূল্যে দেশের সর্বত্র এই কর্মসূচি সফল করার আহবান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, সরকার সংবিধান লঙ্ঘন করে জনগণের মৌলিক অধিকার হরণ করার জন্য মিছিল, সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। সরকার ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, খুলনা, রাজশাহী, সাতক্ষীরা, সিরাজগঞ্জ, বাগেরহাট, কুমিল্লা, নোয়াখালী, নারায়ণগঞ্জ, টাঙ্গাইল, বগুড়াসহ সারা দেশে জামায়াত-শিবির, বিএনপিসহ ১৮দলীয় জোটের নেতাকর্মীদের ব্যাপকভাবে গ্রেপ্তার অভিযান অব্যাহত রেখেছে। পুলিশ জামায়াত, শিবির, বিএনপিসহ ১৮দলীয় জোটের নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার করার জন্য ঘরে ঘরে ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ছাত্রাবাস ও মেসে তল্লাশি চালাচ্ছে। স্কুল, কলেজ, মাদরাসার শিক্ষকগণকেও গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। রাস্তায় রাস্তায় চেকপোস্ট বসিয়ে যানবাহনের যাত্রীদের তল্লাশি করা হচ্ছে এবং বাড়িতে কোন মেহমান আসলেও সরকারের অনুমতি নিতে হবে বলে পুলিশ জানিয়েছে। গত দু’দিনে সারাদেশে বিরোধী দলের সাড়ে চার হাজারের অধিক নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি বলেন, এভাবে বিরোধীদলের নেতা-কর্মী, আলেম-ওলামা ও সাধারণ জনগণকে গ্রেপ্তার করে জনগণের আন্দোলন দমন করা যাবে না। বরং সরকারের গণগ্রেপ্তার, অত্যাচার, নির্যাতনের কারণে জনগণের আন্দোলন আরও বেগবান হবে। অবিলম্বে মিছিল, সভা-সমাবেশের উপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার, বিরোধী দলের নেতা, ১৮ দলীয় জোট নেত্রী ও বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রস্তাব মেনে নিয়ে সংবিধানে তা পুনর্বহাল করার আহবান জানান জামায়াতের এই নেতা। তিনি ‘প্রশ্নবিদ্ধ ও বিতর্কিত’ ট্রাইব্যুনাল ভেঙে দিয়ে জামায়াতের শীর্ষ নেতাসহ ১৮দলীয় জোটে নেতা-কর্মী এবং আলেমদের মুক্তি, জাতীয় সংসদ ভেঙে দিয়ে পদত্যাগ করার জন্য সরকারের প্রতি আহবান জানান।
No comments