জামায়াত শিবিরের টার্গেট বড় মাপের নেতাকে হত্যা- প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতির ইমাম সম্মেলনে যোগ দিতে মরিয়া হাজার হাজার জামায়াতকর্মী by গাফফার খান চৌধুরী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে আগামী ২৭ জানুয়ারি জাতীয় ইমাম সম্মেলনে জামায়াতের আদর্শের ইমামরা যোগ দেয়ার চেষ্টা করছেন। আরও যোগ দিতে যাচ্ছেন জামায়াত-শিবির মতাদর্শের নেতাকর্মীরা।
এসব নেতাকর্মীরা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে নানা উসিলায় দেখা করার চেষ্টা করতে পারেন। সম্মেলনে যোগ দিতে ইমাম সম্মেলনের তরফ থেকে দাওয়াত পাওয়া শতকরা ৭০ ভাগ ইমামই জামায়াত-শিবিরের সক্রিয় নেতাকর্মী। ইমাম সম্মেলনের দাওয়াত পেতে জামায়াত-শিবির প্রচুর অর্থ খরচ করেছেন। এর পেছনে বিশেষ কোন উদ্দেশ্য থাকতে পারে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচাল করতে জামায়াত-শিবিরের হামলার বর্তমান টার্গেট রাজপথ নয়, বড়মাপের রাজনৈতিক নেতা। তাই ইমাম সম্মেলনকে ঘিরে বড় ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনার আশঙ্কা করছে গোয়েন্দারা।একটি বিশেষ সংস্থার তরফ থেকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালকে এক গোয়েন্দা প্রতিবেদনে এমন তথ্য জানানো হয়েছে। প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, আগামী ২৭ জানুয়ারি জাতীয় ইমাম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। বেলা ১১টা থেকে মূল অনুষ্ঠান শুরুর কথা রয়েছে। সম্মেলনের স্থান হিসেবে রাজধানীর শেরেবাংলানগরের বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রকে বেছে নেয়া হয়েছে। সম্মেলনের প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আর অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করার কথা রয়েছে ধর্ম বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মোঃ শাহজাহান মিয়ার। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালকের ভ’মিকায় থাকবেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক শামীম আফজাল।
জাতীয় ইমাম সম্মেলন সম্পন্ন করতে আনুষঙ্গিক কাজ প্রায় শেষ। প্রতিটি জেলায় চিঠি ও লিফলেট দেয়া হয়েছে। চলছে পুরোদমে প্রচার। হিসেব অনুযায়ী সারাদেশ থেকে প্রায় ৩ হাজার ইমাম সম্মেলনে যোগ দিতে পারেন। পাশাপাশি ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও উপস্থিত থাকছেন সম্মেলনে। সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি ইতোমধ্যেই দাওয়াতপত্র বিলি করেছে। দাওয়াতপত্র বিলির ক্ষেত্রে তেমন কোন নীতিমালা বা কাকে দাওয়াতপত্র দেয়া হচ্ছে তা ভালভাবে যাচাইবাছাই করা হয়নি।
পরবর্তীতে বিলিকৃত দাওয়াতপত্রের প্রাপকদের বিষয়ে জোরালোভাবে খোঁজখবর নেয়া শুরু হয়। খোঁজখবর নিয়ে যে তথ্য পাওয়া যাওয়া গেছে তা রীতিমতো ভয়াবহ। বিলিকৃত দাওয়াতপত্রের শতকরা ৭০ ভাগই পেয়েছে জামায়াত-শিবিরের রাজনৈতিক আদর্শে বিশ্বাসী ইমামরা। বঞ্চিত হয়েছেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত ইমামরা। এ নিয়ে গোয়েন্দা সংস্থায় তোলপাড় শুরু হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে দাওয়াত কার্ড ফেরত আনা বা দাওয়াত পাওয়া ব্যক্তিদের দাওয়াতে না যাওয়া থেকে বিরত করতে গেলে বাড়তি ঝামেলার সৃষ্টি হতে পারে। ইসলামীক ফাউন্ডেশনের যেসব কর্মকর্তা কর্মচারী জাতীয় ইমাম সম্মেলনের যে দাওয়াত কার্ড পেয়েছেন তাঁরা অধিকাংশই জামায়াত-শিবিরের লোকজন। এমনকি তাঁদের আদেশ বাস্তবায়নে মরিয়া। এরা মতাদর্শগতভাবে জামায়াত-শিবিরের লোকজন। অভিযোগ রয়েছে, এসব নেতাকর্মীর কারণেই বছরের পর বছর ধরে জামায়াতÑশিবির জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমসহ আশপাশের এলাকায় জামায়াত-শিবিরের পক্ষে বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রাম সফল করে আসছে। গত সোমবার কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী পলাতক মাওলানা আবুল কালাম আজাদ ওরফে বাচ্চু রাজাকারের ফাঁসির আদেশ হওয়ায় জামায়াত-শিবির ও এদের সমমনা অন্য জঙ্গী সংগঠনগুলো মাঠে তৎপর রয়েছে।
গোয়েন্দা সূত্র মতে, বাচ্চু রাজাকার পাকিস্তানে পলাতক থাকায় তাঁর ফাঁসির রায় ঘোষিত হওয়ার পরেও তেমন কোন প্রতিক্রিয়াই দেখায়নি জামায়াত-শিবির, জঙ্গী, ধর্ম ও ইসলামভিত্তিক মৌলবাদী সংগঠনগুলো। এটি জামায়াত-শিবির জঙ্গীদের একটি বিশেষ কৌশল। তবে বাচ্চু রাজাকারের ফাঁসির আদেশ দেয়ার পর ভেতরে ভেতরে জামায়াত-শিবির ফুঁসছে। ফুঁসলেও ভিকটিম পলাতক থাকায় এ্যাকশনে যাচ্ছে না জামায়াত-শিবির। জামায়াত-শিবির অত্যন্ত কৌশলী অবস্থান নিয়েছে। জামায়াত-শিবির মানুুষের মধ্যে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হলে তেমন কোন দাঙ্গাহাঙ্গামা করবে না, এমন ধারণার জন্ম দিচ্ছে।
কিন্তু জামায়াতের যেসব নেতা, বিশেষ করে জামায়াতের সাবেক আমির গোলাম আযম, জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির মুফতি মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লা, মীর কাশেম আলী, বিএনপির সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে রায় ঘোষণা হওয়া মাত্র মাঠে নামবে জামায়াত-শিবির।
কারাগারে থাকা এসব নেতার বিরুদ্ধে ফাঁসির আদেশ ঘোষিত হওয়া মাত্রই প্রকাশ পাবে জামায়াত-শিবিরের আসল চেহারা। ইতোমধ্যেই সারাদেশে নাশকতা চালাতে জামায়াত-শিবির, জঙ্গী এবং ইসলামভিত্তিক উগ্র মৌলবাদী সংগঠনগুলো তৎপরতা অব্যাহত রেখেছে। সে মোতাবেক তাদের যাবতীয় প্রস্তুতিও রয়েছে।
প্রতিটি রাজনৈতিক দলেই জামায়াত নিজেদের লোক রেখেছে। জামায়াত কৌশলে ক্ষমতাসীন দলের অনেক ভেতরের খবর রাখছে। কারাবন্দী কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায় ঘোষিত হলে প্রকাশ পাবে জামায়াত-শিবিরের আসল চরিত্র। যে কোন মূল্যে যে কোন সুযোগে জামায়াত-শিবির দেশে বড় ধরণের নাশকতা চালাতে প্রস্তুত। জামায়াত এখন রাজপথ নয়, রাজনৈতিক ব্যক্তিকে টার্গেট করছে। জামায়াত-শিবির, জঙ্গীসহ ধর্মীয় ও উগ্র ইসলামী দলগুলো এমন একজন ব্যক্তিকে হত্যার চেষ্টা করছে, যাঁকে হত্যার পর পুরো দেশ অচল হয়ে পড়তে পারে। এমনকি বিষয়টি দেশে বিদেশে আলোচনার ঝড় বইয়ে দিতে পারে। দেশের অস্তিত্বও হুমকিও মুখে পড়া বিচিত্র নয়। পুরো পৃথিবী জুড়ে হৈচৈ ফেলে দিতেই কাজ করে যাচ্ছে জামায়াত। এখাতে কি পরিমাণ অর্থ খরচ করছে তা সাধারণ মানুষের ধারণারও বাইরে।
তাই কারাবন্দী জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের যুদ্ধাপরাধী হিসেবে বিচার হওয়ার আগে নানা ধরনের ফন্দি আঁটছে জামায়াত। আটককৃত নেতাদের বিচার বানচাল করতে জামায়াত যে কোন ধরনের অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করতেও প্রস্তুত।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচালের নানামুখী তৎপরতার ধারাবাহিকতাই গত বছরের ২৮ ডিসেম্বর ইসলামিক ফাউন্ডেশন কর্তৃক আয়োজিত ক্বিরাত প্রতিযোগিতায় সম্পূর্ণ পূর্বপরিকল্পিতভাবে অনুষ্ঠানে উপস্থিত নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খানের বক্তৃতাকে অহেতুক ইস্যু বানিয়ে মন্ত্রীকে জুতো নিক্ষেপ করা হয়েছিল। পরবর্তীতে এ বিষয়ে তদন্ত হয়। জামায়াত-শিবির তাদের ক্ষমতা ও প্রভাব জাহির করতেই ক্ষমতাসীন সরকারের একজন মন্ত্রীকে প্রকাশ্যে জুতো মারার ঘটনা ঘটায়। ভবিষ্যতে এরচেয়ে ভয়াবহ ঘটনা ঘটাতে প্রস্তুতির আগাম আভাস হিসেবেই জামায়াত-শিবির সেটি ঘটিয়েছিল বলে তদন্তে বেরিয়ে এসেছে। এমনকি সম্পূর্ণ পরিকল্পিতভাবে বিব্রতকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করতেই জামায়াত-শিবির ওই ঘটনা ঘটায়। এছাড়াও ওই সভায় ধর্ম প্রতিমন্ত্রী এ্যাডভোকেট শাহজাহান মিয়া এবং ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক শামীম আফজালকে নিয়ে জামায়াত শিবির সর্মথিত ইমামরা সম্পূর্ণ পরিকল্পিত এবং উদ্দেশ্যমূলকভাবে ইস্যু তৈরি করে সরকারকে বেকায়দায় ফেলার চেষ্টা করেছে। এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে চেয়েছিল যাতে সারাদেশে সরকার, সরকারের মন্ত্রী ও সরকারী ওই প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে মারাত্মক নেতিবাচক ধারণা প্রকাশ পায় এবং সরকার দেশে বিদেশে বিব্রত হয়।
ইমাম সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর সামনেই জামায়াত-শিবির সমর্থিত ইমামরা সংবিধান থেকে আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা তুলে দেয়া ও নারী নীতি বাতিলসহ নানা ইস্যুতে পরিকল্পিতভাবে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করতে পারে। এমনকি সুযোগমতো যেকোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটানোও বিচিত্র নয়।
No comments