পিন্টু, তোরাব আলী জড়িত_ প্রমাণ মিলেছে
মহাজোট সরকারের ভাবমূর্তি ৰুন্ন করে তাকে চাপে রাখতেই পরিকল্পিতভাবে নৃশংসতর পিলখানা হত্যাযজ্ঞ ঘটানো হয়েছে। তবে ঘটনার সঙ্গে রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
কিন্তু কতিপয় রাজনৈতিক ব্যক্তির জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে। এৰেত্রে নেপথ্যের কুশীলবরা বিডিআর সদস্যদের দাবি আদায়ের বিষয়টিকে ইসু্য বানিয়ে ফায়দা লুটতে চেয়েছিল। হত্যাযজ্ঞের নেপথ্যের ষড়যন্ত্রকারীদের শনাক্ত করা হচ্ছে। তারা যত শক্তিশালীই হোক না কেন, তাদের বিচারের সম্মুখীন করা হবে। কারণ, তারা আইনের চোখে অপরাধী। এদিকে পিলখানা হত্যাযজ্ঞ মামলার তদনত্ম শেষ পর্যায়ে। স্বল্প সময়ের মধ্যেই মামলার চার্জশীট দাখিল করা হবে। সে মোতাবেক প্রস্তুতি চলছে।বুধবার রাজধানীর মালিবাগ সিআইডি সদর দফতরে সংবাদ সম্মেলনে মামলার তদনত্মকারী কর্মকর্তা সিআইডির এসপি আব্দুল কাহার আকন্দ এসব কথা বলেন। এর আগে তিনি পিলখানায় নিহতদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন। তিনি বলেন, সরকারের ভাবমূর্তি ৰুন্ন করতেই এ ধরনের নৃশংস হত্যাকা-ের জন্ম দেয়া হয়েছে। যাতে সরকার সব সময় বাড়তি চাপের মধ্যে থাকে। হত্যাযজ্ঞের নেপথ্যেও কারিগর রয়েছে। নেপথ্যের কুশীলবরা যত বড় শক্তিশালীই হোক না কেন, তাদের বিচারের সম্মুখীন করা হবে। কারণ তারা আইনের চোখে অপরাধী। তবে হত্যাযজ্ঞের সঙ্গে প্রাথমিকভাবে রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়া যায়নি। কিন্তু রাজনৈতিক ব্যক্তির সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়া গেছে। এসব রাজনৈতিক ব্যক্তি রাজনৈতিক স্বার্থে, না ব্যক্তিগত স্বার্থে পিলখানা হত্যাযজ্ঞের সঙ্গে জড়িত, সে বিষয়ে তদনত্ম চলছে। ইতোপূর্বে সরকারী ও বিরোধী দলের অনেক রাজনৈতিক নেতাকেই এ মামলায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য নাসির উদ্দিন পিন্টু ও স্থানীয় বিএনপি নেতা তোরাব আলীসহ ৪/৫ প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তির যোগসাজশের বিষয়টি প্রমাণিত। তদনত্মের স্বার্থে বাকি রাজনৈতিক ব্যক্তিদের পরিচয় জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেন তিনি।
প্রসঙ্গত, বিগত বছরের ২৫-২৬ ফেব্রুয়ারি পিলখানা হত্যাযজ্ঞে ৫৮ সেনা সদস্যসহ মোট ৭৪ জনকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। এর মধ্যে ৫৭ ছিলেন সেনা কর্মকর্তা। এ ব্যাপারে রাজধানীর লালবাগ থানার তৎকালীন ওসি বাদী হয়ে লালবাগ থানায়ই একটি মামলা দায়ের করেন। মামলাটি পরবর্তীতে আদালতের নির্দেশে নিউমার্কেট থানায় হসত্মানত্মর করা হয়। পরে মামলাটির তদনত্মভার দেয়া হয় সিআইডিকে। এক বছর ধরে মামলার তদনত্ম চলছে। তদনত্মকালে বিডিআর সদর দফতর থেকে খোয়া যাওয়া বেশ কিছু মাল উদ্ধার করা হয়েছে। বিডিআর হত্যাযজ্ঞে পিসত্মল, এলএমজি, এসএমজি ও গ্রেনেডসহ বিভিন্ন ধরনের প্রায় ৩৭শ' অস্ত্র ও অস্ত্র অনুযায়ী গোলাবারম্নদ ব্যবহৃত হয়েছে। বিদ্রোহের সময় পিলখানা থেকে ১শ' ৯৯ গ্রেনেড, ৬৪ পিসত্মল ও ৫ রাইফেলসহ প্রায় ৩শ' অস্ত্র খোয়া গেছে। বিদ্রোহে সম্পদ ও অর্থের অপূরণীয় ৰয়ৰতি হয়েছে।
মামলার তদনত্মকারী কর্মকর্তা জানান, হত্যাযজ্ঞ মামলার তদনত্ম শেষ পর্যায়ে। দ্রম্নততম সময়ের মধ্যেই চার্জশীট দাখিল করা হবে। ইতোমধ্যেই চার্জশীট দাখিলের প্রস্তুতি শুরম্ন হয়েছে। বিডিআর সদর দফতরের সাড়ে ৪ কিলোমিটার আয়তনের মধ্যে প্রায় একশ' স্থাপনা রয়েছে। প্রতিটি স্থাপনাতেই অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে সিআইডি পুলিশ ৩৭শ' আলামত সংগ্রহ করেছে। ওই দিন পিলখানায় প্রায় ১১ হাজার বিডিআর সদস্য উপস্থিত ছিলেন। বিডিআর হত্যাযজ্ঞ মামলায় মোট ২২শ' ৫ জনকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। এর মধ্যে ২১শ' ৬৯ বিডিআর সদস্য। বাকি ৩৬ পাবলিক। এ মামলায় ২১শ' ৬৮ বিডিআর সদস্য ও ৩৩ পাবলিককে রিমান্ডে নেয়া হয়েছিল। এর মধ্যে ২১শ' ৬০ বিডিআর সদস্য ও ৩৩ পাবলিককে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। বর্তমানে ১৪ বিডিআর সদস্য ও এক পাবলিককে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করছে সিআইডি। এ পর্যনত্ম ১শ' ৩৯ ভিকটিমের পরিবার, ৬ হাজার ৪শ' ৩৫ বিডিআর সদস্য, ৪শ' ৩১ পাবলিক, বিডিআর কলেজের ৩শ' ১১ স্টাফ, বিডিআর হাসপাতালের ৪শ' ১৭ স্টাফ, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের ২৩, ২শ' ১৮ পুলিশসহ সর্বমোট ৭ হাজার ৯শ' ৭৪ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। এ মামলায় ৫শ' ৪১ জন আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী দিয়েছেন। জবানবন্দীদাতাদের মধ্যে ৯ জন পাবলিক। বাকি ৫শ' ৩২ বিডিআর সদস্য। আসামিদের মধ্যে বেশ কয়েকজন এখনও পলাতক রয়েছে। তাদের গ্রেফতারে চেষ্টা অব্যাহত আছে। সংবাদ সম্মেলনে সিআইডির ডিআইজি সাইফুল আলম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মতিউর রহমান, সিনিয়র এএসপি ফজলুল কবীর ও এ মামলার পরামর্শক এ্যাডভোকেট মোশারফ হোসেন কাজল উপস্থিত ছিলেন।
No comments