ইইউর মন্তব্য পার্বত্য শান্তি চুক্তি বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত করবে- বাংলাদেশের ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া, মিশন প্রধানকে তলব
পার্বত্য চট্টগ্রামে সহিংস ঘটনাকে কেন্দ্র করে দাতা সংস্থা ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) মন্তব্যে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে সরকার। রবিবার ঢাকায় ইইউর ডেলিগেশন প্রধান স্টিফেন ফ্রোইনকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ডেকে পাঠানো হয়।
সেখানে শুক্রবার পার্বত্য এলাকায় সহিংসতা নিয়ে ইইউর মন্তব্যকে ভিত্তিহীন ও দুঃখজনক উলেস্নখ করে বলা হয়, সরকার পার্বত্য শান্তিচুক্তি বাস্তবায়নে দৃঢ় অঙ্গীকারাবদ্ধ। তবে বন্ধুদের এ ধরনের মন্তব্য পার্বত্যচুক্তি বাস্তবায়নকে বাধাগ্রস্ত এবং পার্বত্য এলাকার জনজীবনকে অস্থিতিশীল করতে সহায়তা করবে। এ সময় ইইউকে আরও দায়িত্বশীল ও গঠনমূলক আচরণের আহ্বান জানানো হয়। পরে সচিব মিজারম্নল কায়েস একটি প্রতিবাদপত্র রাষ্ট্রদূতের কাছে হস্তান্তর করেন। এর আগে শুক্রবার রাঙ্গামাটিতে সহিংসতা ও এর সঙ্গে সেনাবাহিনীর জড়িত থাকার অভিযোগের দু্রত, পূর্ণাঙ্গ ও স্বাধীন তদন্তে সরকারের প্রতি আহ্বান জানায় ইইউ। হস্তান্তর করা প্রতিবাদে বলা হয়, বাংলাদেশ সরকারের জন্য এটি অত্যন্ত দুঃখজনক বিষয় যে, ইইউ যে বক্তব্য দিয়েছে তা ঘটনা কিংবা তথ্য-প্রমাণের ওপর ভিত্তি করে দেয়া হয়নি। এই অভিযোগের স্বপ েপর্যাপ্ত কোন তথ্য-প্রমাণও নেই। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকারের বক্তব্য হলো, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকারের আগের আমলে পার্বত্য চট্টগ্রামের শানত্মি, নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে পার্বত্য শানত্মিচুুক্তি করেছিল। গত বছরের জানুয়ারি মাসে বর্তমান সরকার দয়িত্ব গ্রহণের পর আগের করা শানত্মিচুক্তির পূর্ণাঙ্গ বাসত্মবায়নে পদপে গ্রহণ করে। এই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে পার্বত্য জেলা থেকে সেনাছাউনি প্রত্যাহার শুরম্ন হয়, পার্বত্য ভূমি কমিশন কার্যক্রম শুরম্ন করে এবং পার্বত্য স্থানীয় প্রশাসন শক্তিশালী হয়। সরকার পার্বত্য জনগণের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন বিশেষ করে হতদরিদ্র ও সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নের ল্যে বিভিন্ন কর্মসূচী গ্রহণ করে। এতে বলা হয়, গত ১৯ ও ২০ ফেব্রম্নয়ারি পার্বত্য চট্টগ্রামে সংঘটিত ঘটনায় মামলা দায়ের ও ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহভাজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অনাকাঙ্ৰিত ঘটনায় তিগ্রসত্মদের সরকারী উদ্যোগে বাড়িঘর নিমর্াণ, ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে শানত্মি প্রতিষ্ঠা ও সেখানকার জনগোষ্ঠীর জানমাল রায় সরকার বদ্ধপরিকর। এ ব্যাপারে বাধা সৃষ্টিকারীদের বিরম্নদ্ধে সরকার জিরো টলারেন্স দেখাবে। প্রতিবাদে বলা হয়, সরকার বন্ধুদের কাছ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা ও সহমর্মিতা প্রত্যাশা করে। সরকার পার্বত্য শানত্মিচুক্তির পূর্ণাঙ্গ বাসত্মবায়নে সম্পূর্ণ অঙ্গীকারাবদ্ধ। তবে ভিত্তিহীন কোন বিবৃতি এই প্রক্রিয়া বাসত্মবায়নের জন্য সহায়ক নয়, বরং এ ধরনের ঘটনা পার্বত্য এলাকায় অস্থিতিশীলতা সৃষ্টিতে সহায়ক হবে। বাংলাদেশ ইউরোপীয় ইউনিয়নের কাছ থেকে দায়িত্বশীল ও গঠনমূলক আচরণ প্রত্যাশা করে। শুক্রবার ইইউর বিবৃতিতে সংস্থাটির মুখপাত্র ও ভাইস প্রেসিডেন্ট ক্যাথরিন অ্যাশটন পার্বত্য চট্টগ্রামে সম্প্রতি সংঘটিত সহিংসতার নিন্দা জানিয়ে বলেন, রাঙ্গামাটির বাঘাইহাটে আদিবাসীদের হত্যা এবং তাদের প্রায় চার শ' ঘর পোড়ানো হয়েছে বলে ইইউ সংবাদ পেয়েছে। এই ঘটনার সঙ্গে সেনাসদস্য ও সেনাবাহিনীর শ্রমিকরা অংশ নিয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে এবং এ ব্যাপারে আমরা সচেতন। বিবৃতিতে বলা হয়, এ ঘটনা এবং এতে সেনাবাহিনীর জড়িত থাকার অভিযোগ দু্রত, পূর্ণাঙ্গ এবং স্বাধীনভাবে তদনত্ম করতে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানায় ইইউ। লজ্জাজনক ঘটনার জন্য দায়ীদের বিচারের আওতায় আনতেও সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো যাচ্ছে। বিবৃতিতে বলা হয়, পার্বত্য চট্টগ্রামের স্থিতিশীলতা এবং বাংলাদেশের আনত্মর্জাতিক ভাবমূর্তিতে কি প্রভাব পড়তে পারে সে ব্যাপারেও ইইউ সচেতন। বিবৃতিতে বাংলাদেশের সংশিস্নষ্ট কর্তৃপৰের প্রতি পার্বত্য শানত্মিচুক্তি বাসত্মবায়নে আরও কার্যকর পদপে নেয়ার আহ্বান জনানো হয়।
No comments