যুদ্ধাপরাধী বিচার ॥ মোবারক আলীর বিরুদ্ধে চূড়ান্ত প্রতিবেদন আজ দাখিল- বর্তমানে তিনি আওয়ামী লীগ করেন
একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে জামিনে থাকা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মোঃ মোবারক হোসেন ওরফে মোঃ মোবারক আলীর বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
তার বিরুদ্ধে হত্যা, গণহত্যা, অপহরণ, আটক ও নির্যাতনসহ ৫ ধরনের অভিযোগের চূড়ান্ত প্রতিবেদন সম্পন্ন করেছে তদন্ত সংস্থা। আজ চীফ প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপুর কাছে তা দাখিল করা হবে। বুধবার বিকেলে বেইলি রোডস্থ তদন্ত সংস্থার কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সমন্বয়ক এমএ হান্নান খান সাংবাদিকদের এ কথা জানান। এ সময় তদন্ত সংস্থার আরেক সমন্বয়ক সানাউল হক, তদন্ত কর্মকর্তা শ্যামল চৌধুরী ও প্রসিকিউটর শাহিদুর রহমানসহ অন্য তদন্ত কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।সমন্বয়ক এমএ হান্নান খান সাংবাদিকদের বলেন, আমাদের হাতে এখন ৬৪০টি অভিযোগ রয়েছে । এই অভিযোগগুলোর মধ্যে প্রায় ৩ হাজার ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছে। সেগুলো আমরা যাচাই-বাছাই করে দেখছি। ইতোমধ্যে লাহার আলী শাহর বিরুদ্ধে করা আবেদনটি ফেরত দেয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, মীর কাশেম আলী, এটিএম আজাহারুল ইসলাম, আব্দুস সোবহানের বিরুদ্ধে তদন্ত করা হচ্ছে। শীঘ্রই
তাদের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়া হবে। বর্তমানে আমরা ১১ জনের বিরুদ্ধে তদন্ত করছি। মার্চ মাসের মধ্যে অধিকাংশ প্রতিবেদন দেয়া হবে।
সমন্বয়ক সানাউল হক বলেন, মোঃ মোবারক আলী আখাউড়া থানাধীন টানমান্দাইল ও জাঙ্গাইল গ্রামে ৩৩ জনকে গণহত্যা, আনন্দময়ী কালীবাড়ী রাজাকার ক্যাম্পে আশু রঞ্জন দেবকে নির্যাতন, ছাতিয়ানা গ্রামের শহীদ আব্দুল খালেককে হত্যা, শ্যামপুর গ্রামের দু’জনকে অপহরণ করে একজনকে হত্যা এবং খরমপুর গ্রামের একজনকে আটক রেখে নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে।
তিনি জানান, তার বিরুদ্ধে ২০১২ সালের ১৬ জুলাই থেকে ২০১৩ সালের ২২ জানুয়ারি পর্যন্ত তদন্ত সংস্থার কর্মকর্তা শ্যামল চৌধুরী তদন্ত কাজ করেন। তদন্তকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ৩৩ জনকে গণহত্যা, দু’জনকে হত্যা, দু’জনকে অপহরণসহ নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এসব অভিযোগ ১৯৭১ সালের আগস্ট থেকে নবেম্বর পর্যন্ত সময়ে সংঘটিত হয়েছে বলে তদন্তে উল্লেখ করা হয়।
তিনি জানান, মোবারকের বিরুদ্ধে ২১ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে ছয় মাস সাত দিন সময় ধরে তদন্ত করা হয়। মোবারক হোসেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া থানার নয়াদিল গ্রামের সাদত আলীর ছেলে। তবে তার রাজনৈতিক পরিচয় সম্পর্কে তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, “মোবারক হোসেন স্বাধীনতার পর জামায়াতের ইউনিয়নের রোকন ছিলেন। বর্তমানে তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত আছেন বলে জানা গেছে।”
এ প্রসঙ্গে সমন্বয়ক সানাউল হক সাংবদিকদের বলেন, যুদ্ধাপরাধীর জন্য রাজনৈতিক পরিচয় নয়। সে যুদ্ধাপরাধী এটাই বড় পরিচয়। পরবর্তীতে কোন্ রাজনৈতিক দল করত তা মুখ্য নয়। আমাদের কাছে দলীয় পরিচয় নয়। সমন্বয়ক এমএ হান্নান খান বলেন, কেউ সুযোগ গ্রহণ করলে করার কিছু নাই। শোনা যায় সে স্থানীয় আওয়ামী লীগের সঙ্গে জড়িত।
উল্লেখ্য, ১৫ নবেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এর সাবেক চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক নাসিমের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল মোবারক হোসেনের জামিনের মেয়াদ ২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত বাড়িয়ে দেন ট্রাইব্যুনাল।
তদন্ত সংস্থার সমন্বয়ক জানান, বর্তমানে তদন্ত সংস্থায় সর্বমোট ৬৪০টি অভিযোগ রয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ৩ হাজার ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে। মামলাগুলো যাচাই-বাছাই করে তদন্ত করার প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। তদন্ত সংস্থা ও প্রসিকিউশন সূত্রে এ খবর জানা গেছে। এগুলো যাচাই-বাছাই করে ব্যবস্থা নেয়া হবে। হান্নান খান বলেন, ইতোমধ্যে আমরা বাগেরহাটের শরণখোলা দিয়ে মাওলানা একেএম ইউসুফের বিরুদ্ধে তদন্ত করেছি। তার বিরুদ্ধে আরও তদন্ত করতে হবে। তদন্ত শেষে আমরা তার বিরুদ্ধে রিপোর্ট প্রদান করব। একই সঙ্গে বুদ্ধিজীবী হত্যার অভিযোগে দুই ঘাতক চৌধুরী মাঈনুদ্দিন ও আশরাফুজ্জামান খানের বিরুদ্ধে তদন্ত শেষ করে প্রসিকিউশনের কাছে জমা দিয়েছে তদন্ত সংস্থা। তদন্ত সংস্থায় সেগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে বলে জানা গেছে। এই দু’জন ১৯৭১ সালের ১০ ডিসেম্বর থেকে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত অর্থাৎ স্বাধীনতার উষালগ্নে ১৮ বুদ্ধিজীবীকে অপহরণ করে নির্মম নির্যাতন শেষে হত্যার দায়ে অভিযুক্ত। তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বুদ্ধিজীবী হত্যাকা-ের দায়িত্বপ্রাপ্ত আলবদর বাহিনীর চীফ এক্সিকিউটর বা ‘প্রধান জল্লাদ’ ছিলেন আশরাফুজ্জামান খান আর অপারেশন ইনচার্জ ছিলেন চৌধুরী মাঈনুদ্দীন।
No comments