চারা সঙ্কটেও বোরোর ভাল আবাদ- 'চাষীরা পারেন না এমন কোন কাজ নেই'
'এইবার চারার সঙ্কট ছিল। প্রচ- শীতে ধানের চারা রোপণ করতে সমস্যা হয়েছে। তারপরও আমরা ধানের আবাদ করেছি। এখন পর্যনত্ম ধানের গাছও ভাল।
আলস্নাহ ভাল করলে ভাল ফসল হবে'_ কথাগুলো বলছিলেন যশোরের শার্শার কাশিপুর বটতলা গ্রামের বোরো চাষী মোহাম্মদ জসিম উদ্দীন। এবার জসিম ৫ বিঘা জমিতে বোরোর আবাদ করেছেন। শার্শা উপজেলার একেবারে সীমানত্ম ঘেঁষা এই গ্রামের ওপারে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের ২৪ পরগনার বনগাঁ মহকুমার বাগদা থানা। ওপারের আর এপারের মাঠজুড়ে বোরো ধানের সবুজের সমারোহ। মাঝে তারকাঁটার বেড়া। এই অঞ্চলের বোরো চাষীরা একটু আগেভাগে চারা রোপণ করায় ধানও তারা আগে কাটতে পারেন। খুলনা বিভাগের অনেক এলাকায় এখনও বোরোর চারা রোপণের কাজ চলছে। অথচ এই এলাকায় ধানের চারা রোপণের কাজ শেষ হয়েছে এক থেকে দেড় মাস আগে। তাই মাঠে এখন সবুজ। চোখ জুড়িয়ে যায়।চারা সঙ্কট সত্ত্বেও এবার বোরো আবাদ হচ্ছে ভাল। পাকশিয়া গ্রামের আব্দুল মালেক বলেন, 'এবার ৭ বিঘা জমিতে বোরো আবাদ করেছি। চারা বিক্রি করেছি ৩ বিঘা জমির। এভাবে কেউ চারা বেশি তৈরি করেছিলেন, সে বিক্রি করেছে। আবার কারও চারা তি হওয়ায় তাকে কিনতে হয়েছে। কিন্তু সব জমিতে ধানের আবাদ করা হয়েছে। কারণ, কৃষক ধান ছাড়া কিসের আবাদ করবে? তাছাড়া ধানের দাম বেশি।' সারের কোন সঙ্কট আছে কিনা জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, এবার সারের কোন সঙ্কট নেই। দোকানে গেলেই সার মিলছে। বর্তমানে প্রতি বসত্মা (৫০ কেজি) ইউরিয়া ৫শ' ৮৫ টাকা, টিএসপি (তিউনেশিয়া) ১ হাজার ১শ' ৫০ টাকা, পটাশ ১ হাজার ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা কৃষকের ক্রয়মতার মধ্যে আছে। ফলে ধানের আবাদ ভাল হয়েছে। বোরো আবাদে যেমন সার লাগে, আবার তার ফলনও বেশি। সহজে সার ডিজেল পাওয়া যাওয়ায় এবার কেউ জমি ফেলে রাখেনি।
ডিহি ইউনিয়নের এই বস্নকের কৃষি সমপ্রসারণ বিভাগের উপসহকারী মীর বকস বলেন, তার বস্নকে বোরো আবাদের টার্গেট পূরণ হচ্ছে। কোন জমি অনাবাদি নেই। শীতে বোরোর চারা নষ্ট হলেও চাষীরা তা পুষিয়ে নিয়েছে। চাষীরা পারে না এমন কোন কাজ নেই।
যশোর সদরের নারাঙ্গালী, হালসা, ঝিকরগাছার কায়েমকোলা, মাগুরা, ছুটিপুর, ব্যাংদহ, শার্শার পাকশিয়া, নিজামপুর, সাড়াতলা ঘুরে দেখা গেছে, মাঠে এখন সবুজের সমারোহ। কৃষকরা ব্যসত্ম ধানতে পরিচর্যায়। তাদের এখন সামান্য সময় নেই বাজারে বসে আড্ডা দেয়ার।
কৃষি সমপ্রসারণ যশোর অফিসের অতিরিক্ত পরিচালক আজিজুল হক বলেন, দেশের দণি-পশ্চিমাঞ্চলের ১০ জেলায় এবার বোরো চাষের ল্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬ লাখ ৩ হাজার ৯শ' ৫৩ হেক্টর জমিতে। অতীতে কখনও এত বেশি জমিতে এই অঞ্চলে বোরো আবাদের ল্যমাত্রা ধার্য করা হয়নি। সারের দাম কম এবং ধানের দাম বেশি হওয়ায় চাষীরা এবার ল্যমাত্রার চেয়েও বেশি জমিতে বোরো আবাদ করবে বলে মনে করেন কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা। মাঠ পর্যায়ে এখনও কোথাও কোথাও বোরো চারা রোপণের কাজ চলছে, সেই জন্য পুরো ল্যমাত্রার রিপোর্ট আমাদের হাতে নেই। আগামী মাসে কিংবা এই মাসের শেষ নাগাদ ল্যমাত্রার রিপোর্ট পাব। আর রোপণের ল্যমাত্রা অর্জিত হলে ধান উৎপাদিত হবে ২৪ লাখ ১ হাজার ১শ' ২৫ মেট্রিক টন।
_সাজেদ রহমান, যশোর
No comments