হাড় কাঁপানো শীতে আবার কাহিল সারাদেশ
তৃতীয়বারের মতো তীব্র শীতের কবলে দেশ। বিদায়ের আগে মধ্য মাঘে আবারও সারাদেশে জেঁকে বসেছে শীত। নতুন করে বয়ে যাচ্ছে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ। তাপমাত্রা অস্বাভাবিকভাবে নিচে নেমে গেছে।
শনিবার চুয়াডাঙ্গায় দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪.৪ ডিগ্রী সেলসিয়াস। এছাড়া দেশের অন্যান্য অঞ্চলেও গত কয়েকদিনের তুলনায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৫ থেকে ৭ ডিগ্রী নিচে নেমে এসেছে। গত ২১ জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া এ মৌসুমের তৃতীয় শৈত্যপ্রবাহ প্রথম দিকে মৃদু অবস্থায় থাকলেও শনিবার ভোর থেকে তীব্র আবার ধারণ করেছে। আবহাওয়া অধিদফতর বলছে আগামী ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত সারাদেশের ওপর দিয়ে এ শৈত্যপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে। এ সময়ের মধ্যে দিনের তাপমাত্রা আরও কমে যেতে পারে। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে কুষ্টিয়া, রাজশাহী, পাবনা ও শ্রীমঙ্গলের ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে হাড় কাঁপানো তীব্র শৈত্যপ্রবাহ। এছাড়া সীতাকু-ু, ফেনী, চাঁদপুরসহ ঢাকা, রংপুর, বরিশাল এবং খুলনা, রাজশাহী বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি পর্যায়ের শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। তৃতীয় দফার এ শৈত্যপ্রবাহে নতুন করে সারাদেশের জীবনযাত্রা ও জনদুর্ভোগ চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। ক্ষতির শিকার হচ্ছে উঠতি ফসল। নতুন এ শৈত্যপ্রবাহের কবলে পড়ে গত ২৪ ঘণ্টায় তিনজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।অন্যবারের তুলনায় এবারের শীত বেশ বৈশিষ্ট্য নিয়ে হাজির হয়েছে। শীতের ধরন আর আগের মতো নেই। আবহাওয়াবিদদের মতে, প্রতিবারের ন্যায় এবার স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় শৈত্যপ্রবাহ এলেও ধরনটা অন্যবারের তুলনায় একেবারেই আলাদা। এখন পর্যন্ত মৌসুমের এটি তৃতীয়বারের শৈত্যপ্রবাহ। কিন্তু প্রতিটি শৈত্যপ্রবাহে সারাদেশে শীত যেমন জেঁকে বসেছে। তেমনি একযোগে তাপমাত্রা এত নিচে যাওয়ার রেকর্ড অতীতে নেই। বিগত কয়েক বছরের আবহাওয়া বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় শৈত্যপ্রবাহ এক থেকে দু’দিন তীব্র আকার ধারণ করার পর তা স্বাভাবিক অবস্থায় চলে আসে। বিশেষ কোন একটি অঞ্চলে তাপমাত্রা সর্বনিম্ন পর্যায়ে অবস্থান করে। কিন্তু এবার তার ব্যতিক্রম লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
এবার শীতে দেশের কয়েকটি অঞ্চলে তাপমাত্রা প্রায় অস্বাভাবিক নেমে গেছে। জানুয়ারির প্রথমদিকে সারাদেশে একযোগে তীব্র শৈত্যপ্রবাহের সময় দেশের কয়েকটি অঞ্চলের তাপমাত্রা ৩ ডিগ্রীর কাছাকাছি নেমে যায়। ৪৫ বছরের রেকর্ড ভঙ্গ করে সৈয়দপুরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৩ ডিগ্রী সেলসিয়াস। দিনাজপুরেও ৫৭ বছরের রেকর্ড ভঙ্গ করে ৩.২ ডিগ্রীতে নেমে আসে। এছাড়া শ্রীমঙ্গল, চুয়াডাঙ্গা, ঈশ্বরদী পাবনা, সৈয়দপুর, দিনাজপুর, রংপুর ও রাজশাহী অঞ্চলের তাপমাত্রা এবারের শীত মৌসুমে প্রায় সময়ই অস্বাভাবিক অবস্থায় নেমে আসে। তৃতীয় শৈত্যপ্রবাহেও এর ব্যতিক্রম হয়নি।
শনিবার তীব্র শৈত্যপ্রবাহের কারণে চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা অস্বাভাবিক পর্যায়ে নেমে দাঁড়িয়েছে ৪.৪ ডিগ্রী সেলসিয়াসে। এছাড়া শ্রীমঙ্গল, রাজশাহী, ঈশ্বরদী, রংপুর, দিনাজপুর, সৈয়দপুর ও যশোরের তাপমাত্রা ৫ থেকে সাড়ে ৬ ডিগ্রীর মধ্যে অবস্থান করছে। এছাড়া দেশের একাধিক এলাকার তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রী সেলসিয়াসের নিচে নেমে গেছে।
গত কয়েকদিনের হিসাবে দেখা গেছে, ঢাকা বিভাগের তাপমাত্রা নতুন করে প্রায় ৬ ডিগ্রী সেলসিয়াসের নিচে নেমে গেছে। শনিবার ঢাকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১০.৮ ডিগ্রী। এছাড়া ময়মনসিংহের তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯ ডিগ্রী, টাঙ্গাইলে ৮.৬ ডিগ্রী, ফরিদপুরে ৭.৯ ডিগ্রী, মাদারীপুরে ৭.৬ ডিগ্রী, চট্টগ্রামে ১১.৫ ডিগ্রী, সন্দ্বীপে ১০.৪ ডিগ্রী, সীতাকু-ে ৮.৪ ডিগ্রী, রাঙ্গামাটি ১০.৫ ডিগ্রী, কুমিল্লা ১০.৫ ডিগ্রী, চাঁদপুরে ১০.১ ডিগ্রী, মাইজদীকোর্টে ১১.৬ ডিগ্রী, ফেনীতে ৯.৬ ডিগ্রী, হাতিয়ায় ১১.৩ ডিগ্রী, সিলেট ১১ ডিগ্রী, শ্রীমঙ্গলে ৫.৬ ডিগ্রী, রাজশাহীতে ৫.৪ ডিগ্রী, ঈশ্বরদীতে ৫.৫ ডিগ্রী, বগুড়ায় ৭.২ ডিগ্রী, রংপুরে ৬.২ ডিগ্রী, দিনাজপুর ও সৈয়দপুরে ৬.৬ ডিগ্রী, খুলনায় ১০.৫ ডিগ্রী, মংলায় ১০.৫ ডিগ্রী, সাতক্ষীরায় ৮.৬ ডিগ্রী, যশোরে ৬.২ ডিগ্রী, বরিশাল ৮.৩ ডিগ্রী, পটুয়াখালী ১০.৪ ডিগ্রী, খেপুপাড়ায় ৯.৫ এবং ভোলায় সর্বনিম্ন ৯.২ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে।
স্টাফ রিপোর্টার রাজশাহী থেকে জানান, নতুন করে শৈত্যপ্রবাহে এ অঞ্চলে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। শীতজনিত রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। বোরোর বীজতলা নিয়েও বিপাকে পড়েছেন কৃষক। শীত ও কুয়াশার কারণে মাঠে বোরো বীজতলায় কোল্ড ইনজুরি ও আলুর গাছে পচন রোগ দেখা দিয়েছে। ঝরে পড়ছে বরজ থেকে পানের পাতা। এদিকে তীব্র শীতে নিম্ন আয়ের মানুষ পড়েছে চরম সঙ্কটে। পরিবার-পরিজন নিয়ে তাঁরা চরম কষ্টে দিনযাপন করছেন। শীতের কারণে রাজশাহী অঞ্চলে ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব ঘটেছে। শীতের কারণে জেলায় ৩ হাজার ৮৫১ হেক্টর বোরো বীজতলার বেশিরভাগই নষ্ট হয়ে গেছে।
স্টাফ রিপোর্টার কুড়িগ্রাম থেকে জানান, নতুন করে শৈত্যপ্রবাহ শুরু হওয়ায় তীব্র শীতের কারণে ডায়রিয়াসহ শীতজনিত রোগের প্রকোপ বেড়েছে। এসব রোগে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা। হাসপাতালে ৩৫ ডায়রিয়া রোগীসহ শীতজনিত রোগে চিকিৎসাধীন রয়েছে ৪৮ শিশু। এছাড়া তীব্র শীতে হাইপারটেনশন, শ্বাসকষ্ট, ডায়রিয়া, নিউমোনিয়াসহ বিভিন্ন রোগ দেখা দিয়েছে। হাসপাতালের আউটডোর ও ইনডোরে শীতজনিত রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে । তীব্র শীতে আগাম জাতের আলু ও ধানের চারায় কোল্ড ইনজুরি রোগ দেখা দিয়েছে। কৃষি বিভাগ কৃষকদের বীজ তলায় সম্পূরক সেচ ও ওষুধ ¯েপ্র করার পরামর্শ দিচ্ছেন।
স্টাফ রিপোর্টার রংপুর থেকে জানান, শীত এবং শৈত্যপ্রবাহ আবারও মরণ কামড় দিয়েছে। গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে শীতের তীব্রতায় কাহিল হয়ে পড়েছে এ অঞ্চলের মানুষ। প্রতিদিনই সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গেই কুয়াশার চাদরে ঢাকা পড়ছে এখানকার প্রকৃতি। শীতের কারণে নগর অনেকটাই ছিল ফাঁকা। বিপনিবিতান এবং স্কুল-কলেজসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে মানুষের উপস্থিতি ছিল অনেকটা কম। এদিকে তীব্র শীতে মানুষজনের পাশাপাশি গরু-ছাগলসহ বিভিন্ন প্রাণীকুলেও নেমে এসেছে চরম ভোগান্তি।
নিজস্ব সংবাদদাতা চুয়াডাঙ্গা থেকে জানান, হাড় কাঁপানো তীব্র শীত ও হিমেল হাওয়ায় জনজীবন অচল হয়ে পড়েছে। ভৌগোলিক অবস্থাগত কারণে চুয়াডাঙ্গায় ্শীত বেশি অনুভূত হচ্ছে। গত ২০ জানুয়ারি থেকে চুয়াডাঙ্গায় মৃদ শৈত্যপ্রবাহ শুরু হলেও শনিবার ভোর থেকে তা তীব্র আকার ধারণ করেছে। ফলে নিম্ন আয়ের মানুষ পড়েছে চরম বিপাকে।
নিজস্ব সংবাদদাতা নীলফামারী থেকে জানান, শনিবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত ভারি কুয়াশার চাদরে ঢাকা ছিল এ অঞ্চল। হিমালয় থেকে ধেয়ে আসা হিমেল হাওয়ায় নীলফামারীসহ রংপুর বিভাগের ৮ জেলা জনজীবন বিপর্যস্ত শীতে কাবু হয়ে পড়েছে।
নিজস্ব সংবাদদাতা গাইবান্ধা থেকে জানান, তিন দফা অব্যাহত শৈত্যপ্রবাহে অভাবী মানুষের অবস্থা কাহিল হয়ে পড়েছে। শনিবার দুপুর ১টার পর সূর্যের মুখ দেখা গেলেও ঘন কুয়াশার কারণে আলোর তীব্রতা ছিল অনেক কম। এতে শিশু ও বৃদ্ধদের নিউমোনিয়া ও কোল্ড ডায়রিয়ায়, শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি পেয়েছে। গাইবান্ধার বিভিন্ন হাসপাতালে শীতজনিত রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে বলে হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে।
No comments