পবিত্র কোরআনের আলো-মানুষ আদিতে একটাই জাতি ছিল, পরে নানাভাবে বিভক্ত ও বিচ্ছিন্ন হয়েছে
১৭. ফামান আযলামু মিম্মানিফ্ তারা আ'লাল্লা-হি কাযিবান আও কায্যাবা বিআয়া-তিহি; ইন্নাহূ লা-ইউফলিহুল মুজরিমীন। ১৮. ওয়া ইয়া'বুদূনা মিন দূনিল্লা-হি মা লা ইয়াদ্বুর্রুহুম ওয়া লা ইয়ানফাউ'হুম ওয়া ইয়াক্বূলূনা হা-উলা-য়ি শুফাআ'-ঊনা ই'নদাল্লা-হি; ক্বুল আতুনাব্বিঊনাল্লা-হা বিমা লা ইয়া'লামূ ফিস্সামা-ওয়া-তি ওয়া লা ফিল আরদ্বি; ছুব্হা-নাহূ ওয়া তাআ'-লা আ'ম্মা ইউশ্রিকূন।
১৯. ওয়া মা কা-নান না-ছু ইল্লা উম্মাতান ওয়া-হিদাতান ফাখ্তালাফূ; ওয়া লাওলা কালিমাতুন ছাবাক্বাত মির্ রাব্বিকা লাক্বুদ্বিয়া বাইনাহুম ফীমা ফীহি ইয়াখ্তালিফূন।
[সুরা : ইউনুস, আয়াত : ১৭-১৯]
অনুবাদ : ১৭. সুতরাং ওই ব্যক্তির চেয়ে বড় জালেম আর কে হতে পারে, যে আল্লাহর প্রতি মিথ্যা আরোপ করে কিংবা তাঁর আয়াতগুলোকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করে। এটা নিশ্চিতভাবে জেনে রেখ, অপরাধীরা কখনোই সফলকাম হতে পারে না।
১৮. আর তারা আল্লাহকে বাদ দিয়ে এমন কিছুর উপাসনা করে, যেগুলো তাদের কোনো ক্ষতি বা উপকার কিছুই করতে পারে না। তারা বলে, ওইগুলো আল্লাহর কাছে পৌঁছার মধ্যস্থতাকারী। (হে নবী) আপনি তাদের বলে দিন, তোমরা কি আল্লাহকে এমন কিছু সম্পর্কে খবর দিতে চাও, যা আকাশমণ্ডল ও পৃথিবীতে আল্লাহর জ্ঞানে নেই? (অর্থাৎ এমন কিছুর অস্তিত্ব নেই)। বস্তুত আল্লাহ 'শিরক' বা অংশীবাদ থেকে সম্পূর্ণ পবিত্র এবং অনেক ঊর্ধ্বে।
১৯. শুরুতে সব মানুষ একই সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত ছিল, এরপর তারা পরস্পরে মতভেদে লিপ্ত হয়েছে। আপনার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে আগেই নিয়তির বিধান ঠিক করে দেওয়া না থাকলে, তারা যে বিষয়ে মতভেদ করছে এর ফয়সালা করে দেওয়া যেত।
ব্যাখ্যা : ১৭ নম্বর আয়াতটি আগের কয়েকটি আয়াতের উপসংহার হিসেবে এসেছে। অর্থাৎ আল্লাহর একত্ববাদ ও রাসুলের সত্যতা সম্পর্কে এত স্পষ্ট প্রামাণাদি বর্তমান থাকতেও যারা সত্য ও ন্যায়কে অস্বীকার করে, তাদের চেয়ে বড় জালেম তো আর হতে পারে না। সেই সঙ্গে একটি চিরন্তন সত্য বাণী উচ্চারণ করা হয়েছে_অপরাধীরা কখনো চূড়ান্ত সাফল্যে পৌঁছাতে পারে না। ১৮ নম্বর আয়াতে আবারও একত্ববাদের পক্ষে এবং অংশীবাদের বিপক্ষে যুক্তি প্রদর্শন করা হয়েছে। এখানে মুশরিকদের পোষণ করা কিছু বিশ্বাস ও অবস্থানের কথা তুলে ধরে অত্যন্ত জোরালোভাবে তা খণ্ডনের চেষ্টা করা হয়েছে। মক্কার কোরাইশরাসহ প্রায় সারা আরবের মুশরিকরাই আল্লাহ বিশ্বাসী ছিল_এতে কোনো সন্দেহ নেই। তাদের নতুন করে আল্লাহর নাম শেখানো হয়নি বা আল্লাহ আছে কি নেই_এ রকম কোনো বিতর্কও মুশরিকদের মধ্যে ছিল না। তারা যা বিশ্বাস করত তাহলো, তাদের পূর্বপুরুষদের উপাস্য দেব-দেবী বা মহামানুষরা তাদের উদ্দেশ্য পূরণে আল্লাহর সঙ্গে মধ্যস্থতা করতে পারে। এই ভ্রান্ত বিশ্বাস নাকচ করে দিয়ে এই আয়াতে রাসুল (স.)-কে বলা হয়েছে তাদের জানিয়ে দিতে যে, এমন কোনো শক্তি বা ব্যবস্থার অস্তিত্ব বিশ্বজগতে নেই। তারা আসলে অলীক বিশ্বাসে গা ভাসিয়ে দিয়ে চলছে। ১৯ নম্বর আয়াতে মানবজাতির ইতিহাসের একটা তাৎপর্যপূর্ণ তথ্য উপস্থাপন করে জীবন দর্শনের এক চিরন্তর সত্যের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। ঐতিহাসিক সত্যটার মূল কথা হলো, মানবজাতি আদিতে এক জাতি ছিল। পরে নানা মতভেদ, বিরোধ ও জীবন-জীবিকার নানা বাস্তব প্রয়োজনে তারা বিভক্ত এবং বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ভিন্ন ভিন্ন গোষ্ঠী, বর্ণ ও সম্প্রদায়ে তারা বিভক্ত হয়ে যায়। আল্লাহ তায়ালা এ দুনিয়াতেই তাদের মতভেদের মীমাংসা করে দিতে পরতেন। কিন্তু তা করেননি এ কারণে যে, তা দুনিয়া সৃষ্টির মূল উদ্দেশ্যের পরিপন্থী হতো। আল্লাহ তায়ালা জগৎ সৃষ্টির আগেই স্থির করে রেখেছেন, আশরাফুল মাখলুকাত মানুষকে স্বাধীনতা দিয়ে পরীক্ষা করা হবে এবং তাদের অর্জনের ভিত্তিতে তাদের মর্যাদার স্থান নির্ধারণ করা হবে। এ ক্ষেত্রে মানুষকে সহায়তা করার জন্য নবী-রাসুল পাঠানো হয়। তাঁরা মানুষকে সত্য ও ন্যায়ের পথ দেখান এবং মানুষের বুদ্ধি-বিবেক ও কর্মসাধনাকে সঠিক পথে প্রবাহিত করার পথনির্দেশ দেন। এভাবে মানুষ স্বেচ্ছায় নিজেদের ভাগ্য নির্ধারণ করবে। এটাই ইসলামের নির্দেশিত জীবনদর্শন।
গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী
[সুরা : ইউনুস, আয়াত : ১৭-১৯]
অনুবাদ : ১৭. সুতরাং ওই ব্যক্তির চেয়ে বড় জালেম আর কে হতে পারে, যে আল্লাহর প্রতি মিথ্যা আরোপ করে কিংবা তাঁর আয়াতগুলোকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করে। এটা নিশ্চিতভাবে জেনে রেখ, অপরাধীরা কখনোই সফলকাম হতে পারে না।
১৮. আর তারা আল্লাহকে বাদ দিয়ে এমন কিছুর উপাসনা করে, যেগুলো তাদের কোনো ক্ষতি বা উপকার কিছুই করতে পারে না। তারা বলে, ওইগুলো আল্লাহর কাছে পৌঁছার মধ্যস্থতাকারী। (হে নবী) আপনি তাদের বলে দিন, তোমরা কি আল্লাহকে এমন কিছু সম্পর্কে খবর দিতে চাও, যা আকাশমণ্ডল ও পৃথিবীতে আল্লাহর জ্ঞানে নেই? (অর্থাৎ এমন কিছুর অস্তিত্ব নেই)। বস্তুত আল্লাহ 'শিরক' বা অংশীবাদ থেকে সম্পূর্ণ পবিত্র এবং অনেক ঊর্ধ্বে।
১৯. শুরুতে সব মানুষ একই সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত ছিল, এরপর তারা পরস্পরে মতভেদে লিপ্ত হয়েছে। আপনার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে আগেই নিয়তির বিধান ঠিক করে দেওয়া না থাকলে, তারা যে বিষয়ে মতভেদ করছে এর ফয়সালা করে দেওয়া যেত।
ব্যাখ্যা : ১৭ নম্বর আয়াতটি আগের কয়েকটি আয়াতের উপসংহার হিসেবে এসেছে। অর্থাৎ আল্লাহর একত্ববাদ ও রাসুলের সত্যতা সম্পর্কে এত স্পষ্ট প্রামাণাদি বর্তমান থাকতেও যারা সত্য ও ন্যায়কে অস্বীকার করে, তাদের চেয়ে বড় জালেম তো আর হতে পারে না। সেই সঙ্গে একটি চিরন্তন সত্য বাণী উচ্চারণ করা হয়েছে_অপরাধীরা কখনো চূড়ান্ত সাফল্যে পৌঁছাতে পারে না। ১৮ নম্বর আয়াতে আবারও একত্ববাদের পক্ষে এবং অংশীবাদের বিপক্ষে যুক্তি প্রদর্শন করা হয়েছে। এখানে মুশরিকদের পোষণ করা কিছু বিশ্বাস ও অবস্থানের কথা তুলে ধরে অত্যন্ত জোরালোভাবে তা খণ্ডনের চেষ্টা করা হয়েছে। মক্কার কোরাইশরাসহ প্রায় সারা আরবের মুশরিকরাই আল্লাহ বিশ্বাসী ছিল_এতে কোনো সন্দেহ নেই। তাদের নতুন করে আল্লাহর নাম শেখানো হয়নি বা আল্লাহ আছে কি নেই_এ রকম কোনো বিতর্কও মুশরিকদের মধ্যে ছিল না। তারা যা বিশ্বাস করত তাহলো, তাদের পূর্বপুরুষদের উপাস্য দেব-দেবী বা মহামানুষরা তাদের উদ্দেশ্য পূরণে আল্লাহর সঙ্গে মধ্যস্থতা করতে পারে। এই ভ্রান্ত বিশ্বাস নাকচ করে দিয়ে এই আয়াতে রাসুল (স.)-কে বলা হয়েছে তাদের জানিয়ে দিতে যে, এমন কোনো শক্তি বা ব্যবস্থার অস্তিত্ব বিশ্বজগতে নেই। তারা আসলে অলীক বিশ্বাসে গা ভাসিয়ে দিয়ে চলছে। ১৯ নম্বর আয়াতে মানবজাতির ইতিহাসের একটা তাৎপর্যপূর্ণ তথ্য উপস্থাপন করে জীবন দর্শনের এক চিরন্তর সত্যের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। ঐতিহাসিক সত্যটার মূল কথা হলো, মানবজাতি আদিতে এক জাতি ছিল। পরে নানা মতভেদ, বিরোধ ও জীবন-জীবিকার নানা বাস্তব প্রয়োজনে তারা বিভক্ত এবং বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ভিন্ন ভিন্ন গোষ্ঠী, বর্ণ ও সম্প্রদায়ে তারা বিভক্ত হয়ে যায়। আল্লাহ তায়ালা এ দুনিয়াতেই তাদের মতভেদের মীমাংসা করে দিতে পরতেন। কিন্তু তা করেননি এ কারণে যে, তা দুনিয়া সৃষ্টির মূল উদ্দেশ্যের পরিপন্থী হতো। আল্লাহ তায়ালা জগৎ সৃষ্টির আগেই স্থির করে রেখেছেন, আশরাফুল মাখলুকাত মানুষকে স্বাধীনতা দিয়ে পরীক্ষা করা হবে এবং তাদের অর্জনের ভিত্তিতে তাদের মর্যাদার স্থান নির্ধারণ করা হবে। এ ক্ষেত্রে মানুষকে সহায়তা করার জন্য নবী-রাসুল পাঠানো হয়। তাঁরা মানুষকে সত্য ও ন্যায়ের পথ দেখান এবং মানুষের বুদ্ধি-বিবেক ও কর্মসাধনাকে সঠিক পথে প্রবাহিত করার পথনির্দেশ দেন। এভাবে মানুষ স্বেচ্ছায় নিজেদের ভাগ্য নির্ধারণ করবে। এটাই ইসলামের নির্দেশিত জীবনদর্শন।
গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী
No comments