বহিষ্কৃত আ.লীগ নেতার বিরুদ্ধে হত্যা-নির্যাতনের অভিযোগ
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ার আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত নেতা মো. মোবারক হোসেনের
বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধকালের মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগের তদন্ত শেষ হয়েছে।
তদন্তে তাঁর বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধকালে গণহত্যা, হত্যা, নির্যাতন, অপহরণ ও
আটকের মোট পাঁচটি অভিযোগ পাওয়া গেছে।মানবতাবিরোধী অপরাধ তদন্ত সংস্থা গতকাল বুধবার বিকেলে তাদের বেইলি রোডের কার্যালয়ে সংবাদ ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানায়। তদন্ত সংস্থার সমন্বয়ক আবদুল হান্নান খান বলেন, মোবারক হোসেনের বিরুদ্ধে ৩৩ জনকে গণহত্যা, তিনজনকে হত্যা, দুজনকে অপহরণ করে আটক ও নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এই তদন্ত প্রতিবেদন আজ বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান কৌঁসুলির কাছে জমা দেওয়া হবে। তিনি বলেন, তদন্ত সংস্থা আশা করছে, আগামী মার্চের আগেই জামায়াতে ইসলামীর নির্বাহী পরিষদের সদস্য মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে তদন্ত শেষ করা যাবে।
তদন্ত সংস্থার সহসমন্বয়ক এম সানাউল হক বলেন, তদন্তে পাওয়া গেছে, মুক্তিযুদ্ধকালে আখাউড়ার টানমান্দাইল ও জাঙ্গাইল গ্রামের ৩৩ জনকে গণহত্যার সঙ্গে মোবারক হোসেন জড়িত ছিলেন। তাঁর বিরুদ্ধে শহীদ আশু রঞ্জন দেবকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া আনন্দময়ী কালীবাড়ী রাজাকার ক্যাম্পে আটকে রেখে নির্যাতনের পর হত্যা, শহীদ আবদুল খালেককে ছাতিয়ান গ্রাম থেকে অপহরণ করে আটকে রেখে নির্যাতন ও হত্যা এবং শ্যামপুর গ্রামের দুজনকে অপহরণ ও আটকে রেখে নির্যাতনের পর একজনকে হত্যার অভিযোগ রয়েছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার খরমপুর গ্রামের এক ব্যক্তিকে অপহরণের পর আটকে রেখে হত্যার সঙ্গেও তিনি জড়িত ছিলেন। একাত্তরের আগস্ট থেকে নভেম্বর পর্যন্ত সময়ে এসব ঘটনা ঘটে।
তদন্তকারী কর্মকর্তা শ্যামল চৌধুরী বলেন, একাত্তরে মোবারক হোসেন ছিলেন স্থানীয় রাজাকার কমান্ডার। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসনের তৈরি করা রাজাকারদের তালিকায় তাঁর নাম আছে। স্বাধীনতার পর তিনি জামায়াতে ইসলামীর ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতা (রুকন) ছিলেন। জানা যায়, পরে তিনি আওয়ামী লীগে যোগ দেন।
আমাদের আখাউড়া প্রতিনিধি জানান, মোবারক হোসেন আখাউড়ার মোগড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। দুই বছর আগে তাঁকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়।
ব্রিফিংয়ে তদন্ত সংস্থা আরও জানায়, মোবারকের বাড়ি আখাউড়ার নয়াদিল গ্রামে। গত বছরের ১৬ জুলাই তাঁর বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগের তদন্ত শুরু হয়। তাঁর বিরুদ্ধে ২১ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে। চারটি খণ্ডে ২৯৪ পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদনের সঙ্গে এই সাক্ষীদের জবানবন্দি ও ১৮২ পৃষ্ঠার বই-পত্র, পত্রিকা ও সরকারি নথি সংযুক্ত রয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে সানাউল হক বলেন, তদন্ত সংস্থায় এখনো ১১ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তাধীন।
যেভাবে তদন্ত শুরু: ২০০৯ সালের ৩ মে আবদুল খালেকের মেয়ে খোদেজা বেগম ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিচারিক হাকিম আদালতে মোবারক হোসেনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন। মোবারক হাইকোর্টে জামিনের আবেদন করলে তাঁকে অন্তর্বর্তীকালীন জামিন দেওয়া হয়। পরে তাঁকে নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। ২০১১ সালের ১৯ অক্টোবর মোবারক ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আদালতে আত্মসমর্পণ করলে আদালত তাঁকে কারাগারে পাঠান। ওই আদালত জানান, মোবারকের বিরুদ্ধে অভিযোগ মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হওয়ায় তাঁকে জামিন দেওয়ার বিষয়টি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের এখতিয়ার। পরে তাঁর আইনজীবী এস এম শাহজাহান ট্রাইব্যুনাল-১-এ জামিনের আবেদন করেন। নয় মাস বিনা বিচারে আটক থাকায় ১৬ জুলাই ট্রাইব্যুনাল-১ মোবারককে দুই মাসের অন্তর্বর্তী জামিন দেন। ওই দিন তদন্ত সংস্থাকে মোবারকের বিরুদ্ধে অভিযোগের তদন্ত শুরুর নির্দেশ দেন। পরে আরও দুই দফায় তাঁর জামিনের মেয়াদ বাড়ানো হয়। আজ ট্রাইব্যুনাল-১-এ তাঁর হাজিরার দিন ধার্য আছে।
No comments