বছরে অপ্রত্যাশিত গর্ভ ধারণ দেড় লাখ, শিশুজন্ম ৪৭ হাজার- জন্ম নিয়ন্ত্রণ সামগ্রীর অভাব
বাংলাদেশে প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা উপকরণের স্বল্পতা বা মজুদ শূন্যতার নেতিবাচক প্রভাব গিয়ে পড়ছে মানব ও অর্থনীতির ওপর। বড়ি, ইনজেকশন ও কনডমের স্বল্পতা বা মজুদহীনতা বা অনিয়মিত সরবরাহ প্রকট আকার ধারণ করছে।
এতে শতকরা ৭ দশমিক ৪ ভাগ মানুষ নানাবিধ সমস্যায় জর্জরিত হচ্ছেন। ব্যাপক সময় ও অর্থের অপচয় হচ্ছে। একই কারণে প্রতি বছর অপ্রত্যাশিত গর্ভধারণের শিকার হয়েছেন ১ লাখ ৫৯ হাজার ৮শ' জন নারী। যাদের ৯০ হাজার ২শ' ৪০ জন এ সমস্যা থেকে মুক্ত হতে 'এমআর' ও ২২ হাজার ৫শ' ৬০ জন 'এবরশন' করছেন। আর স্বাস্থ্য সমস্যার শিকার হয়ে চিকিৎসার পেছনে প্রতি বছর ব্যয় হচ্ছে কোটি কোটি টাকা।বাংলাদেশ পরিবার পরিকল্পনা সমিতি (এফপিএবি) এবং হিউম্যান ডেভেলপম্যান্ট রিসার্চ সেন্টারের (এইচডিআরসি) গবেষণায় এ তথ্য বেরিয়ে এসেছে। গবেষণায় বলা হয়, এ দেশে প্রতি বছর শতকরা ১ দশমিক ৪৩ ভাগ জনসংখ্যা বাড়ছে। আর এ মুহূর্তে জন্ম নিয়ন্ত্রণ সামগ্রী ব্যবহার করছেন মোট জনসংখ্যার শতকরা ৫৫ দশমিক ৮ ভাগ নারী-পুরম্নষ। আগামী ২০১০ সালের মধ্যে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার শতকরা ২ দশমিক ২ ভাগে ধরে রাখতে হলে জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির ব্যবহার শতকরা ৭২ ভাগে উন্নতি করতে হবে। কিন্তু প্রতি বছর ১ লাখ ৬০ হাজার ৫শ' ৮৫ জন নানা জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি বিশেষ করে খাবার বড়ি, ইনজেকশন ও কনডমের স্বল্পতা বা পর্যাপ্ত মজুদ না থাকায় নানা ধরনের সমস্যায় পড়ছেন। এ অপ্রতুলতার কারণে প্রতি বছর প্রায় ৪৭ হাজার অপ্রত্যাশিত শিশু জন্ম নিচ্ছে। অবাধ জন্ম নিয়ন্ত্রক উপকরণ সংগ্রহের সুযোগ বৃদ্ধি করতে হবে। স্থায়ীভাবে উৎপাদনকারীদের পরামর্শ ও সহায়তা প্রদান এবং জেলা পর্যায়ে পরিবার পরিকল্পনা সমিতির মতা বাড়াতে হবে। জাতীয় বাজেটে এ বিষয়ে পর্যাপ্ত বরাদ্দ, বিষয়টিকে নিবিড় পর্যবেণের আওতায় নিতে হবে। কর্মশালার আয়োজন এবং সর্বোপরি সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাসত্মবায়ন করতে হবে। মাঠপর্যায়ে জনবল বৃদ্ধি, বেসরকারী সংস্থার সেবাকে সঠিক ব্যবহারের আওতায় নিতে হবে। আর অভিজ্ঞ লোকবলের সাহায্যে পরিবার পরিকল্পনার কার্যক্রমকে শক্তিশালী করা প্রয়োজন।
পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতরের মাঠ কর্মকর্তারা বলছেন, সরকারের হাতে এক মাসের আইইউডি (ইন্ট্রাইউটেরাইন ডিভাইস : মহিলাদের দীর্ঘমেয়াদী অস্থায়ী পদ্ধতি) মজুদ আছে। এর পর ছয় মাস থাকবে না। ২০০৯ সালের সেপ্টেম্বরে থেকে ডিসেম্বর পর্যনত্ম মাঠপর্যায়ে ইনজেকটেবল (মহিলাদের স্বল্পমেয়াদী ইনজেকশন) পদ্ধতি ছিল না। মাঠপর্যায়ে ছয় মাস ইনপস্নান্ট (মহিলাদের দীর্ঘমেয়াদী অস্থায়ী এক ধরনের পদ্ধতি) সরবরাহ ছিল না। সম্প্রতি এ সঙ্কট কেটেছে। তবে আগামী দিনগুলোতে সরবরাহ সঙ্কটের আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ বছর ফেব্রম্নয়ারি মাস থেকে সরকারী কর্মসূচীতে ইনজেকটেবল পদ্ধতি থাকবে না প্রায় দু'মাস। কেন্দ্র থেকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে অন্যান্য জন্ম নিয়ন্ত্রণ সামগ্রীর সঙ্গে সমন্বয় কর্মসূচী চালিয়ে নিতে।
পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ আবদুল কাইয়ুম বলেন, জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি গ্রহণ আজ অতি জরম্নরী হয়ে পড়েছে। স্বাস্থ্যসেবা উপকরণের স্বল্পতা বা মজুদ শূন্যতা স্বাস্থ্যের জন্য খুবই তিকর। অনিচ্ছাকৃত গর্ভধারণ বন্ধ করতে হবে। মাঠকর্মীদের সংখ্যা বাড়াতে হবে। মনিটরিং সিস্টেম সচল রাখতে হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পপুলেশন সাইন্স বিভাগের শিক ও প্রকল্প পরিচালক অধ্যাপক এ কে এম নূর-উন-নবী বলেন, পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচী শুরম্ন হওয়ার প্রায় চার দশক পরও মাত্র অর্ধেক দম্পতিকে জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি গ্রহণের আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে। চাহিদা থাকা সত্ত্ব্বেও শতকরা ১৭ দশমিক ৬ ভাগ আগ্রহী দম্পতিকে জন্ম নিয়ন্ত্রণ সামগ্রী দিতে পারছে না পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতর। আর গ্রহণকারীদের অনেকেই নিয়মিত সামগ্রী না পাওয়ার কারণে নানাভাবে স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছেন।
No comments