আজকের ভাবনা ॥ কোথায় হারাল আজ ইলিশের দিন... by নুরুন্নাহার শিরীন
বাংলাদেশে এখন বর্ষার মৌসুম। এবং বর্ষা মানেই যেন একথাল সাদা যুঁইসদৃশ ভাতের পাশেই সেই দারুণ ইলিশ ভাজার ঘ্রাণ। প্রবাদসম সেই বাক্যটি মনে আসছে- ‘ঘ্রাণে অর্ধভোজন।’ এই প্রবাদ বাংলাদেশের ইলিশের বেলায় যত প্রযোজ্য আর কিছুতে যেন ততটা নয়।
অথচ আজ আর মোটেও সেই এক বাড়িতে ইলিশ ভাজা বা রাঁধা হলেই সাত বাড়িতে সুঘ্রাণ ছড়িয়ে যাওয়ার ঘটনাটি ঘটে না বলা যায়। বানানো কথা না, এ আজ সকলেই স্বীকার করেন, ইলিশ যেন ক্রমেই হারিয়েছে সেই দারুণ মন মাতানো সুঘ্রাণ। কি কারণ? কারণটিও কমবেশি সবার জানা। পদ্মায় পড়েছে বিশাল চড়া। মেঘনাপার বিষিয়ে গেছে কল-কারখানার বর্জ্য,ে মনুষ্য বর্জ্য।ে ইলিশের জন্য বিখ্যাত চাঁদপুরেও একই চিত্র। তো, ইলিশের কি দোষ! উপরন্তু বিষিয়ে যাওয়া নদ-নদীতে নেই কাক্সিক্ষত ড্রেজিং। নেই নদীর নাব্য ফিরিয়ে আনার জন্য যথার্থ কর্মযজ্ঞ। তো, এসব বৈপরিত্যই ইলিশের একান্ত সনাতন ঐতিহ্যগত স্বাভাবিক বেড়ে ওঠায় অন্তরায় হয়েই কেড়ে নিয়েছে তার সেই পুরনো দারুণ মনমাতানো ঘ্রাণ। ইলিশ তাই ক্রমেই হৃতকালের একটি ঝকঝকে ঝিলিকের মতোই যেন। সাধারণ বাজারে যদি মেলেও কিন্তু আকাশছোঁয়া দাম। সাধারণ ক্রেতার বাড়ানো হাতটি বাধ্য হয়েই তখন গুটিয়ে নিতে হয় বিষম বিরস বদনে।
অথচ একদিন একদমই উল্টোচিত্র ছিল এদেশে ইলিশের। তখন খুব সুলভে ইলিশ মিলত। আমাদের তখন সাদা যুঁইসদৃশ একথাল ভাতের পাশে বর্ষার ইলিশ ভাজাও থাকতই। অথবা খাঁটি সরিষাবাটা আর সরিষার তেলে রাঁধা সবুজ কাঁচামরিচ সহযোগে দারুণ এক ইলিশের বাটি টেবিলে আসতই। আহ সে কি সুঘ্রাণ... “ঘ্রাণে অর্ধভোজন বাক্যটি যেন বা তারই জন্য রচিত।
আজ ইলিশের কথায় মনে আসছে ছেলেবেলার কথা... সে কালে আমাদের বাড়ির চিত্র... আমার একমাত্র ফুপা সাহেব ছিলেন চাঁদপুরের (প্রয়াত নূর মোহাম্মদ খান, জজ ছিলেন, পরবর্তীতে বাংলাদেশের ইলেকশন কমিশনার নিযুক্ত হয়েছিলেন)। জাজ হিসেবে বিভিন্ন জেলায় পোস্টিংয়ের সুবাদে আমাদেরও যাওয়া হতো বেশ বিশাল সুযোগ-সুবিধা সংবলিত ফুপা সাহেবের বাংলোয়। আমার ফুপু অনেক সাড়ম্বরে ইলিশ রাঁধতেন। বাংলা জুড়েই ইলিশের মৌ-মৌ সুঘ্রাণ ছড়িয়ে পড়ত। আমাদের বাড়িতে যখনই ফুপা সাহেব আসতেন ঝুড়ি-ঝুড়ি মৌসুমী ফল-ফলাদি নিয়ে, নেমেই আমার বাবাকে পাঠাতেন তাজা ইলিশের জন্য বাড়ির কাছাকাছি রাজগঞ্জ বাজারে। বাজারের টাকাও বাবার পকেটে গুঁজে দিতেন। বাবা বাজার থেকে টাটকা ঝকঝকে রূপালি ইলিশের একটি-দুটি না চার-চারটে কিনে নিয়েই ফিরতেন। দু’খানা ডিম হয়নি এমন ইলিশ আর দু’খানা ডিমওয়ালা ইলিশ। ব্যাগভর্তি আরও অনেক সদাই। আমাদের বাড়িতে সেদিন উৎসবের জমজমাট আমেজ। আমার মা ভীষণ ব্যস্ত হয়ে পড়তেন রান্নায়। কত পদ যে রাঁধতেন, টেবিলভর্তি হরেক পদের বাটি। দেখেই প্রাণ জুড়াত। আর ঘ্রাণের কথা কি লিখি... প্রতিবেশী মোর্শেদ চাচা ঘ্রাণেই এসে হাজির। পাশের নিত্যহরি ডাক্তার বাবুর বাড়িতে এক বাটি ইলিশ পাঠিয়ে দিতেন আমার মা। পাড়ায় এমনই রেওয়াজ ছিল তখন। আজ আর এমন রেওয়াজ নেই-ই বলা যায়। সেসব দিন মনে এলেই বড় মন-ক্যামন করে।
এই যে ভরা বর্ষার মৌসুম যায় যায় প্রায়... তবুও তেমনটি না হোক, ইলশেগুঁড়ি বৃষ্টির দিনে বাড়িতে বাড়িতে আজও আয়োজন হয়-ই ভাত বা খিঁচুড়ির সঙ্গে ইলিশ ভাজা কিংবা সরিষাবাটা দিয়ে সরিষার তেল ও সবুজ কাঁচামরিচ সহযোগে ইলিশ, তার আনন্দ কিন্তু কিছুমাত্র কম না, কেবল আগের সেই ঘ্রাণের বেলায় ঘাটতি ঢের। একদা একদিন ‘মাছেভাতে বাঙালী’ এই বিশেষণটি আজও আমরা ঐতিহ্য হিসেবেই ধরে তো রেখেছি এবং আমাদের পালা-পার্বণে, বাড়িতে অতিথি-সমাগমে, জামাই আপ্যায়নে ইলিশের দারুণ একখানা পদের ডিশ রাখছি এই আনন্দ দিন হয়ত আরও বহুকাল ধরেই রবে এই বাংলায়...এমনই আশা... সে যেন ইতিহাস না হয় কোন দিনও। সাগর পারের জেলেদের হৃদয় ভরে উঠুক ভরা বর্ষায় জালভর্তি রূপালি ইলিশের ঝিলিকে...সাধারণের পাতেও ইলিশ জুটুক... আজ আমার হার্দিক চাওয়া এই।
অথচ একদিন একদমই উল্টোচিত্র ছিল এদেশে ইলিশের। তখন খুব সুলভে ইলিশ মিলত। আমাদের তখন সাদা যুঁইসদৃশ একথাল ভাতের পাশে বর্ষার ইলিশ ভাজাও থাকতই। অথবা খাঁটি সরিষাবাটা আর সরিষার তেলে রাঁধা সবুজ কাঁচামরিচ সহযোগে দারুণ এক ইলিশের বাটি টেবিলে আসতই। আহ সে কি সুঘ্রাণ... “ঘ্রাণে অর্ধভোজন বাক্যটি যেন বা তারই জন্য রচিত।
আজ ইলিশের কথায় মনে আসছে ছেলেবেলার কথা... সে কালে আমাদের বাড়ির চিত্র... আমার একমাত্র ফুপা সাহেব ছিলেন চাঁদপুরের (প্রয়াত নূর মোহাম্মদ খান, জজ ছিলেন, পরবর্তীতে বাংলাদেশের ইলেকশন কমিশনার নিযুক্ত হয়েছিলেন)। জাজ হিসেবে বিভিন্ন জেলায় পোস্টিংয়ের সুবাদে আমাদেরও যাওয়া হতো বেশ বিশাল সুযোগ-সুবিধা সংবলিত ফুপা সাহেবের বাংলোয়। আমার ফুপু অনেক সাড়ম্বরে ইলিশ রাঁধতেন। বাংলা জুড়েই ইলিশের মৌ-মৌ সুঘ্রাণ ছড়িয়ে পড়ত। আমাদের বাড়িতে যখনই ফুপা সাহেব আসতেন ঝুড়ি-ঝুড়ি মৌসুমী ফল-ফলাদি নিয়ে, নেমেই আমার বাবাকে পাঠাতেন তাজা ইলিশের জন্য বাড়ির কাছাকাছি রাজগঞ্জ বাজারে। বাজারের টাকাও বাবার পকেটে গুঁজে দিতেন। বাবা বাজার থেকে টাটকা ঝকঝকে রূপালি ইলিশের একটি-দুটি না চার-চারটে কিনে নিয়েই ফিরতেন। দু’খানা ডিম হয়নি এমন ইলিশ আর দু’খানা ডিমওয়ালা ইলিশ। ব্যাগভর্তি আরও অনেক সদাই। আমাদের বাড়িতে সেদিন উৎসবের জমজমাট আমেজ। আমার মা ভীষণ ব্যস্ত হয়ে পড়তেন রান্নায়। কত পদ যে রাঁধতেন, টেবিলভর্তি হরেক পদের বাটি। দেখেই প্রাণ জুড়াত। আর ঘ্রাণের কথা কি লিখি... প্রতিবেশী মোর্শেদ চাচা ঘ্রাণেই এসে হাজির। পাশের নিত্যহরি ডাক্তার বাবুর বাড়িতে এক বাটি ইলিশ পাঠিয়ে দিতেন আমার মা। পাড়ায় এমনই রেওয়াজ ছিল তখন। আজ আর এমন রেওয়াজ নেই-ই বলা যায়। সেসব দিন মনে এলেই বড় মন-ক্যামন করে।
এই যে ভরা বর্ষার মৌসুম যায় যায় প্রায়... তবুও তেমনটি না হোক, ইলশেগুঁড়ি বৃষ্টির দিনে বাড়িতে বাড়িতে আজও আয়োজন হয়-ই ভাত বা খিঁচুড়ির সঙ্গে ইলিশ ভাজা কিংবা সরিষাবাটা দিয়ে সরিষার তেল ও সবুজ কাঁচামরিচ সহযোগে ইলিশ, তার আনন্দ কিন্তু কিছুমাত্র কম না, কেবল আগের সেই ঘ্রাণের বেলায় ঘাটতি ঢের। একদা একদিন ‘মাছেভাতে বাঙালী’ এই বিশেষণটি আজও আমরা ঐতিহ্য হিসেবেই ধরে তো রেখেছি এবং আমাদের পালা-পার্বণে, বাড়িতে অতিথি-সমাগমে, জামাই আপ্যায়নে ইলিশের দারুণ একখানা পদের ডিশ রাখছি এই আনন্দ দিন হয়ত আরও বহুকাল ধরেই রবে এই বাংলায়...এমনই আশা... সে যেন ইতিহাস না হয় কোন দিনও। সাগর পারের জেলেদের হৃদয় ভরে উঠুক ভরা বর্ষায় জালভর্তি রূপালি ইলিশের ঝিলিকে...সাধারণের পাতেও ইলিশ জুটুক... আজ আমার হার্দিক চাওয়া এই।
No comments