সাধারণ বালক থেকে নিষ্ঠুর খুনি ব্রেইভিক

অ্যান্ডার্স বেহরিং ব্রেইভিক নরওয়ের এক সাধারণ ছেলে থেকে হয়ে ওঠেন নিষ্ঠুর খুনি। গত বছর ৬৯ জনকে হত্যা করেন তিনি। এই অপরাধের দায়ে গতকাল শুক্রবার ব্রেইভিককে ২১ বছরের কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন সে দেশের একটি আদালত।


ব্রেইভিকের জন্ম ১৯৭৯ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি। নরওয়ের এক শান্ত নিরিবিলি ও বিত্তশালী এলাকায়। তাঁর বাবা ছিলেন কূটনীতিক আর মা সেবিকা। ব্রেইভিকের বয়স যখন মাত্র এক বছর, তখনই তাঁর বাবা ও মায়ের ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়।
গণহত্যা চালানোর আগে ব্রেইভিক ১৫ পৃষ্ঠার একটি ইশতেহার রচনা করেন। এর একটি অংশে তিনি লিখেছেন, ‘আমি বড় হই এমন এক পরিবেশে, যেখানে আমার চারপাশের মানুষ ছিলেন নিষ্ঠাবান ও মেধাবী।’
ব্রেইভিককে লালন-পালন করেন তাঁর মা। মধ্যবিত্ত পরিবারে মা ও ছেলের অর্থের অভাব ছিল না। এ কথা ব্রেইভিক নিজেই বলেছেন। তাঁর ভাষায়, ‘সমস্যা কিংবা সুবিধা বলতে যা ছিল, তা হলো মাত্রাতিরিক্ত স্বাধীনতা। আমি তা ভোগ করেছি।’
ভাঙা পরিবারে ব্রেইভিকের এই বেড়ে ওঠা নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করে আসছিল শিশু কল্যাণ সংগঠনগুলো। তাদের আশঙ্কা ছিল, শিশু ব্রেইভিকের দেখভাল হয়তো ঠিকমতো হচ্ছে না।
চার বছরের ব্রেইভিক সম্পর্কে একজন মনোবিজ্ঞানী লিখেছেন, বৈরী পরিবেশে বেড়ে উঠছে সে। ব্রেইভিক অনেকটা অপ্রতিরোধী ও উদ্বিগ্ন। মনোবিজ্ঞানীর এই মন্তব্য সম্প্রতি সে দেশের গণমাধ্যম প্রকাশ করে দিয়েছে।
ব্রেইভিককে নিজের জিম্মায় পেতে চেয়েছিলেন তাঁর বাবা। কিন্তু আইনি লড়াইয়ে হেরে যান। পিতৃস্নেহবঞ্চিত ব্রেইভিকের শৈশবে বড় ধরনের কোনো অস্বাভাবিকতা দেখা যায়নি।
নরওয়ের গণমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ব্রেইভিকের বাবা বলেন, ছোটবেলায় ব্রেইভিক ছিল রাজনীতিবিমুখ খুবই সাধারণ এক ছেলে। ১৫ বছরে পা দেওয়ার পর থেকে অবশ্য ব্রেইভিকের সঙ্গে আর কোনো যোগাযোগ রাখেননি তাঁর বাবা। ১৮ বছর বয়সে হাইস্কুলে পড়াশোনার পাঠ চুকিয়ে দেন ব্রেইভিক। রাজনীতিতে সক্রিয় হয়ে ওঠেন। ১৯৯৯ সালে অভিবাসনবিরোধী মধ্যপন্থী প্রোগ্রেস পার্টিতে যোগ দেন। ২০০৬ সালে এই পার্টি ত্যাগ করেন। এর পর থেকে নিজেকে একদম গুটিয়ে নেন। তবে তিনি ইসলাম ও বহু সংস্কৃতিবাদ ও ‘সাংস্কৃতিক মার্ক্সবাদের’ সমালোচনায় মুখর হয়ে ওঠেন। নিজেকে তিনি জাতীয়তাবাদী যোদ্ধা হিসেবে গণ্য করতে থাকেন। তাঁর মতে, মুসলিমসহ অভিবাসীরা নরওয়েজিয়ানদের বিশুদ্ধ রক্তের জন্য হুমকি। এই ‘দূষণ’ ঠেকাতে তিনি হামলার পরিকল্পনা করেন। কয়েক বছরের পরিকল্পনা অনুযায়ী গত বছরের ২২ জুলাই প্রায় এক ঘণ্টা ধরে পদ্ধতিগতভাবে বোমা ও গুলি করে ৬৯ জনকে হত্যা করেন ব্রেইভিক। এএফপি।

No comments

Powered by Blogger.