অপুর লালঘোড়া by রণজিৎ সরকার
কলিংবেলের শব্দ হলো। অপু বুঝতে পারল বাবা অফিস থেকে এসেছে। প্রতিদিন এই সময় ওর বাবা অফিস থেকে এসে কলিংবেল চাপেন। অপু প্রতিদিন দরজা খুলে দেয় বাবার কাছে থেকে কিছু পাওয়ার আশায়। বাবা অফিস থেকে ফেরার পথে ওর জন্য অনেক কিছু নিয়ে আসেন।
কিন্তু আজ অপু দরজা খুলতে গেল না। ও বিছানায় উঠে চোখ বন্ধ করে দু’কান ধরে উঠবস শুরু করল।
কলিংবেলের শব্দ আবারও হলো। মা গিয়ে দরজা খুলে দিলেন।
বাবা দরজায় পা দিয়েই বললেন, ‘অপু কোথায়?’
অপুর মা বলেন, ‘ঘরে হয়তো একা একা খেলছে।’
‘চলো তো দেখি, ও কি করছে?’
ঘরে গিয়ে তাঁরা দেখতে পেলেন অপু চোখ বন্ধ করে কান ধরে উঠছে আর বসছে। বাবা-মা অবাক! কী হলো ওর? কান ধরে উঠবস করছে কেন। বাবা ভাবলেন নিশ্চয় ওর মা ওকে দুষ্টুমির শাস্তি দিচ্ছে।
কা- দেখে মৃদু হেসে বাবা বললেন, ‘অপু বাবা, কী হয়েছে তোমার? কেন তুমি কান ধরে উঠবস করছ?’ নিশ্চয় কোন অপরাধের জন্য এমন শাস্তি ভোগ করতে হচ্ছে?’
অপু কিছু বলছে না, ধীরে ধীরে একটু করে চোখ মেলে বাবা-মাকে একটু দেখে আবার চোখ বন্ধ করে ও।
অপুর বাবা বললেন, ‘তুমি অপুকে নিশ্চয় বকা দিয়েছে। কী এমন অপরাধ করেছে ও কে যে জন্য তুমি এমন শাস্তি দিচ্ছ?’
অপুর মা বললেন, ‘কই, আমি তো অপুকে কিছু বলিনি।’
‘তাহলে কেন, কান ধরে উঠবস করছে?’
‘আমি বলতে পারছি না, তুমি অপুর কাছ থেকে শোনা, আমি কিছু বলেছি কি না।’
অপু কী হয়েছে খুলে বলো বাবা?’
বাবা-মা অপুকে থামতে বললেন। অপু কান ধরে উঠছে আর বসছে। আর বলছে, ‘তোমরা আমাকে স্পর্শ করবে না।’
‘অপু তুমি কেন এমন করছ? কী সমস্যা তোমার? সমস্যার কথা খুলে বললে তবেই তো সমাধান হবে।’
‘তাহলে শোন, আমার কোন সমস্যা নেই, তোমাদের কাছে আমার একটা দাবি আছে।’
‘কি দাবি বলো?’
‘বলব, দাবি পূরণ হবে তো?’
‘আগে তুমি কান ধরে উঠবস থামিয়ে আমাদের দিকে তাকাও তারপর বলো?’
‘যদি দাবি পূরণ হয়, তাহলে তোমাদের দিকে তাকাব।’
‘অবশ্যই পূরণ করব। তবে আকাশের চাঁদ-তারা এনে দিতে বলো না, তা হলে কিন্তু দাবি পূরণ করতে পারব না।’
‘না বাবা সেরকম কিছু না।’
‘তাহলে বলো, শুনি।’
‘বলছি মনোযোগ সহকারে শোনো। আমরা বাঙালী। বাংলা বছরের প্রথম মাস বৈশাখ-কাল পহেলা বৈশাখ। বৈশাখী মেলা বসবে। আর এই মেলা থেকে আমাকে একটা লালঘোড়া কিনে দিতে হবে।’
‘লালঘোড়া? তা আবার বৈশাখী মেলা থেকে?’
‘হ্যাঁ বাবা।’
‘তুমি বোধহয় জানো না যে, মেলায় কখনো হাতি-ঘোড়া বিক্রি হয় না। আর ঘোড়া-টোড়ার যুগও এটা নয়।’
‘পাওয়া যায় বাবা। না পেলে তোমার কাছে চাইব কেন?’
‘আচ্ছা তাই হবে, তবে লালঘোড়া দিয়ে তুমি কি করবে?’
‘অনেক বড় পরিকল্পনা আছে আমার লালঘোড়াকে নিয়ে। তুমি শুধু কিনে দিয়ে দেখো।’
‘কিন্তু তুমি তো চিড়িয়াখানা গিয়ে হাতি-ঘোড়াতে উঠতে সাহস পাও না। আর এখন তুমি লালঘোড়া দাবি করছ?’
‘না, আমাকে লালঘোড়া কিনে দিতেই হবে।’
‘দেখো অপু আমরা তিনতলায় থাকি। ফ্ল্যাট-বাসাতে তো আর ঘোড়া পালা যাবে না। ঘোড়াটাকে দেখাশোনা কে করবে, কে, কি খাওয়াবে। তার চেয়ে ভাল তোমার যখন ইচ্ছে হবে চিড়িয়াখানায় নিয়ে গিয়ে লালঘোড়া দেখিয়ে নিয়ে আসব।’
‘তোমরা আসলেই বোকা। আমি তোমাদের কাছে কি জীবন্ত ঘোড়া চেয়েছি। ’
‘তাহলে কোন ঘোড়া চেয়েছ?’
‘মাটির তৈরি। লাল রং করা লালঘোড়া। যে ঘোড়ার পিঠের মাঝখানে লম্বা করে কাটা থাকবে। আর সেই কাটা জায়গা দিয়ে আমি নতুন বছরের শুরু থেকে টাকা ফেলব সারা বছর। বছর শেষে এই টাকা দিয়ে ভাল একটা কাজ করব যা এখন বলব না।’
বাবা-মা, ছোট অপুর এমন ভাবনায় অবাক তো হলেনই সেই সঙ্গে খুশিও হলেন।
বাবা বলেন, ‘এই তোমার দাবি?’
‘হ্যাঁ বাবা, দাবির মাধ্যমেই আমার অধিকার আদায় করতে চাই।’
‘তোমার দাবি পূরণ হবে। কাল আমরা সবাই বৈশাখী মেলাতে গিয়ে বড় দেখে একটা লালঘোড়া কিনে দেবো তোমাকে।’
অপু এবার চোখ খুলল। কান থেকে হাত নামিয়ে নিয়ে বাবা-মার দিকে তাকিয়ে হাততালি দিতে দিতে বলল, ‘কী মজা, কী মজা লালঘোড়া আমার ঘরে আসবে।’
অপুকে কোলে তুলে আদর করতে লাগলেন বাবা।
কলিংবেলের শব্দ আবারও হলো। মা গিয়ে দরজা খুলে দিলেন।
বাবা দরজায় পা দিয়েই বললেন, ‘অপু কোথায়?’
অপুর মা বলেন, ‘ঘরে হয়তো একা একা খেলছে।’
‘চলো তো দেখি, ও কি করছে?’
ঘরে গিয়ে তাঁরা দেখতে পেলেন অপু চোখ বন্ধ করে কান ধরে উঠছে আর বসছে। বাবা-মা অবাক! কী হলো ওর? কান ধরে উঠবস করছে কেন। বাবা ভাবলেন নিশ্চয় ওর মা ওকে দুষ্টুমির শাস্তি দিচ্ছে।
কা- দেখে মৃদু হেসে বাবা বললেন, ‘অপু বাবা, কী হয়েছে তোমার? কেন তুমি কান ধরে উঠবস করছ?’ নিশ্চয় কোন অপরাধের জন্য এমন শাস্তি ভোগ করতে হচ্ছে?’
অপু কিছু বলছে না, ধীরে ধীরে একটু করে চোখ মেলে বাবা-মাকে একটু দেখে আবার চোখ বন্ধ করে ও।
অপুর বাবা বললেন, ‘তুমি অপুকে নিশ্চয় বকা দিয়েছে। কী এমন অপরাধ করেছে ও কে যে জন্য তুমি এমন শাস্তি দিচ্ছ?’
অপুর মা বললেন, ‘কই, আমি তো অপুকে কিছু বলিনি।’
‘তাহলে কেন, কান ধরে উঠবস করছে?’
‘আমি বলতে পারছি না, তুমি অপুর কাছ থেকে শোনা, আমি কিছু বলেছি কি না।’
অপু কী হয়েছে খুলে বলো বাবা?’
বাবা-মা অপুকে থামতে বললেন। অপু কান ধরে উঠছে আর বসছে। আর বলছে, ‘তোমরা আমাকে স্পর্শ করবে না।’
‘অপু তুমি কেন এমন করছ? কী সমস্যা তোমার? সমস্যার কথা খুলে বললে তবেই তো সমাধান হবে।’
‘তাহলে শোন, আমার কোন সমস্যা নেই, তোমাদের কাছে আমার একটা দাবি আছে।’
‘কি দাবি বলো?’
‘বলব, দাবি পূরণ হবে তো?’
‘আগে তুমি কান ধরে উঠবস থামিয়ে আমাদের দিকে তাকাও তারপর বলো?’
‘যদি দাবি পূরণ হয়, তাহলে তোমাদের দিকে তাকাব।’
‘অবশ্যই পূরণ করব। তবে আকাশের চাঁদ-তারা এনে দিতে বলো না, তা হলে কিন্তু দাবি পূরণ করতে পারব না।’
‘না বাবা সেরকম কিছু না।’
‘তাহলে বলো, শুনি।’
‘বলছি মনোযোগ সহকারে শোনো। আমরা বাঙালী। বাংলা বছরের প্রথম মাস বৈশাখ-কাল পহেলা বৈশাখ। বৈশাখী মেলা বসবে। আর এই মেলা থেকে আমাকে একটা লালঘোড়া কিনে দিতে হবে।’
‘লালঘোড়া? তা আবার বৈশাখী মেলা থেকে?’
‘হ্যাঁ বাবা।’
‘তুমি বোধহয় জানো না যে, মেলায় কখনো হাতি-ঘোড়া বিক্রি হয় না। আর ঘোড়া-টোড়ার যুগও এটা নয়।’
‘পাওয়া যায় বাবা। না পেলে তোমার কাছে চাইব কেন?’
‘আচ্ছা তাই হবে, তবে লালঘোড়া দিয়ে তুমি কি করবে?’
‘অনেক বড় পরিকল্পনা আছে আমার লালঘোড়াকে নিয়ে। তুমি শুধু কিনে দিয়ে দেখো।’
‘কিন্তু তুমি তো চিড়িয়াখানা গিয়ে হাতি-ঘোড়াতে উঠতে সাহস পাও না। আর এখন তুমি লালঘোড়া দাবি করছ?’
‘না, আমাকে লালঘোড়া কিনে দিতেই হবে।’
‘দেখো অপু আমরা তিনতলায় থাকি। ফ্ল্যাট-বাসাতে তো আর ঘোড়া পালা যাবে না। ঘোড়াটাকে দেখাশোনা কে করবে, কে, কি খাওয়াবে। তার চেয়ে ভাল তোমার যখন ইচ্ছে হবে চিড়িয়াখানায় নিয়ে গিয়ে লালঘোড়া দেখিয়ে নিয়ে আসব।’
‘তোমরা আসলেই বোকা। আমি তোমাদের কাছে কি জীবন্ত ঘোড়া চেয়েছি। ’
‘তাহলে কোন ঘোড়া চেয়েছ?’
‘মাটির তৈরি। লাল রং করা লালঘোড়া। যে ঘোড়ার পিঠের মাঝখানে লম্বা করে কাটা থাকবে। আর সেই কাটা জায়গা দিয়ে আমি নতুন বছরের শুরু থেকে টাকা ফেলব সারা বছর। বছর শেষে এই টাকা দিয়ে ভাল একটা কাজ করব যা এখন বলব না।’
বাবা-মা, ছোট অপুর এমন ভাবনায় অবাক তো হলেনই সেই সঙ্গে খুশিও হলেন।
বাবা বলেন, ‘এই তোমার দাবি?’
‘হ্যাঁ বাবা, দাবির মাধ্যমেই আমার অধিকার আদায় করতে চাই।’
‘তোমার দাবি পূরণ হবে। কাল আমরা সবাই বৈশাখী মেলাতে গিয়ে বড় দেখে একটা লালঘোড়া কিনে দেবো তোমাকে।’
অপু এবার চোখ খুলল। কান থেকে হাত নামিয়ে নিয়ে বাবা-মার দিকে তাকিয়ে হাততালি দিতে দিতে বলল, ‘কী মজা, কী মজা লালঘোড়া আমার ঘরে আসবে।’
অপুকে কোলে তুলে আদর করতে লাগলেন বাবা।
No comments