বুয়েট খুলছে আজ, ভর্তি পরীক্ষার সময়সূচী শীঘ্রই ঘোষণা- জাবির হল খুলছে আজ, ক্লাস শুরু কাল by বিভাষ বাড়ৈ
শিক্ষক সমিতির আন্দোলনের ফলে সৃষ্ট দীর্ঘ অচলাবস্থা ও রমজানের ছুটির পর আজ খুলছে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট)। আন্দোলন বন্ধ করে শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর জন্য আদালতের দেয়া নির্দেশের আলোকে আগামী দুয়েকদিনের মধ্যেই একাডেমিক কাউন্সিলের সভা ডেকে নতুন শিক্ষাবর্ষে ভর্তি পরীক্ষার সময়সূচী ঘোষণা করা হবে।
এদিকে অচলাবস্থা ও ছুটি শেষে আজ খুলছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) আবাসিক হলগুলো। আগামীকাল রবিবার থেকে শুরু হবে ক্লাস। শিক্ষা ও শিক্ষার্থীদের স্বার্থে শিক্ষার সুষ্ঠু ও স্বাভাবিক পরিবেশে নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতা কামনা করেছেন দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যসহ সংশ্লিষ্টরা। ভর্তি পরীক্ষা ও ক্লাসসহ শিক্ষা কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবকসহ সংশ্লিষ্ট সকলের সর্বাত্মক সহযোগিতা কামনা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। অন্যদিকে দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক পরিস্থিতির ওপর বিশেষভাবে নজর রাখছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসি। সাম্প্রতিক অস্থিরতার জন্য অভিযুক্ত বিশেষ মৌলবাদী গোষ্ঠীটির ওপর নজরদারি বাড়িয়েছে সরকারের একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা।
জানা গেছে, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) নতুন শিক্ষাবর্ষে ভর্তির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে আগামী দুয়েকদিনের মধ্যেই। এ লক্ষ্যে আগামী সোমবার আদালতের নির্দেশের আলোকেই একাডেমিক কাউন্সিলের সভা ডেকে ভর্তি পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করা হতে পারে। গত ৭ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ভর্তির বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণে একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় সিদ্ধান্ত নেয়, ঈদ-উল-ফিতরের পরই বুয়েটে ভর্তির তারিখ নির্ধারণ করা হবে। ইতোমধ্যেই অধিকাংশ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করেছে। উচ্চশিক্ষায় ভর্তিতে স্বাভাবিক রীতি অনুযায়ী সাধারণত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আগে বুয়েটে ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু হয়। তবে চলতি শিক্ষাবর্ষে এর ব্যতিক্রম দেখা গেছে। শিক্ষক সমিতির রাজনীতির যাঁতাকলে পড়ে পিছিয়ে পড়েছে বুয়েট। শিক্ষক সমিতি এবার শিক্ষার্থীদের ভর্তি নয়, বরং উপাচার্য ও উপ-উপাচার্যের বিরুদ্ধে আন্দোলনে ব্যস্ত থাকায় ভর্তি প্রক্রিয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। সাধারণ শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা দ্রুত ভর্তি শুরুর তাগিদ দিলেও তাতে বাধা সৃষ্টি করেছে শিক্ষক সমিতির একটি গ্রুপ। তার পরেও শীঘ্রই শুরু করা হচ্ছে ভর্তি কার্যক্রম। এদিকে অচলাবস্থা থাকায় উদ্বেগ, উৎকণ্ঠায় আছেন ভর্তিচ্ছুরা। সেশনজটের আশঙ্কা করছেন শিক্ষার্থীদের মধ্যে কেউ কেউ। এর আগে উপায় না পেয়ে শিক্ষক নেতাদের আন্দোলনের বিরুদ্ধে আদালতে যান এক অভিভাবক, সুপ্রীমকোর্টের আইনজীবী ড. ইউনুস আলী আকন্দ।। আদালত আন্দোলন বন্ধের নির্দেশ দিলে প্রকাশ্য আন্দোলন বন্ধ করেছেন নেতারা, কিন্তু ভেতরে অচলাবস্থা সৃষ্টির অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন, এমনকি ভর্তি প্রক্রিয়া শুরুর বিষয়ে কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে সাধারণ শিক্ষকরা ইচ্ছুক হলেও নেতারা তাদের হুমকি দিচ্ছেন বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। তার পরেও আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধান করে শীঘ্রই কার্যক্রম শুরু করার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। এর আগে দেড় মাস ধরে বুয়েটের উপাচার্য ও উপ-উপাচার্যের পদত্যাগসহ বিভিন্ন দাবি নিয়ে লাগাতার ধর্মঘট চালিয়ে যাচ্ছিল শিক্ষক সমিতি। আন্দোলনের একপর্যায়ে রমজান ও ঈদের ছুটি কয়েকদিন এগিয়ে এনে গত ১০ জুলাই বুয়েট বন্ধ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। অভিযোগের বিষয়ে কোন তথ্যপ্রমাণ না থাকলেও সমিতি একগুঁয়ে অবস্থান নিলে আন্দোলনের একপর্যায়ে প্রগতিশীল শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সমিতির বিরুদ্ধে মাঠে নামে। সঙ্কট সমাধানে বিচার বিভাগীয় কমিশন গঠনে সকল মহলের দাবিও অগ্রাহ্য করে শিক্ষার্থীদের জড়ো করে আন্দোলন চালায় সমিতি। অভিযোগ ওঠে, আধিপত্য বিস্তার করতেই নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন হিযবুত তাহ্্রীর প্রভাবিত শিক্ষক সমিতি মিথ্যা আর বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়িয়ে আন্দোলন করছে। আলোচনার মাধ্যমে সঙ্কট সমাধানের উদ্যোগ নিলেও সমিতির বিরুদ্ধে তাতে বাধা সৃষ্টির অভিযোগ তোলেন খোদ শিক্ষামন্ত্রী।
একপর্যায়ে আন্দোলনকারীরা বিভক্ত হয়ে পড়লেও একটি বিশেষ গ্রুপ কর্মকা- চালিয়ে যেতে থাকলে অস্থিরতা নিরসন করে শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর জন্য আদালতে রিট করেন এক অভিভাবক ও আইনজীবী। এরপর চলমান আন্দোলন, ধর্মঘটের ওপর অন্তর্বর্তীকালীন নিষেধাজ্ঞা দেয় হাইকোর্ট। এছাড়া বুয়েটে চলমান আন্দোলন, ধর্মঘট কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না তা- জানতে চেয়ে রুলও জারি করেছে আদালত। রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন, ধর্মঘটের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি থাকবে বলে আদালতের নির্দেশে বলা হয়েছে। একইসঙ্গে বুয়েট ক্যাম্পাসের আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখতে পুলিশের আইজি ও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনারকে নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। অবস্থা বেগতিক দেখে আন্দোলন স্থগিত করেন সমিতির নেতারা। তবে এই মুহূর্তে বুয়েটের সার্বিক ঘটনা খতিয়ে দেখতে বিচার বিভাগীয় কমিশন গঠনের দাবি তুলেছেন সাধারণ শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তাঁরা বলছেন, কমিশন গঠন হলে সঠিক তথ্য বেরিয়ে আসবে। আর এই কমিশনকে ২০০৮ সাল থেকে সাম্প্রতিক আন্দোলনসহ সকল কার্যক্রম খতিয়ে দেখতে হবে। তবে সাবেক উপাচার্যের মেয়াদের শেষ পর্যায়ে রাতারাতি সমিতির কয়েক নেতার বিতর্কিত পদোন্নতির ঘটনার কারণে ২০০৮ সাল থেকে কার্যক্রম তদন্তের বিরোধিতা করছেন সুবিধাভোগী সেই নেতারা। এদিকে আজ ক্যাম্পাস খোলার পর আদালতের নির্দেশের আলোকে দ্রুত ভর্তি পরীক্ষাসহ সকল শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। উপাচার্য অধ্যাপক ড. এস এম নজরুল ইসলাম বলেছেন, আশা করছি রবিবার (আগামীকাল) আমরা আদালতের আদেশের কপি হাতে পাব। কপি হাতে পেলেই এক বা দুদিনের মধ্যে একাডেমিক কাউন্সিলের সভা ডেকে পরীক্ষার তারিখ নির্ধারণ করা হবে। উপাচার্য শিক্ষা ও শিক্ষার্থীদের স্বার্থে শিক্ষার সুষ্ঠু ও স্বাভাবিক পরিবেশ নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতা কামনা করেছেন।
গত ২ আগস্টের অচলাবস্থা ও ছুটি শেষে আজ খুলছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) আবাসিক হলগুলো। আগামীকাল থেকে শুরু হবে ক্লাস। উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ আনোয়ার হোসেনের সভাপতিত্বে শুক্রবার বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট কক্ষে অনুষ্ঠিত হল প্রশাসন, প্রক্টরিয়াল টিম ও পদস্থ কর্মকর্তাদের এক সমন্বয় সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। উপাচার্য অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার সুষ্ঠু ও স্বাভাবিক পরিস্থিতি নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতা কামনা করেছেন। এদিকে এ দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর দিকে বিশেষভাবে নজর রাখছে সরকারের একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা। অচলাবস্থার জন্য যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে তাদের ওপর বিষেশভাবে নজর রাখা হচ্ছে। নজরদারি বাড়ানো হয়েছে বুয়েট ও জাবির আন্দোলনের পেছনে থাকার দায়ে অভিযুক্ত জামায়াত, হিযবুত তাহ্্রীরের সঙ্গে সম্পৃক্ত কয়েক শিক্ষকের ওপর। ভর্তি পরীক্ষা ও ক্লাসসহ শিক্ষা কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবকসহ সংশ্লিষ্ট সকলের সর্বাত্মক সহযোগিতা কামনা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এ কে আজাদ চৌধুরী ঈদের ছুটি শেষে ক্লাসে ফেরা উপলক্ষে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেছেন, সকলের সহযোগিতায় শিক্ষায় আমাদের দেশের যে অগ্রগতি, উচ্চশিক্ষায়ও সেই অগ্রগতি অব্যাহত রাখতে সকলে মিলে কাজ করতে হবে।
কমিশন ইতোমধ্যেই পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্প্রতিক অস্থিরতার ঘটনা খতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটি গঠন করে বলেছে, কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রমে স্থবিরতা সৃষ্টি হলেও এই পরিস্থিতি দেশের সামগ্রিক উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থাকে ব্যাহত করছে। সঙ্কট নিরসনে ইউজিসি ছাত্র-শিক্ষক, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, স্থানীয় প্রশাসন ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের দায়িত্বশীল ভূমিকা প্রত্যাশা করে। অস্থিরতা নিরসন ও শিক্ষা কার্যক্রমে গতিশীলতা আনতে শিক্ষক সমাজ ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাদের স্ব স্ব দায়িত্বের কথা স্মরণে রেখে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করবে বলে কমিশন প্রত্যাশা করে। যে সময় দেশে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ২২ লাখের সীমা অতিক্রম করেছে, যা চীন, ভারত ও ইন্দোনেশিয়ার পরের স্থান অর্জন করে বিশ্বে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে, সে সময় এই অচলাবস্থা মোটেও কাম্য নয়।
জানা গেছে, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) নতুন শিক্ষাবর্ষে ভর্তির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে আগামী দুয়েকদিনের মধ্যেই। এ লক্ষ্যে আগামী সোমবার আদালতের নির্দেশের আলোকেই একাডেমিক কাউন্সিলের সভা ডেকে ভর্তি পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করা হতে পারে। গত ৭ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ভর্তির বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণে একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় সিদ্ধান্ত নেয়, ঈদ-উল-ফিতরের পরই বুয়েটে ভর্তির তারিখ নির্ধারণ করা হবে। ইতোমধ্যেই অধিকাংশ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করেছে। উচ্চশিক্ষায় ভর্তিতে স্বাভাবিক রীতি অনুযায়ী সাধারণত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আগে বুয়েটে ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু হয়। তবে চলতি শিক্ষাবর্ষে এর ব্যতিক্রম দেখা গেছে। শিক্ষক সমিতির রাজনীতির যাঁতাকলে পড়ে পিছিয়ে পড়েছে বুয়েট। শিক্ষক সমিতি এবার শিক্ষার্থীদের ভর্তি নয়, বরং উপাচার্য ও উপ-উপাচার্যের বিরুদ্ধে আন্দোলনে ব্যস্ত থাকায় ভর্তি প্রক্রিয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। সাধারণ শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা দ্রুত ভর্তি শুরুর তাগিদ দিলেও তাতে বাধা সৃষ্টি করেছে শিক্ষক সমিতির একটি গ্রুপ। তার পরেও শীঘ্রই শুরু করা হচ্ছে ভর্তি কার্যক্রম। এদিকে অচলাবস্থা থাকায় উদ্বেগ, উৎকণ্ঠায় আছেন ভর্তিচ্ছুরা। সেশনজটের আশঙ্কা করছেন শিক্ষার্থীদের মধ্যে কেউ কেউ। এর আগে উপায় না পেয়ে শিক্ষক নেতাদের আন্দোলনের বিরুদ্ধে আদালতে যান এক অভিভাবক, সুপ্রীমকোর্টের আইনজীবী ড. ইউনুস আলী আকন্দ।। আদালত আন্দোলন বন্ধের নির্দেশ দিলে প্রকাশ্য আন্দোলন বন্ধ করেছেন নেতারা, কিন্তু ভেতরে অচলাবস্থা সৃষ্টির অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন, এমনকি ভর্তি প্রক্রিয়া শুরুর বিষয়ে কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে সাধারণ শিক্ষকরা ইচ্ছুক হলেও নেতারা তাদের হুমকি দিচ্ছেন বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। তার পরেও আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধান করে শীঘ্রই কার্যক্রম শুরু করার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। এর আগে দেড় মাস ধরে বুয়েটের উপাচার্য ও উপ-উপাচার্যের পদত্যাগসহ বিভিন্ন দাবি নিয়ে লাগাতার ধর্মঘট চালিয়ে যাচ্ছিল শিক্ষক সমিতি। আন্দোলনের একপর্যায়ে রমজান ও ঈদের ছুটি কয়েকদিন এগিয়ে এনে গত ১০ জুলাই বুয়েট বন্ধ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। অভিযোগের বিষয়ে কোন তথ্যপ্রমাণ না থাকলেও সমিতি একগুঁয়ে অবস্থান নিলে আন্দোলনের একপর্যায়ে প্রগতিশীল শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সমিতির বিরুদ্ধে মাঠে নামে। সঙ্কট সমাধানে বিচার বিভাগীয় কমিশন গঠনে সকল মহলের দাবিও অগ্রাহ্য করে শিক্ষার্থীদের জড়ো করে আন্দোলন চালায় সমিতি। অভিযোগ ওঠে, আধিপত্য বিস্তার করতেই নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন হিযবুত তাহ্্রীর প্রভাবিত শিক্ষক সমিতি মিথ্যা আর বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়িয়ে আন্দোলন করছে। আলোচনার মাধ্যমে সঙ্কট সমাধানের উদ্যোগ নিলেও সমিতির বিরুদ্ধে তাতে বাধা সৃষ্টির অভিযোগ তোলেন খোদ শিক্ষামন্ত্রী।
একপর্যায়ে আন্দোলনকারীরা বিভক্ত হয়ে পড়লেও একটি বিশেষ গ্রুপ কর্মকা- চালিয়ে যেতে থাকলে অস্থিরতা নিরসন করে শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর জন্য আদালতে রিট করেন এক অভিভাবক ও আইনজীবী। এরপর চলমান আন্দোলন, ধর্মঘটের ওপর অন্তর্বর্তীকালীন নিষেধাজ্ঞা দেয় হাইকোর্ট। এছাড়া বুয়েটে চলমান আন্দোলন, ধর্মঘট কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না তা- জানতে চেয়ে রুলও জারি করেছে আদালত। রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন, ধর্মঘটের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি থাকবে বলে আদালতের নির্দেশে বলা হয়েছে। একইসঙ্গে বুয়েট ক্যাম্পাসের আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখতে পুলিশের আইজি ও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনারকে নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। অবস্থা বেগতিক দেখে আন্দোলন স্থগিত করেন সমিতির নেতারা। তবে এই মুহূর্তে বুয়েটের সার্বিক ঘটনা খতিয়ে দেখতে বিচার বিভাগীয় কমিশন গঠনের দাবি তুলেছেন সাধারণ শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তাঁরা বলছেন, কমিশন গঠন হলে সঠিক তথ্য বেরিয়ে আসবে। আর এই কমিশনকে ২০০৮ সাল থেকে সাম্প্রতিক আন্দোলনসহ সকল কার্যক্রম খতিয়ে দেখতে হবে। তবে সাবেক উপাচার্যের মেয়াদের শেষ পর্যায়ে রাতারাতি সমিতির কয়েক নেতার বিতর্কিত পদোন্নতির ঘটনার কারণে ২০০৮ সাল থেকে কার্যক্রম তদন্তের বিরোধিতা করছেন সুবিধাভোগী সেই নেতারা। এদিকে আজ ক্যাম্পাস খোলার পর আদালতের নির্দেশের আলোকে দ্রুত ভর্তি পরীক্ষাসহ সকল শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। উপাচার্য অধ্যাপক ড. এস এম নজরুল ইসলাম বলেছেন, আশা করছি রবিবার (আগামীকাল) আমরা আদালতের আদেশের কপি হাতে পাব। কপি হাতে পেলেই এক বা দুদিনের মধ্যে একাডেমিক কাউন্সিলের সভা ডেকে পরীক্ষার তারিখ নির্ধারণ করা হবে। উপাচার্য শিক্ষা ও শিক্ষার্থীদের স্বার্থে শিক্ষার সুষ্ঠু ও স্বাভাবিক পরিবেশ নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতা কামনা করেছেন।
গত ২ আগস্টের অচলাবস্থা ও ছুটি শেষে আজ খুলছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) আবাসিক হলগুলো। আগামীকাল থেকে শুরু হবে ক্লাস। উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ আনোয়ার হোসেনের সভাপতিত্বে শুক্রবার বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট কক্ষে অনুষ্ঠিত হল প্রশাসন, প্রক্টরিয়াল টিম ও পদস্থ কর্মকর্তাদের এক সমন্বয় সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। উপাচার্য অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার সুষ্ঠু ও স্বাভাবিক পরিস্থিতি নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতা কামনা করেছেন। এদিকে এ দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর দিকে বিশেষভাবে নজর রাখছে সরকারের একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা। অচলাবস্থার জন্য যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে তাদের ওপর বিষেশভাবে নজর রাখা হচ্ছে। নজরদারি বাড়ানো হয়েছে বুয়েট ও জাবির আন্দোলনের পেছনে থাকার দায়ে অভিযুক্ত জামায়াত, হিযবুত তাহ্্রীরের সঙ্গে সম্পৃক্ত কয়েক শিক্ষকের ওপর। ভর্তি পরীক্ষা ও ক্লাসসহ শিক্ষা কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবকসহ সংশ্লিষ্ট সকলের সর্বাত্মক সহযোগিতা কামনা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এ কে আজাদ চৌধুরী ঈদের ছুটি শেষে ক্লাসে ফেরা উপলক্ষে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেছেন, সকলের সহযোগিতায় শিক্ষায় আমাদের দেশের যে অগ্রগতি, উচ্চশিক্ষায়ও সেই অগ্রগতি অব্যাহত রাখতে সকলে মিলে কাজ করতে হবে।
কমিশন ইতোমধ্যেই পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্প্রতিক অস্থিরতার ঘটনা খতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটি গঠন করে বলেছে, কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রমে স্থবিরতা সৃষ্টি হলেও এই পরিস্থিতি দেশের সামগ্রিক উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থাকে ব্যাহত করছে। সঙ্কট নিরসনে ইউজিসি ছাত্র-শিক্ষক, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, স্থানীয় প্রশাসন ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের দায়িত্বশীল ভূমিকা প্রত্যাশা করে। অস্থিরতা নিরসন ও শিক্ষা কার্যক্রমে গতিশীলতা আনতে শিক্ষক সমাজ ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাদের স্ব স্ব দায়িত্বের কথা স্মরণে রেখে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করবে বলে কমিশন প্রত্যাশা করে। যে সময় দেশে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ২২ লাখের সীমা অতিক্রম করেছে, যা চীন, ভারত ও ইন্দোনেশিয়ার পরের স্থান অর্জন করে বিশ্বে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে, সে সময় এই অচলাবস্থা মোটেও কাম্য নয়।
No comments