ফের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাজধানীতে ফিরছে মানুষ, পথে পথে ভোগান্তি

ঈদ শেষে আবারও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাজধানীতে ফিরছে মানুষ। লঞ্চ ও ট্রেনের ছাদে কোথাও ঠাঁই নেই। বিলম্বে আসছে ট্রেন। রাস্তায় রাস্তায় ভোগান্তি তো আছেই। বাসে যাত্রী কম হলেও ঢাকা-ময়মনসিংহ রুটে শুক্রবার দিনভর ছিল অসহনীয় যানজট। এদিকে শুক্রবারও রাজধানী ছিল অনেকটা ফাঁকা।


বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে ছিল মানুষের উপচেপড়া ভিড়। পরিবহন ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, চলতি সপ্তাহে পুরোদমে শুরু হচ্ছে অফিস। তাই বাসে যাত্রী চাপ শুরু হবে আজ থেকেই।
মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে ট্রেনে আসছে মানুষ ॥ ঈদের আগেই রেলপথ মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন, ট্রেনের ছাদে কেউ উঠতে পারবে না। কিন্তু ঈদের এক সপ্তাহ আগে থেকেই মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে ট্রেনের ছাদ থেকে শুরু করে, জোড়া, ইঞ্জিন সবখানেই মানুষ আর মানুষ। ঈদের পর শুক্রবার থেকে ট্রেনের চিত্র একই রকম দেখা গেছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কমলাপুরে আসা বেশিরভাগ ট্রেনে আসনের বিপরীতে চার-পাঁচগুণ যাত্রী আসতে দেখা গেছে। রংপুর, জামালপুর, সিলেট, চট্টগ্রাম, খুলনা, দিনাজপুর, ময়মনসিংহ থেকে ঢাকায় আসা ট্রেনগুলোতে সবচেয়ে বেশি যাত্রী আসতে দেখা গেছে। সিলেট থেকে আসা যাত্রী রফিকুল ইসলাম জানালেন, টিকেট না পেয়ে দাঁড়িয়ে ঢাকায় এসেছেন তিনি। রবিবার থেকে অফিস খোলা। তাই কষ্ট সহ্য করা ছাড়া বিকল্প কিছু নেই।
ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়কে যানজট ॥ ঈদের পর ঢাকা-চট্টগ্রাম-মাওয়া-টাঙ্গাইল-পাটুরিয়া পয়েন্টে দীর্ঘ কোন যানজটের খবর পাওয়া না গেলেও শুক্রবার দিনভর ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে যাত্রীদের। শেরপুর, কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা জেলায় যাতায়াতের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট ময়মনসিংহের শম্ভুগঞ্জের ব্রহ্মপুত্র সেতু। তাছাড়া সেতুর এক পাশে বাস টার্মিনাল। যেখান থেকে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে দিনে দুই সহস্রাধিক বাস ছেড়ে যাচ্ছে। মূলত এই বাস টার্মিনালসহ মূল রাস্তায় একের পর এক পার্কিং, যাত্রী ওঠানোর জন্য বাসের অপেক্ষাসহ রাস্তা দখল করে ব্যবসা। সব মিলিয়ে শুক্রবার ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়। যানজটের কারণে এই পয়েন্টে কয়েক ঘণ্টা দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে ঢাকায় ফেরা মানুষকে। এছাড়া মহাসড়কে অবৈধ টার্মিনাল, বাজারসহ গাড়ি পার্কিংয়ের কারণে ভালুকা পয়েন্টে দেড় থেকে দুই ঘণ্টা যানজটের কারণে ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে।
পরিবহন চালকসহ যাত্রীরা জানিয়েছেন, ঢাকা থেকে বাড়ি ফেরার পথেও এমন চিত্র লক্ষ্য করা গেছে। ঈদের দুই দিন আগে থেকে এই পয়েন্টে দুই থেকে তিন ঘণ্টা যানজটের কারণে দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। ভালুকা এলাকায় হাইওয়ে পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশের তৎপরতা ছিল খুবই কম। তাছাড়া সবচেয়ে বড় কথা হলো-এই পয়েন্টে যানজট হওয়ার অতীত অভিজ্ঞতা খুবই কম।
নৌপথে ফিরছে সংগ্রামী মানুষ ॥ দক্ষিণাঞ্চলের প্রায় ৪০টির বেশি জেলার মানুষ যাতায়াতে নৌপথকেই বেছে নিচ্ছে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদ করতে গিয়েছিলেন তাঁরা। এবারের ঈদ যাত্রায় নৌ দুর্ঘটনার তেমন কোন খবর মেলেনি। যদিও অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহনের অভিযোগে কয়েকটি লঞ্চকে জরিমানা করেছিল ভ্রাম্যমাণ আদালত। বাস্তবতা হলো বাড়ি ফেরা মানুষগুলোকে ফের সংগ্রাম করেই কর্মস্থলে ফিরতে হচ্ছে। ঠাঁই নেই লঞ্চে। ডেক থেকে শুরু করে ছাদ, কার্নিস সবখানেই মানুষের ভিড়। প্রতিটি লঞ্চের মেঝে, বাম্পার, সিঁড়িতে বসেও মানুষ ঢাকা ফিরেন। লঞ্চগুলোতে ঠাসাঠাসি করে জীবনবাজি রেখে উঠেছেন যাত্রীরা। আর পদে পদে বিপদ, নানা প্রতারণা এবং অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ে জবরদস্তি করারও অভিযোগ করেন যাত্রীরা। বরগুনা, শরীয়তপুর, বরিশাল, মুন্সীগঞ্জ সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা লঞ্চে এমন চিত্র লক্ষ্য করা গেছে।
যাত্রীরা বেশি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ করলেও তা খ-ন করেছেন লঞ্চ সংশ্লিষ্টরা। তাদের যুক্তি বাড়তি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে না। সরকার নির্ধারিত ভাড়াই আদায় করছেন তারা। ঈদ ছাড়া অন্য সময়ে যাত্রী কম হওয়ায় নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে কম নেয়া হয়। তাই ঈদ উপলক্ষে সঠিক ভাড়া আদায়ের বিষয়টি অনেকে ভিন্ন চোখে দেখছেন। পারাবাত পরিবহনের সুপারভাইজার জামাল জানান, তারা ইচ্ছা করে অতিরিক্ত যাত্রী বহন করেন না। যাত্রীদের বারণ করলেও ঝুঁকি নিয়ে তারা ঢাকায় আসার চেষ্টা করেন। এ ক্ষেত্রে তাদের করণীয় কিছুই নেই বলে জানান তিনি।

No comments

Powered by Blogger.