আলহাজের স্বপ্ন

সংসারে নিত্য অভাব-অনটন লেগেই আছে। দুবেলা খাবার জোটে না। বাবা হাফিজুর মোল্লা ভ্যানচালক। ঝিয়ের কাজ করেন মা হামিদা বেগম। তবু এই দরিদ্র পরিবারের সন্তান আলহাজ মোল্লা লেখাপড়া করে বড় হওয়ার স্বপ্ন দেখেন। সংসারের খরচ চালাতে পত্রিকার হকারের কাজ করেন তিনি।


পাশাপাশি লেখাপড়া তো আছেই। চলতি বছরের এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ ৪ দশমিক ৫৫ পেয়েছেন তিনি। এখন স্নাতক (সম্মান) শ্রেণীতে ভর্তি হওয়ার চেষ্টা করছেন।
আলহাজদের বাড়ি নড়াইল সদর উপজেলার কলোড়া ইউনিয়নের আগদিয়া গ্রামে। তিন ভাই ও দুই বোনের মধ্যে তিনি সবার বড়। এ কারণেই লেখাপড়ার পাশাপাশি সংসারের হাল ধরতে হয়েছে তাঁকে। ছোটবেলা থেকেই আলহাজের পড়ালেখার প্রতি ছিল প্রচণ্ড ঝোঁক। শত কষ্টের মধ্যেও তিনি ২০১০ সালে এসএসসিতে বিছালী মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে জিপিএ ৪ দশমিক ৩৫ এবং ২০১২ সালে দক্ষিণ নড়াইলের শিমুলিয়া কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। এখন তিনি নড়াইল সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজে হিসাববিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হতে চান। কিন্তু সেখানে ভর্তি হয়ে লেখাপড়া চালিয়ে যেতে পারবেন কি না, সেই শঙ্কা তাঁর মনে।
স্থানীয় লোকজন জানান, অনেক পরিশ্রম ও অধ্যবসায়ের কারণে এ পর্যন্ত আসতে পেরেছেন আলহাজ। এখনো প্রতিদিন ভোরে ১৬ কিলোমিটার সাইকেল চালিয়ে বাড়ি থেকে তাঁকে পত্রিকা নেওয়ার জন্য শহরে আসতে হয়। সকাল ১০টার আগেই গ্রাহকদের হাতে আঞ্চলিক ও জাতীয় পত্রিকা তুলে দিয়ে বাড়ি ফেরেন।
শিমুলিয়া কলেজের অধ্যক্ষ সুকেশ সাহা বলেন, ‘আলহাজদের বাড়ি না গেলে বোঝা যাবে না ওরা কত গরিব। আমিই ওকে আমাদের কলেজে এনে ভর্তি করেছিলাম। কলেজে পড়তে ওর কোনো টাকা-পয়সা লাগেনি। আমরা সহযোগিতা করেছি।’
আলহাজ জানান, প্রতিদিন পত্রিকা বেচে যা আয় হয়, এ দিয়েই সংসারের খরচ মেটানোসহ নিজের ও ছোট ভাইয়ের লেখাপড়ার খরচ চালাতে হচ্ছে। তাঁর স্বপ্ন লেখাপড়া শিখে দুই ভাই সরকারি চাকরি করবেন এবং মা-বাবার দুঃখ ঘোচাবেন।

No comments

Powered by Blogger.