অবশেষে ব্রেইভিকের ২১ বছর কারাদণ্ড

গণহত্যার অভিযোগে অবশেষে ব্রেইভিককে ২১ বছরের কারাদ- দিল নরওয়ের সর্বোচ্চ আদালত। রায়ের সময় আদালত শুক্রবার তাঁকে মানসিকভাবে সুস্থ ঘোষণা করে। শান্তির দেশ নরওয়ের ইতিহাসে এটিই সর্বোচ্চ মেয়াদে সাজা।


আত্মস্বীকৃত খুনী এ্যান্ডার্স বেহরিং ব্রেইভিক গত বছর বোমা ফাটিয়ে ও গুলি করে ৭৭ ব্যক্তিকে হত্যা করেন। আদালত আত্মস্বীকৃত এই খুনী সম্পর্কে বলেছে, ঘোষিত সাজা শেষে ব্রেইভিককে বিপজ্জনক মনে করা হলে তাঁর সাজার মেয়াদ আরও বাড়তে পারে। খবর আলজাজিরা ও বিবিসি অনলাইনের।
ব্রেইভিকের আইনজীবী তাঁর মক্কেলকে মানসিকভাবে অসুস্থ হিসেবে চালিয়ে দেয়ার চেষ্টা করলেও আদালত কৌঁসুলিদের দাবি খারিজ করে দেয়। রাসায়নিক সার দিয়ে তৈরি বোমা ব্যবহার করে নরওয়ের রাজধানী অসলোয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কাছে হামলা চালান তিনি এবং এ ঘটনায় আটজন নিহত হয়। এরপর অসলো থেকে প্রায় ৯০ কিলোমিটার দূরে উটোইয়া দ্বীপে ক্ষমতাসীন দলের যুব শাখার রাজনৈতিক শিবিরে গুলি চালিয়ে আরও ৬৯ জনকে হত্যা করেন ব্রেইভিক। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর নরওয়েতে এটিই সবচেয়ে নৃশংস হত্যাযজ্ঞ। ব্রেইভিক এ হত্যাকাণ্ডকে নৃশংস বলে স্বীকার করলেও তা অপরাধ বলে মানতে অস্বীকৃতি জানান। নরওয়েকে ইসলামিকীকরণের হাত থেকে বাঁচাতে এ হামলা চালানোর প্রয়োজন ছিল বলে দাবি করেন তিনি। আদালত ব্রেইভিককে সন্ত্রাস এবং পূর্বপরিকল্পিত খুনের অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করে সর্বোচ্চ ২১ বছরের সাজা দিল।
এর আগে ব্রেইভিককে জেলে পাঠানো হবে, নাকি কোন মানসিক হাসপাতাল হবে তাঁর ঠিকানা এ নিয়ে গুঞ্জন চলছিল। কিন্তু অধিকাংশ হতাহত ব্যক্তির পরিবার বলেছে, কেবল একজন সুস্থ-সবল মানুষের পক্ষেই এ ধরনের নৃশংস হত্যাকাণ্ড ঘটানো সম্ভব। রায় ঘোষণার পর তাঁরা বলেন, বিরোধীরা হত্যাকাণ্ডের দায়দায়িত্ব থেকে ব্রেইভিককে বাঁচাতে চেয়েছিল। ওই দিন বেঁচে যাওয়া ব্যক্তি এবং নিহত ব্যক্তিদের আত্মীয়স্বজনের কেউ কেউ এ রায়কে স্বাগত জানিয়েছেন।
ব্রেইভিক বলেন, নরওয়েতে মুসলমানদের অভিবাসন নিয়ে তিনি ক্ষমতাসীন লেবার পার্টির সমর্থনকে টার্গেট করেছিলেন। তিনি নিজেকে ‘শিশু হত্যাকারী’ বলতে চান না। কেননা তিনি যুক্তি দেখিয়ে বলেন, তাঁর হাতে নিহত ব্যক্তিরা নরওয়েকে বহু সংস্কৃতির দেশে পরিণত করতে চেয়েছিল, যা কিনা নরওয়েজিয়ানদের বিশুদ্ধ রক্তের জন্য হুমকি স্বরূপ।
৩৩ বছর বয়সী ব্রেইভিক বার বার নিজেকে সুস্থ বলে দাবি করে আসছিলেন এবং সজ্ঞানে তিনি ওই হামলা করেছেন বলে স্বীকার করেছেন। তিনি চেয়েছিলেন, আদালত যেন তাঁকে প্রকৃতিস্থ মানুষ বিবেচনা করেই রায় দেন। এত মানুষ হত্যা করার পরও তাঁর কোন অনুশোচনা নেই। বরং তিনি বলেন, নরওয়েকে ইসলামীকরণ করার হাত থেকে রক্ষা করতে ওই হত্যাকাণ্ডের প্রয়োজন ছিল।
ব্রেইভিকের আইনজীবী গেইর লিপেস্টেড বৃহস্পতিবার বলেন, ‘ব্রেইভিক বলেছেন, আদালত যদি তাঁকে অপ্রকৃতিস্থ বলে রায় দেয়, তবে এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তিনি আপীল করবেন। আর যদি রায়ে তিনি সুস্থ-স্বাভাবিক হিসেবে বিবেচিত হন, তবে তিনি তা গ্রহণ করবেন।’
এর আগে আদালতের রায়ে ব্রেইভিক সুস্থ বলে বিবেচিত হলে নরওয়ের আইন অনুযায়ী তাঁর সর্বোচ্চ ২১ বছরের কারাদণ্ড হওয়ার কথা ছিল। আর আদালত তাঁকে মানসিকভাবে অসুস্থ বলে রায় দিলে চিকিৎসার জন্য তাঁকে মানসিক কোন হাসপাতালে পাঠানোর কথা ছিল। ব্রেইভিক বলেছিলেন, মানসিক চিকিৎসার চেয়ে মৃত্যু শ্রেয়।

No comments

Powered by Blogger.