সীসা ও চাতালের ধোঁয়ায়-

সীসা পোড়ানো, ওয়েল্ডিং ও চাতালের ধোঁয়া এবং ব্যাটারির বিষাক্ত বর্জ্য বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার রেলওয়ে জংশন ও পৌর শহর সান্তাহারে ভয়াবহ পরিবেশ বিপর্যয় ঘটছে। পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণে প্রতিদিন শত শত মানুষ নানা ধরনের রোগে আক্রান্ত হলেও দেখে শুনে মনে হয় যেন দেখার কেউ নেই।


ফলে পরিবেশ বিপর্যয়ের ভয়াবহতা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। সান্তাহার শহরের কিছু সচেতন মানুষ বিভিন্ন সংগঠনের মাধ্যমে পরিবেশ বিপর্যয়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলেও বগুড়াস্থ রাজশাহী বিভাগীয় পরিবেশ অধিদফতর ও সান্তাহার পৌরসভা কর্তৃপক্ষের তদারকির অভাবে ও অবহেলার কারণে এই শহরের জনস্বাস্থ্য হুমকির সম্মুখীন হয়ে পড়েছে। অন্যদিকে, জমির ফসলসহ গাছপালার জন্য সৃষ্টি করছে চরম বিপর্যয়।
জানা গেছে, বর্তমানে আদমদীঘি উপজেলা সদরসহ সান্তাহার শহরের চারদিকে ঘিরে অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠেছে প্রায় তিন শত ধানের চাতাল। এই চাতালগুলোর অধিকাংশের নির্মাণ পরিবেশ অধিদফতরের অনুমোদিত নয়। এসব চাতালের কেউ কেউ টাকার বিনিময়ে পরিবেশ সনদ সংগ্রহ করলেও বাস্তব চিত্র পুরোটায় উল্টো। এসব চাতালের বেশিরভাগের চিমনী ত্রুটিপূর্ণ হওয়ার কারণে অহরহ ঘটছে দুর্ঘটনা, মারা যাচ্ছে চাতাল শ্রমিকসহ পথচারী। এ ছাড়া ত্রুটিপূর্ণ চাতালগুলোর চিমনির উচ্চতা অনেক কম এবং ভাঙ্গা হওয়ার কারণে এগুলো থেকে নির্গত ধোঁয়া মানুষের চোখ ও দেহের জন্য চরম ক্ষতি বয়ে আনছে।
ভুক্তভোগী এলাকাবাসীর অভিযোগে জানা গেছে, সম্প্রতি শহরের জনবসতিপূর্ণ এলাকায় গড়ে উঠেছে বেশ কিছু মুরগির খামার। এলাকাবাসী জানিয়েছে, খামারের মুরগির বিষ্টার গন্ধে বাড়িঘরে বসবাস করা কঠিন হয়ে পড়েছে। সান্তাহার রেলওয়ে জংশনভিত্তিক শহর হওয়ার কারণে এই শহরে এখনো প্রায় ৭শত রেলওয়ের বাসা রয়েছে। এসব বাসায় এখনো রয়েছে ব্রিটিশ আমলে তৈরি করা খোলা পায়খানা (সার্ভিস ল্যাট্রিন)। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ এক সময় এ সব খোলা পায়খানার বর্জ নির্দিষ্ট স্থানে ফেলার ব্যবস্থা করত, কিন্তু বর্তমানে রেলওয়ের স্বাস্থ্য বিভাগ এগুলোর তদারকির দায়িত্বে না থাকার কারণে ওই সব শত শত বাসার পায়খানার বর্জ্য ফেলা হচ্ছে শহরের যেখানে সেখানে।
এমনকি মাছ চাষের পুকুরে দেয়া হচ্ছে মাছের খাদ্য হিসাবে। এর ফলে ঘটছে ভয়াবহ পরিবেশ বিপর্যয়। সান্তাহার হাসপাতাল কলোনির বাসিন্দারা জানান, এক শ্রেণীর মাছ ব্যবসায়ীরা সুইপারদের টাকা দিয়ে রাতের আঁধারে খোলা পায়খানার মল তাদের পুকুরে ঢেলে নেয়। কাগজে কলমে দেশের প্রায় শতভাগ মানুষ স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা ব্যবহার করার কথা বলা হলেও শুধুমাত্র সান্তাহার শহরে রয়েছে ওইসব শত শত খোলা পায়খানা।
এছাড়া শহরের আনাচে কানাচে রাস্তার ধারে গড়ে উঠেছে অসংখ্য ওয়েল্ডিং দোকান। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত এ দোকানগুলোতে রাস্তার পাশে প্রকাশে চলে ওয়েল্ডিং কাজ। এই কাজগুলো যাদের বন্ধ করার দায়িত্ব তারা কখনও এ ক্ষতিকারক বিষয়গুলো চোখ মেলেও দেখে না। এছাড়াও শহরের বিভিন্ন স্থানে রাস্তার পাশে প্রকাশ্যে পুরাতন বড় বড় ড্রাইসেল ব্যাটারি খোলা ও সংযোজনের কাজ করা ছাড়াও আবাসিক ও বাণিজ্যিক এলাকায় ব্যাটারির সীসা ঢালাইয়ের কাজ করা হয়। নতুন-পুরাতন ব্যাটারির এ্যাসিড ও বিষাক্ত বর্জ্য এবং পদার্থ পরিবেশকে নিয়ে যাচ্ছে এক ভয়াবহ পরিণতির দিকে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট দফতরের তদারকি এবং মানুষের সচেতনতার অভাবে পরিবেশ বিপর্যয়ের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার কাজ-কারবার দিন দিন বেড়ে চলেছে। এই কারণে মানুষ প্রতিদিন নানা ধরনের জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। আক্রান্তদের মধ্যে শিশু বৃদ্ধদের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য।
এ ব্যাপারে সান্তাহার পৌরসভার স্বাস্থ্য বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সাথে কথা বললে তিনি জানান পরিবেশ বিপর্যয় রোধে পৌরসভার নিজস্ব কোন বিভাগ নেই। এ কারণে এটি রোধকল্পে পৌরসভা কোন কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে না। এসব ব্যাপারে সাংবাদিকরা মাঝে-মধ্যে বগুড়াস্থ রাজশাহী বিভাগীয় পরিবেশ দফতরের কর্তাদের সাথে যোগাযোগ করলে; জনবল সঙ্কট এর দোহায় দেওয়ার পাশাপাশি লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানানো হয়ে থাকে।
-হারেজুজ্জামান হারেজ, সান্তাহার, বগুড়া

No comments

Powered by Blogger.