সংসদের অধঃপতন ও স্পিকার ভর্ত্সনা by মনজুর আহমদ
স্পিকার অ্যাডভোকেট আবদুল হামিদকে অভিনন্দন। একটা দারুণ কাজ করেছেন তিনি। আমাদের দেশ, আমাদের সমাজের দণ্ডমুণ্ডের কর্তা যারা, পার্লামেন্টারিয়ান হিসেবে যাদের স্থান সর্বোচ্চ পর্যায়ে, তাদের নিম্ন পর্যায়ের আচার-আচরণের বিরুদ্ধে তিনি তার ক্ষোভের বিস্ফোরণ ঘটিয়েছেন। আইন প্রণেতা হিসেবে যাদের মর্যাদা আকাশচুম্বী, সেসব মান্যগণ্য ব্যক্তির শালীনতাবর্জিত অরুচিকর সংসদীয় কার্যকলাপের বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফেটে পড়ে স্পিকার আবদুল হামিদ যে ভাষায় তাদের তিরস্কার করেছেন এমন ভাষা ব্যবহারে আর কোনো দৃষ্টান্ত পৃথিবীর আর কোনো পার্লামেন্টে আছে কিনা আমার জানা নেই।
এদিক দিয়ে তিনি বাংলাদেশ জাতীয় সংসদে একটি নতুন রেকর্ড স্থাপন করলেন। বক্তব্য দেয়ার সময় স্পিকার রাগে কেমন অগ্নিশর্মা হয়ে উঠেছিলেন, এই সুদূর নিউইয়র্কে বসেও টেলিভিশন পর্দায় আমরা তা স্পষ্টই অনুভব করতে পেরেছি। স্পিকারের বক্তব্য টেলিভিশন চ্যানেলে পুরোটা পাইনি, অন্তত আমি যেটা দেখেছি। যা পেয়েছি পত্রপত্রিকায়। মনে হলো টিভি চ্যানেল কর্তারা স্বতঃপ্রণোদিতভাবেই স্পিকারের বক্তব্য ‘এক্সপাঞ্জ’ করে দিয়েছেন। স্পিকার আবদুল হামিদ বলেছেন, ফাইটিং ও রেসলিং করতে হলে আন্ডারওয়্যার পরে গায়ে তেল মেখে পল্টন ময়দানে কিংবা সংসদ ভবন সংলগ্ন মাঠে চলে যান। তিনি বলেছেন, বক্তব্য শুনেই বোঝা যায় কে কোথা থেকে এসেছেন।
‘ভাষা প্রয়োগেই প্রমাণিত হয় কে কোথা থেকে এসেছেন’ পর্যন্ত বলেই স্পিকার থেমেছেন। আর এগোননি। এগোলে বোধহয় সংসদ সদস্যদের শিক্ষা-দীক্ষা, রুচি-সংস্কৃতি, বংশ পরিচয়ের কথাও এসে যেত। ধন্যবাদ স্পিকার আবদুল হামিদ, আপনি সংযমের পরিচয় দিয়েছেন এবং সীমার মধ্যে থেকেই এমন সদস্যদের যেমন শিক্ষা দেয়া দরকার তেমনটাই দিয়েছেন।
না, স্পিকার সংসদ সদস্যদের ভর্ত্সনা করেছেন, তাদের সংসদ ভবন ত্যাগ করে আন্ডারওয়্যার পরে গায়ে তেল মেখে লড়াইয়ের ময়দানে যেতে বলেছেন এতে আনন্দিত হওয়ার কিছু নেই। স্পিকারকে সংসদে এই ভাষায় কথা বলতে হয় এটা বাস্তবিকই দুঃখজনক। এ ধরনের কথা বলতে স্পিকারও নিশ্চয় গৌরব অনুভব করেননি। অনেক দিন তো তিনি সহ্য করেছেন। এভাবে সহ্য করার জন্য তিনি সমালোচিতও হয়েছেন। শেষ অবধি যে একান্ত নিরূপায় হয়েই তিনি এমন কটুকাটব্যের আশ্রয় নিয়েছেন তা অনুমান করতে অসুবিধা হয় না।
কিন্তু কেন? কেন একজন স্পিকারকে এমন ভাষায় কথা বলতে হয়? কেন সংসদ সদস্যদের এভাবে তিরস্কার করতে হয়? জবাব একটাই, সংসদ সদস্যদের আচার-আচরণ। সংসদে তাদের কার্যকলাপ। পার্লামেন্টারিয়ান হিসেবে তাদের পারফরমেন্স। দুঃখ এখানেই। এখনকার সংসদ সদস্যদের যে পারফরমেন্স তা পার্লামেন্টকে অধঃপতনের দিকে নিয়ে যাচ্ছে, সংসদকে কলুষিত করছে। আমি ‘এখনকার সংসদ’ কথাটা উল্লেখ করলাম তুলনামূলক বিশ্লেষণের প্রয়োজনে। বাহাত্তর থেকে এ পর্যন্ত বাংলাদেশ জাতীয় সংসদগুলো পর্যালোচনা করলে সংসদের ক্রমাবনতির চিত্রই ফুটে ওঠে।
বাহাত্তরের গণপরিষদ, যেখানে বাংলাদেশের সংবিধান অনুমোদিত হয়েছিল, এরপর তিয়াত্তরের সংসদ, এখনও চোখের সামনে ভাসে সেদিনের সংসদের দৃশ্যগুলো। একদিকে সংসদ নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, অপরদিকে বিরোধী নেতা আতাউর রহমান খান। তিয়াত্তরের সংসদে কোনো বিরোধী দল ছিল না। মাত্র সাতটি আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের পরাজিত করে নির্বাচিত হয়ে এসেছিলেন সাতজন সদস্য। তারাই ছিলেন সরকারের বিরোধীপক্ষ। মাত্র সাতজন, কিন্তু তারাই উত্তাপ সঞ্চার করে রাখতেন সংসদে। সে সংসদে আতাউর রহমান খানের একটি বক্তৃতা ব্যাপক প্রশংসা পেয়েছিল। পত্রপত্রিকায় সে বক্তৃতার প্রায় পুরো বিবরণ ছাপা হয়েছিল।
জাতীয় সংসদের মানগত অবনতির ফিরিস্তি দীর্ঘ করার কোনো প্রয়োজন আছে বলে মনে হয় না। সার্বিক পরিস্থিতিতে একটি বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দেয়ার ব্যাপারে নিশ্চয় কেউ দ্বিমত পোষণ করবেন না, সংসদের মান এবং সংসদ সদস্যদের মান উন্নয়নে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা একান্ত জরুরি।
তবে শুধু সংসদের সংস্কার করাই যথেষ্ট নয়। আমাদের রাজনীতিতে এখন যে দূষিত বাতাস বইছে তা থেকেও দেশকে মুক্ত করা প্রয়োজন। এই দূষিত রাজনীতি আমাদের শেখাচ্ছে পারস্পরিক অশ্রদ্ধা, ঘৃণা। শেখাচ্ছে জাতীয় নেতাদের বিরুদ্ধে বিষোদগারে দেশকে বিষিয়ে তোলা। এরই প্রতিফলন ঘটছে সংসদে।
ভালো লেগেছে স্পিকারের এই ভূমিকার প্রতি সম্মান জানিয়েছেন সরকার ও বিরোধী দলের দুই প্রবীণ নেতা। বিরোধী দলের ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ ও সরকারি দলের তোফায়েল আহমদ। নিঃসন্দেহে অনেক হতাশার মধ্যে এরা আমাদের আশার আলো দেখিয়েছেন। তাদের প্রতি আহ্বান থাকবে, এখানেই আপনাদের দায়িত্ব শেষ করবেন না। আপনারা উদ্যোগ নিন আমাদের নতুন প্রজন্ম যেন শ্রদ্ধাবোধের দুর্ভিক্ষের কবল থেকে মুক্তি পায়। যেন তারা বেড়ে উঠতে পারে আমাদের জাতীয় নেতাদের প্রতি শ্রদ্ধার মনোভাব নিয়ে। স্পিকার আবদুল হামিদ কি পারেন না তার পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে একটি কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে?
‘ভাষা প্রয়োগেই প্রমাণিত হয় কে কোথা থেকে এসেছেন’ পর্যন্ত বলেই স্পিকার থেমেছেন। আর এগোননি। এগোলে বোধহয় সংসদ সদস্যদের শিক্ষা-দীক্ষা, রুচি-সংস্কৃতি, বংশ পরিচয়ের কথাও এসে যেত। ধন্যবাদ স্পিকার আবদুল হামিদ, আপনি সংযমের পরিচয় দিয়েছেন এবং সীমার মধ্যে থেকেই এমন সদস্যদের যেমন শিক্ষা দেয়া দরকার তেমনটাই দিয়েছেন।
না, স্পিকার সংসদ সদস্যদের ভর্ত্সনা করেছেন, তাদের সংসদ ভবন ত্যাগ করে আন্ডারওয়্যার পরে গায়ে তেল মেখে লড়াইয়ের ময়দানে যেতে বলেছেন এতে আনন্দিত হওয়ার কিছু নেই। স্পিকারকে সংসদে এই ভাষায় কথা বলতে হয় এটা বাস্তবিকই দুঃখজনক। এ ধরনের কথা বলতে স্পিকারও নিশ্চয় গৌরব অনুভব করেননি। অনেক দিন তো তিনি সহ্য করেছেন। এভাবে সহ্য করার জন্য তিনি সমালোচিতও হয়েছেন। শেষ অবধি যে একান্ত নিরূপায় হয়েই তিনি এমন কটুকাটব্যের আশ্রয় নিয়েছেন তা অনুমান করতে অসুবিধা হয় না।
কিন্তু কেন? কেন একজন স্পিকারকে এমন ভাষায় কথা বলতে হয়? কেন সংসদ সদস্যদের এভাবে তিরস্কার করতে হয়? জবাব একটাই, সংসদ সদস্যদের আচার-আচরণ। সংসদে তাদের কার্যকলাপ। পার্লামেন্টারিয়ান হিসেবে তাদের পারফরমেন্স। দুঃখ এখানেই। এখনকার সংসদ সদস্যদের যে পারফরমেন্স তা পার্লামেন্টকে অধঃপতনের দিকে নিয়ে যাচ্ছে, সংসদকে কলুষিত করছে। আমি ‘এখনকার সংসদ’ কথাটা উল্লেখ করলাম তুলনামূলক বিশ্লেষণের প্রয়োজনে। বাহাত্তর থেকে এ পর্যন্ত বাংলাদেশ জাতীয় সংসদগুলো পর্যালোচনা করলে সংসদের ক্রমাবনতির চিত্রই ফুটে ওঠে।
বাহাত্তরের গণপরিষদ, যেখানে বাংলাদেশের সংবিধান অনুমোদিত হয়েছিল, এরপর তিয়াত্তরের সংসদ, এখনও চোখের সামনে ভাসে সেদিনের সংসদের দৃশ্যগুলো। একদিকে সংসদ নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, অপরদিকে বিরোধী নেতা আতাউর রহমান খান। তিয়াত্তরের সংসদে কোনো বিরোধী দল ছিল না। মাত্র সাতটি আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের পরাজিত করে নির্বাচিত হয়ে এসেছিলেন সাতজন সদস্য। তারাই ছিলেন সরকারের বিরোধীপক্ষ। মাত্র সাতজন, কিন্তু তারাই উত্তাপ সঞ্চার করে রাখতেন সংসদে। সে সংসদে আতাউর রহমান খানের একটি বক্তৃতা ব্যাপক প্রশংসা পেয়েছিল। পত্রপত্রিকায় সে বক্তৃতার প্রায় পুরো বিবরণ ছাপা হয়েছিল।
জাতীয় সংসদের মানগত অবনতির ফিরিস্তি দীর্ঘ করার কোনো প্রয়োজন আছে বলে মনে হয় না। সার্বিক পরিস্থিতিতে একটি বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দেয়ার ব্যাপারে নিশ্চয় কেউ দ্বিমত পোষণ করবেন না, সংসদের মান এবং সংসদ সদস্যদের মান উন্নয়নে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা একান্ত জরুরি।
তবে শুধু সংসদের সংস্কার করাই যথেষ্ট নয়। আমাদের রাজনীতিতে এখন যে দূষিত বাতাস বইছে তা থেকেও দেশকে মুক্ত করা প্রয়োজন। এই দূষিত রাজনীতি আমাদের শেখাচ্ছে পারস্পরিক অশ্রদ্ধা, ঘৃণা। শেখাচ্ছে জাতীয় নেতাদের বিরুদ্ধে বিষোদগারে দেশকে বিষিয়ে তোলা। এরই প্রতিফলন ঘটছে সংসদে।
ভালো লেগেছে স্পিকারের এই ভূমিকার প্রতি সম্মান জানিয়েছেন সরকার ও বিরোধী দলের দুই প্রবীণ নেতা। বিরোধী দলের ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ ও সরকারি দলের তোফায়েল আহমদ। নিঃসন্দেহে অনেক হতাশার মধ্যে এরা আমাদের আশার আলো দেখিয়েছেন। তাদের প্রতি আহ্বান থাকবে, এখানেই আপনাদের দায়িত্ব শেষ করবেন না। আপনারা উদ্যোগ নিন আমাদের নতুন প্রজন্ম যেন শ্রদ্ধাবোধের দুর্ভিক্ষের কবল থেকে মুক্তি পায়। যেন তারা বেড়ে উঠতে পারে আমাদের জাতীয় নেতাদের প্রতি শ্রদ্ধার মনোভাব নিয়ে। স্পিকার আবদুল হামিদ কি পারেন না তার পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে একটি কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে?
No comments