সরকার ৩৩ নীতিমালা ও কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নে এগোচ্ছে- সাড়ে তিন বছরেও প্রণীত হয়নি জাতীয় শিক্ষানীতি, নারী উন্নয়ন ও স্বাস্থ্যনীতি by তৌহিদুর রহমান

মহাজোট সরকারের সাড়ে তিন বছরে ৩৩টি নীতিমালা, কর্মকৌশল ও কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়েছে। ৩৩টি নীতিমালা ও কর্মকৌশলের মধ্যে ৩০টির প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। ইতোমধ্যে এসব নীতিমালা ও কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নের উদ্যোগও নেয়া হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।


সূত্রমতে, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পরে প্রথমেই জাতীয় হজনীতি, ২০০৯ প্রণয়ন করা হয়। হজ পালনে স্ষ্ঠুু ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে জাতীয় হজনীতি তৈরির উদ্যোগ নেয়। তবে জাতীয় হজনীতি প্রণয়নের এক বছর পরে ২০১০ সালে পুনরায় পাঁচ বছর মেয়াদী আরো একটি হজনীতি প্রণয়ন করে। এই হজনীতির নাম দেয়া হয় ‘জাতীয় হজনীতি, ১৪৩১-৩৫ হিজরী (২০১০-২০১৪ খ্রিঃ)’। সাবেক তথ্য, প্রযুক্তি ও যোগাযোগ মন্ত্রণালয় থেকে ২০০৯ সালে জাতীয় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়। একইভাবে সরকারী জলমহাল ব্যবস্থাপনা নীতিমালা-২০০৯, জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ড নীতিমালা-২০০৯, ক্লাইমেট চেঞ্জ স্ট্র্যাটেজি ও অ্যাকশন প্ল্যান-২০০৯ প্রণয়ন করা হয়। সরকারী জলমহাল ব্যবস্থাপনায় সুষ্ঠু নীতিমালা না থাকায় সরকার রাজস্ব হারাচ্ছিল। সে কারণে জলমহাল নীতিমালা তৈরি করা হয়। জলবায়ু ট্রাস্টি ফান্ড গঠন করার পর এটি পরিচালনার লক্ষ্যে বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয় থেকে এ বিষয়ে নীতিমালা তৈরি করে। একইভাবে জলবায়ু পরিবর্তন ঝুঁকি মোকাবেলায় কর্মপরিকল্পনা তৈরি করা হয়।
বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে সরকার থেকে জাতীয় সার্ভিস কর্মসূচী নেয়া হয়। তৈরি করা হয় ন্যাশনাল সার্ভিস নীতিমালা-২০০৯। শিশুশ্রম নিরসনের লক্ষ্যে জাতীয় শিশুশ্রম নিরসন নীতি-২০১০ প্রণয়ন করা হয়। বিদ্যুত খাতে বেসরকারী অংশগ্রহণ বৃদ্ধির লক্ষ্যে পূর্বের নীতিমালার পরিবর্তন করা হয়। সে কারণে বিদ্যুত খাতে বেসরকারী অংশগ্রহণ বৃদ্ধির নীতিমালা-২০০৮ সংশোধন করা হয়। অপরদিকে সরকারী-বেসরকারী অংশীদারিত্ব বাড়াতে পলিসি এ্যান্ড স্ট্র্যাটেজি ফর পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি)-২০১০ প্রণয়ন করা হয়। প্রশাসনে গতি আনার লক্ষ্যে ইলেক্ট্রনিক গবর্নমেন্ট প্রকিউরমেন্ট (ই-জিপি) গাইডলাইনস ও দারিদ্র্য বিমোচনের লক্ষ্যে দ্বিতীয় দারিদ্র্য নিরসন কৌশলপত্র প্রণয়ন করা হয়।
প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থাকে আধুনিকীকরণের লক্ষ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০ প্রণয়ন করা হয়। পর্যটন খাত বিকাশে প্রণয়ন করা হয় জাতীয় পর্যটন নীতিমালা, ২০১০। এছাড়া জাতীয় রাবারনীতি-২০১০, জাতীয় শিল্পনীতি-২০১০, বন্যপ্রাণী দ্বারা আক্রান্ত মানুষের জানমালের ক্ষতিপূরণের নীতিমালা-২০১০, জাতীয় ট্যাক্স কার্ড নীতিমালা-২০১০, বন রক্ষার্থে ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ নীতিমালা-২০১১ প্রণয়ন করা হয়।
নারীদের রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধির লক্ষ্যে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি-২০১১ প্রণয়ন করা হয়। এছাড়া শিশু অধিকার রক্ষায় জাতীয় শিশুনীতি-২০১১ তৈরি করে সরকার। অপরদিকে জাতীয় লবণনীতি-২০১১, জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি নীতি-২০১১, সমবায় গোচারণভূমি নীতি-২০১১ প্রণয়ন করে সরকার। তবে জাতীয় রফতানি ট্রফি নীতিমালা সংশোধন করা হয়। প্রণয়ন করা হয় জাতীয় ট্যাক্সকার্ড নীতিমালা-২০১০। এছাড়া বিদেশে অবৈধ ভিওআইপি বন্ধের লক্ষ্যে ইন্টারন্যাশনাল লং ডিসট্যান্স টেলিকমিউনিকেশন্স সার্ভিস (আইএলডিটিএস) পলিসি- ২০১০ প্রণয়ন করা হয়। অপরদিকে জাতীয় স্বাস্থ্যনীতি-২০১১, পাটনীতি-২০১১ ও ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ, রক্ষণাবেক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা নীতিমালা-২০১১ প্রণয়ন করা হয়। চট্টগ্রামের সীতাকু-ে জাহাজ ভাঙ্গা শিল্পের অব্যবস্থাপনা দীর্ঘদিন ধরে চললেও এ শিল্পের কোনো নীতিমালা ছিল না। বিভিন্ন বেসরকারী সংস্থা এ বিষয়ে নীতিমালা তৈরির দাবি জানিয়ে আসছিল। তবে দীর্ঘদিন পরে হলেও শিপ ব্রেকিং ও রিসাইক্লিং নীতিমালা-২০১১ প্রণয়ন করা হয়।
চলতি বছর তিনটি নীতিমালা অনুমোদন করে মন্ত্রিসভা। এই তিন নীতিমালা হলো-জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন নীতি-২০১২, জাতীয় শ্রমনীতি ২০১২ ও মোটরযানের এক্সেল লোড নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র পরিচালনা সংক্রান্ত নীতিমালা ২০১২। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন নীতি, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় থেকে জাতীয় শ্রমনীতি ও যোগাযোগ মন্ত্রণালয় থেকে মোটরযান এক্সেল লোড নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র পরিচালনা নীতি উত্থাপিত হয়।
মহাজোট সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর গত ৩০ জুন পর্যন্ত এই ৩৩টি নীতিমালা প্রণীত হয়। তবে সরকারের এই সাড়ে তিন বছরে তিনটি নীতিমালা প্রণয়নে ব্যাপক আলোচনায় আসে। এই তিনটি নীতিমালা হলো জাতীয় শিক্ষানীতি, জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি ও জাতীয় স্বাস্থ্যনীতি। জাতীয় শিক্ষানীতি ও নারীনীতি প্রণয়নের সময় সরকারবিরোধী বিভিন্ন পক্ষ রাজপথে আন্দোলনে নামে। তবে সে আন্দোলন বেশিদিন টেকেনি। অপরদিকে জাতীয় স্বাস্থ্যনীতি প্রণয়নের ক্ষেত্রে কোন প্রকার আন্দোলন গড়ে না উঠলেও বিভিন্ন বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থার পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছিল স্বাস্থ্যনীতিতে যেন সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্য অধিকার নিশ্চিত করা হয়। যে কারণে স্বাস্থ্যনীতি প্রণয়নের সময় অনেকেরই এ বিষয়ে দৃষ্টি ছিল।

No comments

Powered by Blogger.