এবার পুলিশের ফতোয়াবাজি by মাহফুজ উল্লাহ
কখনও কখনও বাংলাদেশ পুলিশের কোনো কোনো সদস্যের আচার-আচরণে পুলিশ বিভাগের মর্যাদা ক্ষুণ্ন হয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর সদস্য হিসেবে এই আচরণ সরকারকে অস্বস্তিতে ফেলে কিনা জানা নেই। কিন্তু সাধারণ মানুষের অস্বস্তি ও দুর্ভোগের শেষ থাকে না। মানুষ প্রতিকারও পায় না এসব সমস্যার। আবার পুলিশ কখনও কখনও এমন কাজও করে যা তাদের দায়িত্ব ও কর্তব্যের মধ্যে পড়ে না।
এমনই একটি ঘটনা ঘটেছে সম্প্রতি রংপুরে। ২ মার্চ ২০১০ সংবাদপত্রে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) বোরকা ছাড়া চলাফেরা করায় গতকাল রংপুর শহরের চিড়িয়াখানা ও সুরভী উদ্যান থেকে উনিশজন যুবক-যুবতীকে আটক করেছে। ডিবি পুলিশের দাবি ইসলাম পরিপন্থী ও ধর্মীয় আইন বিরোধী কাজ করায় এবং পর্দানশীন অবস্থায় চলাফেরা না করার কারণে তাদের আটক করা হয়। ডিবি পুলিশের এ গ্রেফতার কর্মকাণ্ডে শহরের অনেকের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। খোদ পুলিশ বিভাগেই চলছে তোলপাড়। এদিকে ঘটনাটি জানেন না বলে সাংবাদিকদের জানান রংপুরের জেলা প্রশাসক বিএম এনামুল হক। তবে তিনি মনে করেন, এ ধরনের ঘটনা ফতোয়াবাজির শামিল এবং ডিবি পুলিশের এখতিয়ার বহির্ভূত কাজ। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, রংপুর ডিবি পুলিশের কর্মকর্তা গোলাম মিনহাজের নেতৃত্বে গতকাল উনিশজন যুবক-যুবতীকে আটকের পর হেনস্থা করা হয়। খবর পেয়ে আটককৃতদের অভিভাবক ও আইনজীবীরা ছুটে যান থানায়। পরে অভিভাবকদের কাছ থেকে মুচলেকা নিয়ে তাদের ছেড়ে দেয়া হয়। তাদের মধ্যে রংপুরের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অনার্স-মাস্টার্স শ্রেণীর ছাত্র-ছাত্রী, স্বামী-স্ত্রী, সহপাঠী এবং আপন ভাই-বোনও রয়েছেন। এ বিষয়ে গোলাম মিনহাজ বলেন, বিনোদন স্পটগুলোতে ছেলেমেয়েদের বেপরোয়া এবং আপত্তিকর চলাফেরায় শহরের সামাজিক পরিবেশ বিঘ্নিত হচ্ছে। গত কয়েকদিন ধরে বিভিন্ন স্থানে ডিবি পুলিশের পক্ষ থেকে ছেলেমেয়েদের একসঙ্গে আপত্তিকর অবস্থায় চলাফেরা না করা এবং মেয়েদের বোরকা পরে চলাফেরার নির্দেশ দিলেও অনেকেই তা মানছে না বলে জানান এই কর্মকর্তা। এ বিষয়ে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নূরে আলম বলেন, আমলযোগ্য অপরাধ না থাকায় আটকদের ছেড়ে দেয়া হয়েছে। কয়েকজনকে আটক করার বিষয়টি শুনেছেন উল্লেখ করে পুলিশের সুপার সালেহ আহমেদ তানভীর বলেন, খোঁজ-খবর নিয়ে এ ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
কি ঔদ্ধত্য আর দুঃসাহস! সমাজে পর্দা প্রয়োগ করার অধিকার পুলিশকে কেউ দেয়নি এবং প্রত্যেক নারীকে বোরকা পরে ঘরের বাইরে চলাফেরা করতে হবে এমন কোনো আইনও দেশে এখনও জারি হয়নি। শরিয়া আইন জারি হওয়ার আগেই পুলিশ নিজেই ধর্মীয় আচার-আচরণের দোহাই দিয়ে সাধারণ মানুষকে হয়রানি করার কাজে লিপ্ত হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে এমন এক জেলায় যার নাম এ দেশে নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়ার সঙ্গে জড়িত। এই জেলা থেকে অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তি অতীতে দেশের রাজনীতিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছেন। এদেরই কয়েকজন হচ্ছেন প্রধানমন্ত্রীর স্বামী মরহুম ড. ওয়াজেদ মিয়া, সাবেক মন্ত্রী মরহুম মতিউর রহমান ও মরহুম মশিউর রহমান। আলোকিত রংপুরের আরেকটি গৌরব হচ্ছে এই অঞ্চল থেকে একশ’ পঞ্চাশ বছরেরও বেশি সময়ের আগে প্রকাশিত হয়েছিল ‘রংপুর বার্তা’ নামের সংবাদপত্র। বর্তমানেও এ জেলার দু’জন বিশিষ্ট মানুষ সাবেক রাষ্ট্রপতি জেনারেল এরশাদ এবং প্রধানমন্ত্রীর পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় স্ব স্ব ক্ষেত্রে জাতীয় জীবনে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। সেই রংপুরেই ঘটল এ ঘটনা। লজ্জায় এবং অপমানে রংপুরের মানুষদের ধুলায় মিশে যাওয়ার কথা। এর চেয়েও যেটা গুরুত্বপূর্ণ তা হচ্ছে, এমন একটি ঘটনা দেশের নারী সংগঠন ও মানবাধিকার সংগঠনগুলোর দৃষ্টি আকর্ষণ করেনি। সমালোচনার দৃষ্টি দিয়ে বললে বলতে হয়, তারা তো নারী দিবসের শতবর্ষ উদযাপনের ঢাকঢোল বাজানো নিয়েই ব্যস্ত, এমন একটি ঘটনা নিয়ে মাথা ঘামানোর সময় তাদের কোথায়?
বাংলাদেশের নারী যুগ যুগ ধরে বহু রকম নিয়ন্ত্রণের অধীন। সমাজ, পরিবার, মূল্যবোধ ও ধর্মীয় অনুশাসন তাদের জীবনকে নিয়ন্ত্রণ করে। সম্প্রতি এই নিয়ন্ত্রণের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে পুলিশি নিয়ন্ত্রণ। এই নিয়ন্ত্রণ নারীর জীবনে অগ্রগতির পথে নতুন প্রতিবন্ধক হিসেবে দেখা দেবে।
পুলিশ বিভাগ বা বিশেষ করে রংপুরের পুলিশ প্রশাসন তাদের কৃতকর্মের সাফাই গাইতে গিয়ে একধাপ এগিয়ে গেছেন। ৪ঠা মার্চ ২০১০ একটি দৈনিকে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, ‘বুধবার দুপুরে রংপুর পুলিশ অফিসে দেয়া প্রেস নোটের বক্তব্য অনুযায়ী সুরভী উদ্যান ও চিড়িয়াখানা থেকে উনিশজন নারী-পুরুষকে আটকের বিষয়টি স্বীকার করা হয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে পুলিশ সুপার সাহেল মোহাম্মদ তানভীর তার বক্তব্যে সাংবাদিকদের বলেন, পর্দানশীন অবস্থায় ও বোরকা পরে চলাচলের বিষয়টি নিয়ে জেলা পুলিশ কোনো রকমের আদেশ জারি করেনি। কোনো ব্যক্তি বা বিশেষ পুলিশ কর্মকর্তা এ রকম আদেশ জারি করলে তা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে। ওই প্রেস নোটে আরও বলা হয়, পুলিশের ওই গ্রেফতার অভিযানের জন্য অনেক সুশীল ও ভদ্র সমাজ পুলিশের প্রশংসা করেছে এবং এ ধরনের অভিযান অব্যাহত রেখে উদ্যানের পরিবেশ সর্বসাধারণের জন্য সুগম করার অনুরোধ জানিয়েছে। সংবাদ মাধ্যমে এ ধরনের সংবাদ প্রকাশিত হলে পুলিশি কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হবে। তেমনি বিপথগামী ও উচ্ছৃঙ্খল তরুণ-তরুণী খোলা জায়গায় অনৈতিক কার্যক্রমে লিপ্ত থাকাকে উত্সাহিত করবে।’ চমত্কার যুক্তি ! এ দেশে পুলিশকে এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যাতে অপরাধ করেও সাফাই গাইতে কোনো অসুবিধা হয় না। জানতে ইচ্ছে করে রংপুরের কোন সুশীল ও ভদ্র সমাজ পুলিশের এই অন্যায় কর্মকে সমর্থন করেছে? পুলিশের দৃষ্টিতে অনৈতিক কাজ কোনটি? যারা গ্রেফতার হয়েছে তারা নিশ্চয়ই নগ্ন হয়ে ঘুরে বেড়ায়নি। রংপুরের পুলিশ সুপার একদিকে বলছেন, এ রকম গ্রেফতারের নির্দেশ দেয়া হয়নি। আবার অন্যদিকে বলছেন, তার অধীনস্থ পুলিশ যা করেছে ভালোই করেছে। যারা গ্রেফতার হয়েছিলেন তারা কি অবস্থায় ছিলেন সেটা অনুমান করতে কষ্ট হয় না। কিন্তু এটুকু স্বাধীনতা সমাজ গ্রহণ করেছে। তা না হলে তো কোনো স্বামী বোরকাবিহীন কোনো স্ত্রীকে হুড ফেলা রিকশায় নিয়ে ঘুরে বেড়াতে পারবেন না। এতই যদি নৈতিকতা শিক্ষা দেয়ার সাহস পুলিশের থাকে তাহলে অনুরোধ থাকল ধানমন্ডি লেকের আশপাশে অভিযান চালানোর। সেই ক্ষমতা বা দুঃসাহস পুলিশের নেই। অথচ ধানমন্ডি লেকের আশপাশে বিকালবেলা বসে প্রাণের মেলা। পুলিশের যদি সাহস থেকেই থাকে তাহলে পহেলা বৈশাখে কিংবা ঈদের দিনে ঘুরে বেড়ানো ছেলেমেয়ে, নারী-পুরুষ কাউকে গ্রেফতার করে দেখুক না। তখন যে প্রতিবাদ হবে তাতে পুলিশের বড় কর্তাকেও পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খেতে হবে। একই সঙ্গে অনুরোধ থাকবে পুলিশ নিজে যেন নৈতিকতার চর্চা করে এবং দুর্নীতিগ্রস্ত— এই অভিযোগ থেকে দায় মুক্ত হয়।
ঘটনাটি হয়তো খুব ছোট। কেননা অধিকাংশ পত্রপত্রিকা তা এড়িয়ে গেছে। এমনকি হাইকোর্টও এ ব্যাপারে অনেক নমনীয় ভূমিকা নিয়েছেন। এ ঘটনায় হাইকোর্ট আদেশ দিয়েছেন বোরকা না পরার কারণে কাউকে গ্রেফতার বা হয়রানি করা যাবে না। কিন্তু ঘটনার নায়ক ডিবি পুলিশ কর্মকর্তা মিনহাজকে এক মাসের সময় দিয়ে ৪ এপ্রিল আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। এই সময়ের মধ্যে দায় এড়ানোর জন্য পুলিশ যদি কোনো সাক্ষী তৈরি করে ফেলে তাহলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।
পুলিশের কেউ কেউ অপরাধ বা অন্যায় কাজের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। এটা হয়তো অস্বাভাবিক নয়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে এটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে তিনি তোতা পাখির বুলি আওড়াবেন। আজকের এ লেখার উদ্দেশ্য ভিন্ন। জানতে ইচ্ছে করে, এ ঘটনাটি নিয়ে নারী সংগঠন ও মানবাধিকার সংগঠনগুলো কেন চুপ করে আছে? তারা কি মনে করেন এ ব্যাপারে তাদের কোনো দায় নেই? না তারা নীরবতার মধ্য দিয়ে নতুন ফতোয়ার রাস্তা উন্মুক্ত করে দিচ্ছেন? এমনও হতে পারে তারা সরকারকে বিব্রত করতে চান না। দ্বিতীয় প্রশ্নটি বিভিন্নভাবে সমাজে প্রভাবশালীদের কাছে—তাদের পরিবারে এ ঘটনা ঘটলে তারা কি করতেন?
কি ঔদ্ধত্য আর দুঃসাহস! সমাজে পর্দা প্রয়োগ করার অধিকার পুলিশকে কেউ দেয়নি এবং প্রত্যেক নারীকে বোরকা পরে ঘরের বাইরে চলাফেরা করতে হবে এমন কোনো আইনও দেশে এখনও জারি হয়নি। শরিয়া আইন জারি হওয়ার আগেই পুলিশ নিজেই ধর্মীয় আচার-আচরণের দোহাই দিয়ে সাধারণ মানুষকে হয়রানি করার কাজে লিপ্ত হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে এমন এক জেলায় যার নাম এ দেশে নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়ার সঙ্গে জড়িত। এই জেলা থেকে অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তি অতীতে দেশের রাজনীতিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছেন। এদেরই কয়েকজন হচ্ছেন প্রধানমন্ত্রীর স্বামী মরহুম ড. ওয়াজেদ মিয়া, সাবেক মন্ত্রী মরহুম মতিউর রহমান ও মরহুম মশিউর রহমান। আলোকিত রংপুরের আরেকটি গৌরব হচ্ছে এই অঞ্চল থেকে একশ’ পঞ্চাশ বছরেরও বেশি সময়ের আগে প্রকাশিত হয়েছিল ‘রংপুর বার্তা’ নামের সংবাদপত্র। বর্তমানেও এ জেলার দু’জন বিশিষ্ট মানুষ সাবেক রাষ্ট্রপতি জেনারেল এরশাদ এবং প্রধানমন্ত্রীর পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় স্ব স্ব ক্ষেত্রে জাতীয় জীবনে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। সেই রংপুরেই ঘটল এ ঘটনা। লজ্জায় এবং অপমানে রংপুরের মানুষদের ধুলায় মিশে যাওয়ার কথা। এর চেয়েও যেটা গুরুত্বপূর্ণ তা হচ্ছে, এমন একটি ঘটনা দেশের নারী সংগঠন ও মানবাধিকার সংগঠনগুলোর দৃষ্টি আকর্ষণ করেনি। সমালোচনার দৃষ্টি দিয়ে বললে বলতে হয়, তারা তো নারী দিবসের শতবর্ষ উদযাপনের ঢাকঢোল বাজানো নিয়েই ব্যস্ত, এমন একটি ঘটনা নিয়ে মাথা ঘামানোর সময় তাদের কোথায়?
বাংলাদেশের নারী যুগ যুগ ধরে বহু রকম নিয়ন্ত্রণের অধীন। সমাজ, পরিবার, মূল্যবোধ ও ধর্মীয় অনুশাসন তাদের জীবনকে নিয়ন্ত্রণ করে। সম্প্রতি এই নিয়ন্ত্রণের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে পুলিশি নিয়ন্ত্রণ। এই নিয়ন্ত্রণ নারীর জীবনে অগ্রগতির পথে নতুন প্রতিবন্ধক হিসেবে দেখা দেবে।
পুলিশ বিভাগ বা বিশেষ করে রংপুরের পুলিশ প্রশাসন তাদের কৃতকর্মের সাফাই গাইতে গিয়ে একধাপ এগিয়ে গেছেন। ৪ঠা মার্চ ২০১০ একটি দৈনিকে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, ‘বুধবার দুপুরে রংপুর পুলিশ অফিসে দেয়া প্রেস নোটের বক্তব্য অনুযায়ী সুরভী উদ্যান ও চিড়িয়াখানা থেকে উনিশজন নারী-পুরুষকে আটকের বিষয়টি স্বীকার করা হয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে পুলিশ সুপার সাহেল মোহাম্মদ তানভীর তার বক্তব্যে সাংবাদিকদের বলেন, পর্দানশীন অবস্থায় ও বোরকা পরে চলাচলের বিষয়টি নিয়ে জেলা পুলিশ কোনো রকমের আদেশ জারি করেনি। কোনো ব্যক্তি বা বিশেষ পুলিশ কর্মকর্তা এ রকম আদেশ জারি করলে তা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে। ওই প্রেস নোটে আরও বলা হয়, পুলিশের ওই গ্রেফতার অভিযানের জন্য অনেক সুশীল ও ভদ্র সমাজ পুলিশের প্রশংসা করেছে এবং এ ধরনের অভিযান অব্যাহত রেখে উদ্যানের পরিবেশ সর্বসাধারণের জন্য সুগম করার অনুরোধ জানিয়েছে। সংবাদ মাধ্যমে এ ধরনের সংবাদ প্রকাশিত হলে পুলিশি কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হবে। তেমনি বিপথগামী ও উচ্ছৃঙ্খল তরুণ-তরুণী খোলা জায়গায় অনৈতিক কার্যক্রমে লিপ্ত থাকাকে উত্সাহিত করবে।’ চমত্কার যুক্তি ! এ দেশে পুলিশকে এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যাতে অপরাধ করেও সাফাই গাইতে কোনো অসুবিধা হয় না। জানতে ইচ্ছে করে রংপুরের কোন সুশীল ও ভদ্র সমাজ পুলিশের এই অন্যায় কর্মকে সমর্থন করেছে? পুলিশের দৃষ্টিতে অনৈতিক কাজ কোনটি? যারা গ্রেফতার হয়েছে তারা নিশ্চয়ই নগ্ন হয়ে ঘুরে বেড়ায়নি। রংপুরের পুলিশ সুপার একদিকে বলছেন, এ রকম গ্রেফতারের নির্দেশ দেয়া হয়নি। আবার অন্যদিকে বলছেন, তার অধীনস্থ পুলিশ যা করেছে ভালোই করেছে। যারা গ্রেফতার হয়েছিলেন তারা কি অবস্থায় ছিলেন সেটা অনুমান করতে কষ্ট হয় না। কিন্তু এটুকু স্বাধীনতা সমাজ গ্রহণ করেছে। তা না হলে তো কোনো স্বামী বোরকাবিহীন কোনো স্ত্রীকে হুড ফেলা রিকশায় নিয়ে ঘুরে বেড়াতে পারবেন না। এতই যদি নৈতিকতা শিক্ষা দেয়ার সাহস পুলিশের থাকে তাহলে অনুরোধ থাকল ধানমন্ডি লেকের আশপাশে অভিযান চালানোর। সেই ক্ষমতা বা দুঃসাহস পুলিশের নেই। অথচ ধানমন্ডি লেকের আশপাশে বিকালবেলা বসে প্রাণের মেলা। পুলিশের যদি সাহস থেকেই থাকে তাহলে পহেলা বৈশাখে কিংবা ঈদের দিনে ঘুরে বেড়ানো ছেলেমেয়ে, নারী-পুরুষ কাউকে গ্রেফতার করে দেখুক না। তখন যে প্রতিবাদ হবে তাতে পুলিশের বড় কর্তাকেও পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খেতে হবে। একই সঙ্গে অনুরোধ থাকবে পুলিশ নিজে যেন নৈতিকতার চর্চা করে এবং দুর্নীতিগ্রস্ত— এই অভিযোগ থেকে দায় মুক্ত হয়।
ঘটনাটি হয়তো খুব ছোট। কেননা অধিকাংশ পত্রপত্রিকা তা এড়িয়ে গেছে। এমনকি হাইকোর্টও এ ব্যাপারে অনেক নমনীয় ভূমিকা নিয়েছেন। এ ঘটনায় হাইকোর্ট আদেশ দিয়েছেন বোরকা না পরার কারণে কাউকে গ্রেফতার বা হয়রানি করা যাবে না। কিন্তু ঘটনার নায়ক ডিবি পুলিশ কর্মকর্তা মিনহাজকে এক মাসের সময় দিয়ে ৪ এপ্রিল আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। এই সময়ের মধ্যে দায় এড়ানোর জন্য পুলিশ যদি কোনো সাক্ষী তৈরি করে ফেলে তাহলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।
পুলিশের কেউ কেউ অপরাধ বা অন্যায় কাজের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। এটা হয়তো অস্বাভাবিক নয়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে এটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে তিনি তোতা পাখির বুলি আওড়াবেন। আজকের এ লেখার উদ্দেশ্য ভিন্ন। জানতে ইচ্ছে করে, এ ঘটনাটি নিয়ে নারী সংগঠন ও মানবাধিকার সংগঠনগুলো কেন চুপ করে আছে? তারা কি মনে করেন এ ব্যাপারে তাদের কোনো দায় নেই? না তারা নীরবতার মধ্য দিয়ে নতুন ফতোয়ার রাস্তা উন্মুক্ত করে দিচ্ছেন? এমনও হতে পারে তারা সরকারকে বিব্রত করতে চান না। দ্বিতীয় প্রশ্নটি বিভিন্নভাবে সমাজে প্রভাবশালীদের কাছে—তাদের পরিবারে এ ঘটনা ঘটলে তারা কি করতেন?
No comments