লেখকের শক্তি লেখার মধ্যেই by আল মাহমুদ
প্রায়ই ভাবি চিন্তা-ভাবনাহীন এক নির্বিঘ্ন জীবন হারিয়ে দিতে আমার অসুবিধা কোথায়। না কোনো অসুবিধা নেই। কিন্তু আমি স্বভাবসিদ্ধভাবে নিশ্চিন্ত মানুষ নই। আমি চিন্তা করে লিখি। চিন্তা করে খাই এবং চিন্তা করে ঘুমোতে যাই। আমার ঘুম হয় না। উল্টো বরং দুঃস্বপ্নে পাশ ফিরতে ফিরতে রাতটা কেটে যায়। তবুও আমার কিছু কর্তব্যকর্ম আছে যা রুটিনমাফিক আমাকে করতে হয়। পরিণাম কী হবে এ চিন্তা আমার মনে থাকলেও আমি অপরিণামদর্শী।
লিখেতো চলেছি, যা দেখবার তা দেখছি, যা আন্দাজ করবার তা ধারণায় আনবার চেষ্টা করছি। আজকাল কেউ আমাকে আর উপদেশ দিতে আসে না। কারণ, সম্ভবত আমি নিজেই সমস্ত উপদেশ আদেশ আগ্রহের বাইরে চলে এসেছি। যারা লিখে যায় একই সঙ্গে তারা শিখেও যায়। আমি প্রায়ই শেখার কথাটা উল্লেখ করতে চেষ্টা করেছি। আমি ভাবি যে যাই বলুক আমি লিখতে লিখতে কোথাওনা কোথাও পৌঁছাবো। কিন্তু সামনে পেছনে কোথাও পৌঁছেছি বলে মনে হচ্ছে না। তবে আমি কোনো স্থিরতার আত্মা নই। ডানামেলা পাখির মতো আমার আত্মা। ভেসে যাচ্ছি নিজের শক্তিতে। আমি কোনোদিন কারও অনিষ্ট চিন্তা করিনি। প্রকৃতপক্ষে দুর্ভাবনায় কালও কাটাইনি।
আমার লেখকের স্বভাব এবং একই সঙ্গে সব জিনিস ভালো করে দেখারও স্বভাব। এ ধরনের লোক বাংলাদেশে বিরল হয়ে এসেছে।
লেখাটা এক ধরনের পুরস্কারহীন প্রত্যাশার কাজ। আমি পুরস্কারের আশা করি না। ফলে তিরস্কারও আমার কাছ থেকে দূরে থাকে। আমি কাউকে ডেকে আনি না। কেউ এসে গেলে আমি জোর করে তাকে বিদায়ও করি না।
আমি জানতে চাই লেখালেখির সমাজে আমার আদৌ পাত্তা আছে কিনা।
দেখতে পাচ্ছি লেখার কারণেই আমাকে কেউ কেউ ঈধত্ব করে। ভালোমন্দ জানাতে চায়। আমি সবার সঙ্গেই মিলেমিশে চলতে চেয়েছি। পারি না। বিশেষ করে মেয়েদের দৃষ্টিতে আমি হলাম একজন নিত্য ভিক্ষুক। কেবল চাই।
আমি অবশ্য হাত পাততে অহরহ লজ্জাবোধ করি না। আমি দেখেছি মেয়েরা ঋণ চাইলে শেষ পর্যন্ত দিয়ে দেয়। তাগাদা দেয় না। এই সুযোগটা সারাজীবন গ্রহণ করেছি। তাহলেও লাভবান হয়েছি এটা বলা যাবে না। দিন-রাত লিখতে পারলে অবশ্য আমি লাভবানই হতাম কিন্তু সব কথা লেখক ভাবুক শিল্পী মানুষরা লিখে যেতে পারে না। কিছু ব্যাপার আছে যা মানুষের সম্পর্কের মধ্যে জড়াজড়ি করে থাকে। এসব লেখা যায় না। এসব নিয়ে সারাজীবন কত চিন্তা-ভাবনা করেছি; কিন্তু পৌঁছুতে পারিনি কোথাও। আমার একটা সুবিধা ছিল আমি কবি ছিলাম। সবার ঘরেই প্রবেশ করতে পারতাম। কিন্তু সবার সঙ্গে আত্মীয়তা বজায় রাখতে পারতাম না। অনেকেই আমাকে নিজেদের আঙিনায় ডেকে বসতে দিতে চাইত। কিন্তু আমার স্বভাবের কারণেই আমি কোথাও স্থির হতে পারিনি। এ অবস্থাতেই প্রেম, ঘাম, সুখ-সুবিধা একাকার হয়ে গেছে। এখন তো আত্মরক্ষার উপায় খুঁজি। কারণ আমার একটা স্বভাবসিদ্ধ বিষয় হলো ভেতরে প্রবেশ করা; কিন্তু সবকিছুর ভেতরে প্রবেশ করে আমি দিশেহারা হয়ে যাই। কারণ আমি প্রবেশটাই জানি। বেরুবার মন্ত্র জানি না। সবকিছুতেই ঢুকি। সবকিছু শুঁকে দেখি। হতে পারে এটা কবির স্বভাব; কিন্তু এ স্বভাব সবার জন্য সহনীয় নয়।
অনেকেই আমার কাছে ভিড়তে একটু ইতস্তত করে। এটা আমার জন্য ভালো। কারণ আমি খুব মিশুক মানুষ হতে চাই না। আবার অমিশুক অহঙ্কারিও হতে চাই না। আমি হতে চাই কবিতার অন্তমিলের মতো। যেখানে একটা ঝঙ্কার থাকবে। মোটামুটি এইতো আমার জীবন। কেটেছে স্বচ্ছন্দ্যে। কেটেছে দুঃখ-দুর্দশা এবং দুর্ভাগ্যের মধ্যে। আমি অবশ্য সবকিছুই স্বাভাবিক মনে করি। ভাবি আমিতো লেখক। আর লেখকের জীবন কেমন হয় সেটা সর্বত্র জানান দিলে চলে না।
বহুদিন ধরে ক্রমাগত লিখে এসেছি। এ লেখার গুণেই অনেকের সঙ্গে পরিচয় হয়েছে। আর লেখার দোষেই অনেকের সঙ্গে বিরূপতার সৃষ্টি হয়েছে। তবু লেখকের শক্তি লেখার মধ্যেই।
লেখক : কবি
আমার লেখকের স্বভাব এবং একই সঙ্গে সব জিনিস ভালো করে দেখারও স্বভাব। এ ধরনের লোক বাংলাদেশে বিরল হয়ে এসেছে।
লেখাটা এক ধরনের পুরস্কারহীন প্রত্যাশার কাজ। আমি পুরস্কারের আশা করি না। ফলে তিরস্কারও আমার কাছ থেকে দূরে থাকে। আমি কাউকে ডেকে আনি না। কেউ এসে গেলে আমি জোর করে তাকে বিদায়ও করি না।
আমি জানতে চাই লেখালেখির সমাজে আমার আদৌ পাত্তা আছে কিনা।
দেখতে পাচ্ছি লেখার কারণেই আমাকে কেউ কেউ ঈধত্ব করে। ভালোমন্দ জানাতে চায়। আমি সবার সঙ্গেই মিলেমিশে চলতে চেয়েছি। পারি না। বিশেষ করে মেয়েদের দৃষ্টিতে আমি হলাম একজন নিত্য ভিক্ষুক। কেবল চাই।
আমি অবশ্য হাত পাততে অহরহ লজ্জাবোধ করি না। আমি দেখেছি মেয়েরা ঋণ চাইলে শেষ পর্যন্ত দিয়ে দেয়। তাগাদা দেয় না। এই সুযোগটা সারাজীবন গ্রহণ করেছি। তাহলেও লাভবান হয়েছি এটা বলা যাবে না। দিন-রাত লিখতে পারলে অবশ্য আমি লাভবানই হতাম কিন্তু সব কথা লেখক ভাবুক শিল্পী মানুষরা লিখে যেতে পারে না। কিছু ব্যাপার আছে যা মানুষের সম্পর্কের মধ্যে জড়াজড়ি করে থাকে। এসব লেখা যায় না। এসব নিয়ে সারাজীবন কত চিন্তা-ভাবনা করেছি; কিন্তু পৌঁছুতে পারিনি কোথাও। আমার একটা সুবিধা ছিল আমি কবি ছিলাম। সবার ঘরেই প্রবেশ করতে পারতাম। কিন্তু সবার সঙ্গে আত্মীয়তা বজায় রাখতে পারতাম না। অনেকেই আমাকে নিজেদের আঙিনায় ডেকে বসতে দিতে চাইত। কিন্তু আমার স্বভাবের কারণেই আমি কোথাও স্থির হতে পারিনি। এ অবস্থাতেই প্রেম, ঘাম, সুখ-সুবিধা একাকার হয়ে গেছে। এখন তো আত্মরক্ষার উপায় খুঁজি। কারণ আমার একটা স্বভাবসিদ্ধ বিষয় হলো ভেতরে প্রবেশ করা; কিন্তু সবকিছুর ভেতরে প্রবেশ করে আমি দিশেহারা হয়ে যাই। কারণ আমি প্রবেশটাই জানি। বেরুবার মন্ত্র জানি না। সবকিছুতেই ঢুকি। সবকিছু শুঁকে দেখি। হতে পারে এটা কবির স্বভাব; কিন্তু এ স্বভাব সবার জন্য সহনীয় নয়।
অনেকেই আমার কাছে ভিড়তে একটু ইতস্তত করে। এটা আমার জন্য ভালো। কারণ আমি খুব মিশুক মানুষ হতে চাই না। আবার অমিশুক অহঙ্কারিও হতে চাই না। আমি হতে চাই কবিতার অন্তমিলের মতো। যেখানে একটা ঝঙ্কার থাকবে। মোটামুটি এইতো আমার জীবন। কেটেছে স্বচ্ছন্দ্যে। কেটেছে দুঃখ-দুর্দশা এবং দুর্ভাগ্যের মধ্যে। আমি অবশ্য সবকিছুই স্বাভাবিক মনে করি। ভাবি আমিতো লেখক। আর লেখকের জীবন কেমন হয় সেটা সর্বত্র জানান দিলে চলে না।
বহুদিন ধরে ক্রমাগত লিখে এসেছি। এ লেখার গুণেই অনেকের সঙ্গে পরিচয় হয়েছে। আর লেখার দোষেই অনেকের সঙ্গে বিরূপতার সৃষ্টি হয়েছে। তবু লেখকের শক্তি লেখার মধ্যেই।
লেখক : কবি
No comments