ব্র্যাক মেধাবিকাশ বৃত্তি-ওরা ১১ জন by রাকিব মোজাহিদ

জীবনবৃত্তটা দারিদ্র্যের আবর্তে বাঁধা। স্বপ্নগুলো সব সময়ই মলিন কিংবা সে রকম কোনো স্বপ্ন দেখাই হয়নি দীপ্তি বিশ্বাসের, যেখানটায় একটুখানি আশার আলো ছিল। মাগুরার মেয়ে দীপ্তি বিশ্বাস। ষষ্ঠ শ্রেণীতে পড়ার সময় বাবা অমূল্য চন্দ্র বিশ্বাস মারা যান। এরপর সংসারের দায়িত্ব পড়ে মা সুশীলা রানী বিশ্বাসের ওপর।


মাকে সাহায্য করতেই সে সময় থেকে টিউশনি করতেন দীপ্তি।
‘অন্যকে পড়িয়ে নিজের পড়ার সুযোগ খুব কম হতো, তাই এসএসসিতে খুব ভালো রেজাল্ট করা সম্ভব হয়নি। এরপর হয়তো আর এইচএসসি পড়াশোনা হতো না, যদি ব্র্যাকের মেধাবিকাশ বৃত্তি পেতাম।’ নিজের পড়াশোনা করার সময়-সুযোগ সম্পর্কে এমনটাই বলছিলেন দীপ্তি বিশ্বাস। এরপর দীপ্তির দীপ্তি ছড়ানোর সুযোগ করে দিল ব্র্যাক আর ভারতের রাই ফাউন্ডেশন। শিক্ষাবৃত্তি নিয়ে পড়তে গেলেন ভারতের সিকিম রাজ্যের ইল্ম বিশ্ববিদ্যালয়ে। ইলেকট্রনিক্স অ্যান্ড কমিউনিকেশন টেকনোলজি থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করে আক্ষরিক অর্থেই নামের যথাযথ মূল্যায়ন করলেন।
শুধু দীপ্তিই নয়, এই বৃত্তি পাওয়া মেধাবী দরিদ্রদের দলে আরও ছিলেন বগুড়ার মেয়ে তাকরিনা আফরিন, খুলনার স্বপ্না বিশ্বাস, লাইলী খাতুন, রাজশাহীর মোস্তারী সুলতানা, চট্টগ্রামের তানজিবা সুলতানা, পাবনার উর্মি সাজ্জাদ, চুয়াডাঙ্গার আশরাফুননেসা ও সুস্মিতা নাহিদ, চাঁপাইনবাবগঞ্জের আতিকা পারভিন, যশোরের তানিয়া খাতুন। তাঁদের মধ্যে কেবল তানিয়া খাতুন পড়েছেন ব্যবসায় প্রশাসনে। বাকিরা পড়েছেন প্রযুক্তি বিষয়ে।
সম্প্রতি ব্র্যাক সেন্টারে এই ১১ অগ্রবর্তিনীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করার সুযোগ মিলল। কথা হলো নানা বিষয় নিয়ে। প্রথমেই তানজিবা সুলতানা জানালেন বিশ্ববিদ্যালয়-জীবনের হালহকিকত।
‘অনেক সুন্দর ছিল আমাদের ক্যাম্পাস। একদম পাহাড়ের কোলঘেঁষে। আর মেঘের সঙ্গে সখ্যও ছিল প্রচুর। মাঝেমধ্যে এসে আমাদের হলের বেলকুনিতে নাড়ানো কাপড়গুলো ভিজিয়ে যেত।’ তানজিবার আপ্লুত কণ্ঠ শেষ না হতেই মোস্তারি শুরু করলেন, ‘সবকিছু ঠিকঠাক থাকলেও প্রথম দিকে খাবারের সমস্যা প্রচণ্ড ভোগাত আমাদের। ওখানে সবাই ভেজিটেরিয়ান। সপ্তাহে দুই দিন দুবেলা মাত্র দেওয়া হতো নন-ভেজ। এক দিন ডিম অন্য দিন মুরগির মাংস।’
তবে ছোটখাটো সীমাবদ্ধতা ছাপিয়ে তাঁরা ক্যাম্পাসটাকে উপভোগ করেছেন সবচেয়ে বেশি। অ্যাকাডেমিক পড়ালেখার পাশাপাশি তাঁরা শিখেছেন হিন্দি ও ইংরেজি ভাষা। নানা দেশের বন্ধুদের সঙ্গে মিশতে গিয়েই আয়ত্তে এসেছে ভাষাগুলো। তাই বিদেশ-বিভুঁইয়ে গিয়েও একাকিত্বটা সেভাবে ঘিরে ধরতে পারেনি তাঁদের। এবং খুব দ্রুতই সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব হয়ে যায় তাঁদের। তা ছাড়া ‘আমরা ১০ জন এই ক্যাম্পাসে একই সঙ্গে থাকতাম। অনেক মজা করতাম নিজেরা মিলে।’ বলছিলেন তাকরিনা আফরিন।
শুনছিলাম ফেলে আসা দিনগুলোর কথা। এবার জানতে চাই ভবিষ্যৎ জীবন সম্পর্কে। ‘আমরা এখন একটু দ্বিধাদ্বন্দ্বের মধ্যে আছি। অনেক দিন পর দেশে ফেরা। এ দেশের চাকরির বাজার সম্পর্কে তেমন কোনো ধারণা নেই। তবে চেষ্টা করছি আদাজল খেয়ে।’
তাঁদের চেষ্টা নিশ্চয় সফলতার দেখা পাবে, এমনটাই আশীর্বাদ করলেন ব্র্যাকের মহাপরিচালক স্যার ফজলে হাসান আবেদ এবং সেই সঙ্গে খানিকটা আশার বাণীও শোনালেন, ‘তোমাদের অসামান্য সাফল্যে আমরা গর্বিত। আমাদের বিশ্বাস, তোমরা আরও অনেক দূর এগিয়ে যাবে। এরপরও যদি তোমাদের আরও কোনো সহযোগিতা প্রয়োজন হয়, ব্র্যাক তোমাদের পাশে থাকবে।’

No comments

Powered by Blogger.