সরেজমিন-‘কিছুই সরাইবার সময় পাই নাই’

ছোট্ট একটি খড়ের ঘরে কলাগাছের ভেতরের অংশ (মাজা) ছোট ছোট করে কেটে রান্না করছিলেন কুড়িগ্রাম উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের বতুয়াতলী চরের জোহরা বেগম (৫৫)। বন্যার পানিতে সব ভেসে গেছে। কিছুই রক্ষা করতে পারেননি।


জোহরা বেগম বলছিলেন, ‘কোনো রহমে জীবনটা বাঁচাইছি। এমুন পানি আইছে, পাক খাইয়া বাড়ি ডাইবা গেছে। ঘরবাড়ি ভাসায় নিয়া গেছে। এখানে কোনো রকমে দুইটা পরিবার আছি। শাক-সবজি নষ্ট হইয়া গেছে। তাই কলার মাজা পাক করতাছি।’ গত সোমবার দুপুরে নদীপথে ব্রহ্মপুত্র নদের দুর্গম বতুয়াতলী চরে গিয়ে দেখা যায়, উজান থেকে নেমে আসা পানির প্রবল স্রোতে পুরো চরটি লন্ডভন্ড হয়ে গেছে। অসংখ্য ঘরবাড়ি, গাছপালা মাটিতে পড়ে আছে। বেশ কিছু ঘর ভেসে যায়। চরের মাঝ দিয়ে নালার সৃষ্টি হয়েছে। সেখানে জমে আছে পানি। যত্রতত্র পড়ে আছে ঘরের চালা। আর এসব চালার নিচে ঠাঁই নিয়েছে অনেক পরিবার। সেখানেই চলছে রান্নার কাজ। চরের পশ্চিম দিকে চালা ছাড়া ছয়টি খড়ের ঘর পড়ে আছে। বাড়ির লোকজনকে খুঁজে পাওযা গেল না। মাঝ দিয়ে নালা পড়েছে। নালা দিয়ে পানির স্রোত বয়ে যাচ্ছে। নালার পূর্ব দিকে কয়েকটি ঘর মাটিতে পড়ে আছে। বাড়ির লোকজন চলে গেলেও কবুতরগুলো চালায় অবস্থান নিয়েছে। পাশেই ২০ একরের মতো পাটখেত পানি থেকে ধীরে ধীরে জেগে উঠেছে। জমির মালিকদের মধ্যে মুসা দেওয়ানী (৫৬) জানান, পাট পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেছে।
দুপুর দুইটার দিকে ছোট একটি ডিঙ্গি নৌকা নিয়ে চরে আসে পরিত্যক্ত একটি বাড়ির মালিক রহিম বাদশা। তিনি বন্যার সময়ের অবস্থা বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, ২৯ জুন রাতে পরিবার-পরিজনসহ কোমরসমান পানির মধ্যে মাচা করে ঘরে অবস্থান করছিলেন। হঠাৎ প্রবল বেগে বৃষ্টি নামে। বন্যার পানি হু হু করে বাড়তে থাকে। এক ঘণ্টার মধ্যে সব বাড়ি ভেঙে যায়। রাতের অন্ধকারে ছোট নৌকা নিয়ে দেওয়ানির বাড়িতে আশ্রয় নেন। সেখানেও পানি। সকালে ছয়টি পরিবার মোল্লার হাটে আত্মীয় ময়েজ উদ্দিনের বাড়িতে চলে যান। তিনি বলেন, ‘বন্যায় সব শ্যাষ হইযা গেছে। কিছুই নিতে পারি নাই। ঘর ঠিক করুম হেই পয়সা নাই।’
পরে থাকা টিনের চালার নিচে রান্না করছিলেন মোনেকা (২০)। তিনি জানান, এই ঘরের নিচে তিনটি পরিবার থাকে। একই ঘরে পালাক্রমে চলে একাধিক পরিবারের রান্না। আনোয়ারা বেগম হাত উঁচিয়ে দেখিয়ে বলেন, বতুয়াতলীর চরে ৭৫টি পরিবার ছিল। এখন আছে ২৫টি। যে যেদিকে পেরেছে আশ্রয় নিয়েছে।
বেগমগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আবদুর রহিমের মুঠোফোন বন্ধ থাকায় কথা বলা যায়নি। ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক মো. ময়নুল হক আনসারী বলেন, এখন পর্যন্ত বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের পুনর্বাসনের জন্য কোনো বরাদ্দ আসেনি।

No comments

Powered by Blogger.