বানভাসি মানুষের পাশে বন্ধুরা by জহির রায়হান

গত কয়েক দিনের বন্যায় কুড়িগ্রামের ধরলা, দুধকুমার ও ব্রহ্মপুত্র নদের বিভিন্ন চরের কয়েক লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়ে। নদীর ভাঙনে ঘরবাড়ি, জমিজিরাত হারিয়ে নিঃস্ব হয় অনেক পরিবার। এসব মানুষের পাশে দাঁড়ানোর উদ্যোগ নেয় কুড়িগ্রাম বন্ধুসভা।


৪ ও ৫ জুলাই চাল, আলু, খাবার স্যালাইন ও পানি বিশুদ্ধকরণ বড়ি একত্রে প্যাকিং করেন বন্ধুসভার সদস্যরা। সিদ্ধান্ত হয় ৬ জুলাই শুক্রবার ব্রহ্মপুত্র নদের বিভিন্ন চরে এসব ত্রাণ বানভাসি মানুষের হাতে পৌঁছে দেওয়া হবে।
সিদ্ধান্ত মোতাবেক শুক্রবার সকাল সাতটায় মোগলবাসার বৈরাগীর ঘাটে উপস্থিত হন সদস্যরা। আগে থেকেই মাঝি নৌকা নিয়ে প্রস্তুত ছিলেন। তাই দেরি না করে আমাদের ১৫ সদস্যের প্রতিনিধিদলকে নিয়ে নৌকা ছাড়েন মাঝি। প্রতিনিধিদলে ছিলেন প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক সফি খান, বন্ধুসভার বন্ধু পলাশ, মুকুল, সাহানা, কুমকুম, সুজা, নয়ন, কবির, লতিফ, রানা, খোকন, রাসেল ও জুয়েল।
দুপুর ১২টায় নৌকা পৌঁছায় ব্রহ্মপুত্র নদবেষ্টিত উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের বতুয়াতলি চরে। নৌকা ভেড়ালে দেখা যায় ঘরবাড়িবিধ্বস্ত চরের এ গ্রামটি। চরের মানুষের চোখ-মুখে হাহাকার। মানুষগুলো ছুটে আসে নৌকার কাছে। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ত্রাণ বিতরণের সময় থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছিল। ব্রহ্মপুত্রের প্রবল স্রোত, আকাশের গর্জন—কোনো কিছুই বন্ধুসভার সদস্যদের থামাতে পারেনি। ভয়কে জয় করে তাঁরা ত্রাণ বিতরণ চালিয়ে যান। লোকজন বৃষ্টির মধ্যে ত্রাণের জন্য ছুটে আসে। বন্ধুসভার সদস্যরা ভিজে ত্রাণ বিতরণ করেন। একসময় চেরাগের আলগার চরে এসে নৌকা থামে। দইখাওয়া চরের আবদুল মজিদ (৪৫) আলু দেখে বলেন, ‘চরে তো আলু হয় না। হাট থ্যাইকা কিনা আনা নাগে। বন্যার মধ্যে হাটে যাইতে পারি নাই। খুব উপকার হইল।’ পূর্ব দইখাওয়ার চরের ইব্রাহীম (৩৫) ত্রাণ পেয়ে বলেন, ‘ভাই গো, জমিত যা আছিল, সব শ্যাষ। বানের পানিতে থাইকা জমানো যা ছিল, সব শ্যাষ। আপনাগের এগলা কামে নাগব।’
বতুয়াতলি চরের রহিম বাদশা ও রশিদ বলেন, ‘বন্যার সময় ঘড়বাড়ি ডাইবা যায়। পরিবার-পরিজন নিয়া কষ্টে আছি। অভাবের সময় যা-ই দেন, হেইডাই কামে নাগব।’ উলিপুর উপজেলার সাহেবের আলগা ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার আছিয়া খাতুন বলেন, ‘এত দূর আইসা ভালো করছেন ভাই। আমি সাহায্য দিতে পারি নাই। আপনাদেরটা কাজে লাগবে। মানুষ কষ্টে আছে।’
কুড়িগ্রাম প্রথম আলো বন্ধুসভার সদস্যরা ব্রহ্মপুত্র নদের মধ্যবর্তী গুজিমারী, বতুয়াতলি, দইখাওয়া ও চেরাগের আলগা চরের সাড়ে ৪০০ পরিবারের মধ্যে চাল, আলু, খাবার স্যালাইন ও পানি বিশুদ্ধকরণ বড়ি বিতরণ করেন।

No comments

Powered by Blogger.