যে কথা যায় না বলা-কীভাবে বোঝাব মনের কথা?

কখনোই ভাবিনি এভাবে লিখতে হবে। সব সময় ভেবেছি হয়তো তাঁরা বুঝবেন। একদিন তাঁদের ভুল ভাঙবে। কিন্তু না...। আমার কথা বললে কেউ বিশ্বাস করবে কি না জানি না। হয়তো আমাকেই অভদ্র মেয়ে বলবে। পরিবারে সবার ছোট আমি। বাইরে থেকে আমাদের পরিবারকে দেখলে স্বচ্ছ এবং সুখীই মনে হয়।


কিন্তু ভেতরের পরিবেশটা সম্পূর্ণই বিপরীত। এর মূল কারণ আমার বাবা। অবসরপ্রাপ্ত এই মানুষটি রাগী, একরোখা, নারীবিদ্বেষী। পরিবারে নিজের মতামত ও ইচ্ছা প্রতিষ্ঠাতেই ব্যস্ত থাকেন সারাক্ষণ। মেয়েদের অধিকার ও স্বাধীনতার ব্যাপারে শুধু উদাসীনই নন, প্রয়োজনে বিভিন্ন ধর্মীয় অনুশাসন বা গোঁড়ামি দিয়ে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেন। বাবা মুখ ফুটে কিছু না বললেও বিভিন্নভাবে বোঝাতে চান, আমি একজন মেয়ে। চাইলেই স্বাধীনতা ও নিজের অধিকার পাব না। আমার মা স্বল্পশিক্ষিত গৃহিণী, যাঁর কোনো বাস্তব জ্ঞান নেই বললেই চলে। মা সংসারে মতামত প্রকাশের অধিকার থেকে বঞ্চিত। বাবার মতো তিনিও আমার অধিকারের বিষয়ে অসচেতন। মাঝেমধ্যে মনে হয়, আমার ছোট ভাইটাও যদি বাবার মতো হয়ে যায়।
তবে আমি এতটুকু বুঝি, মেয়েদের শিক্ষিত হওয়াটা কতটা জরুরি। নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছি। একসময় হাঁপিয়ে উঠি। ভাবি, আমার লেখাপড়া কি ডিগ্রি অর্জনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থেকে যাবে? কারণ, আমাকে চাকরি করতে দেওয়া হবে কি না জানি না। কেননা, পরিবারের ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়ে লেখাপড়া শিখেছি। অনেক পরিবারের মতো আমার বাবাও মনে করেন, শুধু অর্থশালী বর পাওয়ার জন্য মেয়েদের শিক্ষিত হওয়া উচিত; পরিবারের একজন উপার্জনক্ষম ব্যক্তি হিসেবে গড়ে তোলার জন্য নয়। এভাবে চলতে থাকলে আমি মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলব। কত দিন সব সহ্য করে থাকতে পারব জানি না।
নাহার
রাজশাহী

No comments

Powered by Blogger.