১২ লাখ টাকা নিয়ে ভুয়া সংস্থার কর্মকর্তারা উধাও

বগুড়ার শিবগঞ্জে একটি বেসরকারি সংস্থার নামে প্রতারক চক্র কমপক্ষে ১২ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে গা ঢাকা দিয়েছে। এ ঘটনায় তাদের নিয়োজিত এলাকার মাঠকর্মীরা পড়েছেন বিপাকে। সঞ্চয়ের টাকা ফেরত নিতে প্রতিদিন সদস্যরা তাঁদের বাড়িতে ভিড় করছেন।


অভিযোগে জানা যায়, উপজেলার কিচক বন্দরের মধুমতি মার্কেটে প্রায় এক বছর আগে জেনুইন মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি নামের একটি সংস্থা অফিস খুলে সদস্য সংগ্রহ ও সঞ্চয় কার্যক্রম শুরু করে। প্রচার করা হয়, এলাকার গরিব মানুষকে সহজ শর্তে ঋণ দেওয়ার মাধ্যমে তাদের আত্মনির্ভরশীল করে গড়ে তোলা হবে। প্রত্যেক সদস্য ৩৭৫ টাকা জমার বিপরীতে পাঁচ হাজার টাকা ঋণ পাবেন। একজন সদস্য এ অনুপাতে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা ঋণ তুলতে পারবেন বলে জানানো হয়।
সংস্থার ব্যবস্থাপক হিসেবে পরিচয় দেন জয়পুরহাট জেলার কালাই উপজেলার পুটখুর গ্রামের শামীম আহমেদ ও কোষাধ্যক্ষ হিসেবে এনামুল হক। এলাকার সাতজন নারীকে মোটা অঙ্কের বেতন-ভাতার লোভ দেখিয়ে মাঠকর্মী হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। তাঁরা হলেন—গুপিনাথপুর গ্রামের আঙ্গুরা বেগম, বানুয়ারা বেগম, খাদিজা বেগম ও জাহিদা সুলতানা; কিচক গ্রামের হালিমা বিবি ও ছানোয়ারা এবং সাদুরিয়ার ছায়মা বেগম।
জাহিদা সুলতানা জানান, শামীম আহমেদসহ সংস্থার লোকজন তাঁদের সদস্য সংগ্রহ করে দেওয়ার জন্য চাকরি দেন। এ জন্য নারী মাঠকর্মীদের প্রতি মাসে দেড় হাজার টাকা করে বেতনও দেওয়া হয়েছে। দুই মাস আগে জানানো হয়, জুলাই থেকে তাঁদের আড়াই হাজার টাকা করে বেতন দেওয়া হবে। এই সাত নারী কর্মীর প্রতেক্যেই শতাধিক করে সদস্য সংগ্রহ করেছেন। সদস্যরা প্রতিদিন রসিদ বহির মাধ্যমে এসব মাঠকর্মীর কাছে টাকা সঞ্চয়ের টাকা জমা দেন। সমুদয় টাকা বিকেলের মধ্যে ব্যবস্থাপক ও কোষাধ্যক্ষের কাছে জমা করা হয়েছে। এতে এক হাজারের বেশি সদস্যের কাছ থেকে কমপক্ষে ১২ লাখ টাকা সঞ্চয় জমা হয়েছে। জুলাই মাসে বড় ঋণগুলো হওয়ার কথা ছিল। তিনি আরও জানান, গত বৃহস্পতিবার থেকে হঠাৎ করে অফিস বন্ধ করে ব্যবস্থাপক ও কোষাধ্যক্ষ গা ঢাকা দেন। তাঁদের গ্রামের বাড়িতে গিয়ে খোঁজখবর নেওয়া হয়েছে, সেখানেও তাঁরা নেই।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নারী মাঠকর্মীর স্বামী জানান, সংস্থার কথিত কর্মকর্তারা পালিয়ে যাওয়ার পর সদস্যরা তাঁর বাড়িতে প্রতিদিন টাকা ফেরত নেওয়ার জন্য আসছেন। বিভিন্নভাবে চাপ দিচ্ছেন। পরিস্থিতি এতটাই বেসামাল যে তাঁর স্ত্রী বর্তমানে বাবার বাড়িতে চলে গেছেন।
উপজেলার গুপিনাথপুর গ্রামের লোকজন জানান, সদস্যরা টাকা না পেয়ে কয়েক দিন আগে মাঠকর্মী আঙ্গুরা বেগমের বাড়িতে এসে তাঁর কেনা আট হাজার ইট নিয়ে গেছেন। সদস্য ও কর্মীদের মধ্যে প্রতিদিন চলছে নানা দেনদরবার।
শিবগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাবিবুর রহমান বলেন, তিনি এ ব্যাপারে কোনো অভিযোগ পাননি। অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন। উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম জানান, ওই প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে তাঁরা কিছুই জানেন না।

No comments

Powered by Blogger.