আলোচনা ॥ প্রসঙ্গ ॥ বাংলাদেশের অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ তফসিল by রাজেন ঠাকুর
শত্রু/অর্পিত সম্পত্তি আইনে ক্ষতিগ্রস্ত হিন্দু খানাগুলো যে সহিংসতার শিকার হয়েছে তার প্রকৃতি ও ধরন বিশ্লেষণ করলে ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘনের একটি চিত্র ফুটে ওঠে। গত দশ বছরে (১৯৯৬-২০০৬) অর্পিতসম্পত্তি আইনে ক্ষতিগ্রস্ত হিন্দু পরিবারের বিরুদ্ধে সহিংসতার শিকার আওয়ামী লীগ আমলের (১৯৯৬-২০০১) তুলনায় বিএনপি-জামায়াত
চারদলীয় ঐক্যজোটের পরিচালিত সরকারের শাসনামলে (২০০১-২০০৬) দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেয়েছিল। সংক্ষেপে বলা যায়, এসব নির্যাতনের উদ্দেশ্য একই, আর তা হিন্দুদের স্থায়ীভাবে একটি ভীতিকর পরিবেশে রাখা, তাদের মনে করিয়ে দেয়া যে, তারা এ দেশে অবাঞ্ছিত ও দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক। (অধ্যাপক আবুল বারাকাত অর্পিত সম্পত্তির সাথে বসবাস’ (পাঠক সমাবেশ, ২০০৯) পৃষ্ঠা-৮৪)” অর্পিতসম্পত্তি আইন জাতিসংঘ মানবাধিকার সনদ ও বাংলাদেশের সংবিধানের অনুচ্ছেদ : ২৭; অনুচ্ছেদ ২৮(১), অনুচ্ছেদ ২৯(১), অনুচ্ছেদ ২৯(২) নাগরিকের অধিকারকে লঙ্ঘন করে আসছে।
‘শত্রুসম্পত্তি আইন’ সম্বন্ধে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের (আপিল বিভাগ) মাননীয় বিচারপতি মোঃ রুহুল আমিন, মাননীয় বিচারপতি এমএম রুহুল আমিন এবং মাননীয় বিচারপতি তাফাজ্জল ইসলাম ২০০৪ সালের ১৪ আগস্ট তারিখে ‘সাজু হোসেন বনাম বাংলাদেশ’ ঠচ ঈধংব ঘড়-২১০ ড়ভ ১৯৮০মামলায়এক ঐতিহাসিক রায় প্রদান করেছেন। এই ঐতিহাসিক রায়ে বলা হয়েছে, ‘শত্রুসম্পত্তি আইন’ একটি মৃত আইন, অর্পিত স¤পত্তির নামে আইনী প্রয়োগের ভিত্তি নেই।’ বাংলাদেশ সুপ্রীমকোর্টের (আপীল বিভাগ) এর উক্ত রায়ে বলা হয় : Since the law of enemy property itself died with the repeal of Ordinance No. 1 of 1969 on 23-3-1974 no further vested property case can be started thereafter on the basis of the law which is already dead. Accordingly, there is no basis at all to treat the case land as vested property upon started VP Case No-210 of 1980. (৫৮ ডিএলআর-২০০৬ পৃ. ১৭৭-১৮৫)। অর্থাৎ ‘২৩ মার্চ ১৯৭৪ তারিখে ১৯৬৯ সালের ১নং অধ্যাদেশ বাতিল হওয়ায় শত্রুসম্পত্তি আইন নিজেই মৃত; পরে এই আইনের ভিত্তিতে আবার অর্পিত সম্পত্তি কেস রুজু করা আর যায় না, যেহেতু এই আইনটি ইতোমধ্যে নিজেই মৃত। তদনুযায়ী ১৯৮০ সালের ভিপি কেস নং-২১০-এ ভূমির কেস কোনোক্রমেই অর্পিত সম্পত্তি হিসেবে ব্যবহার করার কোনো ভিত্তি নেই।’ এই ঐতিহাসিক রায়টি ২০০৪ সালের ১৪ আগস্ট দেয়া হলেও দু’বছর পর ডি এল আরের ২০০৬ সালে তা প্রকাশ পায়। অতএব, ২৩ মার্চ ১৯৭৪ সালের পর জিয়া-এরশাদ-খালেদা জিয়া-শেখ হাসিনা সরকারের আমলে তহসিলদারদের দিয়ে লুক্কায়িত অর্পিত সম্পত্তি উদ্ধার ও তহসিলদারদের চাকরির তৌফা হিসেবে যেসব হিন্দু সম্পত্তি তালিকাভুক্ত বা কেস করা হয়েছে, তা অবৈধ।
কোন দল কতটা হিন্দু সম্পত্তি দখল নিয়েছে ,তা অধ্যাপক আবুল বারকাত তার গবেষণা গ্রন্থে প্রকাশ করেছেন ইতোপূর্বে তা বলেছি। অতএব, ২৩ মার্চ ১৯৭৪ সালের পর যেসব স্থাবর ও অস্থাবর হিন্দুদের সম্পত্তি অর্পিতসম্পত্তি হিসেবে সরকার তালিকাভুক্ত বা মামলা করেছে তা প্রকৃত উত্তরাধিকারী ও বৈধ মালিকদের কাছে ফেরত দেয়া হোক। দেশত্যাগী বা দেশান্তরী বাঙালী যারা বাংলাদেশের নাগরিকত্বের আইনমতে বৈধ নাগরিক যাদের পৈত্রিক সম্পত্তি, অর্পিত সম্পত্তি হিসেবে সরকার তালিকাভুক্ত বা লিজভুক্ত করেছেন, আমরা দাবি করছি, তাদের সম্পত্তি ফিরিয়ে দিন। সম্পত্তি ফিরে পাওয়া তাদের সাংবিধানিক অধিকার। দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে এটা করা সরকারের নৈতিক দায়িত্ব।
হিউম্যান রাইটস কংগ্রেস ফর বাংলাদেশ মাইনরিটিস’ পক্ষে আমরা অর্পিত সম্পত্তি উপর উচ্চ আদালতে আগস্ট ২০০৮ মাসে রিট মামলা (রিট মামলা নং ৬৮৯২ /২০০৮) রুজু করেছিলাম। মাননীয় উচ্চ আদালত অর্পিত সম্পত্তি আইন অবৈধ ঘোষণা করে ২৮ অক্টোবর ২০০৮ তারিখে সরকারের প্রতি রুল জারি করেছেন। সরকার রিটের উত্তর উচ্চ আদালতে দেয়নি। বরং প্রস্তাবিত অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ (সংশোধন) আইন ২০০৯ এর খসড়া আইনে একটি বিশেষ গোষ্ঠীর স্বার্থ করা হয়েছে। এটা আইনে রূপ পেলে বিগত ৪৩ বছর যারা অর্পিত সম্পত্তি আইনের মারপ্যাচে সম্পত্তি, ভূমি সম্পদ হারিয়েছেন, তাদের ওপর শুরু হবে আরেক দফা বঞ্চনা, হয়রানি ও নির্যাতন। (প্রথম আলো, ১২ জুলাই ২০০৯)।
যা হোক, বর্তমান শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার অতীতের অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন ২০০১; বর্তমানে অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ (সংশোধন) আইন ২০১১; অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ (সংশোধন) আইন ২০১২; অর্পিত সম্পত্তি অবমুক্তি বিধিমালা, ২০১২ সংসদে পাস করে হিন্দুদের মনে আশার সঞ্চার করেছেন। একজন বিধবাকে বলতে শুনেছি ঈশ্বর, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দীর্ঘজীবী করুন। ১৯৬৮ সাল থেকে তাঁর স্বামীর সম্পত্তি শত্রু সম্পত্তি হওয়া ও নাবালক প্রতিবন্ধী শিশুপুত্রকে নিয়ে অনেক কষ্টে দিন কাটিয়েছেন। এবার আশার আলো দেখতে পাচ্ছেন। এতে বুঝা যাচ্ছে, শেখ হাসিনার সরকার ধর্মীয় সংখ্যালঘু হিন্দুদের অন্তত এতটুকু বুঝাতে সক্ষম হয়েছেন যে তার সরকার নির্বাচনী ওয়াদাসহ জনগণের দাবির প্রতি যতœশীল। ইতোমধ্যে সরকার গেজেটে ‘ক’ তালিকা প্রকাশিত হয়েছে।
এই ‘ক’ তফসিলে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে সেগুলো হলো : অর্পিত সম্পত্তি হিসাবে তালিকাভুক্ত সম্পত্তি যা অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন প্রবর্তনের পূর্বে সরকারের দখলে বা নিয়ন্ত্রণে ছিল অথবা ‘প্রত্যর্পণযোগ্য জনহিতকর সম্পত্তি, মঠ, শ্মশান, সমাধিক্ষেত্র বা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের বা দাতব্য প্রতিষ্ঠানের সম্পত্তি বা জনকল্যাণের উদ্দেশ্যে ব্যক্তি উদ্যোগে সুষ্ঠু ট্রাস্ট সম্পত্তি যা এই আইন প্রবর্তনের অব্যবহিত পূর্বে সরকারের দখলে বা নিয়স্ত্রণে ছিল। এখানে ‘সরকারের দখলে বা নিয়ন্ত্রণে’ বলতে সরকারের সরাসরি দখলে বা সরকার প্রদত্ত অস্থায়ী ইজারা বা ভাড়া বা অনুমতিসূত্রে সরকারের পরোক্ষ দখলে বা নিয়ন্ত্রণে বা এই আইন প্রবর্তনের তারিখে বা তৎপূর্বে উক্তরূপ অস্থায়ী ইজারা, ভাড়া বা অনুমতির মেয়াদ শেষ হয়ে থাকলে তা নবায়ন হয়ে থাকুক বা না থাকুক উক্ত সম্পত্তিকে বুঝাবে।
আর ‘খ’ তফসিলে অন্তর্ভুক্ত হবে সেগুলো হলো : যে সম্পত্তি ‘ক’ তফসিলে অন্তর্ভুক্ত নয় কিন্তু কোন তালিকায়মূলে অর্পিত সম্পত্তি হিসাবে ঘোষিত হয়েছে বা তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে বা চূড়ান্তভাবে প্রকাশিত জরিপে অর্পিত হিসাবে রেকর্ডভুক্ত হয়েছে।
সারাদেশে ক্ষতিগ্রস্তদের প্রতিনিধি, আইন বিশেষজ্ঞ, বিচারক ও বরেণ্য নাগরিক প্রতিনিধি, সংশ্লিষ্ট গবেষকসহ মানবাধিকার সংগঠনের কর্মীগণের সমন্বয়ে প্রতিটি জেলায় ‘নাগরিক সমন্বয় সেল’ গঠন করুন। অর্পিত সম্পত্তির প্রকাশিত তালিকায় ‘ক’ তফসিলে বর্ণিত সম্পত্তির ‘মালিক’ উক্ত সম্পত্তি তাঁর অনুকূলে প্রত্যর্পণের জন্য তালিকা প্রকাশের ১২০ দিনের (এক শত বিশ দিন) মধ্যে এ ব্যাপারে গঠিত ট্রাইব্যুনালের কাছে আবেদন পেশ করতে পারবেন এবং আবেদনের সাথে তাঁর দাবির সমর্থনে সকল কাগজপত্র সংযুক্ত করবেন। ভূমিসংক্রান্ত মাঠপ্রশাসনের কোনরূপ অসহযোগিতা বা পক্ষপাতদুষ্ট প্রতীয়মান হলে সঙ্গে সঙ্গে জাতীয় নাগরিক সমন্বয় সেল বাড়ি নং ১/৩ ব্লক-এফ , লালমাটিয়া, ঢাকা-১২০৭ ফোন : +৮৮-০২-৯১১৪৬৬০, ৮১৪২০৩১ মোবাইল : ০১৭৭২২৬৫৯৯৫ ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৮১৪১৮১০ই- মেইল : এই ঠিকানায় জানান। প্রয়োজনে ‘নাগরিক সমন্বয় সেল’ জেলায় কোনরূপ অসহযোগিতা বা পক্ষপাতদুষ্ট প্রতীয়মান হলে অহিংস প্রতিরোধ, প্রতিবাদ, মানববন্ধন শুরু করবেন। যাতে সংবাদ মাধ্যমে বিষয়গুলো প্রকাশিত হয়। বাংলাদেশের সরকারপ্রধান জানতে পারেন প্রশাসনে সমস্যা কারা সৃষ্টি করছেন। কারা গেজেট পেতে, পর্চা পেতে, সার্টিফাইড দালিলিক কপি পেতে বাধা দিচ্ছে।
লেখক : গবেষক ও সমাজ সংস্কারক
‘শত্রুসম্পত্তি আইন’ সম্বন্ধে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের (আপিল বিভাগ) মাননীয় বিচারপতি মোঃ রুহুল আমিন, মাননীয় বিচারপতি এমএম রুহুল আমিন এবং মাননীয় বিচারপতি তাফাজ্জল ইসলাম ২০০৪ সালের ১৪ আগস্ট তারিখে ‘সাজু হোসেন বনাম বাংলাদেশ’ ঠচ ঈধংব ঘড়-২১০ ড়ভ ১৯৮০মামলায়এক ঐতিহাসিক রায় প্রদান করেছেন। এই ঐতিহাসিক রায়ে বলা হয়েছে, ‘শত্রুসম্পত্তি আইন’ একটি মৃত আইন, অর্পিত স¤পত্তির নামে আইনী প্রয়োগের ভিত্তি নেই।’ বাংলাদেশ সুপ্রীমকোর্টের (আপীল বিভাগ) এর উক্ত রায়ে বলা হয় : Since the law of enemy property itself died with the repeal of Ordinance No. 1 of 1969 on 23-3-1974 no further vested property case can be started thereafter on the basis of the law which is already dead. Accordingly, there is no basis at all to treat the case land as vested property upon started VP Case No-210 of 1980. (৫৮ ডিএলআর-২০০৬ পৃ. ১৭৭-১৮৫)। অর্থাৎ ‘২৩ মার্চ ১৯৭৪ তারিখে ১৯৬৯ সালের ১নং অধ্যাদেশ বাতিল হওয়ায় শত্রুসম্পত্তি আইন নিজেই মৃত; পরে এই আইনের ভিত্তিতে আবার অর্পিত সম্পত্তি কেস রুজু করা আর যায় না, যেহেতু এই আইনটি ইতোমধ্যে নিজেই মৃত। তদনুযায়ী ১৯৮০ সালের ভিপি কেস নং-২১০-এ ভূমির কেস কোনোক্রমেই অর্পিত সম্পত্তি হিসেবে ব্যবহার করার কোনো ভিত্তি নেই।’ এই ঐতিহাসিক রায়টি ২০০৪ সালের ১৪ আগস্ট দেয়া হলেও দু’বছর পর ডি এল আরের ২০০৬ সালে তা প্রকাশ পায়। অতএব, ২৩ মার্চ ১৯৭৪ সালের পর জিয়া-এরশাদ-খালেদা জিয়া-শেখ হাসিনা সরকারের আমলে তহসিলদারদের দিয়ে লুক্কায়িত অর্পিত সম্পত্তি উদ্ধার ও তহসিলদারদের চাকরির তৌফা হিসেবে যেসব হিন্দু সম্পত্তি তালিকাভুক্ত বা কেস করা হয়েছে, তা অবৈধ।
কোন দল কতটা হিন্দু সম্পত্তি দখল নিয়েছে ,তা অধ্যাপক আবুল বারকাত তার গবেষণা গ্রন্থে প্রকাশ করেছেন ইতোপূর্বে তা বলেছি। অতএব, ২৩ মার্চ ১৯৭৪ সালের পর যেসব স্থাবর ও অস্থাবর হিন্দুদের সম্পত্তি অর্পিতসম্পত্তি হিসেবে সরকার তালিকাভুক্ত বা মামলা করেছে তা প্রকৃত উত্তরাধিকারী ও বৈধ মালিকদের কাছে ফেরত দেয়া হোক। দেশত্যাগী বা দেশান্তরী বাঙালী যারা বাংলাদেশের নাগরিকত্বের আইনমতে বৈধ নাগরিক যাদের পৈত্রিক সম্পত্তি, অর্পিত সম্পত্তি হিসেবে সরকার তালিকাভুক্ত বা লিজভুক্ত করেছেন, আমরা দাবি করছি, তাদের সম্পত্তি ফিরিয়ে দিন। সম্পত্তি ফিরে পাওয়া তাদের সাংবিধানিক অধিকার। দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে এটা করা সরকারের নৈতিক দায়িত্ব।
হিউম্যান রাইটস কংগ্রেস ফর বাংলাদেশ মাইনরিটিস’ পক্ষে আমরা অর্পিত সম্পত্তি উপর উচ্চ আদালতে আগস্ট ২০০৮ মাসে রিট মামলা (রিট মামলা নং ৬৮৯২ /২০০৮) রুজু করেছিলাম। মাননীয় উচ্চ আদালত অর্পিত সম্পত্তি আইন অবৈধ ঘোষণা করে ২৮ অক্টোবর ২০০৮ তারিখে সরকারের প্রতি রুল জারি করেছেন। সরকার রিটের উত্তর উচ্চ আদালতে দেয়নি। বরং প্রস্তাবিত অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ (সংশোধন) আইন ২০০৯ এর খসড়া আইনে একটি বিশেষ গোষ্ঠীর স্বার্থ করা হয়েছে। এটা আইনে রূপ পেলে বিগত ৪৩ বছর যারা অর্পিত সম্পত্তি আইনের মারপ্যাচে সম্পত্তি, ভূমি সম্পদ হারিয়েছেন, তাদের ওপর শুরু হবে আরেক দফা বঞ্চনা, হয়রানি ও নির্যাতন। (প্রথম আলো, ১২ জুলাই ২০০৯)।
যা হোক, বর্তমান শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার অতীতের অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন ২০০১; বর্তমানে অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ (সংশোধন) আইন ২০১১; অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ (সংশোধন) আইন ২০১২; অর্পিত সম্পত্তি অবমুক্তি বিধিমালা, ২০১২ সংসদে পাস করে হিন্দুদের মনে আশার সঞ্চার করেছেন। একজন বিধবাকে বলতে শুনেছি ঈশ্বর, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দীর্ঘজীবী করুন। ১৯৬৮ সাল থেকে তাঁর স্বামীর সম্পত্তি শত্রু সম্পত্তি হওয়া ও নাবালক প্রতিবন্ধী শিশুপুত্রকে নিয়ে অনেক কষ্টে দিন কাটিয়েছেন। এবার আশার আলো দেখতে পাচ্ছেন। এতে বুঝা যাচ্ছে, শেখ হাসিনার সরকার ধর্মীয় সংখ্যালঘু হিন্দুদের অন্তত এতটুকু বুঝাতে সক্ষম হয়েছেন যে তার সরকার নির্বাচনী ওয়াদাসহ জনগণের দাবির প্রতি যতœশীল। ইতোমধ্যে সরকার গেজেটে ‘ক’ তালিকা প্রকাশিত হয়েছে।
এই ‘ক’ তফসিলে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে সেগুলো হলো : অর্পিত সম্পত্তি হিসাবে তালিকাভুক্ত সম্পত্তি যা অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন প্রবর্তনের পূর্বে সরকারের দখলে বা নিয়ন্ত্রণে ছিল অথবা ‘প্রত্যর্পণযোগ্য জনহিতকর সম্পত্তি, মঠ, শ্মশান, সমাধিক্ষেত্র বা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের বা দাতব্য প্রতিষ্ঠানের সম্পত্তি বা জনকল্যাণের উদ্দেশ্যে ব্যক্তি উদ্যোগে সুষ্ঠু ট্রাস্ট সম্পত্তি যা এই আইন প্রবর্তনের অব্যবহিত পূর্বে সরকারের দখলে বা নিয়স্ত্রণে ছিল। এখানে ‘সরকারের দখলে বা নিয়ন্ত্রণে’ বলতে সরকারের সরাসরি দখলে বা সরকার প্রদত্ত অস্থায়ী ইজারা বা ভাড়া বা অনুমতিসূত্রে সরকারের পরোক্ষ দখলে বা নিয়ন্ত্রণে বা এই আইন প্রবর্তনের তারিখে বা তৎপূর্বে উক্তরূপ অস্থায়ী ইজারা, ভাড়া বা অনুমতির মেয়াদ শেষ হয়ে থাকলে তা নবায়ন হয়ে থাকুক বা না থাকুক উক্ত সম্পত্তিকে বুঝাবে।
আর ‘খ’ তফসিলে অন্তর্ভুক্ত হবে সেগুলো হলো : যে সম্পত্তি ‘ক’ তফসিলে অন্তর্ভুক্ত নয় কিন্তু কোন তালিকায়মূলে অর্পিত সম্পত্তি হিসাবে ঘোষিত হয়েছে বা তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে বা চূড়ান্তভাবে প্রকাশিত জরিপে অর্পিত হিসাবে রেকর্ডভুক্ত হয়েছে।
সারাদেশে ক্ষতিগ্রস্তদের প্রতিনিধি, আইন বিশেষজ্ঞ, বিচারক ও বরেণ্য নাগরিক প্রতিনিধি, সংশ্লিষ্ট গবেষকসহ মানবাধিকার সংগঠনের কর্মীগণের সমন্বয়ে প্রতিটি জেলায় ‘নাগরিক সমন্বয় সেল’ গঠন করুন। অর্পিত সম্পত্তির প্রকাশিত তালিকায় ‘ক’ তফসিলে বর্ণিত সম্পত্তির ‘মালিক’ উক্ত সম্পত্তি তাঁর অনুকূলে প্রত্যর্পণের জন্য তালিকা প্রকাশের ১২০ দিনের (এক শত বিশ দিন) মধ্যে এ ব্যাপারে গঠিত ট্রাইব্যুনালের কাছে আবেদন পেশ করতে পারবেন এবং আবেদনের সাথে তাঁর দাবির সমর্থনে সকল কাগজপত্র সংযুক্ত করবেন। ভূমিসংক্রান্ত মাঠপ্রশাসনের কোনরূপ অসহযোগিতা বা পক্ষপাতদুষ্ট প্রতীয়মান হলে সঙ্গে সঙ্গে জাতীয় নাগরিক সমন্বয় সেল বাড়ি নং ১/৩ ব্লক-এফ , লালমাটিয়া, ঢাকা-১২০৭ ফোন : +৮৮-০২-৯১১৪৬৬০, ৮১৪২০৩১ মোবাইল : ০১৭৭২২৬৫৯৯৫ ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৮১৪১৮১০ই- মেইল : এই ঠিকানায় জানান। প্রয়োজনে ‘নাগরিক সমন্বয় সেল’ জেলায় কোনরূপ অসহযোগিতা বা পক্ষপাতদুষ্ট প্রতীয়মান হলে অহিংস প্রতিরোধ, প্রতিবাদ, মানববন্ধন শুরু করবেন। যাতে সংবাদ মাধ্যমে বিষয়গুলো প্রকাশিত হয়। বাংলাদেশের সরকারপ্রধান জানতে পারেন প্রশাসনে সমস্যা কারা সৃষ্টি করছেন। কারা গেজেট পেতে, পর্চা পেতে, সার্টিফাইড দালিলিক কপি পেতে বাধা দিচ্ছে।
লেখক : গবেষক ও সমাজ সংস্কারক
No comments