ড. মিজানুর রহমান-রাষ্ট্র চাতুরী করে লিমনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দিয়েছে

জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমান বলেছেন, 'সরকারের অন্য সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগ যেকোনো অভিযোগের তদন্তে মানবাধিকার কমিশনের কাজে সহযোগিতা করলেও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এর ব্যতিক্রম। গত বছর থেকে চারবার চিঠি দেওয়ার পরও লিমনের ঘটনায় তদন্ত প্রতিবেদন আমাদের কাছে পাঠাচ্ছে না স্বরাষ্ট্র


মন্ত্রণালয়।' গতকাল মঙ্গলবার নিজ কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে কমিশনের চেয়ারম্যান আরো বলেন, 'রাষ্ট্র ছলচাতুরীর আশ্রয় নিয়ে লুকোচুরি করে চুপিসারে এ মামলার চার্জশিট দিয়েছে।'
লিমনের উদ্দেশে আশ্বাস ব্যক্ত করে ড. মিজান বলেন, 'লিমন তুমি ভয় পেয়ো না। মানবাধিকার কমিশন তোমার পাশে ছিল, আছে এবং থাকবে ভবিষ্যতে।' প্রয়োজনে তিনি ব্যক্তিগতভাবে অনশন কর্মসূচি পালন করার পরিকল্পনার কথাও জানান।
সংবাদ সম্মেলনে মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, 'জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছেন, দাবি যদি ন্যায্য হয়, তবে জয় সুনিশ্চিত। তাই লিমনের ব্যাপারে আমরা শেষ দেখে ছাড়ব। নিম্ন আদালতে যাব, দরকার হলে উচ্চ আদালতে যাব, দরকার হলে আমি নিজে অনশনে বসব। বৈধভাবে যা কিছু করা সম্ভব, তাই করে দেশের মানুষের বিবেক জাগ্রত করে তুলব। এটা আমাদের বিচার বিভাগের একটি পরীক্ষা। বিচার বিভাগকে এখন ন্যায়বিচারের পরীক্ষা দিতে হবে। আমরা মনে করি, এতদূর যেতে হবে না।'
র‌্যাবের গুলিতে পঙ্গু হওয়া ঝালকাঠির কিশোর লিমন হোসেনের আইনজীবী মানিক আচার্য জানান, সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে লিমন হোসেনকে আসামি করে আরেকটি মামলায় অভিযোগপত্র দিয়েছে পুলিশ। তদন্ত কর্মকর্তা রাজাপুর থানার উপ-পরিদর্শক আরিফুল ইসলাম গত ১ জুলাই ঝালকাঠির আদালতের জেনারেল রেজিস্ট্রার কর্মকর্তার (জিআরও) কাছে অভিযোগপত্রটি জমা দেন। এ বিষয়টি গত এক সপ্তাহ গোপন ছিল। এ মামলারও বাদী র‌্যাব। গত রবিবার এ মামলার ধার্য তারিখে শুনানিকালে জিআরও নাজমুল হক অভিযোগপত্র আদালতে উপস্থাপন করেন। উপ-পরিদর্শক অরিফুল ইসলাম গত বছরের ২৪ এপ্রিল অস্ত্র আইনে করা মামলায় লিমনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দিয়েছিলেন। ওই মামলাটি বর্তমানে ঝালকাঠির বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-২-এ অভিযোগ গঠনের জন্য রয়েছে।
লিমনের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার চার্জশিটের প্রসঙ্গ তুলে মিজানুর রহমান বলেন, 'এতে আমরা ক্ষুব্ধ ও দুঃখিত। ১৬ বছর ৯ মাস যার বয়স, আইনের চোখে যে শিশু; সেই লিমনের বিরুদ্ধে র‌্যাবের মামলার তদন্ত চলছে দ্রুত। পুলিশ গোপনে চার্জশিট দিয়ে দিচ্ছে। আর লিমনের দরিদ্র মা হেনোয়ার বেগমের দায়ের করা মামলার অগ্রগতি নেই। এটাই রাষ্ট্রের মূল্যবোধ!' প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন চেয়ারম্যান বলেন, 'আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিনয় করছি, যেন অবিলম্বে লিমনের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা তুলে নেওয়া হয়।'
মিজানুর রহমান জানান, লিমনের ঘটনার ব্যাপারে তিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে ব্যক্তিগতভাবে তদন্তের অনুরোধ জানিয়েছিলেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কমিশনকে সহায়তার আশ্বাসও দেন। গত বছরের ১৯ এপ্রিল একটি আবেদনের পর ২০ এপ্রিল একটি তদন্ত কমিটি ঘটন করা হয়। ১৫ দিনের মধ্যে কমিটির তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা কথা ছিল। কমিশনকে ওই তদন্ত প্রতিবেদনের কপি দেওয়ার জন্য গত বছরের ২৯ এপ্রিল আবেদন করেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান। গত বছরের ৩০ জুনের মধ্যে ওই প্রতিবেদন না পেয়ে আবারও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয় কমিশন। একইভাবে চলতি বছরের ১২ জুন পর্যন্ত কমিশন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চারটি চিঠি দেয়। তবে কমিশনের কোনো চিঠির জবাব বা তদন্ত প্রতিবেদন দেয়নি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সবশেষ দেওয়া চিঠিতে আগামী ৮ আগস্টের মধ্যে কমিশনের কাছে লিমনের পায়ে গুলি এবং র‌্যাবের মামলার ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদন দিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ জানিয়েছে কমিশন। মিজানুর রহমান বলেন, তদন্ত প্রতিবেদন না দিয়ে আদালতে চুপিসারে চার্জশিট দেওয়া হয়। এ চার্জশিটের বিরুদ্ধে প্রয়োজনে রাষ্ট্রপতির দৃষ্টি আকর্ষণ করা হবে বলেও জানান তিনি।
লিমনের বাড়ি ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলার সাঁতুরিয়া গ্রামে। গত বছরের ২৩ মার্চ নিজ বাড়ির কাছের মাঠে গরু আনতে গেলে র‌্যাবের গুলিতে আহত হয় লিমন। র‌্যাব স্থানীয় কিছু দুর্বৃত্তের সঙ্গে লিমনকে আসামি করে রাজাপুর থানায় দুটি মামলা করে। লিমনের অভিযোগ, বিনা অপরাধে পায়ে গুলি করে পঙ্গু বানানোর পর তাকে অপরাধী বানানোর চেষ্টা করছে র‌্যাব। এ ঘটনাটি সংবাদমাধ্যমে প্রচারিত হওয়ার পর দেশব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি করে। সাধারণ মানুষের আর্থিক সহায়তায় তার চিকিৎসা হয়। কৃত্রিম পা নিয়ে এখন সে চলাফেরা করে। চলতি বছর লিমন এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.