ভোলায় ছাত্রদের বিক্ষোভ সমাবেশে পুলিশের বর্বর হামলা-ব্যাপক লাঠিচার্জ টিয়ার গ্যাস আহত শতাধিক

ভোলা, ১০ জুলাই ॥ ভোলায় সরকারী কলেজের ছাত্ররা মঙ্গলবার শহরের বাংলাস্কুল মোড়ে মিছিলসহ অবস্থান নিয়ে বাস মালিক সমিতির দেয়া মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও গ্রেফতার হওয়া ছাত্রের মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ করতে গেলে পুলিশ বর্বর হামলা চালিয়েছে। এ সময় ছাত্রদের ওপর পুলিশ নির্বিচারে লাঠি চার্জসহ টিয়ার সেল নিক্ষেপ করে।


ওই সময় ছাত্ররা পাল্টা ইট পাটকেল নিক্ষেপ করলে ভোলা বাংলাস্কুল মোড় থেকে সদর রোড রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। শহরের দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায় এবং মানুষজন অবরুদ্ধ অবস্থায় পড়ে দু’ঘণ্টাব্যাপী। সকল প্রকার যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশের এক কনস্টেবলসহ শতাধিক আহত হয়েছে।
অপরদিকে গত রবিবার ছাত্র শ্রমিক সংঘর্ষের ঘটনায় মমিন নামে এক বাসস্টাফ নিহত ও ভোলা সরকারী কলেজে শ্রমিকদের হামলা, লুট, ভাংচুরের ঘটনায় সোমবার রাতে অন্তত দুই শ’ জনের বিরুদ্বে পাল্টা পাল্টি মামলা হয়েছে। তৃতীয় দিনের মতো ভোলা জেলা বাস মালিক সমিতি সড়ক অবরোধ করে জেলার অভ্যন্তরীণ সকল রুটে বাস চলাচল বন্ধ করে রেখেছে। এতে করে দূরপাল্লার মালবাহী ট্রাক ও যাত্রীরা চরম ভোগান্তির মধ্যে পড়ে। বর্তমানে ভোলা মোস্তফা কামাল বাস স্ট্যান্ড ও ভোলা সরকারী কলেজ ক্যাম্পাসে টান টান উত্তেজনা বিরাজ করছে। এদিকে অভিযোগ উঠেছে, পুলিশ বাস মালিক সমিতির পক্ষ নিয়ে তাদের কাউকে গ্রেফতার করেনি। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ভোলা কলেজসহ বিভিন্ন কলেজের কয়েক শত ছাত্র মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে ভোলা কলেজ ক্যাম্পাস থেকে লাঠি মিছিল নিয়ে বিক্ষোভ করে শহরের বাংলাস্কুল মোড় অবস্থান নিয়ে প্রতিবাদ সভা করে। এ সময় ছাত্ররা অভিযোগ করে বলেন, ভোলার প্রধান বিদ্যাপিঠ সরকারী কলেজে হামলা চালিয়ে বাস শ্রমিকরা ভাংচুর করছে। সে ঘটনায় মামলা হলেও পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করছে না। কিন্তু বাস শ্রমিকরা ছাত্রদের বাস চাপা দিতে গিয়ে নিজেদের এক শ্রমিককে চাপা দিয়ে মেরে ফেলেছে। সে ঘটনায় ছাত্রদের বিরুদ্ধে করা মিথ্যা মামলায় ছাত্রদের গ্রেফতার করছে। এদিকে প্রতিবাদসভা শেষে ছাত্ররা সাড়ে ১২টার দিকে ডিসি অফিসের দিকে অগ্রসর হলে পুলিশ ছাত্রদের বাধা দেয়। এক পর্যায়ে পুলিশী বাধা উপেক্ষা করে ছাত্ররা অগ্রসর হলে পুলিশ ব্যাপক টিয়ার সেল নিক্ষেপ করে। ছাত্রদের ছত্রভঙ্গ করতে তাদের উপর ব্যাপক লাঠিচার্জ করে। এ সময় শতাধিক ছাত্র জনতা আহত হয়েছে। কাঁদানে গ্যাসে ঘটনাস্থলের পাশে ভোলা শহরের বাংলাস্কুল, সরকারী বালিকা বিদ্যালয়, পৌরবালক প্রাথমিক বিদ্যালয়, পৌর বালিকা প্রাথমিক বিদ্যালয়, ওবায়দুল হক মহাবিদ্যালয়সহ হাজার-হাজার শিশু ছাত্র-জনতা দিগি¦দিগ ছুটাছুটি করতে থাকে। ভোলা শহরের ব্যবসায়ীরা দোকান-পাট বন্ধ করে দেয়।
গত রবিবার দুপুরে ছাত্রদের বাস ভাড়া হাফ দেয়া নিয়ে বাস শ্রমিক ও ভোলা সরকারী কলেজের ছাত্রদের মধ্যে সংর্ঘষে আবুল মোমেন (১২) নামে এক বাস শ্রমিক মারা যায়। তৃতীয় দিনের মতো শ্রমিকরা রাস্তায় বাস রেখে সড়ক অবরোধ করলে অন্যান্য উপজেলার প্রবেশ মুখ মোস্তফা কামাল বাসস্ট্যান্ড এলাকায় যানবাহনের বিশাল জট সৃষ্টি হয়েছে। ভোলায় সড়ক অবরোধ থাকায় ভোলা-খুলনা, ভোলা-যশোর, ভোলা-চট্টগ্রাম, ভোলা-ঢাকা রুটের সকল যাত্রীবাহী বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে।
এদিকে ভোলা বাস মালিক সমিতির পক্ষ থেকে সোমবার রাতে ভোলা থানায় নিহত মমিনের পিতা ইয়াকুব আলী বাদী হয়ে ভোলা থানায় ১২ জনের নামসহ অজ্ঞাত ৭০ জনের বিরুদ্বে মামলা দায়ের করেন। অপরদিকে ভোলা সরকারী কলেজে বাস শ্রমিকদের হামলা, লুট, ভাংচুরের ঘটনায় কলেজের শিক্ষক মহিউদ্দিন বাদী হয়ে ১৪ জনের নামসহ অজ্ঞাত ২/৩শ’ ব্যক্তির নামে ভোলা থানায় মামলা দায়ের করেছে।
বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম সাংবাদিকদের বলেন, শ্রমিক হত্যা, গাড়ি ভাংচুর, লুটপাটের ঘটনার সুষ্ঠু বিচার, আসামি গ্রেফতার না করলে আমরা সড়ক অবরোধ তুলবনা।
অপর দিকে ভোলা সরকারী কলেজের অধ্যক্ষ পারভীন আক্তার সাংবাদিকদের বলেছেন, পুলিশ প্রশাসন কথা বলছে এক রকম, কিন্তু কাজ করছে অন্য রকম। ছাত্ররা তাদের বিরুদ্ধে করা একটি মিথ্যা মামলার প্রতিবাদ করতে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে নেমেছে। কিন্তু পুলিশ নির্মমভাবে তাদের মেরেছে। অধ্যক্ষ আরও বলেন, ভোলা বাস মালিক সমিতির লেলিয়ে দেয়া শ্রমিক পুলিশের সামনে কলেজ ভেঙ্গে চুরমার করল, আমরা মামলা দিলাম, কিন্তু পুলিশ তাদের ধরছে না, ধরছে নিরীহ ছাত্রদের। বাস শ্রমিকরা বাস চালিয়ে কলেজ ছাত্রদের হত্যা করতে গিয়ে শ্রমিক মেরে ফেলেছে, সে দায় ছাত্রদের উপর চাপাচ্ছে।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) রফিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, আমরা দুই পক্ষকে ডেকে বিষয়টি নিষ্পত্তির ডাক দিয়েছি। কিন্তু বাস মালিক সমিতি আসতে চাইছে না।

No comments

Powered by Blogger.