সরকারের কি কিছুই করণীয় নেই?-রমজানের আগেই বাজার চড়া

নিত্যপণ্যের বাজার মনে হয় ‘কোনো দিন’ শান্ত হবে না। কোনো দিন কথাটা বলার অর্থ, নিকট অতীতে দেখা যায়নি যে বাজারে নিয়মের রাজত্ব কায়েম হয়েছে। কোনো দিনই দেখা যায়নি যে দাম না বাড়ার বিষয়ে সরকারের প্রতিশ্রুতি বা পদক্ষেপে কোনো কাজ হয়েছে। বাজার চলছে সম্পূর্ণ বাজারের নিয়মে আর সেই নিয়মের রচয়িতা ব্যবসায়ীরা


স্বয়ং। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বরাবরের মতোই সাক্ষীগোপাল কিংবা কাগুজে বাঘ। এই বাজার-নৈরাজ্যের শিকার সীমিত ও নিম্ন আয়ের মানুষের প্রতি সরকার এত নির্দয় হলে চলবে কী করে?
সরকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, রমজান মাসে নিত্যপণ্যের দাম বাড়বে না। রমজান এখনো আসেনি, কিন্তু ইতিমধ্যেই বাজার দারুণ চড়া হওয়া শুরু করেছে। আগে দাম বাড়ত সপ্তাহে সপ্তাহে, এখন বাড়ছে দিনে দিনে। হেন কোনো পণ্য নেই, যার দাম বাড়েনি। চাহিদা বাড়লে দাম কমে মুনাফা সমন্বয় হবে—বাজার অর্থনীতির এই নিয়ম একেবারেই খাটছে না। টিসিবির মাধ্যমে কিছু কিছু পণ্যের জোগান বাড়ছে, আমদানি করতে হয় এমন কিছু পণ্যের দাম হয়তো আন্তর্জাতিক বাজারে কিছু কমেছে, কিংবা হয়তো সরকার মূল্য নির্ধারণ করে দিয়েছে; কোনো ফায়দা নেই। লাভের কারবারিরা লাভ বাড়িয়েই যাচ্ছে এবং দেশের ৯০ শতাংশ মানুষকে জীবনের অন্যান্য খরচ কমিয়ে সেই বাড়তি মুনাফা জুগিয়ে যেতে হচ্ছে। আয় আর ব্যয়ের ব্যবধান বাড়তে বাড়তে সহ্যক্ষমতা ছিঁড়ে যাওয়ার উপক্রম হচ্ছে। ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট যখন লাগামছাড়া, প্রশাসনযন্ত্র যখন হয় তাদের বশ অথবা ঠেকাতে অবশ, তখন নৈরাজ্য নেমে আসে। নিত্যপণ্যের বাজারে সেই নৈরাজ্যই চলছে।
মানুষের আয় বাড়ার প্রমাণ হিসেবে অর্থমন্ত্রী একবার বাজারের কেনাকাটা বাড়ার কথা বলেছিলেন। তিনি হয়তো জানেন না, দাম যতই বাড়ুক, শিক্ষা-বিনোদন-চিকিৎসাসহ মৌলিক খরচগুলো কমিয়ে যতক্ষণ পারে মানুষ বাজার করবেই। কারণ, মানুষকে খেতে হয়। যে দেশের ৯০ শতাংশ মানুষকে কেবল খাওয়া ও থাকার জন্য আয়ের ৮০-৯০ শতাংশ খরচ করতে হয়, সেই দেশের অর্থনীতি গরিবি অর্থনীতি। সেই গরিবি অর্থনীতি থেকেই যখন একশ্রেণীর ব্যবসায়ী ও মজুদদার বিপুল মুনাফা করেন, তখন সেই অর্থনীতিকে গরিব মারার অর্থনীতিই বলতে হবে।
ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট ও আড়তদারদের কারসাজি অবাধ রেখে টিসিবির মাধ্যমে খোলাবাজারে পণ্য বিক্রি করে ফল লাভের আশা বাতুলতা। মূল্য নির্ধারণ করে তা মানা হচ্ছে কি না, সে বিষয়ে তদারকি ছাড়া উন্নতি আশা করা যায় না। সরকারের বাজার নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা তখনই অর্থবহ হবে, যখন বাজারকে বাধাগ্রস্ত না করেই সিন্ডিকেটের কারসাজিগুলো বানচাল করা সম্ভব হবে। আসন্ন রমজানে দয়া করে বাজারব্যবস্থাকে সামলান। বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের যে একটা ভূমিকা আছে, সেটি কথা নয় কাজেই প্রমাণ রাখুন।

No comments

Powered by Blogger.