সন্তান নারীর ক্যারিয়ার গঠনে বড় বাধা!
যেকোনো মানুষের কাছেই নিজের সন্তান অনিন্দ্য সুন্দর এক প্রিয়মুখ। আর প্রতিটা মায়ের কাছে জীবনের চেয়েও প্রিয়। কথায় আছে মানুষ দুই কারণে তার নিজের জীবনকে উৎসর্গ করতে পারে-এক. দেশ, দুই. সন্তান।
সত্যিই তাই! কিন্তু সব বাস্তবতাই একটু অন্যভাবে আসে মায়েদের জীবনে। প্রিয় সন্তানের দেখভাল করা, স্কুলিং করানো এবং একইসঙ্গে কর্মস্থানে দক্ষতা অর্জনের আপ্রাণ চেষ্টা, বাসায় ফিরে ফের রান্নাঘর সামলানো সবকিছুর দায়িত্ব একাধারে পালন করতে হয় একজন মা'কে!
আমাদের দেশের পুরুষরা সে তুলনায় অনেক নিরাপদ অবস্থানে থাকেন। তাকে প্রাত্যহিক ঘর-দুয়ার আর সন্তান পালনজনিত কোনো চিন্তা করতে হয় না। ঘরে ফিরেই নিত্যনৈমিত্তিক কাজে ঝাঁপিয়ে পড়তে হয় না। তাদের কর্মপরিধির বাইরের গণ্ডি বড্ড সীমাবদ্ধ।
সবকিছু সামলিয়ে হাঁপিয়ে ওঠা তুলনামূলক দুর্বল মানসিকতার মায়েরা পেশাগত উৎকর্ষ অর্জন তো দূরে থাক একসময় নিজের পেশা ছেড়ে দিয়ে দিরদিনের জন্যে গৃহবন্দী হয়ে পড়েন। সব কিছুর ঊর্ধ্বে সন্তানের কল্যাণ চিন্তায় ব্যাকুল হয়ে ওঠেন সেই মা। মানসিক বিপর্যয়ের কারণে একরকম বাধ্য হন কষ্টার্জিত এবং প্রিয় পেশাকে বানের জলে উৎসর্গ করতে। মানসিক দৈন্যের শিকার আমাদের দেশের এসব ভুক্তভোগী মায়ের জন্য কতটা এগিয়ে এসেছে পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র!
ইউরোপ, আমেরিকার মতো উন্নত দেশগুলোতে ব্যাপকভাবে জন্মহার কমে যাচ্ছে মায়েদের কর্মব্যস্ততার কারণে! পেশাগত কারণে সন্তান লালনপালনের সময় কোথায় তাদের! যদিও সন্তান পালনজনিত অনেক রাষ্ট্রীয় সুবিধা তারা ভোগ করে থাকেন। দেশ-স্থান-কাল ভেদে কোনো মেয়েই চান না নিজেকে চার দেয়ালে আটকে রাখতে। মেধা দিয়ে, যোগ্যতা দিয়ে সবাই নিজের জন্য একটা সম্মানজনক অবস্থান তৈরি করতে চান। আর এই চাওয়াতে প্রথম যে ধাক্কাটা লাগে তা হলো দিল্লি কা লাড্ডুসম বিয়ে। স্বামী এবং তার পরিবার যদি সহযোগিতা করে তাহলে ধাক্কাটা সামলে উঠতে পারেন। তবে সামাজিক বাস্তবতায় এখন অধিকাংশই নিউক্লিয়ার পরিবার হওয়াতে মেয়েটি যখন মা হন তখন তিনি দিশেহারা বোধ করেন। একটা মায়ের জন্য সন্তানকে পরিচর্যা এবং একই সঙ্গে তার পেশাকে অব্যাহত রাখা তার একার পক্ষে দুঃসহ হয়ে ওঠে।
আমাদের দেশের মায়েদের পরিপ্রেক্ষিতে যদি বলি তাহলে সমস্যাটা যেন আরো প্রকটভাবে অনুভূত হয় প্রতিটি পেশাজীবী মায়ের কাছে। অপর্যাপ্ত মাতৃত্বকালীন ছুটি এবং শিশুর জন্যে ডে-কেয়ারের ব্যবস্থা না থাকায় মায়েরা কর্মক্ষেত্রে বর্ণনাতীত মানসিক কষ্ট ভোগ করে থাকেন। পেশাজীবী মায়েদের সহযোগিতার জন্যে মা-শাশুড়ির সহযোগিতা ছাড়া পেশা চালিয়ে যাবার কোনো উপায় নেই। প্রতিনিয়ত পেশা এবং সন্তান এই দ্বৈত টানাপোড়েনে মায়েরা ঘরের বাইরে কাজ করার মানসিক উদ্যেম হারিয়ে ফেলেন। শেষপর্যন্ত বাধ্য হন পেশা ছেড়ে ঘরমুখী হতে। এখনকার অনেক পেশাজীবী মেয়েরাই সন্তান পালনজনিত ভাবনায় সন্তান ধারণ করতে দ্বিধাবোধ করেন।
আমাদের দেশে সরকারি চাকরিজীবী মায়েদের জন্য যেমন কোনো ডে-কেয়ার সহায়তা নেই তেমনি বেসরকারি কোনো উদ্যোগও চোখে পড়ার মতো না। একটা দেশের জাতীয় প্রবৃদ্ধির অগ্রসরে মেয়েদেরকে অবশ্যই এগিয়ে আসতে হবে। আর তাদের নিরবচ্ছিন্ন কর্মতৎপরতা বজায় রাখতে সন্তান হেফাজতমূলক নীতিমালা বৃহৎ পরিসরে সরকারকেই নেয়া উচিত। আমাদের দেশের মেয়েদের এই সুবিধা অনেক আগেই পাওয়া উচিত ছিল তার কারণ আমাদের সরকার এবং বিরোধীদলীয় নেতা দুজনই মহিলা। আশা লালন করতে তো সমস্যা নেই। একদিন নিশ্চয়ই প্রতিটা প্রতিষ্ঠানেই ডে-কেয়ার সুবিধা ভোগ করবে মেয়েরা। এই বিষয়ে নীতিনির্ধারকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি অতি বিনয়ের সঙ্গে। সন্তান জীবনের জন্য বোঝা না হয়ে অপরিহার্য হয়ে উঠুক।
No comments