ডক্টর জোহা : মৃত্যুর কাছে মৃত্যু পরাভূত by শিশির কুমার ভট্টাচার্য
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক পেরিয়ে প্রশাসন ভবনের দিকে এগিয়ে গেলেই চোখে পড়ে একটি মাজার ফুলের বাগানে ঘেরা সুশোভিত। এখানেই চিরনিন্দ্রায় শায়িত আছেন ঊনসত্তরের শহীদ ডক্টর শামসুজ্জোহা। মাজারের সঙ্গে উৎকীর্ণ তাঁরই কণ্ঠ থেকে উচ্চারিত একটি বাক্য।
'কোনো ছাত্রের গায়ে একটিও গুলি লাগার আগে সে গুলি আমারই বুকে লাগবে।'
সেদিন ছিল মঙ্গলবার। ১৯৬৯-এর ১৮ ফেব্রুয়ারি। সকাল থেকেই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চত্বরে প্রচণ্ড উত্তেজনা। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার অন্যতম আসামি সার্জেন্ট জহুরুল হক হত্যার প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা আগের দিন ১৭ ফেব্রুয়ারি যে বিক্ষোভ মিছিল করে তাতে পুলিশি হামলা হয়। তাতে আহত হন বহু ছাত্র। এরই প্রতিবাদে ছাত্ররা উত্তেজিত, মারমুখী। ১৪৪ ধারা অব্যাহত। বিক্ষুব্ধ ছাত্ররা ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে মিছিল করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। ওদিকে প্রধান ফটকের সামনে সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। একটি বিস্ফোরণোন্মুখ অবস্থা। যেকোনো মুহূর্তে ঘটে যেতে পারে এক চরম অঘটন। জোহা সাহেব শুধু এদিক-ওদিক ছোটাছুটি করছেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর। একবার সামরিক অফিসারদের সঙ্গে কথা বলছেন, আবার ছাত্রদের নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছেন। কিন্তু ছাত্ররা তখন মরিয়া। উত্তেজনার মুখে একপর্যায়ে কিছু ছাত্র জোহার সামনেই কর্তব্যরত সামরিক অফিসারকে লাঞ্ছিত করে। ভীষণ ক্রোধে অফিসারের চোখ দুটি হিংস্র শ্বাপদের মতো জ্বলে ওঠে। জোহা সাহেবের শত অনুনয়-বিনয় সত্ত্বেও একপর্যায়ে তিনি অর্ডার করলেন, 'ফায়ার অ্যান্ড কিল দেম'। কিন্তু না, বাঙালি জওয়ানরা সে আদেশ অমান্য করে কর্তব্যরত ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশ মতো বেতার কেন্দ্রের দিকে সরে যায়। জোহা সাহেব তখন আরো কয়েকজন শিক্ষকের সহায়তায় ছাত্রদের বুঝিয়েসুঝিয়ে ক্যাম্পাসের ভেতর ফেরত পাঠাতে সমর্থ হন। বাইরে আরো কেউ আছে কি না দেখে নিয়ে তিনি যখন ফিরে আসছিলেন, তখনই পেছন দিক থেকে তাঁকে গুলি করা হয়। সকাল তখন ১১টা। গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর তাঁর ওপর বেয়নেট চার্জ করা হয়। সেনাবাহিনীর লোকরা তাঁকে আহত অবস্থায় বিকেল সাড়ে তিনটা পর্যন্ত রাজশাহী মিউনিসিপ্যালিটির অফিসে ফেলে রাখে। বিকেল চারটার দিকে তাঁকে সার্জিক্যাল রুমে নিয়ে যাওয়ার পরই তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তিনি কথা রাখলেন। নিজে গুলি খেয়ে শত শত ছাত্রের জীবন রক্ষা করে গেলেন। জোহাকে সমাহিত করা হলো প্রশাসন ভবনের সামনে।
ড. জোহা রাজনীতিবিদ ছিলেন না, এমনকি বিশেষ কোনো দলের সমর্থকও ছিলেন না। কিন্তু তাঁর রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ছিল। জোহা ছিলেন এক উদ্বাস্তু পরিবারের সদস্য। সাম্প্রদায়িকতার কারণে পশ্চিমবঙ্গ থেকে আগত। যাঁরা উদ্বাস্তু তাঁদের সাধারণত প্রশাসনের পক্ষাবলম্বী হতে দেখা যায়। কিন্তু জোহা ছিলেন ভিন্ন প্রকৃতির। পূর্ব পাকিস্তানের মাটিতে যেকোনো জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে তিনি ছিলেন সোচ্চার সমর্থক। ভাষা আন্দোলনের সেই ঐতিহাসিক মিছিল কিংবা আসাদ হত্যার প্রতিবাদে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মিছিলের অগ্রভাগে জোহার অবস্থান তারই সাক্ষ্য বহন করে। জোহা শহীদ হতে পারতেন সেই বাহান্ন সালেই। অথবা পরবর্তী সময়ে একাত্তর সালে। পাকিস্তানি সেনাবাহিনী বা তাদের এ দেশীয় দোসররা তাঁকে ঠিকই খুঁজে বের করত। কেননা জোহা হৃদয়ে লালন করতেন বাঙালি জাতীয়তাবাদী চেতনা।
জোহা কোনো রাজনীতিবিদ না হলেও তাঁর মৃত্যু কিন্তু এক বিরাট রাজনৈতিক ঘটনা। বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের একটি মাইলফলক। জোহা সাহেব শহীদ হয়েছিলেন বাংলাদেশ রাজনীতির এক ক্রান্তিলগ্নে। একদিকে আইয়ুবীয় স্বৈরশাসনের জাতিগত নিপীড়ন এবং অন্যদিকে স্বাধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ছয় দফা দাবি আদায়ে সমগ্র পূর্ব পাকিস্তান তখন গণ-আন্দোলনে উত্তাল। তারই মধ্যে শেখ মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে আনীত রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা, কথিত আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা, আসাদসহ অনেক প্রতিবাদী ছাত্র-জনতার মৃত্যু এবং সার্জেন্ট জহুরুল হককে বন্দিশিবিরেই গুলি করে হত্যার প্রতিবাদে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে ছাত্র-শিক্ষক-জনতা। এমনি এক সংকটকালে দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ে জোহার মৃত্যুসংবাদ। এ যেন অগি্নতে আত্মাহুতি। বিস্ফোরিত হয়ে যায় সমগ্র পূর্ব পাকিস্তান। জেগে ওঠে সমুদ্রের গর্জন। কারফিউ ভঙ্গ করে রাস্তায় নেমে পড়ে হাজার হাজার লোক। হতাহত হয় অনেক নাম জানা-অজানা বাঙালি সন্তান। বেসামাল আইয়ুব শাহী ত্বরিত আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা তুলে নেয়। শেখ মুজিবকে মুক্তি দেওয়া হয়। আইয়ুব শাহীর পতন ঘটে। তার পরের ইতিহাস তো সংক্ষিপ্ত। জোহার আত্মত্যাগের ফলে সৃষ্টি হয় যে গণ-অভ্যুত্থানের, তা অতি দ্রুত আমাদের পেঁৗছে দেয় একাত্তরে। আমরা লাভ করি আমাদের ঈপ্সিত স্বাধীনতা। জোহার রক্ত আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের এক সক্রিয় ক্যাটালিস্ট। জোহার অন্তিম মুহূর্তের কথাটি ছিল, 'আমি কি বাঁচব?' হ্যাঁ, জোহা বেঁচে আছেন। মরে গিয়েও তিনি আমাদের মধ্যে বেঁচে আছেন। পৃথিবীতে সব মৃত্যু সমান নয়। কোনো কোনো মৃত্যু মৃত্যুকেও পরাভূত করে। জোহার মৃত্যু সে রকমের একটি মৃত্যু, যা মৃত্যুর দ্বার অতিক্রম করে অমরত্বে প্রবেশ করেছে।
ব্যক্তি জোহাও ছিলেন সবার প্রিয়। তিনি ছিলেন একাধারে একজন প্রেমিক স্বামী, একজন স্নেহবৎসল পিতা, একজন নিবেদিতপ্রাণ শিক্ষক, একজন ক্রীড়াবিদ ছাত্রবন্ধু এবং প্রাণপ্রাচুর্যে ভরা হাস্যোজ্জ্বল এক ব্যক্তিত্ব। তাঁর মুখে হাসিটি সব সময় লেগেই থাকত। অথচ তাঁর মধ্যেও দুঃখ ছিল, বেদনা ছিল, হতাশা ছিল। তিনি ছিলেন বিশাল এক উদ্বাস্তু পরিবারের অভিভাবক। তাঁর প্রতিপাল্যে ছিল বৃদ্ধ মা-বাবা, এক রুগ্ণ ভাই, দৃষ্টিহীন দুটি বোনসহ তিন বোন, স্ত্রী ও শিশুকন্যা। সংসারের এমন হালে যেখানে অন্য মানুষ মুখ থুবড়ে পড়ে, সেখানে জোহার মনোবল ছিল অটুট। মনের ফুর্তি ছিল সতেজ। তাঁর মুখের হাসিটি কেউ কখনো ম্লান হতে দেখেনি। তাঁকে দেখে কখনোই বোঝা যেত না যে, 'বাহিরে যবে হাসির ছটা ভেতরে তখন চোখের জল।'
লেখক : শিক্ষাবিদ
সেদিন ছিল মঙ্গলবার। ১৯৬৯-এর ১৮ ফেব্রুয়ারি। সকাল থেকেই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চত্বরে প্রচণ্ড উত্তেজনা। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার অন্যতম আসামি সার্জেন্ট জহুরুল হক হত্যার প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা আগের দিন ১৭ ফেব্রুয়ারি যে বিক্ষোভ মিছিল করে তাতে পুলিশি হামলা হয়। তাতে আহত হন বহু ছাত্র। এরই প্রতিবাদে ছাত্ররা উত্তেজিত, মারমুখী। ১৪৪ ধারা অব্যাহত। বিক্ষুব্ধ ছাত্ররা ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে মিছিল করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। ওদিকে প্রধান ফটকের সামনে সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। একটি বিস্ফোরণোন্মুখ অবস্থা। যেকোনো মুহূর্তে ঘটে যেতে পারে এক চরম অঘটন। জোহা সাহেব শুধু এদিক-ওদিক ছোটাছুটি করছেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর। একবার সামরিক অফিসারদের সঙ্গে কথা বলছেন, আবার ছাত্রদের নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছেন। কিন্তু ছাত্ররা তখন মরিয়া। উত্তেজনার মুখে একপর্যায়ে কিছু ছাত্র জোহার সামনেই কর্তব্যরত সামরিক অফিসারকে লাঞ্ছিত করে। ভীষণ ক্রোধে অফিসারের চোখ দুটি হিংস্র শ্বাপদের মতো জ্বলে ওঠে। জোহা সাহেবের শত অনুনয়-বিনয় সত্ত্বেও একপর্যায়ে তিনি অর্ডার করলেন, 'ফায়ার অ্যান্ড কিল দেম'। কিন্তু না, বাঙালি জওয়ানরা সে আদেশ অমান্য করে কর্তব্যরত ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশ মতো বেতার কেন্দ্রের দিকে সরে যায়। জোহা সাহেব তখন আরো কয়েকজন শিক্ষকের সহায়তায় ছাত্রদের বুঝিয়েসুঝিয়ে ক্যাম্পাসের ভেতর ফেরত পাঠাতে সমর্থ হন। বাইরে আরো কেউ আছে কি না দেখে নিয়ে তিনি যখন ফিরে আসছিলেন, তখনই পেছন দিক থেকে তাঁকে গুলি করা হয়। সকাল তখন ১১টা। গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর তাঁর ওপর বেয়নেট চার্জ করা হয়। সেনাবাহিনীর লোকরা তাঁকে আহত অবস্থায় বিকেল সাড়ে তিনটা পর্যন্ত রাজশাহী মিউনিসিপ্যালিটির অফিসে ফেলে রাখে। বিকেল চারটার দিকে তাঁকে সার্জিক্যাল রুমে নিয়ে যাওয়ার পরই তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তিনি কথা রাখলেন। নিজে গুলি খেয়ে শত শত ছাত্রের জীবন রক্ষা করে গেলেন। জোহাকে সমাহিত করা হলো প্রশাসন ভবনের সামনে।
ড. জোহা রাজনীতিবিদ ছিলেন না, এমনকি বিশেষ কোনো দলের সমর্থকও ছিলেন না। কিন্তু তাঁর রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ছিল। জোহা ছিলেন এক উদ্বাস্তু পরিবারের সদস্য। সাম্প্রদায়িকতার কারণে পশ্চিমবঙ্গ থেকে আগত। যাঁরা উদ্বাস্তু তাঁদের সাধারণত প্রশাসনের পক্ষাবলম্বী হতে দেখা যায়। কিন্তু জোহা ছিলেন ভিন্ন প্রকৃতির। পূর্ব পাকিস্তানের মাটিতে যেকোনো জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে তিনি ছিলেন সোচ্চার সমর্থক। ভাষা আন্দোলনের সেই ঐতিহাসিক মিছিল কিংবা আসাদ হত্যার প্রতিবাদে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মিছিলের অগ্রভাগে জোহার অবস্থান তারই সাক্ষ্য বহন করে। জোহা শহীদ হতে পারতেন সেই বাহান্ন সালেই। অথবা পরবর্তী সময়ে একাত্তর সালে। পাকিস্তানি সেনাবাহিনী বা তাদের এ দেশীয় দোসররা তাঁকে ঠিকই খুঁজে বের করত। কেননা জোহা হৃদয়ে লালন করতেন বাঙালি জাতীয়তাবাদী চেতনা।
জোহা কোনো রাজনীতিবিদ না হলেও তাঁর মৃত্যু কিন্তু এক বিরাট রাজনৈতিক ঘটনা। বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের একটি মাইলফলক। জোহা সাহেব শহীদ হয়েছিলেন বাংলাদেশ রাজনীতির এক ক্রান্তিলগ্নে। একদিকে আইয়ুবীয় স্বৈরশাসনের জাতিগত নিপীড়ন এবং অন্যদিকে স্বাধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ছয় দফা দাবি আদায়ে সমগ্র পূর্ব পাকিস্তান তখন গণ-আন্দোলনে উত্তাল। তারই মধ্যে শেখ মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে আনীত রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা, কথিত আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা, আসাদসহ অনেক প্রতিবাদী ছাত্র-জনতার মৃত্যু এবং সার্জেন্ট জহুরুল হককে বন্দিশিবিরেই গুলি করে হত্যার প্রতিবাদে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে ছাত্র-শিক্ষক-জনতা। এমনি এক সংকটকালে দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ে জোহার মৃত্যুসংবাদ। এ যেন অগি্নতে আত্মাহুতি। বিস্ফোরিত হয়ে যায় সমগ্র পূর্ব পাকিস্তান। জেগে ওঠে সমুদ্রের গর্জন। কারফিউ ভঙ্গ করে রাস্তায় নেমে পড়ে হাজার হাজার লোক। হতাহত হয় অনেক নাম জানা-অজানা বাঙালি সন্তান। বেসামাল আইয়ুব শাহী ত্বরিত আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা তুলে নেয়। শেখ মুজিবকে মুক্তি দেওয়া হয়। আইয়ুব শাহীর পতন ঘটে। তার পরের ইতিহাস তো সংক্ষিপ্ত। জোহার আত্মত্যাগের ফলে সৃষ্টি হয় যে গণ-অভ্যুত্থানের, তা অতি দ্রুত আমাদের পেঁৗছে দেয় একাত্তরে। আমরা লাভ করি আমাদের ঈপ্সিত স্বাধীনতা। জোহার রক্ত আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের এক সক্রিয় ক্যাটালিস্ট। জোহার অন্তিম মুহূর্তের কথাটি ছিল, 'আমি কি বাঁচব?' হ্যাঁ, জোহা বেঁচে আছেন। মরে গিয়েও তিনি আমাদের মধ্যে বেঁচে আছেন। পৃথিবীতে সব মৃত্যু সমান নয়। কোনো কোনো মৃত্যু মৃত্যুকেও পরাভূত করে। জোহার মৃত্যু সে রকমের একটি মৃত্যু, যা মৃত্যুর দ্বার অতিক্রম করে অমরত্বে প্রবেশ করেছে।
ব্যক্তি জোহাও ছিলেন সবার প্রিয়। তিনি ছিলেন একাধারে একজন প্রেমিক স্বামী, একজন স্নেহবৎসল পিতা, একজন নিবেদিতপ্রাণ শিক্ষক, একজন ক্রীড়াবিদ ছাত্রবন্ধু এবং প্রাণপ্রাচুর্যে ভরা হাস্যোজ্জ্বল এক ব্যক্তিত্ব। তাঁর মুখে হাসিটি সব সময় লেগেই থাকত। অথচ তাঁর মধ্যেও দুঃখ ছিল, বেদনা ছিল, হতাশা ছিল। তিনি ছিলেন বিশাল এক উদ্বাস্তু পরিবারের অভিভাবক। তাঁর প্রতিপাল্যে ছিল বৃদ্ধ মা-বাবা, এক রুগ্ণ ভাই, দৃষ্টিহীন দুটি বোনসহ তিন বোন, স্ত্রী ও শিশুকন্যা। সংসারের এমন হালে যেখানে অন্য মানুষ মুখ থুবড়ে পড়ে, সেখানে জোহার মনোবল ছিল অটুট। মনের ফুর্তি ছিল সতেজ। তাঁর মুখের হাসিটি কেউ কখনো ম্লান হতে দেখেনি। তাঁকে দেখে কখনোই বোঝা যেত না যে, 'বাহিরে যবে হাসির ছটা ভেতরে তখন চোখের জল।'
লেখক : শিক্ষাবিদ
No comments