আবার আলোচনায় গেইল ঝড় by মোঃ এনামুল হাসান
জ্যামাইকায় দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ক্যারিবীয়দের কাছে নাস্তানাবুদ হওয়ার পর নিউজিল্যান্ড অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসনের কাছে সংবাদকর্মীরা জানতে চান, দুই টি২০র পর দুই ওয়ানডে মিলিয়ে টানা চার হারÑ পরের ম্যাচে ঘুরে দাঁড়ানো নিয়ে কি ভাবছেন তিনি।
জবাবে ওয়ানডে ইতিহাসের তৃতীয় সর্বকনিষ্ঠ অধিনায়ক হয়েও বিজ্ঞের মতো রূঢ় সত্য কথাটা উচ্চারণ করেছিলেন কেন। কিউই দলপতি বলেছিলেন, ‘জয়, ঘুরে দাঁড়ানো পরের বিষয় আমাদের তার আগে গেইলকে থামাতে হবে! ভাবনা জুড়ে এখন কেবলই গেইল। সত্যি করে বললে গেইল-আতঙ্ক আমাদের পেয়ে বসেছে। কিছুতেই থামানো যাচ্ছে না। ওকে ফেরাতে কোচ প্রতিদিনই প্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে গবেষণা করছেন। কিন্তু কিছুতেই কিছু হচ্ছে না। এ ম্যাচটির কথাই ধরুন, স্বাগতিকদের ৩১৫র বিপরীতে প্রায় পৌনে তিন শ’ রান করেছি আমরা। সে হিসেবে গেইলের সেঞ্চুরিটিই হিসেবে পাল্টে দিয়েছে।’ বেচারা ২১ বছরের পুঁচকে উইলিয়ামসন আর কি-ই বা বলবেন।
নানা ঘটন অঘটন আর নাটকীয়তা শেষে দীর্ঘ পনেরো মাস পর গেইল যেন অনেকটা পণ করেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরেছেন। আইপিএলের ফর্মটা বয়ে এনেছেন জাতীয় দলে। ওভালে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ন্যাটওয়েস্ট সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ফেরার ম্যাচটি উদ্যাপন করেন হাফ সেঞ্চুরি দিয়ে। এরপর ফ্লোরিডা হয়ে ঘরের মাটিতে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে মোট ইনিংস খেলেছেন ৬টিÑ যার চারটিতে হাঁকিয়েছেন হাফ সেঞ্চুরি ও একটিতে সেঞ্চুরি! ওয়েস্ট ইন্ডিজ জাতীয় দলে ফেরার পর ছয় ইনিংসে গেইল ঝড়ের নমুনা দেখুন : ৫৩, ২, ৮৫*, ৫৩, ৬৩* ও ১২৫; কেবল অবিশ্বাস্যই নয়, যেন জাদু! ‘বিধ্বংসী ব্যাটসম্যানরা খুব একটা ধারাবাহিক হয় না’Ñ ক্রিকেটের পুরনো এ ধারণা ভেঙ্গে দিচ্ছেন ক্যারিবিয়ান ব্যাটিংদৈত্য ক্রিস গেইল। পনেরো মাস পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরেছেন নিজস্ব রুদ্রমূর্তি নিয়ে। যে রুদ্রতার তেজে পুড়ে মরছে সফরকারী কিউইরা। ড্যাশিং হিরোর খুনে ব্যাটিংয়ের সামনে বল ফেলার এক ইঞ্চি জায়গা খুঁজে পাচ্ছে না মার্টিন ক্রোর উত্তরসূরিরা! স্বভাবমতো কিউই বোলিং নিয়ে ছেলেখেলায় মেতে উঠেছেন ক্যারিবিয়ান ক্রিকেটের শেষ স্বীকৃত তারকা। শুধু ছেলেখেলা বললে কম হবে, এ যেন নিদারুণ খেলা। ধ্বংসাত্মক ব্যাটিংয়ে প্রতিপক্ষকে চিড়েচ্যাপটা করার নেশায় মেতেছেন ৩২ বছর বয়সী জ্যামাইকান। ব্যাটে রানের ফুলঝুরি ছোটাচ্ছেন। নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে দুই টি২০ ও অনুষ্ঠিত হওয়া দুই ওয়ানডেতে চার ম্যাচে ১১৩ গড়ে তাঁর মোট রান ২২৬। স্যাবাইনা পার্কের দ্বিতীয় ওয়ানডের কথাই ধরা যাক। অপরাজিত সেঞ্চুরির পর ২ উইকেট নিয়ে ম্যাচসেরা হয়েছেন মারলন স্যামুয়েলস। কিন্তু শুরুর আগেই প্রতিপক্ষকে ম্যাচ থেকে ছিটকে ফেলেছেন ওই ক্রিস নামের ভয়ঙ্কর গেইল। কাইল মিলস আর টিম সাউদিদের তুলোধুনো করে হাঁকিয়েছেন ক্যারিয়ারের ২০তম ওয়ানডে সেঞ্চুরি। ১০৩ বলে ১০১ রান করার পথে ৭ চারের বিপরীতে স্যামুয়েলসের ছয়ের মার যেখানে মাত্র ১টি, সেখানে ৮ চারের বিপরীতে গেইল ছক্কা হাঁকিয়েছেন ৯টি! একেবারে ‘গেইলীয় স্টাইল’ বলতে যা বোঝায়! ফিফটি পূরণ করেছেন ৪২ বলে। আর সেঞ্চুরি ৮৯ বলে। ১০৭ বলে ১২৫ রান করে তৃতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে যখন সাজঘরে ফেরেন ৩৭ ওভারে ২২৭ রান করে তখন বড় রান সংগ্রহের রাস্তাটা প্রশস্ত সামিদের। এরপর দলও জেতে বড় ব্যবধানে।
তার আগে আমেরিকার ফ্লোরিডায়ও কি কম দেখিয়েছেন? আমেরিকায় ক্যারিবীয়দের বিরুদ্ধে টি২০ সিরিজে পাত্তাই পায়নি কিউইরা। বলা ভাল, অতি স্বল্পদৈর্ঘ্যে হালের দুই সেনসেশন ক্রিস গেইল ও সুনিল নারিনে তোপে উড়ে গেছে রস টেইলর বাহিনী। যেখানে দ্বিতীয় লড়াইয়ে ৬১ রানের জয়ের মধ্য দিয়ে দুই ম্যাচের সিরিজে অতিথিদের হোয়াইটওয়াশ করে ড্যারেন সামির দল। একই ভেন্যু ফ্লোরিডার লান্ডারহিলে প্রথম টি২০তে ৫৬ রানের জয় পেয়েছিল তারা। দীর্ঘ পনেরো মাসের দ্বন্দ্ব-নাটকীয়তা শেষে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ফিরে ইনজুরির জন্য সব ওয়ানডেতে অংশ নিতে না পারলেও সব ছাপিয়ে আলোচনায় ছিলেন ব্যাটিং হিরো ক্রিস গেইল। ইংল্যান্ড থেকে আমেরিকাÑ এক ওয়ানডে ও তিন টি২০ মিলিয়ে ম্যাচ খেলেন চারটি, যার তিনটিতেই হাফ সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে বুঝিয়ে দেন কেন তিনি ক্যারিবিয়ান ব্যাটিংদৈত্য! কেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তাঁর দেড় বছরের অনুপস্থিতিতে কোটি উইন্ডিজবাসীর হৃদয়ে এত হাহাকার। ফেরার পর প্রথম চার ইনিংসে গেইলের গেইলীয় স্কোরগুলো দেখুন : ৫১ বলে ৫৩, ৮ বলে ২, ৫২ বলে ৮৫* ও ৩৯ বলে ৫৩; মোট ১৯৩, গড় ৬৪.৩! অবিশ্বাস্য নয় তো কি। ফ্লোরিডায় দ্বিতীয় ম্যাচেও গেইল তা-ব দেখে আশ্চর্য, অবিশ্বাস্য মনে হয়েছে কিউইদেরও। এত ধারাবাহিক, এত নিখুঁত, এত আক্রমণাত্মক। টস জিতে গেইলকে আরেকবার রানের পসরা সাজাবার সুযোগ করে দিয়েছিলেন অধিনায়ক ড্যারেন সামি। দলীয় ১৪ রানের মাথায় ডোয়াইন স্মিথ ফিরে গেলেও গেইল ছিলেন স্বমূর্তিতে সমুজ্জ্বল। কাইল মিলস-ডগ ব্রেসওয়েলদের পাড়ার বোলার বানিয়ে টানা দ্বিতীয় হাফ সেঞ্চুরির পথে তুলে নিয়েছেন ৫৩ রান। যাতে ছিল বাহারি ৩ চার ও ৪ ছক্কার মার। জনসন চার্লসকে সঙ্গে নিয়ে ১০ ওভারে ৭০ রান যোগ করেন তিনি। চার্লস আউট হওয়ার তিন ওভারের মাথায় অর্থাৎ দলীয় ১৫.২ ওভারে গেইল সাজঘরে ফিরলেও ততক্ষণে দলের বড় সংগ্রহের ভিত রচিত হয়। যার ওপর দাঁড়িয়ে শেষ ৪.২ ওভারে আরও ৬০ রান যোগ করে ক্যারিবীয়দের দলীয় সংগ্রহ চ্যালেঞ্জিং অবস্থানে নিয়ে যান লেন্ডন সিমন্স-ডোয়াইন ব্রাভোরা। দানবীয় ব্যাটিং সত্ত্বে¡ও দলের জয়কেই বড় করে দেখেন গেইল। বলেন, ‘ব্যক্তিগত অর্জনের চেয়ে দলের জয়টাই আমার কাছে বড়। ইংল্যান্ডে ব্যর্থতার পর নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে টি২০ জয় দিয়ে আমাদের শুরুটা বেশ ভাল হলো। ওয়ানডে ও টেস্টেও ব্যাট হাতে এভাবে অবদান রাখতে চাই।’
গত চার বছরে গেইলের সঙ্গে একাধিকবার ঝামেলা হয় উইন্ডিজ ক্রিকেট বোর্ড ডব্লিউআইসিবির। ২০০৯-১০-এ সিনিয়র ক্রিকেটারদের সঙ্গে বেতনÑভাতা নিয়ে বোর্ডের যে তুমুল বিবাদ হয়, তাতে নেপথ্যে থেকে ক্রিকেটারদের পক্ষে রসদ যোগান গেইল। তখন থেকেই ঝামেলার শুরু। এরপর অনেক নাটকীয়তা শেষে ২০১১Ñএ ওয়ানডে বিশ্বকাপে দলে ফেরেন। ২৩ মার্চ পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কোয়ার্টার ফাইনালে খেলা ম্যাচটিই উইন্ডিজের হয়ে ক্রিস গেইলে শেষ ম্যাচ ছিল। বিশ্বকাপের পর দেশে ফিরে স্থানীয় এক রেডিও চ্যানেলে বোর্ড, নির্বাচক ও কোচের বিরুদ্ধে বক্তব্য দিয়ে আবারও বিরাগভাজন হন। সেই থেকে দলের বাইরে। এর মধ্যে কয়েকবারই আলোচনায় উঠে আসেন কিন্তু ‘ইগো’ সমস্যার কারণে চূড়ান্ত সমঝোতা হয়নি। অবশেষে সেন্ট ভিনসেন্ট ও বার্বাডোজের প্রধানমন্ত্রীর মতো বিখ্যাত রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের হস্তক্ষেপে দীর্ঘ ১৫ মাস পর ফের জাতীয় দলে ফেরার পথ তৈরি হয়। গেইল ফেরায় দেশটির সাবেক গ্রেটসহ বর্তমান অধিনায়ক কোচ সবাই সন্তোষ প্রকাশ করেন। মাইকেল হোল্ডিং যেমন বলেছিলেন, ‘গেইলকে দলে নেয়া হয়েছেÑ এটি ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটের জন্য অনেক বড় খবর। গোটা ক্যারিবীয়বাসীই তাঁকে ব্যাট হাতে মাঠে দেখতে অধীর। ওঁর মতো বিরল এক প্রতিভাবান ব্যাটসম্যান থাকলে সামির দলের চেহারাটাই বদলে যাবে।’ আবার যে অতিশ গিবসনের সঙ্গে একটা শীতল যুদ্ধ চলছিল সেই কোচও বলেছিলেন, ‘ব্যাট হাতে গেইলের সামর্থ্য নিয়ে কোন সন্দেহ নেই। ওঁর মতো একজনের দলে থাকার মানে হচ্ছে মানসিকভাবে এগিয়ে থাকা।’ সেসব যে কেবল আবেগের কথা নয়, গেইল ব্যাট হাতে ফিরেই তা বুঝিয়ে দিলেন। তাতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ তো বটেই, গোটা দুনিয়ার ক্রিকেটভক্তদের লাভটাও কম হলো না!
নানা ঘটন অঘটন আর নাটকীয়তা শেষে দীর্ঘ পনেরো মাস পর গেইল যেন অনেকটা পণ করেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরেছেন। আইপিএলের ফর্মটা বয়ে এনেছেন জাতীয় দলে। ওভালে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ন্যাটওয়েস্ট সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ফেরার ম্যাচটি উদ্যাপন করেন হাফ সেঞ্চুরি দিয়ে। এরপর ফ্লোরিডা হয়ে ঘরের মাটিতে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে মোট ইনিংস খেলেছেন ৬টিÑ যার চারটিতে হাঁকিয়েছেন হাফ সেঞ্চুরি ও একটিতে সেঞ্চুরি! ওয়েস্ট ইন্ডিজ জাতীয় দলে ফেরার পর ছয় ইনিংসে গেইল ঝড়ের নমুনা দেখুন : ৫৩, ২, ৮৫*, ৫৩, ৬৩* ও ১২৫; কেবল অবিশ্বাস্যই নয়, যেন জাদু! ‘বিধ্বংসী ব্যাটসম্যানরা খুব একটা ধারাবাহিক হয় না’Ñ ক্রিকেটের পুরনো এ ধারণা ভেঙ্গে দিচ্ছেন ক্যারিবিয়ান ব্যাটিংদৈত্য ক্রিস গেইল। পনেরো মাস পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরেছেন নিজস্ব রুদ্রমূর্তি নিয়ে। যে রুদ্রতার তেজে পুড়ে মরছে সফরকারী কিউইরা। ড্যাশিং হিরোর খুনে ব্যাটিংয়ের সামনে বল ফেলার এক ইঞ্চি জায়গা খুঁজে পাচ্ছে না মার্টিন ক্রোর উত্তরসূরিরা! স্বভাবমতো কিউই বোলিং নিয়ে ছেলেখেলায় মেতে উঠেছেন ক্যারিবিয়ান ক্রিকেটের শেষ স্বীকৃত তারকা। শুধু ছেলেখেলা বললে কম হবে, এ যেন নিদারুণ খেলা। ধ্বংসাত্মক ব্যাটিংয়ে প্রতিপক্ষকে চিড়েচ্যাপটা করার নেশায় মেতেছেন ৩২ বছর বয়সী জ্যামাইকান। ব্যাটে রানের ফুলঝুরি ছোটাচ্ছেন। নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে দুই টি২০ ও অনুষ্ঠিত হওয়া দুই ওয়ানডেতে চার ম্যাচে ১১৩ গড়ে তাঁর মোট রান ২২৬। স্যাবাইনা পার্কের দ্বিতীয় ওয়ানডের কথাই ধরা যাক। অপরাজিত সেঞ্চুরির পর ২ উইকেট নিয়ে ম্যাচসেরা হয়েছেন মারলন স্যামুয়েলস। কিন্তু শুরুর আগেই প্রতিপক্ষকে ম্যাচ থেকে ছিটকে ফেলেছেন ওই ক্রিস নামের ভয়ঙ্কর গেইল। কাইল মিলস আর টিম সাউদিদের তুলোধুনো করে হাঁকিয়েছেন ক্যারিয়ারের ২০তম ওয়ানডে সেঞ্চুরি। ১০৩ বলে ১০১ রান করার পথে ৭ চারের বিপরীতে স্যামুয়েলসের ছয়ের মার যেখানে মাত্র ১টি, সেখানে ৮ চারের বিপরীতে গেইল ছক্কা হাঁকিয়েছেন ৯টি! একেবারে ‘গেইলীয় স্টাইল’ বলতে যা বোঝায়! ফিফটি পূরণ করেছেন ৪২ বলে। আর সেঞ্চুরি ৮৯ বলে। ১০৭ বলে ১২৫ রান করে তৃতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে যখন সাজঘরে ফেরেন ৩৭ ওভারে ২২৭ রান করে তখন বড় রান সংগ্রহের রাস্তাটা প্রশস্ত সামিদের। এরপর দলও জেতে বড় ব্যবধানে।
তার আগে আমেরিকার ফ্লোরিডায়ও কি কম দেখিয়েছেন? আমেরিকায় ক্যারিবীয়দের বিরুদ্ধে টি২০ সিরিজে পাত্তাই পায়নি কিউইরা। বলা ভাল, অতি স্বল্পদৈর্ঘ্যে হালের দুই সেনসেশন ক্রিস গেইল ও সুনিল নারিনে তোপে উড়ে গেছে রস টেইলর বাহিনী। যেখানে দ্বিতীয় লড়াইয়ে ৬১ রানের জয়ের মধ্য দিয়ে দুই ম্যাচের সিরিজে অতিথিদের হোয়াইটওয়াশ করে ড্যারেন সামির দল। একই ভেন্যু ফ্লোরিডার লান্ডারহিলে প্রথম টি২০তে ৫৬ রানের জয় পেয়েছিল তারা। দীর্ঘ পনেরো মাসের দ্বন্দ্ব-নাটকীয়তা শেষে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ফিরে ইনজুরির জন্য সব ওয়ানডেতে অংশ নিতে না পারলেও সব ছাপিয়ে আলোচনায় ছিলেন ব্যাটিং হিরো ক্রিস গেইল। ইংল্যান্ড থেকে আমেরিকাÑ এক ওয়ানডে ও তিন টি২০ মিলিয়ে ম্যাচ খেলেন চারটি, যার তিনটিতেই হাফ সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে বুঝিয়ে দেন কেন তিনি ক্যারিবিয়ান ব্যাটিংদৈত্য! কেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তাঁর দেড় বছরের অনুপস্থিতিতে কোটি উইন্ডিজবাসীর হৃদয়ে এত হাহাকার। ফেরার পর প্রথম চার ইনিংসে গেইলের গেইলীয় স্কোরগুলো দেখুন : ৫১ বলে ৫৩, ৮ বলে ২, ৫২ বলে ৮৫* ও ৩৯ বলে ৫৩; মোট ১৯৩, গড় ৬৪.৩! অবিশ্বাস্য নয় তো কি। ফ্লোরিডায় দ্বিতীয় ম্যাচেও গেইল তা-ব দেখে আশ্চর্য, অবিশ্বাস্য মনে হয়েছে কিউইদেরও। এত ধারাবাহিক, এত নিখুঁত, এত আক্রমণাত্মক। টস জিতে গেইলকে আরেকবার রানের পসরা সাজাবার সুযোগ করে দিয়েছিলেন অধিনায়ক ড্যারেন সামি। দলীয় ১৪ রানের মাথায় ডোয়াইন স্মিথ ফিরে গেলেও গেইল ছিলেন স্বমূর্তিতে সমুজ্জ্বল। কাইল মিলস-ডগ ব্রেসওয়েলদের পাড়ার বোলার বানিয়ে টানা দ্বিতীয় হাফ সেঞ্চুরির পথে তুলে নিয়েছেন ৫৩ রান। যাতে ছিল বাহারি ৩ চার ও ৪ ছক্কার মার। জনসন চার্লসকে সঙ্গে নিয়ে ১০ ওভারে ৭০ রান যোগ করেন তিনি। চার্লস আউট হওয়ার তিন ওভারের মাথায় অর্থাৎ দলীয় ১৫.২ ওভারে গেইল সাজঘরে ফিরলেও ততক্ষণে দলের বড় সংগ্রহের ভিত রচিত হয়। যার ওপর দাঁড়িয়ে শেষ ৪.২ ওভারে আরও ৬০ রান যোগ করে ক্যারিবীয়দের দলীয় সংগ্রহ চ্যালেঞ্জিং অবস্থানে নিয়ে যান লেন্ডন সিমন্স-ডোয়াইন ব্রাভোরা। দানবীয় ব্যাটিং সত্ত্বে¡ও দলের জয়কেই বড় করে দেখেন গেইল। বলেন, ‘ব্যক্তিগত অর্জনের চেয়ে দলের জয়টাই আমার কাছে বড়। ইংল্যান্ডে ব্যর্থতার পর নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে টি২০ জয় দিয়ে আমাদের শুরুটা বেশ ভাল হলো। ওয়ানডে ও টেস্টেও ব্যাট হাতে এভাবে অবদান রাখতে চাই।’
গত চার বছরে গেইলের সঙ্গে একাধিকবার ঝামেলা হয় উইন্ডিজ ক্রিকেট বোর্ড ডব্লিউআইসিবির। ২০০৯-১০-এ সিনিয়র ক্রিকেটারদের সঙ্গে বেতনÑভাতা নিয়ে বোর্ডের যে তুমুল বিবাদ হয়, তাতে নেপথ্যে থেকে ক্রিকেটারদের পক্ষে রসদ যোগান গেইল। তখন থেকেই ঝামেলার শুরু। এরপর অনেক নাটকীয়তা শেষে ২০১১Ñএ ওয়ানডে বিশ্বকাপে দলে ফেরেন। ২৩ মার্চ পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কোয়ার্টার ফাইনালে খেলা ম্যাচটিই উইন্ডিজের হয়ে ক্রিস গেইলে শেষ ম্যাচ ছিল। বিশ্বকাপের পর দেশে ফিরে স্থানীয় এক রেডিও চ্যানেলে বোর্ড, নির্বাচক ও কোচের বিরুদ্ধে বক্তব্য দিয়ে আবারও বিরাগভাজন হন। সেই থেকে দলের বাইরে। এর মধ্যে কয়েকবারই আলোচনায় উঠে আসেন কিন্তু ‘ইগো’ সমস্যার কারণে চূড়ান্ত সমঝোতা হয়নি। অবশেষে সেন্ট ভিনসেন্ট ও বার্বাডোজের প্রধানমন্ত্রীর মতো বিখ্যাত রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের হস্তক্ষেপে দীর্ঘ ১৫ মাস পর ফের জাতীয় দলে ফেরার পথ তৈরি হয়। গেইল ফেরায় দেশটির সাবেক গ্রেটসহ বর্তমান অধিনায়ক কোচ সবাই সন্তোষ প্রকাশ করেন। মাইকেল হোল্ডিং যেমন বলেছিলেন, ‘গেইলকে দলে নেয়া হয়েছেÑ এটি ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটের জন্য অনেক বড় খবর। গোটা ক্যারিবীয়বাসীই তাঁকে ব্যাট হাতে মাঠে দেখতে অধীর। ওঁর মতো বিরল এক প্রতিভাবান ব্যাটসম্যান থাকলে সামির দলের চেহারাটাই বদলে যাবে।’ আবার যে অতিশ গিবসনের সঙ্গে একটা শীতল যুদ্ধ চলছিল সেই কোচও বলেছিলেন, ‘ব্যাট হাতে গেইলের সামর্থ্য নিয়ে কোন সন্দেহ নেই। ওঁর মতো একজনের দলে থাকার মানে হচ্ছে মানসিকভাবে এগিয়ে থাকা।’ সেসব যে কেবল আবেগের কথা নয়, গেইল ব্যাট হাতে ফিরেই তা বুঝিয়ে দিলেন। তাতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ তো বটেই, গোটা দুনিয়ার ক্রিকেটভক্তদের লাভটাও কম হলো না!
No comments