টনসিল অপারেশন-রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে না by সজল আশফাক

সহযোগী অধ্যাপক, নাক, কান ও গলা বিভাগ, হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল
শিশু কিংবা বয়স্ক, যে কারও টনসিল অপারেশনের উপদেশ দেওয়া হলে রোগী কিংবা রোগীর পক্ষ থেকে প্রথমেই প্রশ্ন ওঠে—অপারেশন করলে রোগীর ভবিষ্যতে কোনো সমস্যা হবে কি না। রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা কমে যাবে কি না।


টনসিল অপারেশন-পরবর্তী অবস্থা নিয়ে নানা ধরনের ভুল ধারণা অনেকেরই। অনেকেরই ধারণা, টনসিল অপারেশন করলে শরীরের রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা কমে যায়। ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব পেডিয়াট্রিক অটোল্যারিংগোলজিতে প্রকাশিত মার্চ ২০০৯-এর ৭৩ সংখ্যার নিবন্ধে বলা হয়েছে, টনসিল অপারেশনের কারণে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে না। এ বিষয়ে দীর্ঘমেয়াদি এক গবেষণায় দেখা গেছে, টনসিল অপারেশনের পর কোষবাহী এবং রক্তবাহী কোনো ধরনের রোগ প্রতিরোধক উপাদানের কোনো ঘাটতি শরীরে হয় না। অপারেশনের এক মাসের মধ্যেই রোগীর রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা আগের অবস্থায় ফিরে আসে। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার নির্ধারক কিছু উপাদান রয়েছে। রক্তে যেগুলোর উপস্থিতি নিরূপণের মাধ্যমে বোঝা যায় শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার অবস্থা। কোষবাহী প্রতিরোধ ক্ষমতার নিরূপক উপাদানগুলো হচ্ছে, সিডি৩+, সিডি৪+, সিডি৮+, সিডি১৯+, সিডি২৫+ এবং সিডি১৬++৫৬+ এবং রক্তবাহী প্রতিরোধ ক্ষমতার নিরূপক উপাদানগুলো হচ্ছে, আইজিজি, আইজিএ, আইজিএম, সি৩ এবং সি৪। কিন্তু টনসিল অপারেশনের আগে ও পরে রক্ত পরীক্ষা করে এগুলোর কোনোটিরই তারতম্য লক্ষ করা যায়নি। এ ছাড়া মাথা ও গ্রীবার চারপাশে মোট তিন শর মতো লসিকাগ্রন্থি রয়েছে, এর মধ্য থেকে দুটি অসুস্থ টনসিল ফেলে দিলে শরীরের বিশেষ কিছু সমস্যা হয় না। বাকি লসিকাগ্রন্থিগুলো শরীরের রোগ প্রতিরোধ রক্ষার কাজটি সহজেই চালিয়ে নিতে পারে। টনসিলকে বলা হয় মুখগহ্বরের দারোয়ান। বাড়ির দারোয়ান যখন অসুস্থ থাকে কিংবা নিজেই যখন চুরির মতো কাজে লিপ্ত হয়, তখন তাকে বিদায় করে দেওয়াই যেমন ভালো, তেমনি করে মুখগহ্বরের দারোয়ান টনসিল বারবার অসুস্থ হয়ে নিজের দায়িত্ব পালন করতে পারে না। বরং প্রতিরোধ করার পরিবর্তে উল্টো শরীরকে অসুস্থ করে তোলে। কখনো কখনো শরীরে রোগ সৃষ্টিকারী মারাত্মক জীবাণুর উৎস বা আবাসস্থল হিসেবে কাজ করে টনসিল। আর সেই জীবাণু ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে কিডনি কিংবা হার্টের ভাল্ভকে। ফলে কিডনির ছাঁকনির প্রদাহ, বাতজ্বর ও হার্টের ভাল্ভ নষ্ট হয়ে যেতে পারে। এ অবস্থায় টনসিল নামের সেই অসুস্থ কিংবা মারাত্মক জীবাণুর আবাসস্থল দারোয়ানকে অপারেশনের মাধ্যমে শরীর থেকে বিদায় করে দেওয়াই উত্তম। এতে ভবিষ্যতে শরীর রোগমুক্ত থাকবে। শুধু ইনফেকশনই নয়, টনসিল অনেক বড় হয়ে তা যদি খাবার গ্রহণের পথ কিংবা শ্বাস নেওয়ার পথকে বাধাগ্রস্ত করে, তখনো টনসিলকে ফেলে দিয়ে খাবার গ্রহণ ও শ্বাস নেওয়ার পথকে সুগম করে দেওয়া উচিত। এ কারণে বিশ্বে শিশুদের সুস্থ রাখার জন্য যত অপারেশন হয়, তার শীর্ষে রয়েছে টনসিল অপারেশন। তবে সুস্থ টনসিল নিয়ে কোনো চিন্তা নেই। টনসিলে হঠাৎ ব্যথা হয়ে সেরে গেলেও অসুবিধা নেই।

No comments

Powered by Blogger.