বান্দরবানে নাট্যভ্রমণ-জীবন থেকে শেখা by কিঙ্কর আহ্সান

শিক্ষার্থীদের কেউ জুমের মাঠে গিয়ে আগাছা সাফ করেছেন, কেউ মেতে উঠেছিলেন রান্না কিংবা তাঁত বোনার কাজে, কেউ কেউ বুড়োবুড়িদের আসরে বসে শুনেছেন রূপকথার গল্প, কেউ আবার এলাকার বিদ্যালয়গুলোতে ঘুরে ঘুরে দেখেছেন তাদের পড়াশোনার প্রক্রিয়া। কথা বলেছেন এলাকার তরুণদের স্বপ্ন ও ভালোলাগা-মন্দলাগা নিয়ে।


গত ১৯ থেকে ২৭ জুন পর্যন্ত চলা নাট্যভ্রমণে প্রতিদিন সকালে উঠেই ‘চাঁদের গাড়ি’তে করে শিক্ষার্থীদের যেতে হয়েছে বান্দরবানের তঞ্চঙ্গ্যা, ত্রিপুরা ও মারমাদের গ্রামে। আদিবাসীদের জীবন, রীতিনীতি কাছ থেকে দেখার সুযোগ পান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগের স্নাতক শ্রেণীর প্রথম বর্ষ প্রথম সেমিস্টারের শিক্ষার্থীরা। অধ্যাপক ইসরাফিল শাহীনের নেতৃত্বে ১৯ জন শিক্ষার্থী ১৯ জুন যান মেঘ-পাহাড়ের বান্দরবানে। পুরো দলটি তিন ভাগে ভাগ হয়ে তঞ্চঙ্গ্যা, ত্রিপুরা এবং মারমা এই তিন জাতির কৃষি-চাষাবাদ, খাদ্য, পরিচ্ছদ, গীত-নৃত্য-বাদ্য, ভাষা, মনোজগৎসহ তাদের আরণ্যক জীবনাচার দেখার পাশাপাশি সেগুলোতে প্রত্যক্ষভাবে অংশ নেওয়ার চেষ্টা করে। এই শিক্ষার্থীদের মাঠপর্যায়ে গবেষণার জন্য সহযোগিতা করে বিটা (বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব থিয়েটার আর্টস)।
‘এখানকার তরুণেরা অনেক আধুনিক ও বন্ধুবৎসল। ওরা পড়াশোনা করে দেশ এবং জাতির জন্য ভালো কিছু করতে চায়। আমাদের উচিত, ওদের দিকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়ে পাশাপাশি থেকে একসঙ্গে কাজ করা।’ বলছিলেন শিক্ষার্থীদের একজন আবির ইব্রাহিম। তাদের অভিজ্ঞতাগুলোকে পুঁজি করে ঢাকায় এসে এই শিক্ষার্থীরা করেছেন নতুন এক আয়োজন। ১ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দিবসে নাটমণ্ডলে তাঁরা অভিনয় করে দেখিয়েছেন এই তিন জাতির জীবনের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশ ও ঘটনা। আদিবাসীদের পোশাক গায়ে জড়িয়ে তাঁরা মেতে উঠেছিলেন নাচ-গানে-অভিনয়ে।
পাহাড়ি এলাকায় পথ চলতে কষ্ট হতো বলে শিক্ষার্থী নুসরাত জাহানের হাত ধরে পথ চলায় সাহায্য করতেন সাগরিকা মারমা। অল্প কদিনেই নুসরাতের বন্ধু বনে যাওয়া সাগরিকা বলেছিলেন ঢাকা গেলে ঠিক এভাবেই পাশে থেকে নুসরাত যেন তাঁকে যানবাহনেভরা পথ পার করিয়ে দেন। আরেক বন্ধু তাঁত বোনার সজারুর কাঁটাটা উপহার হিসেবে তুলে দেন কৃপাকনা তালুকদারের হাতে। কৃপা সে কাঁটা চুলের খোঁপায় বেঁধে নেমেছেন নাটমণ্ডলের মঞ্চে। শিক্ষার্থী জিতু তাঁর রোদচশমাটা দিয়ে এসেছেন জীবন মারমাকে। রোদচশমার ভেতর দিয়ে ঘোলাটে পৃথিবী দেখতে জীবনের ভালো লাগে খুব।
বন্ধু আর স্মৃতিগুলো নিয়ে বদরুল আমিন নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘ওদের কাছ থেকে অনেক কিছু শিখেছি আমরা। নিয়ে এসেছি অনেক কিছু। কিন্তু ফেরার পথে, ফেরার দিনে মনে হচ্ছিল কী যেন একটা ফেলে রেখে আসলাম গ্রামগুলোতে। খুব কষ্ট হলেও বুঝিনি সে ফেলে আসা জিনিসটি কী। ঢাকায় এসে বুঝলাম ফেলে আসা এ জিনিসটির নাম বন্ধুকে না দেখার বিরহ, কষ্ট।’

No comments

Powered by Blogger.