সুশাসন-ছোট ছোট উদ্যোগ ও পরিবর্তন আনতে হবে by আকবর আলি খান
সুশাসন নয়-ছয় করা যত সোজা, নষ্ট হয়ে
যাওয়া সুশাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা তত সোজা নয়। সুশাসন একটি ঘটনা নয়, সুশাসন
একটি প্রক্রিয়া। কাজেই স্বল্প সময়ের মধ্যে দেশে সেটি প্রতিষ্ঠিত হবে—এ
ধরনের আশা করা ঠিক হবে না। আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে এবং বাংলাদেশে
শাসনব্যবস্থার ক্রমেই অবনতি পরিলক্ষিত হচ্ছে। এই অবনতিশীল পরিস্থিতি রোধ
করার জন্য প্রয়োজন দৃঢ় রাজনৈতিক অঙ্গীকার। সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশের
প্রশাসনে দুটি প্রবণতা নিয়ে উদ্বেগের কারণ রয়েছে। প্রথম উদ্বেগের কারণ হলো
বাংলাদেশে যারা ভালো কাজ করে, তারা পুরস্কার পায় না। আর যারা খারাপ কাজ
করে, তাদের শাস্তি হয় না। এ কথা প্রশাসনের ক্ষেত্রে যেমন সত্যি, প্রশাসনের
বাইরের সমাজ সম্পর্কেও সমভাবে সত্য।
দীর্ঘদিন
আগে হজরত আলী (রা.) মিসরের নবনিযুক্ত গভর্নর মালিক আশতারকে বলেছিলেন, ভালো
ও খারাপের সঙ্গে একই রকম ব্যবহার কোরো না। যদি করো, তাহলে ভালো লোকেরা
ভালো কাজ করবে না। আর খারাপ লোকেরা খারাপ কাজ করা থেকে বিরত হবে না।
ভগ্বত গীতাতেও শ্রীকৃষ্ণ দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালনের কথা বলেছেন। শাসনব্যবস্থার কেন্দ্রবিন্দুতে এই নীতি প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এর প্রতিফল আমরা দেখতে চাই সরকারের নিয়োগ ব্যবস্থায়, পদায়ন এবং পদোন্নতিতেও।
দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশের শাসনব্যবস্থা জনপ্রশাসনের একটি মৌল নীতি থেকে বিচ্যুতি ঘটেছে। এই মৌল নীতিটি সুন্দরভাবে তুলে ধরেছেন চৈনিক দার্শনিক কনফুসিয়াস। কনফুসিয়াসকে একজন ভক্ত জিজ্ঞেস করেছিল, সুশাসন কাকে বলে? কনফুসিয়াস খুব সোজা কথায় বলেছিলেন, সুশাসন ব্যাপারটি খুব সহজ। সুশাসন হলো এমন একটি ব্যবস্থা, যেখানে রাজা রাজার কাজ করে, মন্ত্রী মন্ত্রীর কাজ করে, পিতা পিতার কাজ করে ও সন্তান সন্তানের কাজ করে। যদি রাজা মন্ত্রীর কাজ করে, আর মন্ত্রী প্রজার কাজ করে, তাহলে সুশাসন থাকবে না।
দুর্ভাগ্যবশত বাংলাদেশের শাসনব্যবস্থা অতি কেন্দ্রীয়করণের ফলে সব ক্ষমতা মুষ্টিমেয় লোকের হাতে বন্দী হয়ে পড়েছে। এই ব্যবস্থায় সুশাসন সম্ভব নয়। প্রশাসনের এই অচলায়তন ভাঙতে আজকে তাই সবচেয়ে বড় প্রয়োজন ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ।
কেন্দ্রীয় সরকারের নির্বাহী বিভাগের উচ্চতর পর্যায় থেকে নিম্নতর পর্যায়ে অধিকতর দায়িত্ব ও ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। সঙ্গে সঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকারের ক্ষমতা স্থানীয় সরকারের হাতে প্রত্যর্পণ করতে হবে।
দেশের সবচেয়ে বড় সম্পদ মানবসম্পদ। কেন্দ্রীভূত শাসনব্যবস্থায় দেশের মানুষের সৃজনশীলতা কখনো মুক্তিলাভ করবে না।
এ কথা সত্যি, যেসব পরিবর্তনের কথা এখানে বলা হয়েছে, এগুলো রাতারাতি করা যাবে না। তবুও এ বছরে যদি এসব বিষয়ে ছোট ছোট উদ্যোগও নেওয়া হয়, তাহলে আমরা দিনবদলের আশায় বুক বাঁধতে পারি। শুধু কথা বলাই যথেষ্ট নয়, কাজের মাধ্যমে প্রশাসনে শৃঙ্খলা ও কার্যকারিতা ফিরিয়ে আনার জন্য সর্বাত্মক উদ্যোগ নিতে হবে।
আকবর আলি খান: সাবেক সচিব, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা।
ভগ্বত গীতাতেও শ্রীকৃষ্ণ দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালনের কথা বলেছেন। শাসনব্যবস্থার কেন্দ্রবিন্দুতে এই নীতি প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এর প্রতিফল আমরা দেখতে চাই সরকারের নিয়োগ ব্যবস্থায়, পদায়ন এবং পদোন্নতিতেও।
দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশের শাসনব্যবস্থা জনপ্রশাসনের একটি মৌল নীতি থেকে বিচ্যুতি ঘটেছে। এই মৌল নীতিটি সুন্দরভাবে তুলে ধরেছেন চৈনিক দার্শনিক কনফুসিয়াস। কনফুসিয়াসকে একজন ভক্ত জিজ্ঞেস করেছিল, সুশাসন কাকে বলে? কনফুসিয়াস খুব সোজা কথায় বলেছিলেন, সুশাসন ব্যাপারটি খুব সহজ। সুশাসন হলো এমন একটি ব্যবস্থা, যেখানে রাজা রাজার কাজ করে, মন্ত্রী মন্ত্রীর কাজ করে, পিতা পিতার কাজ করে ও সন্তান সন্তানের কাজ করে। যদি রাজা মন্ত্রীর কাজ করে, আর মন্ত্রী প্রজার কাজ করে, তাহলে সুশাসন থাকবে না।
দুর্ভাগ্যবশত বাংলাদেশের শাসনব্যবস্থা অতি কেন্দ্রীয়করণের ফলে সব ক্ষমতা মুষ্টিমেয় লোকের হাতে বন্দী হয়ে পড়েছে। এই ব্যবস্থায় সুশাসন সম্ভব নয়। প্রশাসনের এই অচলায়তন ভাঙতে আজকে তাই সবচেয়ে বড় প্রয়োজন ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ।
কেন্দ্রীয় সরকারের নির্বাহী বিভাগের উচ্চতর পর্যায় থেকে নিম্নতর পর্যায়ে অধিকতর দায়িত্ব ও ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। সঙ্গে সঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকারের ক্ষমতা স্থানীয় সরকারের হাতে প্রত্যর্পণ করতে হবে।
দেশের সবচেয়ে বড় সম্পদ মানবসম্পদ। কেন্দ্রীভূত শাসনব্যবস্থায় দেশের মানুষের সৃজনশীলতা কখনো মুক্তিলাভ করবে না।
এ কথা সত্যি, যেসব পরিবর্তনের কথা এখানে বলা হয়েছে, এগুলো রাতারাতি করা যাবে না। তবুও এ বছরে যদি এসব বিষয়ে ছোট ছোট উদ্যোগও নেওয়া হয়, তাহলে আমরা দিনবদলের আশায় বুক বাঁধতে পারি। শুধু কথা বলাই যথেষ্ট নয়, কাজের মাধ্যমে প্রশাসনে শৃঙ্খলা ও কার্যকারিতা ফিরিয়ে আনার জন্য সর্বাত্মক উদ্যোগ নিতে হবে।
আকবর আলি খান: সাবেক সচিব, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা।
No comments