তিন মামলায় শীর্ষ নেতাদের প্রায় সবাই আসামি রিজভী, রতনসহ গ্রেপ্তার ৬ * মির্জা ফখরুল ও মির্জা আব্বাসের বাড়িতে তল্লাশি-মামলায় জর্জরিত বিরোধী দল

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ বিরোধী দলের শীর্ষস্থানীয় অর্ধশতাধিক নেতার বিরুদ্ধে তিনটি মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। গত রবিবার হরতাল চলাকালে ঢাকায় সচিবালয় এলাকায় ককটেল বিস্ফোরণ এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কাছে একটি বাসে অগ্নিসংযোগের অভিযোগে দুটি আর পুরান ঢাকার


আদালতপাড়ায় বোমাবাজির অভিযোগে আরেকটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। রবিবার মধ্যরাতেই তেজগাঁও, শাহবাগ ও কোতোয়ালি থানায় মামলা তিনটি দায়ের হয়।
মামলার পর ওই রাতেই মৌচাক এলাকা থেকে যুবদলের সহসভাপতি কামরুজ্জামান রতন এবং গত রাতে কাকরাইল থেকে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব (দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত) রুহুল কবীর রিজভীকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। এই তিন মামলায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ছাড়া গতকাল সোমবার ভোরে মির্জা ফখরুলের উত্তরার বাসায় তল্লাশি চালায় পুলিশ। ওই সময় মির্জা ফখরুল বাসায় ছিলেন না। মোয়াজ্জেম হোসেন আলালসহ বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের বাসায়ও পুলিশ তল্লাশি চালিয়েছে বলে দলের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে।
যুবদল নেতা কামরুজ্জামান রতনের স্বজনরা অভিযোগ করেছেন, আটক করার সাত ঘণ্টা পর পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তারের কথা স্বীকার করে। সচিবালয়ে ককটেল বিস্ফোরণ মামলায় শাহবাগ থানার পুলিশ তাঁকে তিন দিনের রিমান্ডে নিয়েছে।
গতকাল হরতাল শেষে নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ব্রিফিংয়ে রুহুল কবির রিজভী বুধবার সারা দেশে জেলা শহরে বিক্ষোভ সমাবেশ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। এরপর রাত সাড়ে ৮টার দিকে কার্যালয় থেকে বের হন তিনি। কাকরাইলের নাইটিংগেল মোড়ে গাড়ি থামিয়ে সাদা পোশাকের পুলিশ সদস্যরা তাঁকে গ্রেপ্তার করে মিন্টো রোডে গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়ে নিয়ে যান।
পুলিশ ও সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, তেজগাঁও থানায় দায়ের করা মামলার আসামির সংখ্যা ৪৪ এবং শাহবাগ থানার মামলার আসামির সংখ্যা ২৮। আর কোতোয়ালি থানার মামলায় যুবদলের ১০০ নেতা-কর্মীকে আসামি করা হয়েছে। মির্জা ফখরুলসহ ১৯ জন শীর্ষস্থানীয় নেতা তেজগাঁও-শাহবাগ দুই থানার মামলারই আসামি।
ওদিকে গতকাল মির্জা ফখরুল, সাদেক হোসেন খোকাসহ বিএনপির কেন্দ্রীয় পাঁচ নেতার জামিন আবেদনের শুনানির জন্য হাইকোর্টে বিশেষ বেঞ্চ গঠন করতে রাজি হননি প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেন। তিনি হাইকোর্টের নিয়মিত বেঞ্চে জামিন আবেদন করার জন্য বিএনপির সিনিয়র আইনজীবীদের পরামর্শ দিয়েছেন। তাই আগামীকাল বুধবারের আগে কারো জামিন পাওয়ার সুযোগ নেই।
সচিবালয়ে ককটেলের মামলা : শাহবাগ থানা সূত্রে জানা গেছে, রবিবার মধ্য রাতে থানার এসআই হীরেন্দ্র নাথ প্রামাণিক বাদী হয়ে বিএনপি ও জোটের ২৮ নেতা-কর্মীকে আসামি করে বিস্ফোরক উপাদানাবলি ১৯০৮-এর ৩/৩-ক/৬ ধারায় মামলাটি করেন। এজাহারে অভিযোগ করা হয়েছে, রবিবার বিকেল ৪টার দিকে বাংলাদেশ সচিবালয়ের ২ নম্বর গেটের বাইরে এবং ভেতরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সামনে কে বা কারা দুটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটনায়। এজাহারে উলি্লখিত ২৮ জনসহ অজ্ঞাতপরিচয় নেতাদের বিরুদ্ধে পারস্পরিক সহায়তা, ষড়যন্ত্র, প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ নির্দেশ, প্ররোচনা, উসকানি, আর্থিক সহযোগিতা ও বিস্ফোরক দ্রব্যাদি সংগ্রহে সহায়তার অভিযোগ আনা হয়েছে। মামলার এজাহারের ক্রম অনুযায়ী আসামিরা হলেন_বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সাদেক হোসেন খোকা, যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, ঢাকা মহানগরের সাবেক সদস্য সচিব আবদুস সালাম, কেন্দ্রীয় ছাত্রদল সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি হাবিব-উন-নবী সোহেল, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম মহাসচিব আমানউল্লাহ আমান, কেন্দ্রীয় যুবদলের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল আলম নীরব, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক সরাফত উল্লাহ সফু, যুবদল সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, স্বনির্ভরবিষয়ক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্রিগেডিয়ার জেনালের (অব.) আ স ম হান্নান শাহ ও ড. খন্দকার মোশারফ হোসেন, ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি, সংসদ সদস্য সৈয়দা আসিফা আশরাফী পাপিয়া, শাম্মী আকতার, রেহেনা আক্তার রানু, নিলুফার চৌধুরী মনি, বিজেপি সভাপতি ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ, এলডিপির সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহম্মেদ, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক আনিসুর রহমান খোকন, ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি আবদুল মতিন, মহানগর উত্তর যুবদলের সাধারণ সম্পাদক এম এম জাহাঙ্গীর, কেন্দ্রীয় যুবদলের সহদপ্তর সম্পাদক কামরুজ্জামান দুলাল, যুবদলের সহসভাপতি কামরুজ্জামান রতন, মোরতাজুল করিম বাদরু এবং ৭৪ নম্বর ওয়ার্ড মহিলা দলের সভাপতি রেহানা আক্তার ডলি। এ মামলায় পুলিশ কামরুজ্জামান রতন ও রেহানা আক্তার ডলিকে গ্রেপ্তার দেখিয়েছে। মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (জনসংযোগ) মাসুদুর রহমান জানান, শাহবাগ ও তেজগাঁও থানার দুটি মামলায় রতনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
কামরুজ্জামান রতনের স্ত্রী নূরে জান্নাত ও ভাই মুসা কলিম উল্লাহ কালের কণ্ঠকে বলেন, মৌচাক মোড়ে দেশ টিভি ভবনের সামনের রাস্তা থেকে ডিবি পরিচয় দিয়ে রতনকে একটি মাইক্রোবাসে তুলে নেওয়া হয়। মাইক্রোবাসে ডিবি লেখা ছিল। দেশ টিভিতে একটি টক শোতে অংশ নিয়ে বের হয়ে আসার সময়ই এ ঘটনা ঘটে বলে জানান তাঁরা। আটকের খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ডিবি অফিসে ছুটে যান স্ত্রী নূরে জান্নাত। তবে গতকাল সকাল পর্যন্ত স্বজনরা আটকের বিষয়ে ডিবির কাছে কোনো তথ্য পাননি বলে অভিযোগ করেন। নূরে জান্নাত বলেন, 'দেশের পরিস্থিতি এমন যে, ভালো মানুষ ধরে ধরে গুম করা হচ্ছে। আমার স্বামী ১২ বছর ধরে রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন না। গতকাল শুধু একটি টেলিভিশন টক শোতে কথা বলার কারণে তাঁকে গাড়ি ভাঙচুর ও বোমা বিস্ফোরণ মামলার আসামি করা হয়েছে। এটা অন্যায়, এটা অবিচার।'
ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) এস এম শিবলী নোমান বলেন, 'সচিবালয়ের মতো স্পর্শকাতর এলাকায় বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় বিএনপিসহ বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের আসামি করা হয়েছে। অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে এ ঘটনাটি তদন্ত করা হচ্ছে। মামলায় যাঁদের আসামি করা হয়েছে, তাঁরা কোনো না কোনো সময় মিডিয়ার মাধ্যমে সরকারকে ফেলে দেওয়া, উৎখাত করাসহ নানা হুমকি দিয়ে বক্তব্য দিয়েছেন। তাই এ ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা এবং জনজীবন বিপন্ন করার হুমকির সঙ্গে তাঁরা জড়িত থাকতে পারে বলেও সন্দেহ করা হচ্ছে।'
গাড়ি পোড়ানোর মামলায়ও শীর্ষস্থানীয় নেতারা : তেজগাঁও বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার ইমাম হোসেন জানান, রবিবার রাতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অদূরে ফ্যালকন হলের সামনে একটি গাড়ি পোড়ানোর অভিযোগে ৩৬ জনকে প্রত্যক্ষ আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়েছে। রাতে তেজগাঁও থানায় দায়ের করা ওই মামলায় পরোক্ষভাবে পরিকল্পনা ও অর্থায়নে আটজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছে। এ মামলায় প্রথম এজাহার নামীয় তিন আসামিকে রাতেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
তেজগাঁও থানা সূত্রে জানা গেছে, দ্রুত বিচার আইন-২০০২ সংশোধনী ২০১০-এর ৪ ও ৫ ধারায় মামলাটি দায়ের করা হয়। মামলার বাদী হয়েছেন তেজগাঁও থানার উপপরিদর্শক ইসমাইল মজুমদার। এজাহারে অভিযোগ করা হয়, ওই রাত ৯টা ৫ মিনিটে ফ্যালকন টাওয়ারের কাছে ছয়-সাতটি মাইক্রোবাস এসে একটি যাত্রীবাহী বাসের (ঢাকা মেট্টো জ-১১-২১০৯) গতিরোধ করে আগুন ধরিয়ে দেয়। ভয়ভীতি প্রদর্শন ও যানবাহনের ক্ষতিসাধনের অভিযোগ তোলা হয় আসামিদের বিরুদ্ধে।
মামলার এজাহারের ক্রমানুযায়ী আসামিরা হলেন আগের মামলার ১৯ জনসহ বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক নাজিমউদ্দিন আলম, যুগ্ম মহাসচিব মাহবুব উদ্দিন খোকন, ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আমিরুল ইসলাম খান আলীম, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মজনু, ঢাকা মহানগর উত্তরের স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক ইয়াছিন আলী, জাগপার সভাপতি শফিউল আলম প্রধান, প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক শক্তির চেয়ারম্যান শেখ শওকত হোসেন নিলু, ঢাবি শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক ওবায়দুল হক নাছির, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রশিদ হাবিব, ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক কামাল আনোয়ার, বিএনপির নেতা ও সাবেক কাউন্সিলর আবুল বাসার, ৪০ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ও বিএনপি নেতা আনোয়ার হোসেন, ওয়ার্ড বিএনপি সভাপতি এল রহমান, বিএনপির সাবেক ধর্মবিষয়ক সম্পাদক নবী সোলায়মান, খিলগাঁও থানা বিএনপির সভাপতি ইউনুস মৃধা, জামায়াত নেতা বুলবুল, ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি দেলোয়ার হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক আবদুল জব্বার। এ ছাড়া প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে নির্দেশনা, পরিকল্পনা ও অর্থায়নের অভিযোগে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এম কে আনোয়ার ও জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত নায়েবে আমির মকবুল আহমদসহ শীর্ষস্থানীয় আট নেতাকে এজাহারভুক্ত করা হয়। পুলিশ জানায়, এ মামলায় এজাহারের প্রথম তিন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
কোতোয়ালিতে ককটেলের মামলা : রবিবার পুরান ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় যুবদল নেতাসহ ১০০ জনকে আসামি করে কোতোয়ালি থানায় বিস্ফোরকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের ৩-এর ক ধারায় দায়ের করা মামলার বাদী থানার এসআই এস এম রকিবুল হক। মামলার এজাহারে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টির অভিযোগ আনা হয়েছে। ক্রমানুযায়ী মামলার প্রথম ১০ জন আসামি হলেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণের যুবদল সাধারণ সম্পাদক মামুন হাসান, মহানগর উত্তরের যুবদল সাধারণ সম্পাদক এম এম জাহাঙ্গীর, দক্ষিণ যুবদল সভাপতি হামিদুর রহমান, উত্তরের যুবদল সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল হাসান মজনু, উত্তর যুবদলের সহসভাপতি নূর আলম, ৭৬ নম্বর ওয়ার্ড সাধারণ সম্পাদক রিয়াজুর রহমান, বংশাল থানা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মামুনুর রহমান, বংশালের সভাপতি ইয়ার মোহাম্মদ, ৭০ নম্বর ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক ফারুক আহমেদ ও যুবদল কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি মনির হোসেন।
ফখরুলের বাসায় তল্লাশি : রবিবার রাতে কামরুজ্জামান রতনসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তারের পর ভোরে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের উত্তরার বাসায় অভিযান চালায় পুলিশ। উত্তরার ১৭ নম্বর সড়কের ৪ নম্বর সেক্টরের একটি ভাড়া করা ফ্ল্যাটে পরিবার নিয়ে থাকেন মির্জা ফখরুল। তাঁর স্ত্রী রাহাত আরা বেগম কালের কণ্ঠকে বলেন, ভোর সাড়ে ৪টার দিকে পুলিশ এসে তাঁদের ফ্ল্যাটের দরজা ধাক্কাতে থাকে। এ সময় মির্জা ফখরুল বাসায় ছিলেন না। পুলিশ পরিচয় দেওয়ার পর তিনি বাসার দরজা খুলে দেন। পুলিশ প্রথমে মির্জা ফখরুলের খোঁজ জানতে চায়। পরে তারা বাসার প্রতিটি কক্ষে ঢুকে তল্লাশি চালায়।
রতনসহ চারজনের রিমান্ড : যুবদল নেতা কামরুজ্জামান রতনকে তিন দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আদেশ দিয়েছেন আদালত। অন্য আসামি রেহানা আক্তার ডলিকে শারীরিক অসুস্থতার কারণে রিমান্ড না দিয়ে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে গতকাল দুপুর আড়াইটার দিকে তেজগাঁও থানা পুলিশ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কাছে পোড়ানো গাড়ির কন্ডাক্টর সোহেল মিয়া, হেলপার জসিম ও এলাকাবাসী মানিক রতন (২)_এই তিন আসামিকে মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই আবদুল ওহাব জানান, প্রত্যেক আসামির পাঁচ দিন করে রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করলে মহানগর হাকিম তিন দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
মামলা-তল্লাশিতে আতঙ্ক : বিএনপির শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা এবং গ্রেপ্তার অভিযানের কারণে আতঙ্কে রয়েছেন বিরোধী দলের নেতা-কর্মী ও তাঁদের পরিবার। গতকাল হরতালের দ্বিতীয় দিনে দলের শীর্ষ নেতাদের মাঠে সক্রিয় দেখা যায়নি। গতকাল বিকেল পর্যন্ত মির্জা ফখরুলের অবস্থানও জানা যায়নি।
বিএনপি নেতা মির্জা আব্বাসের স্ত্রী আফরোজা আব্বাস সরকারের কাছে পরিবারের নিরাপত্তা চেয়েছেন। কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, গত বুধবার মির্জা আব্বাসের ছোট বোনের স্বামী মারা যাওয়ায় তিনি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন। এর পর থেকে তিনি বাসায়ই ছিলেন এবং আছেন। এর মধ্যে দেখা যাচ্ছে, তাঁর নামে বিভিন্ন অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়েছে। গতকাল বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে শাহজাহানপুরে নিজ বাসায় সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন আফরোজা আব্বাস। তবে সংবাদ সম্মেলনের খানিক আগে বাসা থেকে মির্জা আব্বাস বেরিয়ে গেছেন বলে তিনি জানান। আফরোজা আব্বাস বলেন, 'সোমবার ২টা ৪০ মিনিটে ১০ থেকে ১৫ জনের একদল পুলিশ আমাদের বাসার গেটে ধাক্কা দিতে থাকে। বাসার দুটি গেটেই ধাক্কা দিয়ে তারা ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করে। দারোয়ানের কাছে তারা গেটের চাবি চায়।' তিনি আরো বলেন, 'আমরা বলি, কোন অভিযোগে আপনারা আমাদের বাসায় এসেছেন? আপনাদের কোনো কাগজ থাকলে দেখান। এর ১০ মিনিট পর তারা চলে যায়।'
মির্জা আব্বাসের স্ত্রী বলেন, 'টেলিফোনের মাধ্যমে আমাদের নানা সময়ে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। আমি সরকারের কাছে আমার পরিবারের নিরাপত্তা চাই।'
বুধবারের আগে জামিনের সুযোগ নেই : জানা গেছে, গতকাল বিকেলে ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের নেতৃত্বে বিএনপির সিনিয়র আইনজীবীরা সুপ্রিম কোর্টে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বিশেষ বেঞ্চ গঠনের আবেদন জানান। যে পাঁচজনের জামিনের আবেদন করা হয় তাঁরা হলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, সাদেক হোসেন খোকা, আমান উল্লাহ আমান, ব্যারিস্টার মাহবুবউদ্দিন খোকন এমপি ও শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি এমপি। পাঁচজনের জামিন আবেদনের হলফনামা করার পর বিকেল পৌনে ৫টায় আইনজীবীরা প্রধান বিচারপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তাঁরা ওই পাঁচ নেতার জন্য গত রাতে বা পহেলা মে যেকোনো সময় বসার জন্য হাইকোর্টের একটি বিশেষ বেঞ্চ গঠনের মৌখিক আবেদন জানান। এরপর প্রধান বিচারপতি তাঁদের নিয়মিত বেঞ্চে আবেদন করার পরামর্শ দেন। প্রধান বিচারপতির খাস কামরা থেকে বেরিয়ে ব্যারিস্টার মওদুদ সাংবাদিকদের বলেন, 'আজ (সোমবার) জামিনের আদালত বসে নাই। আগামীকাল (আজ মঙ্গলবার) সরকারি ছুটি থাকায় আদালত বসবে না। এ কারণে আমরা একটি বিশেষ বেঞ্চ গঠনের জন্য প্রধান বিচারপতির কাছে আবেদন করি, যাতে আজ (সোমবার) রাতে বা কাল (মঙ্গলবার) ওই বেঞ্চে আমরা জামিন আবেদন পেশ করতে পারি।' তিনি আরো বলেন, 'আমরা প্রধান বিচারপতিকে বলেছি, তাঁদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়াই এ মামলা হয়েছে। এখন প্রত্যেকের বাসায় তল্লাশি করা হচ্ছে। তাঁরা বাসায় ফিরতে পারছেন না। তাই তাঁদের জরুরি ভিত্তিতে জামিন প্রয়োজন।' তিনি বলেন, প্রধান বিচারপতি বিশেষ বেঞ্চ গঠনে সম্মত হননি। তিনি পরশু দিন (বুধবার) জামিনের নিয়মিত বেঞ্চে আবেদন করতে বলেছেন। তিনি বলেন, এর আগে জরুরি ভিত্তিতে প্রধান বিচারপতির এ ধরনের বিশেষ বেঞ্চ গঠন করে দেওয়ার নজির আছে।
মওদুদ আহমদ বলেন, 'বিরোধী দলের সিনিয়র নেতাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে। আন্দোলন-সংগ্রামে যাতে আমাদের নেতারা সক্রিয় থাকতে না পারেন, সে জন্যই মামলা দেওয়া হয়েছে।'
শ্রমিক দলের নিন্দা : মামলা এবং বিএনপি নেতাদের বাসায় হয়রানিমূলক তল্লাশি করার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দল। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও শ্রমিক দল সভাপতি নজরুল ইসলাম খান, সিনিয়র সহসভাপতি আবুল কাশেম চৌধুরী এবং সাধারণ সম্পাদক মো. জাফরুল হাসান যুক্ত বিবৃতিতে বলেন, বর্তমান ফ্যাসিস্ট সরকার জনপ্রিয়তা হারিয়ে সন্ত্রাসী কায়দায় দেশ চালাচ্ছে। তারা অতীতের মতোই বিরোধী নেতা-কর্মীদের হত্যা, গুম, অপহরণ, মিথ্যা মামলা, গ্রেপ্তার ও দমন-পীড়ন চালিয়ে গায়ের জোরে ক্ষমতায় থাকতে চায়।

No comments

Powered by Blogger.